#মোহ_মায়া
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_ ১০
স্তব্ধতার রেশ কাটিয়ে উঠতে পারছি না। নিজেকে বরাবরের মতোই বড্ড বোকা মনে হচ্ছে। আমিই বা কি না কি ভেবে বসে আছি। সম্রাট ভাইয়ার এতটা পরিবর্তন চোখে লাগার মতো। হয়ত তাদের মধ্যে অনেক বেশিই ভালবাসা আছে।তাই সে তার জন্য এতটা চিন্তিত।ভাবতেই তাচ্ছিল্যের হাসি আসলো আমার।
ভালবাসা তো থাকারই কথা। অন্তত পক্ষে আমিতো জানি,সে চমৎকার ভাবে ভালবাসতে জানে। তার মিথ্যা ভালবাসার কাছে যদি আমি এভাবে কাবু হতে পারি তাহলে না জানি তার সত্যি ভালবাসা কতটা প্রখর! ভাবতেই লোভ হয় সেই ভালবাসা পাওয়ার।
– আন্টি আমি বাসায় যাচ্ছি।কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবো।
কথাটা বলতেই আন্টি আমার দিকে তাকালো। কিছুক্ষন এক ধ্যানে তাকিয়ে থেকেই ডুকরে কেঁদে উঠলো।
– আমার কাছে বসে থাক মা।আমার সাফা দেখলি তো কিভাবে চলে গেলো মাকে রেখে!আমার মেয়েটা আমাকে আর মা বলে ডাকবে না আদু।আমি কিভাবে থাকবো।আল্লাহ আমাকে কেন নিয়ে গেলেন না।আমার মেয়েটা কিভাবে আছে ওই অন্ধকার কবরে।
কথা গুলো বলেই চিৎকার করে কাদতে শুরু করলেন আন্টি। তার কান্না দেখে সবার চোখে পানি চলে আসলো। আমি নিজের কান্না কোন ভাবেই আটকে রাখতে পারছি না।আন্টির সামনে কাদলে আন্টি আরো ভেঙে পরবে।তাই নিজেকে যথাসম্ভব সামলে আন্টিকে জরিয়ে ধরে রাখলাম।
– কেদো না।আমি কোথাও যাচ্ছি না।আমিও তো তোমার মেয়ে।আমি আছি তো।তুমি এমন করলে আল্লাহ পাক নারাজ হবেন।সাফা আপুর জন্য দোয়া করো।আল্লাহ যেন তাকে ক্ষমা করে দেন।মায়ের দুয়া আল্লাহ তারাতাড়ি কবুল করে নেন।
– হুম।আমার মেয়ের জন্য দুয়া করতে হবে।আমি নামাজ পড়বো।আমাকে ওয়াশরুমে নিয়ে যা।
আমি আন্টিকে ধরে ওয়াশরুমের সামনে নিয়ে গেলাম।আর সবাইকে রুম খালি করতে বললাম।কিছু কিছু মহিলা বাকা চোখে তাকিয়েছে। তাতে আমার কিছু যায় আসে না।নামাজ সব সময় নিরিবিলি জায়গায় পড়া ভালো। তাতে ইবাদতে মন বসে।
———————- ———————-
দুই সপ্তাহ কেটে গেছে।সম্রাট ভাইয়ারা এখনো ঢাকা থেকে আসে নি।হয়তো এখনো মারিয়া আপুকে খুঁজে পাওয়া যায় নি।কোথায় আছে বেচারি কে জানে।যেখানেই থাকুক সুস্থ থাকুক এই দোয়া করি।আমার ভালবাসার মানুষ এর ভালবাসা বলে কথা।
– আদু,,,তারাতাড়ি রেডি হয়ে আয়।আমাদের দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।
মায়ের কথায় ধ্যান ভাংলো। আজ আমাদের নারায়ণগঞ্জ ফিরে যাওয়ার কথা। আন্টি এখন একটু ঠিক আছেন। নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়েছেন। সারাদিন নামাজ নিয়ে থাকেন। আল্লাহ তায়ালা তাকে সবর দিক।
বোরখা হিজাব পড়েই বেরিয়ে পরলাম। মা কোন ভাবেই আর এখানে থাকতে চাইছেন না।এতো কিছুর পরেও কিছু কিছু মানুষ আমাদের এখনো কথা শুনাতে ছারেন নি।তারা যদি একবার বুঝতে পারতো তাদের এই বিষাক্ত কথা অন্য মানুষটাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে তাহলে হয়তো তারা কখনো এই কাজ করতো না।
🍁
– আংকেল, মারিয়াকে নারী পাচারকারী চক্র কিডন্যাপ করেছে।
সম্রাটের কথা শুনে মারিয়ার বাবা ধপ করে সোফায় বসে পরলেন। মেয়ের এমন করুন পরিনতি তিনি স্বপ্নে ও ভাবেনি।এখন বুঝতে পারছে, সাফার সাথে তারা কতটা অন্যায় করেছে।এদিকে তার ছেলের কোন খবর পাওয়া যাচ্ছে না। মানুষিকভাবে প্রচন্ডরকম ভেঙে পরেছে সে।
– এখন কি হবে বাবা।আমার মেয়েটাকে ফিরে পাব তো?
– জানি না আংকেল। আমাকে একজন আজকে জানালো বিষয় টি। আমি কিছু মানুষ চারিদিকে ছড়িয়ে দিয়েছি মারিয়াকে খুজতে। তার মধ্যেই একজন বললো।
আফসোস করে কথা গুলো বললো সম্রাট। যেন সে মারিয়ার জন্য খুব কষ্ট পাচ্ছে।
মারিয়ার বাবা শব্দ করে কেদে উঠলেন। মেয়ের সাথে কি কি হতে পারে ভাবতেই তার কলিজা মোচড় দিয়ে উঠছে।
– আমার মেয়ে কে উদ্ধার করে নিয়ে এসো।না জানি আমার মেয়েটা কোন হালে আছে।
– ওকে নাকি প্রতি রাতে কয়েক জনের কাছে বিক্রি করা হয়।অনবরত ধর্ষন হচ্ছে সে।আর ওখানে পুলিশ কিছুই করতে পারবে না আংকেল।ওদের অনেক পাওয়ার। অই ছেলে তো ওদের নাম টা ও বললো না আমাকে।শুধু খবর টুকু জানিয়েই বিদায় নিলো।আপনার তো অনেক পাওয়ার। দেখুন আপনি কিছু করতে পারেন কি না!
মারিয়ার বাবা স্থির হয়ে বসে আছে। অতিরিক্ত শকে সে কোন কথাই বলতে পারছে না।
– আমরা আসছি আংকেল।এখন এমন একটা মেয়েকে তো আর বিয়ে করা যায় না।(তাচ্ছিল্যের স্বরে) আপনার মেয়েকে আপনি খুজে বের করবেন আশা করি।
– এসব তুমি কি বলছো বাবা?আমার মেয়েটাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। আর তুমি এখন এই কথা বলছো?
– আপনি ভাবলেন কি করে আমি একটা পতিতাকে বিয়ে করবো! আমার একটা সম্মান আছে।পতিতা-দের তো আর ঘরের বউ করা যায় না।এখন আমার চরিত্র ভালো, নাহলে আপনার মেয়েকে টাকা দিলেই একরাতের জন্য পাওয়া যাবে।ওকে বিয়ে করবে কে?
চলে এসো ভাইয়া।এদের সাথে কথা বলতেই রুচিতে বাধছে।
যুবরাজ এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে মারিয়ার বাবার দিকে।এই লোকটার জন্য আজ তার বোন কবরে শুয়ে আছে। কতটা কষ্ট দিয়ে মেরেছে ওকে।ভাবতেই চোখ গুলো ভয়ংকর লাল হয়ে গেলো যুবরাজের। এখানে থাকলে যে কোন একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে তাই সম্রাট ওকে টেনে তুলে বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে।
মারিয়ার বাবা হতভম্ব হয়ে বসে আছে। এগুলো তাদের কর্মফল সেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে সে।মেয়ের পাগলামি তে সায় দিয়ে নিজের জন্য ই গজব ডেকে এনেছেন তিনি।
🍁
আমি ওই লোকটা কে খুন করে ফেলবো ভাই।ওকে শ্বাস নিতে দেখলে আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।ও এখনো বেচে আছে এটা ভাবতেই আমার গায়ে আগুন জ্বলে উঠে।
গাড়িতে স্ব জোরে ঘুসি দিয়ে কথাটা বললো যুবরাজ।
শান্ত হও ভাইয়া।ওনাকে এতো সহজে মারবো না।তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে মারবো।আমার বোনের কস্টের হিসাব ওদের দিতে হবে।
চোয়াল শক্ত করে কথাটা বলতেই ফোন বেজে উঠল সম্রাটের।
– হ্যালো,,
– ভাই,ভাবি তো আবার চলে গেছে। কিছুক্ষন আগেই বেরিয়েছে।
সম্রাটের চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেলো। মেয়েটা অনেক বার বেরেছে। এবার এর লাগাম টানতে হবে।
– আচ্ছা ঠিক আছে। তুই নজর রাখ।আমি আসছি বাসায়।
– ঠিক আছে ভাই।
ফোন কেটে গাড়িতে উঠে বসলো সম্রাট। যুবরাজ বসতেই গাড়ি চালাতে শুরু করলো সম্রাট।
🍁
নারায়ণগঞ্জ পৌছাতেই সায়েম ভাইয়ার সাথে দেখা হলো। খালা মনির ছোট ছেলে সে।প্রচুর দুস্ট।
– কিরে বরিশালের মনু।কি খবর তোর?
মুহুর্তেই মিজাজটা খারাপ হয়ে গেলো। ভাইয়া সব সময় এমন করে আমার সাথে।
– যাও তো।নিজের কাজে যাও।অকর্মার মতো সারাদিন বাড়িতে বসে থেকে হাতির মতো মোটা হচ্ছ।কয়েক দিন পর বেলুনের মতো উরে যাবে।দরজা কেটে বের করতে হবে তোমাকে। (বিরক্ত হয়ে)
ভাইয়া হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ভাইয়া মোটেও মোটা নয়।জীম করা বডি তার।তাই আমার কথা গুলো শুনে আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে।
– এই তোর চোখে সমস্যা হলো কবে থেকে!(ভ্রু কুচকে) আমাকে তোর মোটা মনে হয়? (অবাক হয়ে)
– আলবাত মনে হয়। তুমিতো মোটাই।তোমাকে দেখলেই আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। একটা মানুষ এমন হাতির মতো শরির নিয়ে কিভাবে থাকতে পারে! আমার খালামনি অনেক বড় মনের মানুষ তাই তোমাকে বাড়িতে জায়গা দিয়েছে। অন্য কেউ হলে চিড়িয়াখানায় দিয়ে আসতো। সরো তো,দরজা তো নিজেই এই অবাস্তব শরীর নিয়ে ব্লক করে রেখেছ।আমার মতো অবলা নারী ঢুকবে কিভাবে।
ভাইয়াকে ধাক্কা দিয়ে সরাতেই ভাইয়া চেচিয়ে খালা মনি কে ডাকা শুরু করলো। আমার মাকে কয়েকশ নালিশ করে ফেলেছে এতক্ষণে।
চলবে,,,,,