গল্পের নাম: #বৃষ্টি_থামার_পরে
পর্ব ২০: #টাইট
লেখিকা: #Lucky_Nova
“এর শোধ আমি রাতে তুলবো তোমার থেকে।” দাতেদাত চিপে কড়া গলায় আস্তে করে বলল এরোন।
মিহি হালকা ভয় পেলেও প্রকাশ করল না।
কারণ সে আশা করছে যে এরোনের মা-ই হয়তো এই বেহায়া ছেলেকে সোজা করতে পারবে।
আরোহী হতবাক হয়ে তাকিয়ে বললেন, “এই শিখিয়েছি তোকে?”
“আমি কারণ ছাড়া কিছুই করি না সেটা তুমি ভালো করেই জানো।” ভরাট গলায় বলল এরোন।
“সেসব আমার জানা দরকার নেই। বিয়ে কি ছেলেখেলা! যে তোর ইচ্ছে হলো একটা মেয়েকে জোর করে বিয়ে করে নিবি!”
‘যাক কেউ একজন বুঝলো!’ মনে মনে বলে মিহি আবার এরোনের হাত থেকে নিজের হাত টেনে নেওয়ার চেষ্টা করতে শুরু করল।
এতে এরোন হাতটা আরো শক্ত করে চেপে ধরে ওর দিকে কড়াচোখে তাকালো।
“আহ! লাগছে।” কপাল কুচকে বলে উঠল মিহি।
“কি শুরু করেছিস তুই?” আরোহী চোখ রাঙালো।
এরোন হাত ধরে রেখেই মিহিকে নিয়ে নিচে নামতে শুরু করল।
নামার সময়ও মিহি হাত ছাড়ানোর চেষ্টায় রত থাকলো।
একদম নিচে এসে নিজের মায়ের সামনে দাঁড়ালো এরোন। এই মুহূর্তে তিনি ভালোই রেগে আছেন।
“আমার ভাবতেও অবাক লাগছে যে তুই বিয়েতে পরিবারের কারো মতামত প্রয়োজন বোধ করলি না! মতামত ছাড়, অন্তত জানালিও না!”
“দুটোর একটাতেও তোমরা কেউ রেসপন্স করতা না।” গম্ভীর গলায় সোজা সাপটা জবাব দিল এরোন।
“তা কেনো দেব? নিজের জেদ বহাল রাখতে একটা মেয়েকে জোর করে বিয়ে করবি! এসব শিখিয়েছি তোকে?” ঝাঁঝাঁলো গলায় বললেন আরোহী।
“তিমির বলেছে সব?!” প্রশ্ন করলো এরোন।
“যেই বলুক।” বলে আরোহী মিহির দিকে তাকালেন।
ছেলের সাথে ঝগড়া করতে থাকায় তার চোখ মুখ গম্ভীর আর শক্তপোক্ত হয়ে আছে।
আরোহীর চোখে চোখ পরতেই মিহি গোলমেলে দৃষ্টিতে একবার তার চোখের দিকে একবার অন্যদিকে তাকাতে লাগল। সাথে ধীরস্থির ভাবে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা ত করে যাচ্ছেই।
আরোহী বুঝতে পেরে এরোনের ধরে থাকা হাত থেকে মিহির হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে নিজের হাতে ধরলেন। আর মিহিকে নিজের পাশে এনে দাঁড় করালেন।
এরোন প্রশ্নাত্বক দৃষ্টিতে তাকালো।
“কি করতে চাইছ তুমি?” প্রশ্ন করল এরোন।
এরোনের কথায় কান না দিয়ে আরোহী মিহিকে জিজ্ঞেস করলেন, “নাম কি তোমার?!”
তার দাম্ভিক মুখোভাবে মিহি হালকা ঘাবড়ালো।
তাই নিচু করে উওর দিলে, “মিহি।”
উনি মিহির মুখের দিকে কয়েক মিনিট চেয়ে রইলেন। অতঃপর গোপনে একটা নিঃশ্বাস ফেলে এরোনের দিকে আগের ভঙ্গিতে তাকালেন।
আরোহী কিছু বলতেই যাচ্ছিলেন। কিন্তু তার আগেই একরোখা মনোভাব নিয়ে এরোন বলে উঠল, “আমি কিন্তু ওকে ছাড়ছি না। সো কেউ চেষ্টাও করো না।”
আরোহী অবাক হয়ে চোখ রাঙালেন।
“এসবে জেদ চলে?!”
“বিয়ে হয়ে গেছে। আর ও কোনো দোষ করেনি এমনও না৷ আমার সাথে প্রেমের নাটক করেছে কিনা জিজ্ঞেস করো।” বলতে বলতে বুকে হাত গুজলো এরোন।
আরোহী চোখ সংকুচিত করে মিহির দিকে তাকালেন।
মিহি হালকা ফুসে উঠলো,”আমি ত বলেছি ওটা আমার দেওয়া চিঠি ছিলো না! এর পরেও কেনো মানছেন না!”
“আমাকে গরম দেখাচ্ছো! How Brave!” বলতে বলতে সুক্ষ্ম চাহনিতে তাকালো এরোন।
মিহি বুঝলো যে এই চাহনির অর্থ হলো পরে ওর খবর এই লোক লাল, নীল, হলুদ, সবুজ করবে।
“তুই আমার সামনেও ওকে ধমকাচ্ছিস!”
“ছেলের থেকে বউয়ের প্রতি দরদ বেশি হওয়া ভালো। তবে তাই বলে ওকে ছেড়ে দিতে বললে সেটা পারবো না।”
“আমি আপনার সাথে থাকবো না।” ক্ষোভের সাথে বলল মিহি।
“তুমিও থাকবা তোমার ঘাড়ও থাকবে।”
“আপনি বললেই হলো!”
“হ্যা, আমি যা বলব তাই হবে।”
আরোহী একবার মিহির, একবার এরোনের দিকে তাকাতে লাগলেন। এদের এই অবস্থা দেখে তিনি নিজেই বিপাকে পরলেন।
এক পর্যায়ে উনি বিরক্ত হয়ে বলে উঠলেন,”উফ! থাম তোরা, থাম!”
দুইজনের চুপ করলো ওরা।
আরোহী এবার মুখে সিরিয়াস ভাব আনলেন। তারপর মিহির দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, “আমার দিকে তাকাও।”
মিহি ইতস্তত করতে করতে তাকালো।
“তুমি কি সত্যিই আমার ছেলের সাথে থাকতেই চাও না!”
“আমি ওকে ছাড়ব না।” এরোন বলে উঠল।
“তোর কথা হচ্ছে না এখানে।” শক্ত গলায় বললেন আরোহী।
“তুমি বলো।” মিহিকে উদ্দেশ্য করে বললেন উনি।
মিহি একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেল। একটু সময় নিয়ে সে ভিতরে ভিতরে শব্দগুলো সাজিয়ে নিলো। তারপর চোখ নামিয়ে ইতস্তত করতে করতে নম্রভাবে বলল,”আসলে আমি ওনাকে ভালোবাসি না। আর এ বিয়েতে আমার মতও ছিলো না।”
“আমি জানতে চাইছি যে এখন কি তুমি ডিভোর্স চাও?!” চোখ মুখ গম্ভীর হয়ে গেল আরোহীর।
ডিভোর্স শব্দটা শুনে কেমন যেন লাগলো মিহির। তাই ত! ডিভোর্স ছাড়া ত উপায়ই নেই।
সেই ত একই বিষয় হয়ে যাবে! দিদির মত ওকেও ডিভোর্সি টাইটেল পেতে হবে।
চিন্তার ভাজ পরে গেল মিহির কপালে। চোখের কালো মনি ঈষৎ চঞ্চল হয়ে মেঝেতে বিচরণ করতে লাগলো।
কিন্তু তাই বলে এই ছেলেকে ও মেনেও ত নিতে পারবে না। এই ধরনের ছেলেকে বিশ্বাস করা ওর পক্ষে যে সত্যিই দায়ের।
হয়তো এখন ডিভোর্সটা না দিলেও পরে এমনিও হবে। তবে আগেই ডিভোর্স হয়ে গেলেই কি ভালো নয়! কিন্তু ওদিকে ওর পরিবার! তারা! তারা কি বলবে? সবাই কেনো মেনে নিচ্ছে? তারা কি দিদির পরিনতি জানেনা?
দোটানায় পরে গেল মিহি। এর কোনো প্রশ্নের উওর ওর জানা নেই।
আরোহী মিহিকে চিন্তিত আর বিচলিত হতে দেখে দুই হাতে ওর গাল ধরলেন।
মিহি একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেল।
আরোহী আশ্বস্ত করে বললেন, “সমস্যা নেই। তুমি সময় নিয়ে চিন্তা করো। এরোনের মত হুট করেই কিছু করো না। ও জেদের বশে বিয়ে করলেও তুমি অন্তত জেদের বশে…।
কথাটা শেষ না করে অতি সুক্ষ্ণভাবে হাসলেন তিনি। মিহি তার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
ছেলের সাথে মায়ের দারুন তফাৎ। সত্যিই তিনি অনেক বুঝদার একজন ব্যক্তি।
“ও ডিভোর্স দেওয়ার কে? সারা জীবনের জন্য বিয়ে করেছি ওকে আমি।” থমথমে গলায় বলল এরোন।
মিহি ভ্রু কুচকে ফেলল। আরোহী এরোনকে পাত্তা না দিয়ে মিহিকে বললেন, “সব কাহিনী তোমার থেকে পরে শুনবো। আপাতত আমি এখান থেকে নিয়ে যেতে এসেছি তোমাকে। শশুরবাড়ি থাকতে বাংলোতে পরে থাকবা কেনো!”
বলে আরোহী মৃদু হাসলেন।
মিহি হালকা বিব্রতবোধ করলো আরোহীর কথায়।
“ওকে নিতে এসেছো মানে?” ভ্রুকুটি করে বলল এরোন।
“তোকে ত আমি পরে দেখছি! এত বড় সিদ্ধান্ত একাই নিলি! বিয়েও করলি! বিয়ে করার পর এখানেই বসে রইলি! কিছু একটু জানালি না! অন্যের থেকে শোনা লাগলো আমার?! এসবের ত বিহিত করবই।” এরোনের দিকে তাকিয়ে কটাক্ষ করে বললেন তিনি।
“এই নতুন ঝামেলা হবে জানি বলেই ত বলিনি।” মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে বিড়বিড়িয়ে কথাগুলো আওড়ালো এরোন।
“রেডি হয়ে নেও। বের হব। এই হঠাৎ বিয়ের কাহিনী কে কিভাবে নেবে কে জানে!” চিন্তিত মুখে বলে এরোনের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালেন আরোহী।
“তুমি যাও আমি ওকে নিয়ে আমার গাড়িতে আসছি।” এরোন বলল আরোহীকে।
কথাটা কর্ণগোচর হতেই মিহি আরোহীর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলল,”আ..আমি আপনার সাথে যাব।”
“তুমি আমার সাথে যাবা।” রাগে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল এরোন।
“এটা কি ধরনের ব্যবহার শিখেছিস তুই? আর ওকে শাসাচ্ছিস কেনো এভাবে?” অসন্তোষের সাথে বললেন আরোহী।
“তুমি ওর হয়ে এত…।” কথা শেষ করলো না এরোন। বিরক্তিকর ভঙ্গিমায় ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে তারপর মিহির দিকে কড়া নজরে তাকালো।
মিহি ভুলেও তাকাচ্ছে না।
“কারণ বড়সড় দোষ করেছিস। মোটেও ঠিক করিস নি।”
এরোন হা করে তাকিয়ে রইল। এ যেন আরেক ঝামেলার পূর্বাভাস পাচ্ছে ও। এসব খবর যে জানিয়েছে তাকে আজ জ্যান্ত পুতে ফেলতে ইচ্ছে করছে ওর।
“লাঞ্চ করেছ?” মিহিকে জিজ্ঞেস করলেন আরোহী।
মিহি হ্যা না কিছুই বলল না।
তাই আরোহীই বলে উঠল,”তাহলে আগে লাঞ্চ করে নিই। যেতে যেতে বিকাল গড়াবে যা জ্যাম!”
🌸
অবশেষে বাধ্য হয়ে এরোনকে একাই নিজের গাড়িতে উঠতে হলো। আর অন্য গাড়িতে ড্রাইভারসহ মিহি আর আরোহী। এরোনের ফ্রেন্ডরা অনেক আগেই যে যার মত নিজ নিজ বাসায় চলে গেছে।
গাড়ি অনেক বড় একটা বাড়ির গেটের ভিতরে এসে থামলো। আরোহী মিহিকে গাড়ি থেকে নামতে ইশারা করে নিজে নামলেন।
মিহি আস্তেধীরে নেমে এলো। নেমে সামনে তাকাতেই একটা সাদা বিল্ডিং চোখে পরলো। হয়তো দোতালা। বাহিরে থেকে যদিও বোঝার উপায় নেই। তবে বাহির থেকে দেখে আভিজাত্যপূর্ণই মনে হচ্ছে।
“চলো ভিতরে চলো।” বলে আরোহী মিহিকে এগুতে ইশারা করলেন।
মিহি আশেপাশে ইতস্তত ভঙ্গিতে তাকাতে তাকাতে সামনে এগিয়ে গেল। খেয়াল করলো যে এই বাড়িটার সাথে ফুলের বাগান আছে যেটা আগের বাংলোটাতে ছিল না।
ভিতরে ঢুকে অবাক হলো মিহি। ভিতরকার পরিবেশ সাধারণ ও সাদামাটা। সেভাবে অত আভিজাত্য দিয়ে কিছুই করা হয়নি। আর পাঁচটা উচ্চ মধ্যবিত্তদের মত।
কিন্তু চাইলেই এত সুন্দর বাড়িটা রাজকীয় ভাবে সাজানো যেত।
আরোহী মিহির ভাবমূর্তি দেখে হয়তো কিছু বুঝে নিলেন। তিনি মৃদু হেসে বললেন,”আমি সাধারণ জীবনযাপন পছন্দ করি। অত দিয়ে কি হবে! শুধু শুধু টাকা নষ্ট।”
মিহি একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল।
“তোমাকে আগেই বলে রাখলাম। কারণ যারা আসে জিজ্ঞেস করে এত সাদামাটা থাকিস কেনো?!”
মিহি প্রত্যুত্তরে মৃদু হাসলো।
“এখনো কেউ জানেনা বুঝলে। আমিও জানতাম না বিয়ের বিষয়টা। শুনে বিশ্বাস করতেও পারছিলাম না। তাই দ্রুত ছুটে গেলাম। ওর বাবা কি রিএক্ট করবে বলতেও পারছি না।” হালকা চিন্তিত হয়ে গেলেন উনি।
মিহি নিশ্চুপ রইল।
“তোমার বাসায় ত এসবের জন্য ঝামেলা হয়েছে, তাই না?!” মলিন মুখে প্রশ্ন করলেন আরোহী।
মিহি চোখ নামিয়ে নিল। গাড়িতে বসে এসব বিষয়ে কথা হয়েছে দুইজনের। শুরু থেকেই সবটা বলেছে মিহি। প্রথমে ভয় ভয় লাগলেও পরে মিহি অনেক ফ্রি ভাবেই আরোহীকে সব বলতে পেরেছ। যেন নিজের মায়ের কাছেই সব বলছে।
আরোহী দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে এগিয়ে এসে মিহির দুই হাত ধরলেন।
মিহি তাকালো।
“ওর হয়ে আমি গিয়ে ক্ষমা চেয়ে আসবো। আসলে ও এইরকমই জেদি। কিন্তু জেদ করে এমন কিছু করবে তা বুঝতেও পারিনি, জানো! কিন্তু আমার ছেলে খারাপ না। তুমি সময় নিয়ে দেখো বুঝতে পারবা। ও ওইরকম করবে না। তবে আমি জোর করছি না।…আর তোমাদের বাসায় দরকার হলে কালই যাব। অবশ্যই ক্ষমা চাইব।” বিষাদময় আকুতি ভরা কন্ঠে বললেন আরোহী।
মিহি অবাক হয়ে তাকালো। তার দোষ নেই তাও সে কেন ক্ষমা চাইবে!
মিহি মুখ ফুটে কিছু বলতে যাবার আগেই পিছন থেকে এরোন বলল, “কোনো দরকার নেই তোমার যাওয়ার। আমি সব সামলেছি৷ এখন দয়া করে নতুন ঝামেলা করো না তোমরা দুজন।”
“তুই চুপ কর। কি এমন সামলেছিস তুই?”
এরোন আর কিছু বলল না। সে এগিয়ে গিয়ে কান্ত ভঙ্গিতে সোফায় বসে গা হেলিয়ে দিল।
আরোহী উওরের অপেক্ষা করলেন না। মিহিকে বললেন, “তুমি যাও ফ্রেস হয়ে নেও। উপরে উঠে বা দিকে একদম কর্নারের রুমটা এরোনের।”
শুনে মিহি শুকনো ঢোক গিলে আড়চোখে এরোনের দিকে তাকালো। সে সোফায় পিঠ হেলিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।
“রুমেই তোয়ালে পেয়ে যাবা। যাও।” মিষ্টি হাসিসমেত বললেন আরোহী।
যাওয়ার কোনো রকম ইচ্ছাই নেই মিহির। কারণ যেচে পরে এই অসভ্য লোকটার হাতে পরতে হবে তাহলে।
“আ..আমি অন্য রু..রুমে..।” এটুকু বলে মেঝের দিকে দৃষ্টি নামালো মিহি।
আরোহী মুচকি হাসলেন। তারপর বললেন, “তোমায় খুব জ্বালায়, না? আচ্ছা করে দিতে হবে ওকে একদিন।”
মিহি এদিক ওদিক তাকাতে লাগল।
“তুমি তাহলে উপরের যেকোনো আরেকটা রুম বেছে নিয়ে ফ্রেস হও। মাঝ বরাবর যে বেডরুমটা হা করে দরজা খুলে রাখা সেটা আমার আর ওর বাবার বেডরুম। ওখানের ওয়ারড্রবের দ্বিতীয় ভাগ থেকে একটা তোয়ালে নিয়ে নিও। আমিও যাব ফ্রেস হতে আগে দারোয়ানকে দিয়ে কিছু জিনিস আনতে পাঠাতে হবে। তুমি যাও।” তাড়া দিয়ে বললেন আরোহী।
মিহি মাথা নাড়লো। তারপর আড়চোখে আরেকবার এরোনের দিকে তাকিয়ে দেখে নিলো। সে আগের মতই গা হেলিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।
দেখে নিয়ে মিহি গুটি গুটি পায়ে উপরে উঠে গেল।
মিহি যেতেই এরোন সিরিয়াস ভাবে ওর মাকে বলল,”মিহির পরিবার জানে এই বিয়ে ভালোবেসে করেছি আমরা। আর সেটা জেনে এখন মেনেও নিয়েছে তারা। আমি মানিয়েছি। এখন সেখানে গিয়ে এসব কথা তুললে নতুন করে ঝটলা পাকবে। আমি সেটা আমি চাই না।”
আরোহী বাজারের লিস্ট লিখছিলেন। এরোনের কথায় শুধু এক পলক তাকালেন কিন্তু কিছু বললেন না। তিনি এখনো যথেষ্ট রেগে আছেন এরোনের উপর।
“মোট কথা ওদের বাড়ি গিয়ে আর যাই করো আমাদের সম্পর্কের তামাশা বানিও না। কারণ যাই হয়ে যাক, আমি ওকে ছাড়তে পারবো না।” কথাগুলো বলে উঠে দাঁড়িয়ে আরোহীর দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকালো এরোন।
মুখে কিছু না বললেও ভিতরে ভিতরে বেশ অবাক হলেন আরোহী। তার ছেলে কি তাহলে সত্যিই প্রেমে পরে গেলো! কিন্তু মেয়েটা ত রাজিই না!
🌸
মিহি ডান দিকের কোনার রুমটা বেছে নিলো। অর্থাৎ এরোনের ধার-কাছেও না।
আরোহীর রুম থেকে আনা তোয়ালে নিয়ে ফ্রেস হয়ে বের হলো সে। বাথরুমের দরজা এগিয়ে দিয়ে সামনে তাকাতেই মুখ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল ওর।
এরোন আলমারিতে ঠেস দিয়ে পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে। তার কড়া নজর এখন ওর দিকেই।
মিহি কপাল কুচকে চোখ সরিয়ে নিল। আর হাতের তোয়ালেটা আরো শক্ত করে চেপে ধরলো।
মনে মনে দরজা না আটকানোর নির্বুদ্ধিতার জন্য নিজেকেই নিজে গালি দিতে লাগলো ও।
“খুব পটর পটর করা শিখে গেছো!” কটাক্ষ করে বলল এরোন।
মিহি এদিক ওদিক তাকাতে লাগল।
“আমাদের সম্পর্ক নিয়ে তামাশা করতে মানা করিনি? বার বার কিসের এত মানি না, মানি না করো?” বলতে বলতে এগিয়ে আসতে শুরু করলো এরোন।
মিহি ঢোক গিলে পিছিয়ে যেতে লাগলো।
“তোমাকে টাইট না দিলে হবে না। এখন কি শাস্তি দেব, বলো।” বলতে বলতে মুচকি হাসলো সে।
হাসিটা মোটেও সুবিধার মনে হলো না মিহির।
“আ..আমি কিন্তু বলে দেব আ..আপনি…।” এটুকু বলতে না বলতেই ব্যালেন্স হারিয়ে পিছনের ড্রেসিং টেবিল বসে পরলো মিহি।
“কি বলবা?” ভ্রু উঁচু করে নামালো এরোন।
ততক্ষনে মিহির একদম সামনে এসে দাঁড়িয়েছে সে।
মিহি মাথা নুয়ে দুপাশে হাত রেখে ড্রেসিং টেবিল আঁকড়ে ধরল।
এরোন একহাত দিয়ে মিহির মুখ তুলে ধরলো।
মিহি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। তবে এরোনের চোখে চোখ পরতেই দৃষ্টি সরিয়ে নিল সে।
এরোন হালকা ঝুঁকে এলো ওর মুখের দিকে।
এতেই মিহির বুকের ভিতরে ধক ধক করা শুরু হয়ে গেল।
এরোন মুচকি হেসে মৃদুস্বরে বলল, “আমার চোখের দিকে তাকাতে পারো না কেনো?”
মিহি চোখ তুলতে সাহস পেল না।
এরোন আরেকটু ঝুঁকে আসতেই মিহি চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলল।
“বলো! কেনো পারো না।”
“আ..আপনি আবার আমাকে…।”
কথা শেষ হবার আগেই এরোন মিহির গালে ঠোঁট ছুয়ে দিলো।
মিহি থম মেরে বসে চোখগুলো রসগোল্লার মত করে ফেলল।
এরোন ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে মৃদুস্বরে বলল, “পারলে গিয়ে বলো যে আমি তোমাকে কিস করেছি।”
(চলবে…)