মোহ_মায়া #সানজিদা_বিনতে_সফি #পর্ব_১২

0
452

#মোহ_মায়া
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_১২

– সরি,,,,

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বিছানার সাথে চেপে ধরে ঠোঁট জোড়া দখল করে নিলেন।

বিস্ময়ে আমার কথা বন্ধ হয়ে গেছে। কি হলো এটা।সম্ভতি ফিরে পেতেই নিজেকে ছাড়াতে ব্যাস্ত হয়ে পরলাম। হাত পা ছোড়াছুড়ি করতেই আমার ঠোঁট জোড়া ছেড়ে আমার দিকে তাকালো সম্রাট ভাইয়া। আটকে যাওয়া নিশ্বাস ছাড়তে জোরে জোরে শ্বাস নিতে শুরু করলাম।

– এইভাবে নড়াচড়া করলে আদর কিভাবে করবো সোনা।তুমিত একেবারেই রোমান্টিক না বাবু।যাও আজকে ছেড়ে দিলাম।এটুকুই যথেষ্ট। আবার পরে হবে।এখন ভালো মেয়ের মতো রেডি হয়ে আসো তো।আমরা বাড়ি যাবো।
এতক্ষণ দুষ্টু ভাবে কথা গুলো বললেও শেষের কথা টা একটু গম্ভীর গলায় বললো।
আমি হঠাৎ করে এতটা শক নিতে পারছি না। তাই রোবটের মতো বসে আছি।

– কি বললাম শুনতে পাও নি?(ধমকে)

– আমি কোথাও যাবো না।আপনি আমার সাথে এমন কেন করছেন? প্লিজ চলে যান।আপনার আজকের ব্যবহার আমি কোন দিন ভুলবো না। ঘৃণা হচ্ছে আমার এটা ভেবে যে,আমি আপনাকে ভালোবেসে ছিলাম।ছিঃ

আমি মুখ ফিরিয়ে নিতেই সম্রাট ভাইয়া আমার উপর থেকে সরে গেলেন। আমি উঠে বসতেই আমার গাল চেপে ধরে হিসহিসিয়ে বললেন,

– এতো তেজ দেখিও না সোনা।তোমার তেজ ভাংতে আমার খুব একটা ভালো লাগবে না জান।তুমি কি ভাবলে তাতে আমার কিছুই যায় আসে না। আমি শুধু এতোটুকু জানি, আদওয়া আমার,শুধুই আমার। ভালোবাসা দিচ্ছি চুপচাপ নিয়ে নাও।বেশি তিরিং বিরিং করলে হাত পা ভেঙে তারপর ভালোবাসবো। ইউ নো না,আই হেইট ডিস্টর্বেন্স। আমি নিচে যাচ্ছি। দশ মিনিটের মধ্যে নিচে আসবে।আর তোমার মাকে বলবে তুমি আমাকে ভালোবাসো আর আমার সাথে যেতে চাও। কথার নড়চড় যেন না হয়।

ঠান্ডা মাথায় হুমকি দিয়ে চলে গেলো। আমি এখনো আগের মতো বসে আছি।কেউ আমাকে বলবে, কি হচ্ছে এসব!যাবো না নিচে। দেখি কি করে। আমি কাওকে ভয় পাই না।আমার সাথে জোর জবরদস্তি একদম চলবে না।
রাগে বালিশ নিচে ছুড়ে মারতেই সায়ান ভাইয়া হাজির হলেন।

– বেচারা বালিশ কি দোষ করলো? (অবাক হয়ে)

– বেরিয়ে যাও আমার রুম থেকে। (চিৎকার করে)

– আমি কেন বেরুবো?এটা আমার বাড়ি! তুই বের হ।কোন বিবাহিত মহিলা আমাদের বাড়িতে এভাবে ষাড়ের মতো চিল্লাবে তা আমি কখনো মেনে নেবো না।

– মহিলা!এই আমাকে দেখতে কোন এঙেল থেকে মহিলা মনে হয়? (রেগে)।আর আমার এখনো বিয়ে হয় নি।খালামনি(চিল্লিয়ে),তোমার ছেলে এখন দিনের বেলায়ও নেশা করে।

– কি করছিস বরিশালনি।(মুখ চেপে ধরে) আম্মু আমাকে খেতে দিবে না।আর ঝাড়ুর বারি তো আছেই।চুপচাপ বাইরে যা।মনি তোকে ডাকছে।

আমি উমউম করতেই ভাইয়া মুখ ছেড়ে দিলো।

আমি ওর দিকে কটমট করে তাকিয়ে নিচে চলে গেলাম। নিচের পরিবেশ অনেকটা থমথমে মনে হলো। সম্রাট ভাইয়ার পাশের সোফায় মা মুখ ভার করে বসে আছে। খালা মনি একটু পরপর দুজনের দিকে তাকাচ্ছে। আমি কিছুটা সামনে গিয়ে দাড়াতেই মা আমার গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় মারলেন। মুহুর্তের মধ্যে ড্রয়িং রুমে আরো স্তব্ধতা ছেয়ে গেলো।

সম্রাট ভাইয়া দাড়িয়ে গেছেন আমাকে চড় মারতে দেখে।আমার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে মায়ের দিকে শক্ত করে তাকালেন তিনি। দ্রুত গতিতে এসে আমাকে নিজের বুকে আগলে ধরলেন।
আমি এখনো কিছু বুঝতে পারছি না। ঠোঁটের কোনে তরল কিছুর আভাস পেতেই হাত দিয়ে বুঝতে পারলাম ঠোঁট কেটে রক্ত ঝড়ছে।চোখ থেকে দুফোঁটা পানি বেরুতেই ভাইয়া এসে আরেক পাশ থেকে আগলে ধরলেন।

– আপনি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন আন্টি। নিজের জেদ দেখাতে গিয়ে আপনি ওকে আঘাত করতে পারেন না।
সম্রাট ভাইয়ার তেজি কন্ঠ শুনে মা আরো বেশি রেগে গেলেন।দাতে দাত চেপে শক্ত গলায় বললেন,

– আমার মেয়ের সাথে আমি কি করবো তা তোমার কাছ থেকে জানতে হবে আমাকে? নিজের সীমার মধ্যে থাকো।আমার মেয়েকে কিভাবে শাসন করবো তা আমি খুব ভালো করে জানি। মেয়ে যদি পচা শামুকে পা কাটে তাহলে মা হিসেবে সেটা আমাকেই সারিয়ে তুলতে হবে। বেরিয়ে যাও।তোমার সাথে আমি আর কোন কথা বাড়াতে চাইছি না।

মায়ের শক্ত কথায় সম্রাট ভাইয়া বাকা হাসলেন। মায়ের সামনেই আমার ঠোঁটের কিনারা থেকে রক্ত মুছে দিয়ে আলতো করে মাথায় চুমু খেলেন।তারপর মায়ের সামনে গিয়ে দাড়ালেন,শান্ত ভাবে বললেন,

– ঠিক পঁচিশ মিনিট আগে ও আপনার মেয়ে ছিল।এখন আমার স্ত্রী। তার উপরে হাত তুলে আপনি একদম ঠিক করেন নি।নেহাৎ আপনি ওর মা,তাই কিছু বললাম না।দ্বিতীয় বার সম্রাট মাহতাবের স্ত্রীর গায়ে আঘাত করার আগে একশ বার ভাববেন আশা করি।অন্যায় ভাবে ওর গায়ে হাত তোলার অধিকার আমি কাওকে দিবো না।আপনাকে ও না।সব কিছু জানার পরেও আপনার এই জেদ আমার কাছে শুধু নিষ্ঠুরতা মনে হচ্ছে। নিজেকে একবার আমার জায়গায় দাড় করিয়ে দেখুন। আমি ঠিক ছিলাম, নাকি ভুল!

তাদের কথা শুনে আমার মাথা চক্কর দিতে শুরু করলো। কি হচ্ছে সব আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

– কি বলছেন আপনি এসব! কে কার স্ত্রী? মায়ের সাথে এভাবে কথা বলছেন কেন?(অবাক হয়ে)

আমার কথা শুনে মা আমার দিকে তেড়ে আসতেই খালা মনি মাকে আটকালেন।

-আহা থাম তুই। ওভার রিয়েক্ট কেন করছিস।যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এখন সব কিছু মেনে নে।

– কি বলছো আপা!সব কিছু মেনে নেয়া কি এতই সহজ? এই ওদের জন্য আমাকে বাড়ি ঘর সব কিছু ছেড়ে এখানে চলে আসতে হলো। মানুষের অপমান সহ্য করেছি।তবুও ওকে কিছু বলিনি।আমার বিশ্বাসের এই মুল্য দিলো ও!

কথা গুলো বলতে বলতে ডুকরে কেঁদে উঠলো মা।আমি এখনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি সবার দিকে। এখনো আমার কাছে কিছুই পরিস্কার নয়।

– এ এসব ক কি বলছো মা!আমি কি করেছি?
কাপাকাপা গলায় প্রশ্ন করতেই গর্জে উঠলো মা। দাত কিরমির করে বললো,

– নাটক হচ্ছে। বিয়ে করে এখন বলছো তুমি কি করেছ? তোমার মতো মেয়ে আমার না থাকাই ভালো। বেরিয়ে যাও বাসা থেকে। (সম্রাটের দিকে তাকিয়ে) ওকে নিয়ে চলে যাও।আজ থেকে আমার কোন মেয়ে নেই।যে মেয়ে মানসম্মান জলাঞ্জলি দিয়ে এভাবে বিয়ে করতে পারে তার মতো মেয়ে আমার দরকার নেই। চলে যাও।

শেষর কথাটা এতটা চিৎকার করে বললো যে আমি কেপে উঠলাম।
সম্রাট ভাইয়া আর কোন কথা না বাড়িয়ে আমাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। আমি স্তব্ধ হয়ে আছি।তারা কিসের কথা বলছে কিছুই আমার মাথায় ঢুকছে না।মাথাটা প্রচন্ড ভারী ভারী লাগছে।হাত ধরে হাটা অবস্থায় নিস্তেজ হয়ে পরে যেতেই কেউ একজন আমাকে ধরে ফেললেন। শক্ত বাহুতে আবদ্ধ হতেই চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে গেলো।

আদওয়া কে হঠাৎ করে সেন্সলেস হতে দেখে ঘাবড়ে গেলো সম্রাট। আজকে যা কিছু হলো তা মেনে নেয়া আদওয়ার জন্য সহজ হবে না। কিন্তু তার ও তো কিছু করার ছিল না। কি করে সে তার ভালোবাসা কে অন্য কারো হতে দিবে!আদওয়াকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলো সম্রাট। কিছুক্ষণ তার মায়াভরা মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে আলতো করে চুমু খেলো তার কপালে। ঠোঁটের অনেকটা কেটে গেছে। হালকা ভাবে কাটা যায়গায় চুমু খেয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করলো। ড্রাইভিং করতে করতে ভাবতে লাগলো আজকের সকালের কথা,,,,

চলবে,,,

( সবাই একটু গঠন মুলক মন্তব্য করবেন আশা করি।ভালোবাসা সবাইকে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here