বৃষ্টি_থামার_পরে পর্ব ৪: #হ্যালোকিটি_ব্যান্ডেজ লেখিকা: #Lucky_Nova

0
512

গল্পের নাম: #বৃষ্টি_থামার_পরে
পর্ব ৪: #হ্যালোকিটি_ব্যান্ডেজ
লেখিকা: #Lucky_Nova

“ভয় নেই। আমি তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাব না কোনোদিন।” মৃদুস্বরে বলল এরোন।
মিহির কপালের ভাজ সোজা হয়ে গেল। সে হালকা অবাক হয়ে তাকালো এরোনের দিকে।
“I mean, I Won’t touch you.”
ওকে দেখে ত মনে হচ্ছে সত্যি বলছে। কিন্তু ঢপও হতে পারে! তাই ভুলেও ভালো মানসিকতায় বিশ্বাস করা চলবে না। দূরত্ব রেখে চলতে হবে। মনে মনে বলল মিহি।
“ক্যান্টিনে চলো।” মিহির মুখের সামনে তূরি বাজিয়ে বলল এরোন।
“ক্যান্টেনে কেনো?” আকাশ থেকে পরল মিহি।
“সবকিছুতে কেনো কেনো করো কিসের জন্য!” ভ্রুকুটি করে বলল এরোন।
মিহি চুপ করে রইল।
“চলো।” ইশারা করে আগাতে বলল এরোন।
ইতস্তত করতে করতে ক্যান্টিনে হাজির হলো মিহি।
দুজনে মুখোমুখি বসলো।
মিহি আগেই বলে দিয়েছে কিছু খাবেনা। এরোনও জোর করেনি।
মিহির ভয়, খাবারে অবশ্যই কিছু মিশিয়ে দিবে এই ছেলে।
মিহি টেবিলের দিকে নজর স্থির রেখে দিয়েছে এরোনের দিকে তাকাচ্ছে না। আর এরোন ওর মুখের দিকে তাকিয়ে মন ভরে ওকে দেখছে।
কেউই কোনো কথা বলছে না। চুপ করে বসে আছে ওরা দুজন, মিহির মুখ থুবড়ে পড়া সেই টেবিলটায়। এই টেবিলটাই মনে হয় কুফা! এটাই মনে হয় মিহির।
মিহি মাঝে মাঝে একটু নড়েচড়ে বসে হাত কচলাচ্ছে। এরোন টেবিলে এক হাত রেখে অন্য হাত ভাজ করে তাতে মাথা রেখে স্থির ভাবেই বসে ওর দিকে তাকিয়ে আছে৷ তার কোনো নড়চড় নেই।
প্রায় আধাঘণ্টা মত বসে থাকার পর মিহি রিনরিনে গলায় বলল,”সন্ধ্যা হয়ে যাবে।”
“হয়ে যাক।” ঠোঁটের কোনে হাসি টেনে বলল এরোন।
মিহি ভ্যাবাচেকা খেয়ে ওর দিকে তাকালো।
এরোন শব্দ না করে হাসলো। মেয়েটাকে অপ্রস্তুত করে দিতে অনেক ভালই লাগে এরোনের। চোখ গোলগাল করে তাকায়। তখন ওকে আরো অনেক সুন্দর লাগে।
“চলো আমি দিয়ে আসি।” বলতে বলতে উঠে দাঁড়াল এরোন।
“আমি একাই যেতে পারবো।” ঝট করে বলে উঠল মিহি।
“একসাথেই যাব।” বলল এরোন।
মিহি আর কিছু না বলে শুকনো মুখ করে উঠে দাঁড়াল। কারণ বলার ধরণেই মিহি বুঝে গেছে এই ছেলে নাছড়বান্দা। যাবেই যাবে।
মিহি আগে আগে হাটছে আর এরোন পকেটে হাত ঢুকিয়ে মিহির পিছনে পিছনে।
শীতকাল বলে তাড়াতাড়িই অন্ধকার নেমে এসেছে। যদিও অত শীত আজ পড়েনি। কারণ শীতকালের শেষ ঘনিয়ে এসেছে।
এই মুহুর্তে পাশাপাশি হাটলে বেশি ভাল হত। তাই বেশি কিছু চিন্তা না করেই এরোন দ্রুতপদে মিহির পাশে চলে এলো।
মিহি ভুত দেখার মত চমকে দাঁড়িয়ে গেল।
এরোন সংকুচিত চোখে তাকিয়ে বলল,”আমি দেখতে বাজে?”
প্রশ্ন শুনে মিহি চোখ আরো গোল গোল করে নিল।
“নাকি আমি তোমাকে খেয়ে ফেলব?!”
মিহি কি বলবে ভেবে না পেয়ে আগের মত তাকিয়ে রইল।
“কি!” ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করলো এরোন।
মিহির প্রায় অনেক কাছেই দাঁড়িয়ে আছে এরোন। তাই মিহি ইতস্তত করে হালকা পিছনে পিছিয়ে যাবার জন্য পা বাড়াতেই এরোন ওর মাথার পিছনে হাত রাখলো। মিহি ভয়ে জড়সড় হয়ে এরোনের দিকে তাকালো।
এরোন চোখ দুটো ছোট ছোট করে মিহির মাথার পিছনে তাকিয়ে আছে। মুখ দেখে ত মনে হচ্ছে সে কিছুতে ব্যথা পেয়েছে।
মিহি আস্তে আস্তে পিছনে ফিরে তাকালো তারপর পুরো বিষয়টা বুঝতে পারলো। মিহির মাথা সোজা পিছনেই তারকাটা ছিলো। বলতে গেলে গলা পর্যন্ত দেয়ার তার পর তারকাটা শুরু। একটু হলেই মাথায় ঢুকতো।
মিহি সরতেই এরোন নিজের হাত উল্টে দেখে নিলো। তারপর মুচকি হেসে মিহির দিকে তাকালো।
মিহি কি বলবে বা কি করবে বুঝতে পারলো না। ওর জন্যই ত কাটা ফুটে গেল ছেলেটার হাতে।
“তোমার এখন দুইটা ঋণ জমলো। প্রথমত শার্ট, আর এখন হাত।” বলে হাত উলটে মিহির সামনে দাড় করিয়ে দেখালো এরোন।
মিহি দোষী চোখে তাকালো সাথে হালকা রাগও হলো। কারণ কোনোটাই ইচ্ছাকৃত ছিল না।
এরোন হাত নামিয়ে নিয়ে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, চলো, পাশে হাটতে হবে না। তুমি আগে আগেই চলো।
“এ…এক মিনিট।” ইতস্তত করে বলে মিহি নিজের পার্স খুলল।
এরোন ভ্রু কুচকে তাকালো।
মিহি পার্স থেকে একটা মাঝারি মাপের ব্যান্ডেজ বের করলো। বলতে গেলে এরোনের হাত যতটুকু কেটেছে ততটুকু এটা দিয়ে আবৃত করা যাবে। মিহির পার্সে দুই একটা ব্যান্ডেজ পাওয়াই যায়। কারণ ওর হাত পা ছিলে যাওয়া আর কেটে যাওয়ার ঘটনা অহরহ।
“নিন।” সেটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল মিহি।
ব্যান্ডেজটা দেখে এরোনের ভ্রু আরো কুচকে গেল। সে বলল, “Hello Kitty bandage? Pink? Are you kidding me?”
“তাতে কি! ব্যান্ডেজ ত ব্যান্ডেজই!” চোখ পাকিয়ে বলল মিহি।
মিহির গোলাপি রঙের হ্যালো কিটি খুব পছন্দের। তাই ফোন কভার সহ ব্যান্ডেজও এই রঙের কিনেছিল সে।
“এসব বাচ্চাদের জিনিস। লাগবে না আমার।” এরোন উপহাসের সুরে বলল।
এটা শুনে মিহির ভ্রু কুচকে গেল।
“বাচ্চাদের কেনো হবে? আশ্চর্য!” মিহি কয়েক সেকেন্ডের জন্য সব ভয় ভুলে গিয়ে তর্ক করে উঠলো। তার পছন্দের জিনিস নিয়ে সে উপহাস একদমই পছন্দ করে না।
ওর বান্ধবীরাও ওকে বলে এসব নাকি বাচ্চাদের! আশ্চর্যের বিষয়! পছন্দের মধ্যে বাচ্চা আর বুড়ো কি! পছন্দ ত পছন্দই।
“ভালো না লাগলে নেবেন না।” মুখ ফুলিয়ে বলেই মিহি ব্যান্ডেজটা আবার ঢুকিয়ে ফেলল।
মিহিকে এমন তর্ক করতে দেখে আনমনেই হাসল এরোন। যে মেয়ে কিনা এত সময় লজ্জা পাচ্ছিলো! এখন তর্ক করছে!
এরোন হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “দেও, নেবো।”
মিহির প্রথম দেওয়া জিনিস সে এমনিও ফিরাতে চায় না। হ্যালো কিটি দেখে বিষয়টা মাথাতেই ছিল না এরোনের।
মিহি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো।
“দেও।” চোখ একটু প্রসস্থ করে বলল এরোন।
মিহি ভ্রু কিঞ্চিৎ কুচকে রেখে আবার ব্যান্ডেজটা বের করে সদর্পে এরোনের হাতে দিল।
এই ছেলের মতিগতি বোঝা দায় মিহির পক্ষে। এই বলে নেবে না, এই বলে নেবে!
এরোন ব্যান্ডেজটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। তারপর সেটা হাতে না লাগিয়ে জিন্সের পকেটে ঢুকিয়ে ফেলল।
সাথে সাথে মিহি সরু চোখে তাকিয়ে বলে উঠল, “হাতে না লাগিয়ে পকেটে ঢুকিয়েছেন কেনো? পরে ফেলে দেবেন নাকি? ফেলে দিলে ফেরত দিন। ভাল একটা জিনিস নষ্ট করা উচিত না।”
মহা তেজের সাথে বলেই মিহি হাত বাড়ালো।
মনে মনে এই ছেলেকে কতগুলো গালিও দেওয়া শেষ ওর। নির্ঘাত ওকে প্রেমের লীলাখেলা বুঝানোর জন্য নিয়েছে। পরে ফেলে দেবে। দাম দিয়ে কেনা জিনিস ওটা। লীলাখেলার চক্করের জন্য না।
এরোন যতই দেখছে অবাক হচ্ছে৷ হঠাৎ করে লাজুকলতা মিহি হয়ে গেছে লঙ্কাবতি মিহি। সে মুচকি হাসলো আর উজ্জ্বল হাসির সাথে ওর দিকে তাকিয়ে রইল। এমন ভাবে মাথা, হাত নাড়িয়ে চোখ পাকিয়ে কথা বলছে সে, মুগ্ধ না হয়ে পারা যাচ্ছে না।
মিহির কথা শেষ হতে না হতেই হালকা বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল।
দুইজনেই হা হয়ে গেল। এটা ওরা আশাই করেনি।
মেঘ মেঘ ছিল তবে শীতকালে বৃষ্টি হবে তা অনুমান করা যায়নি।
উপায় না পেয়ে দুজনেই স্টেডিয়ামের ছাউনিতে ফিরে এলো। আপাতত অপেক্ষা করতে হবে।#বৃষ্টি_থামার_পরে আবার যাওয়া যাবে।
মিহি নাক মুখ কুচকে নিজের গায়ে পরা অল্প পানি চাদরটা দিয়ে মুছতে ব্যস্ত। দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে সে বৃষ্টি পছন্দ করে না।
এরোন ওর থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে বুকের কাছে হাত গুজে ওকে দেখতে লাগল।
খুব নিখুঁত ভাবেই দেখছে। মিহির খোপায় বিন্দুবিন্দু পানি জমেছে। এদিকে গালের পাশের চুলগুলো ভিজে লেপ্টে আছে। আর সে বিরক্ত হয়ে মুখ ফুলিয়ে হাত মুছছে।
হটাৎই এরোনের মনে হলো চুলগুলো খুলে দিলে কেমন হয়! সে কোনো কিছু চিন্তা না করেই মিহির খোপার কাঠিটা হাত বাড়িয়ে টেনে নিল। সাথে সাথে চুলগুলো খুলে পিঠে ছড়িয়ে গেল।
মিহি চমকে এরোনের দিকে তাকালো। মুহুর্তেই তার চোখমুখে বিস্ময়, দ্বিধা আর মৃদু ভয় ফুটে উঠলো।
“এখন ঠিক আছে। কাপকেক কাপকেক লাগছে একদম।” মুচকি হেসে বলেই এরোন আয়েশ করে একটা চেয়ারে বসল। তারপর চেয়ারের হ্যান্ডেলে এক হাত ভাজ করে রেখে মিহির দিকে তাকালো আর অন্য হাতে কাটিটা ধরে রইল।
“আ…আমার ওটা দিন।” কোনমতে বলল মিহি।
কারণ সে অনেক হকচকিয়ে গেছে।
“দেব না।” গম্ভীর গলায় বলল সে।
মিহি এরোনের চোখের চাহনি এড়াতে চোখ সরিয়ে সামনে তাকালো। কারণ সে অপলক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়েই আছে। এভাবে কি দেখে সেটাই বুঝে পায়না মিহি। এদিকে ভয়ে ভিতরটা হিমশীতল হয়ে যাচ্ছে।
মিহি কাঠিটা আর ফেরত চাইলো না। কারণ এই ছেলে অনেক ঘাড়ত্যাড়া। সে মোটেই দেবে না।
চুপচাপ দাঁড়িয়ে পার্সটা দুইহাতে চেপে ধরে রইল মিহি। তার চোখ বাহিরের বৃষ্টির দিকে। আর সেই চোখ বলছে ‘বৃষ্টি থেমে যাক’।
আর এরোনের চোখ মিহির দিকে। যা মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ। সেই চোখের ভাষাও স্পষ্ট। আর তা হলো – ‘আজ বৃষ্টি না থামুক’।

___________________

বেশ খানিকটা সময় পর বৃষ্টি থামলো। এতে মিহি মনে মনে বেশ খুশিই হলো। কিন্তু এরোন হালকা বিরক্ত হলো।
“চলো।” উঠে দাঁড়িয়ে বলল এরোন।
মিহি মাথা নাড়লো।
এরোন ওকে সামনে যাবার জন্য ইশারা করলো। মিহি তৎক্ষনাৎই আগে আগে হাঁটা শুরু করল।
পুরো রাস্তা আর কথা হলোনা ওদের।
হলের সামনে আসতেই মিহি ইতস্তত করে একবার এরোনের দিকে তাকিয়ে মেইন গেটের ভিতরে ঢুকে গেল।
এরোন মুচকি হাসলো। তবে এরোন উল্টোদিকে ঘোরার আগেই মিহি আবার বেরিয়ে এলো।
এরোন প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো আর সাথে স্মিত হাসলো।
“আ…আপনি নাকি শা…শার্ট দেবেন!” চোখ নামিয়ে ফেলল মিহি।
“আনতে ভুলে গেছি। কাল এসে নিয়ে যাবা।” বুকের কাছে হাত গুজে বাঁকা হাসির সাথে বলল এরোন।
মিহি চমকে তাকালো। আর এরোনের হাসিমাখা মুখ দেখে ঢোক গিলল।
এটা দেখে এরোন একগাল হাসি দিয়ে ঠোঁটের কোনা কামড়ে ধরে তাকিয়ে রইল।
মিহি চোখ নামিয়ে নিয়ে বিব্রতবোধ করতে লাগল। তার চিন্তা হচ্ছে কাল আবার যেত হবে কিনা সেটা নিয়ে।
“সারারাত দাঁড়িয়ে থাকবা!” বলল এরোন।
‘অবশ্যই না’ তবে সেটা মুখে বলতে পারলো না মিহি। মিহি আবার গেটের দিকে ঘুরলো। তবে পরক্ষণেই আবার এরোনের দিকে তাকালো।
এরোন এবার বড়সড় হাসি দিয়ে বা হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে ভ্রু চুলকানো।
মিহি যেতে যেতেও যাচ্ছে না এই জন্যই হাসছে এরোন।
মিহি ওর দৃষ্টি এড়িয়ে বলল, “আমার চুলের ওই কাঠিটা?!”
অর্থাৎ সে ওটা ফেরত চাচ্ছে।
এরোন অনেক আগে ওটাও পকেটে ঢুকিয়ে ফেলছে।
“না দিলেই নয়?”
মিহি ভ্রুকুটি করে তাকালো। ছেলেটা এমনভাবে বলছে যেন কাঠিটা তার একান্ত দরকারি জিনিস।
তাই মিহি লাগবে কথাটা বলতে গিয়েও গিলে ফেলল। কারণ এই ছেলের সাথে কথায় সে পারবে না।
মিনি দ্রুত গেট দিয়ে ঢুকে গেল।
যতসময় মিহিকে দেখা গেল এরোন দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল।
তবে মিহি একবারের জন্যও ঘুরে তাকালো না।
.
“কি কি করলি রে? রোম্যান্স হলো?” একটু উলটো পালটা ইঙ্গিত করে বলে উঠল সেবা।
শুনেই আঁতকে উঠল তমা আর মিহি।
মিহির ভাষা লোপ পেল তাই চুপ রইল।
“কি জঘন্য কথাবার্তা।” চোখ পাকিয়ে বলল তমা।
“গিয়েছিল ত চুল বেঁধে, খোপা করে। এসেছে খোপা খুলে! কাহিনী কি মামা?” অসভ্যতা করার জন্য আয়েসি ভঙ্গিতে প্রশ্ন করলো সেবা।
মিহির মুখ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল।
সেবা ব্যাপারটায় বেশ মজা পাচ্ছে। তার আগ্রহ আরো বেড়ে গেল।
তমা আকাশ থেকে পরলো।
“সত্যি? এই ওই পোলা কী তোকে..?”
“না না।” চমকে বলে উঠল মিহি।
“তাহলে??” সেবা ভ্রু উঁচু করে আবার নামালো।
“বৃষ্টি…বৃষ্টির জন্য চুল থেকে খুলে পার্সে রেখেছি।” দ্রুত মিথ্যাটা বলে ফেলল মিহি।
শুনে সেবা কপাল কুচকালো। হয়তো বিশ্বাস করে নি। কিন্তু তমা বিশ্বাস করল।
“যাক বাবা ভালো।”
মিহি গোপনে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল।
“ছেলে কিন্ত ভালো না জানিস! তুই ওকে বলতে যাস না যে তুই ওকে ভালোবাসিস না। না জানি কি করে দেয় তোকে!”
মিহি শুনেই ভয়ে কাচুমাচু হয়ে গেল,”কেনো?”
“শুনেছি ত মারামারিতে জড়িত, নেশাও করে। তোকে তুলে নিয়ে কিছু করে দিলে?” কাঠকাঠ গলায় বলল তমা।
মিহির মুখ শুকিয়ে কয়লা হয়ে গেল।
“আপাতত ক্ষেপাস না। নাটক চালিয়ে যা। কয়েক দিনের মধ্যে হল ছেড়ে বাসায় চলে যা। এক্সামের আগে আসবি না। পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে হাজির হবি। দরকার হলে বাহিরে মেসে থাকবি। বুঝলি?!”
“পরিস্থিতি ঠান্ডা মানে?” মিহি বুঝলো না।
“আরে গাধা মাইয়া! মানে দুই তিন মাস তোকে দেখতে না পেলে তোর আশা ছেড়ে দেবে। নিউ চিড়িয়া খুঁজবে। বেঁচে যাবি। এরা এমনই।” একরাশ তিক্ততার সাথে বলল তমা।
মিহি অবাক হয়ে গেল, এই বুদ্ধি ওর মাথায় আসেনি কেন? কি চমৎকার বুদ্ধি! চিন্তা করেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে তমাকে জড়িয়ে ধরল মিহি। তমাও ধরলো।
সেবা ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস বের করে দিয়ে নিজের ফোনের দিকে নজর দিল। ভালো ছেলেটার বিষয় গুজব শুনে তমা সেটা মিহিকে গুলিয়ে খাইয়ে দিল! আর মিহিও খেয়ে নিল! ছেলে খারাপ হলে এতদিনে মিহির মত মেয়েকে ছেড়ে দিতো না।
সেবা আর যাই হোক এটা নিশ্চিত যে এরোন খারাপ না। কারণ ছেলেটাকে স্টেডিয়ামে বাস্কেটবল খেলতে দেখতে প্রায়ই যেতো সেবা।
অনেক সুন্দর খেলে।
বিশেষ করে বাস্কেটে বল ফেলার পরে যা সুন্দর হাসি দেয় সেটাতে অনেকগুলো মেয়ে জায়গায় ফিদা হয়ে পরে থাকে।
আশেপাশে মেয়েরা ঘেঁষতেও চায়। তবে সে পাত্তাও দেয় না। কিন্তু কপাল! যে মেয়েকে পাত্তা দিতে চায় সেই দিতে চায়না পাত্তা!
সেবা ফিরে তাকায় ওদের দিকে। দুই বান্ধবী আহ্লাদে গদগদ হয়ে গেছে। বড় সমস্যার সমাধান পেয়েছে বলে কথা।
সেবা চিন্তা করতে লাগল, জীবন বড়ই অদ্ভুত! যাকে তুমি চাও সে তোমায় চাইবে না। চাইবে অন্য কাউকে। সেই অন্যকেউ ‘তাকে’ চাইবে না। চাইবে অন্য ‘অন্যকেউকে’। মোট কথা যা চাইবা তার তা পাইবা না৷ আর যা পাইবা তা চাইবা না।
সেবা বিছানায় গা এলিয়ে দিল। ইস, সে যদি মিহি হত! চিন্তা করেই মৃদু হাসলো।

মিহির মনে এখন অনেক আনন্দ। সেই আনন্দে ঘুমই আসছে না তার। মুখে হাসির ঝিলিক নিয়ে এপাশ ওপাশ করছে। সে স্থির করেই নিয়েছে, অতি দ্রুত বাসায় ফিরবে।
আচমকা ফোন বেজে উঠল। মিহি হাসিমুখেই হাতে নিল। তবে সঙ্গে সঙ্গে ‘বিপদ’ লেখা দেখে মুখ চুপসে ফেলল।
দশটা মানে ত মোটামুটি ভালই রাত। এই সময়ে কেন ফোন দিয়েছে!
“কি রে! ঘুমের মধ্যে চ্যা চ্যা করে ফোন বাজে কার?” তমা চোখ বন্ধ অবস্থাতেই বিরক্ত হয়ে বলল কথাটা। সে মিহির থেকে কয়েক হাত দূরের বিছানায় আছে।
মিহি দ্রুত পাওয়ার বাটনে চাপ দিয়ে ফোনের আওয়াজ থামালো। তারপর ফোন রিসিভ করে কানে দিল।
সে তমার কথা মতই করবে। তাই এর আগে ছেলেটাকে সন্দেহ হতে দেওয়া যাবে না। নাটক চালিয়ে যেতে হবে।
“হ্যালো।” ফিসফিসিয়ে বলল মিহি।
“কাল আসতে হবে না।”
এটুকু শুনেই মিহি মহা শান্তি ত পেল। তবে সে শান্তি পরের কথাতেই গায়েব হয়ে গেল।
“কাল আমিই ভার্সিটিতে একটা কাজে যাব। তখন দেখা করব।”
মিহির চোখে মুখে হতাশা চলে এলো। কিন্তু তাও সুন্দর ভাবে জবাব দিল,”আচ্ছা ভাইয়া।”
“কে তোমার ভাইয়া?” বিরক্তির সাথে বলল এরোন।
মিহি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। ভুলেই গিয়েছিল ‘ভাইয়া’ বলা যাবে না এই বিপদকে।
“ত কি বলবো!” মিনমিনে গলায় বলল মিহি।
“জানিনা। তবে ভাইয়া বলবা না। তাহলে দেখা যাবে বিয়ের পরেও এই ফালতু অভ্যাস রয়ে গেছে।” এরোনের কথায় প্রচুর পরিমান সিরিয়াস ভাব।
বিয়ে! বিয়ে কে করবে? হুহ! নেশাখোর, গুন্ডা ছেলে কোথাকার! মনে মনে বলল মিহি।
“বুঝেছো?” জিজ্ঞেস করলো এরোন। সে এখনো সিরিয়াস।
“হু।” বলেই মুখ ভেংচি দিল মিহি।
ওপাশ থেকে এরোন আর কিছু বলল না।
মিহি একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো কারণ হয়তো এখন আবার ফোন ধরে শুয়ে থাকতে হবে। কি জ্বালা!
তবে কয়েক সেকেন্ডের মাথায় এরোন আলতো গলায় বলে উঠল, “কাপকেক।”
মিহি কিছু না বলে ভ্রুকুটি করল।
“তোমাকে মিস করছি আমি। দেখতে ইচ্ছে করছে।”
মিহি থতমত খেয়ে গেল।
এখন যদি বলে আবার স্টেডিয়ামে আসো! ভেবেই গলা শুকিয়ে গেল মিহির।
“ম…ম…মানে!”
এরোন মৃদু হেসে খোটা দিয়ে বলল,”লাভ লেটার দিয়েছো কিন্তু লাভ সাভ ত কিছুই বোঝো না!”
শুনে মিহি মনে মনে বলল, তোমার সাথে কোনো লাভসাভ বুঝতে চাইনা, করতেও চাই না। হুহ।
“কবে থেকে পছন্দ করো?” গলার স্বরে আবার সিরিয়াস ভাব চলে এল এরোনের।
মিহি আরেক দফা থতমত খেয়ে গেল।
এখন কি বলবে ও! তমার বলা কথামত নাটক চালিয়ে যাবে! কিন্তু মিথ্যা বললেও বা কি বলবে! তাই-ই ত ভেবে পাচ্ছে না!
“কি?”
এরোনের গলা পেয়ে মিহি ভাবনা থেকে বের হলো। চিন্তা করলো কি বলা যায়। কিছু ভেবে না পেয়ে চোখমুখ খিচে বন্ধ করে বলে ফেলল, “জানিনা আমি।”
এরোন মুচকি হাসলো। একটা ভালো লাগার অনুভূতি ঘিরে ধরলো তাকে।
অন্যদিকে মিহি হালকা অসস্তিতে পরে গেল। মিথ্যা বলার ফল খারাপ হবে না ত!

(চলবে….)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here