মোহ_মায়া #সানজিদা_বিনতে_সফি #পর্ব_১১

0
433

#মোহ_মায়া
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_১১

নিস্তব্ধ রাতে বারান্দায় নিজের দুঃখ বিলাশ করছি।মনের মধ্যে একরাশ অভিযোগ এসে জমা হয়েছে। সম্রাট ভাইয়ার বদলে যাওয়া কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছি না। লোকটা একটা অসভ্য, বর্বর।আমাকে কতো কষ্ট দিচ্ছে!আমার কষ্ট তার চোখেই পরছে না।
সম্রাট ভাইয়া,আপনি একটা আস্ত ঢেড়স।
চিৎকার করে কথাটা বলেই নিজের মুখ চেপে ধরলাম। এতো রাতে অসভ্যের মতো চিৎকার করছি শুনলে মা আমাকে ঝাটা পিটা করবে।

– আগে তো জানতাম তোর মাথায় সমস্যা। এখন দেখছি তোর গলায় ও সমস্যা।

পাশের বারান্দা থেকে সায়েম ভাইয়া কথাটা বলতেই আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম। এই আপদ আবার কখন এসে হাজির হলো!আমি কি একটু নিজের মতো করে দুঃখ বিলাস ও করতে পারবো না নাকি?আজব!

– তাতে তোমার কি?আমার গলা ইজ আমার গলা,নান অফ ইয়ুর গলা।

ভাব নিয়ে কথাটা বলতেই সায়েম ভাইয়া আর্তনাদ করে উঠলো।

– এগুলো কোন ধরনের কথা আদু।তোর মধ্যে নুন্যতম মানবিকতা নাই!এত রাতে কাকের মত চিৎকার করে তুই আমাদের মত ম্যাংগো পিপলের হার্ট এট্যাক করাতে পারিস না।আমি মেনে নিবো না।আমি এর ঘোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

আমি কিছুক্ষণ আহাম্মকের মতো তাকিয়ে থেকে অসহায় গলায় জানতে চাইলাম,

– ম্যাংগো পিপল কি ভাইয়া?

– আম জনতা।(ভাব নিয়ে)

বিরক্তিতে আমার নাক মুখ কুচকে এলো। মানুষ কতটা বেহুদা হলে এমন ফালতু কথা বলতে পারে।

– এই যাও তো তুমি।আমার তোমাকে অসহ্য লাগছে। তুমি একটা অসহ্যকর মানুষ। (চিৎকার করে)

আমার চিৎকারে ভাইয়া কানে আঙুল দিয়ে রুমের ভিতর চলে গেলো।
আমার আর দুঃখ বিলাস করা হলো না। রুমে এসে চুপচাপ শুয়ে পরলাম। আমি আর কারোর কথা ভাববো না।কথাটা চিন্তা করতেই আবার মাথায় এলো সম্রাট ভাইয়া এখন কি করছে।সে কি খুব কষ্ট পাচ্ছে? মারিয়া আপুর জন্য খুব মন খারাপ করে আছে?
নিজের বেহায়াপনা দেখে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। নিজেকে কিছু জঘন্য গালি দিয়ে টানটান হয়ে শুয়ে পরলাম।

———————-
তোর বোনের কি খবর?

– তুই ঢেড়স এটা পুরো মহল্লার মানুষকে চিৎকার করে জানাচ্ছে।

কথাটা বলে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে সায়েম।ফোনের ওপাশ থেকে দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শুনা গেলো।

হাসি বন্ধ করে সিরিয়াস ভংগিতে সায়েম বললো,

– দেখ সোম।আমি তোকে সম্পুর্ন বিশ্বাস করি।আমি জানি তুই কোন ভুল করবি না। আমার বোনটা খুব কষ্ট পাচ্ছে। হয়তো দেখাচ্ছে না।নিজেকে খুব স্ট্রং দেখাতে চাইছে। কিন্তু আমরা সবাই জানি ও খুব নরম মনের মানুষ। ওকে আর কষ্ট দিস না।

– আমার জান ও।আমি ওকে কিভাবে কষ্ট দিব বল!তবে পরিস্থিতির কারনে না চাইতেও আদুকে অনেকটা সাফার করতে হলো। আমি সব সামলে নিব।চিন্তা করিস না। কাল একবার আন্টিকে তোদের বাসার পাশের ক্যাফেতে নিয়ে আসিস।জরুরি কিছু কথা আছে।

– আচ্ছা নিয়ে আসবো।

– রাখছি।

– হুম।

কল কেটে জানালার দিকে তাকালো সম্রাট। আদওয়ার রুমটা চাদের আলোতে স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে।

– তোকে আমি খুব তারাতাড়ি আমার বুকের খাচায় বন্দি করবো পাখি।তার আগে কয়েক জনের সাথে হিসাব মিলানো বাকি।খুব শীঘ্রই দেখা হচ্ছে।

আদওয়ার রুমের দিকে তাকিয়ে থেকেই ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেল সম্রাট।

———————-

– আদু,,এই আদু।উঠ না রে বোন। দেখ কে এসেছে!

ভাইয়ার অতি উৎসাহের সাথে বলা কথাটা শুনে আমার খুব একটা ভাবাবেগ হল না। সে সব কিছু নিয়ে ওভার রিয়েক্ট করে।তবে এই মুহুর্তে আমার ঘুমের বারোটা বাজানোর জন্য তাকে আমার হাল্কার উপর মেরে দিতে ইচ্ছে করছে।

– উফফ ভাইয়া। কি শুরু করলা।ঘুমাব আমি। (বিরক্ত হয়ে)

– নিচে সম্রাট ভাইয়া বসে আছে। (শান্ত স্বরে)

কথাটা শুনতেই লাফিয়ে উঠলাম। উনি,,উনি কেন এসেছেন? বিয়ের দাওয়াত দিতে নাকি? আমরা কি তার বিয়েতে যাওয়ার জন্য মরে যাচ্ছি নাকি!এখানে এসে আমার কলিজা জ্বালানোর কোন দরকার ছিল না।
কথা গুলো ভাবতেই আবার শুয়ে পরলাম। যাব না ওই লোকের সামনে।সে থাক তার মারিয়া কে নিয়ে।

– আমি ঘুমাবো।আমাকে আর বিরক্ত করবে না।(গম্ভীর গলায়)

ভাইয়া নিরাশ হয়ে বেরিয়ে গেলো। আমি কিছুতেই নিচে যাব না। আমার অনুভূতির মূল্য যার কাছে নেই তার সামনে নিজেকে সস্তা বানানোর কোন ইচ্ছা নাই। আমি নিজেকে সামলে নিতে পারবো।

কারোর পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। ভাইয়া হয়তো আবার আসছে।বুঝলাম না,আমার ভাই হয়ে সে ওই লোকের সাইড নিয়ে কথা কেন বলে!আমি কি তার কুরিয়ে পাওয়া বোন নাকি।
ধপাস করে পাশে কেউ শুয়ে পরতেই ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলাম।

– উফফ ভাইয়া তুমি আবার এসেছো!তুমি এখন আমার রুম থেকে যাও।আমি একা থাকতে চাই।

– তাই নাকি?

– হ…

লাফিয়ে উঠে বসতেই সম্রাট ভাইয়ার বাকা হাসি যুক্ত মুখটা দেখতে পেলাম।

– সো…. হট।(শয়তানি হেসে)

নিজের দিকে তাকাতেই আমার অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা। বালিশের পাশ থেকে ওড়নাটা নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নিলাম।

– অসভ্য। (বিরবির করে)

– এখনোত কিছুই করলাম না।

– এখানে কেন এসেছেন? একটা মেয়ের রুমে নক না করে ঢুকে পরা কোন ধরনের ভদ্রতা?(মুখ ঘুরিয়ে)

– আমি প্রথম থেকেই অভদ্র।শুধু তোকে দেখানো হলো না। আমি যে কতটা অসভ্য এটা জানলে বোরকা ছাড়া আমার সামনে আসতি না।

আমার চোখের দিকে তাকিয়ে শান্ত ভাবে কথাটা বলতেই আমি থমকে গেলাম। এই লোকটার নষ্ট কথা শুনে কবে জানি আমি বেহুশ হয়ে যাই।

– দে দেখুন…

– দেখা।

আমাকে পুরো কথা না বলতে দিয়েই মাঝখানে বলে বসলেন। আমি তব্দা খেয়ে বসে আছি।কি সব বলছে! আমি একটু জড়োসড়ো হয়ে বসতেই আমাকে কাছে টেনে নিলেন।

– আজকে বাসর না করে যাচ্ছি না। (ঘোর লাগা কন্ঠে)

– কি?(অবাক হয়ে)আপনি এমন করছেন কেন? আপনার শরীর ঠিক আছে? জ্বর হলো না তো?

উদ্বিগ্ন হয়ে কপালে হাত রাখতেই উনি আমার হাত ধরে ফেললেন। মোহনীয় কন্ঠে বললেন,

– আমি তোকে প্রচন্ড ভালবাসি জান।একটু বিশ্বাস কি আমি তোর কাছে আশা করতে পারি না?

আমি ঝট করে দূরে সরে গেলাম। এতক্ষন আমি একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। এখন আমার সব কিছু মনে পড়ে গেছে। নিজেকে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ করে শক্ত গলায় বললাম,

– আপনি আমার রুম থেকে বেরিয়ে যান ভাইয়া।আমি এখানে নতুন করে বদনাম হতে চাইছি না। প্লিজ।

হাত দিয়ে বেরিয়ে যেতে ইশারা করতেই সম্রাট ভাইয়া চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে গেলেন।

– যাব তো অবশ্যই।এখানে থাকতে আসি নি।তবে আমি চাই না আমার বিয়েতে কোন রকম সমস্যা হোক।তাই এই পেপারে একটা সাইন করে দে।

– এটা কিসের পেপার? (আশ্চর্য হয়ে)

– এখানে লেখা আছে তুই আমার বিয়েতে কোন রকম ঝামেলা করবি না। হতেই পারে বিয়ের দিন গিয়ে বললি আমি আপনার বাচ্চার মা হতে চলেছি। তখন আর আমার বিয়ে করা হবে না।তাই সব আগে থেকে ঠিক করে রাখছি।

রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে। মন চাচ্ছে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে দাত গুলো সব খুলে নেই।

– আপনার বাচ্চার মা হওয়ার কোন ইচ্ছে নেই আমার।আমার বাচ্চার বাবা কখনো আপনার মতো ফালতু লোক হবে না। আমি হতে দিবো না।দিন আমি সাইন করে দিচ্ছি।

পেপার এগিয়ে দিতেই আমি গটগট করে সাইন করে দিলাম। এবার মারিয়াকে বিয়ে করে চাঁদে চলে যাক।তাতে আমার কি।ফাজিল মানুষ।
পেপার টা আমার হাত থেকে নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো সম্রাট ভাইয়া। আমিও হতাশ হয়ে বসে পরলাম। কষ্ট হচ্ছে খুব। হারানোর ব্যাথা বুঝি এরকমই হয়!
দরজা বন্ধ করার শব্দে সামনে তাকাতেই আমার চোখ গুলো বড় হয়ে গেলো। কি ব্যাপার, উনি দরজা লক করছেন কেন?

– আপনি দরজা বন্ধ করছেন কেন? (কাপা কাপা গলায়)

আস্তে আস্তে আমার কাছাকাছি এসে দাড়ালো। আমার দিকে ঝুকে কিছুক্ষণ নেশা ভরা চোখে তাকিয়ে আস্তে করে বললেন,

– সরি,,,,

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বিছানার সাথে চেপে ধরে ঠোঁট জোড়া দখল করে নিলেন।

চলবে,,,,

(আমি রোমান্টিক কথা লিখতে পাড়ি এটা চিন্তা করে কোমায় চলে যাওয়া আমার নিস্পাপ মন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here