#মোহ_মায়া
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_১৩
সম্রাট চিন্তা করছে আজ সকালের কথা। কাল সায়েমের সাথে কথা শেষ করে সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়ে আদওয়ার আম্মুর সাথে দেখা করতে। সম্রাট জানে (রুবিনা বেগম) আদওয়ার আম্মু খুব রেগে আছেন তার উপর। কিন্তু সম্রাটের বিশ্বাস সব কিছু শুনে সে বুঝতে পারবেন তার অবস্থা।
নারায়ণগঞ্জ পৌছে সায়েম কে কল করতেই সায়েম সায়েম কিছুটা আমতা আমতা করতে থাকে। সম্রাট বুঝতে পারে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে।
– মেয়ে মানুষের মতো মিনমিন না করে আসল কথা টা বলে ফেল।
– দোস্ত।এখানে তো কাহিনি হয়ে গেছে। মনি আমাদের বলেছিল আদওয়া কে এখানে পড়াশোনা করার জন্য নিয়ে এসেছে, কিন্তু কাল মায়ের সাথে আলোচনা করতে শুনলাম মনি ওকে বিয়ে দিতে এখানে নিয়ে এসেছে।
– হোয়াট??
– হুম। সজিব কে তো জানিস।ওর সাথেই বিয়া পাকা কথা চলছে। সজিব কেমন ছেলে আমরা সবাই জানি।এমন কোন নেশা নেই যে ও করে না।অথচ বাড়িতে একদম সাধু সেজে থাকে বাস্টার্ড টা।মনি তো এমন প্রস্তাব পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে।আজকে নাকি আংটি পড়িয়ে যাবে।আমার মাথায় কিছুই আসছে না ভাই।কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। মনি কে সজিবের কথা বলতেই তেতে উঠলেন। ওনার ধারনা আমি তর জন্য সাফাই গাইছি।(অসহায় ভাবে)
সম্রাটের দুনিয়া থমকে গেলো। একটার পর একটা ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আদওয়াকে হারানোর কথা কল্পনা ও করতে পারে না।বাতাসে অক্সিজেন লেভেল কমে গেল নাকি।নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে কেন!
কোন রকম নিজেকে শান্ত করে সায়েম কে বললো,
– দেখ,আন্টি এখনো কিছু জানে না। তাই এমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি তাকে সব কিছু খুলে বলবো। তাহলে সে আর এই বিয়ে দিবে না। আমি কাল আংকেলের সাথে কথা বলেছি।আংকেল তো সব আগে থেকেই জানে।তাই সে কোন অমত করে নি।সাফা কে সে নিজের মেয়ের মতো দেখেছে।ওর মৃত্যু সম্পর্কে আংকেল সব কিছুই জানতো।ইভেন ভাইয়ার সাথে সে ও সাফাকে খুজেছে। আন্টি নিশ্চয়ই আমার পরিস্থিতি টা বুঝতে পারবেন।
এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে থামলো সম্রাট। অর কন্ঠে অস্থিরতা শুনে দির্ঘশ্বাস ছাড়লো সায়েম।ও জানে ওর মনি খুব একরোখা। তবে সম্রাটের বিশ্বাস ও ভেঙে দিতে ইচ্ছে করছে না।তাই ক্যাফেতে ওয়েট করতে বলে কল কেটে দিল সে।
🌸
– আসবো মনি?
– হুম আয়।কিছু বলবি?
– তুমি কি খুব ব্যাস্ত? না মানে একটু বেরুতাম তোমাকে নিয়ে।
ইতস্ততভাবে কথাটা বলতেই ভ্রু কুচকে তাকালো রুবিনা বেগম। অবাক হয়ে জানতে চাইলেন,
– আমাকে নিয়ে কোথায় যাবি?আমার কি ঘোরাঘুরি করার সময় আছে!তুই রাব্বি (আদওয়ার ভাই) কে নিয়ে যা।
– না আমি তোমাকেই নিয়ে যাবো। তারাতাড়ি রেডি হয়ে যাও।আমি আসছি।
তারাহুরো করে বেরিয়ে গেলো সায়েম।না হলে রুবিনা বেগম প্রশ্ন করে করে জান বের করে দিবে।
অগত্যা রুবিনা বেগম তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়লো সায়েমের সাথে।মোটামুটি ঠান্ডা পরিবেশে ও কুলকুল করে ঘেমে যাচ্ছে সায়েম।মনি কে সে যথেষ্ট পরিমান ভয় পায়।আজ নির্ঘাত নিজের কপালে ঝারুর বারি পরবে ভেবেই মুখটা শুকিয়ে গেলো সায়েমের।
ক্যাফেতে ঢুকেই শুকনো ঢোক গিললো সায়েম।সকাল সকাল হওয়ায় খুব একটা মানুষ নেই।সম্রাট কোনার একটা টেবিলে চুপ করে বসে আছে।
রুবিনা বেগম স্বাভাবিক ভাবেই গিয়ে টেবিলে বসলেন।সায়েম কাপাকাপা হাতে চেয়ার টেনে বসতেই সম্রাট মাথা তুলে রুবিনা বেগমের দিকে তাকালেন।লাল টকটকে চোখ দেখে কিছুটা ভরকে গেল রুবিনা বেগম।
– কি বলবে বলো।আমি জানি তুমিই আমাকে সায়েমকে দিয়ে এখানে এনেছো।বেশি সময় নেই আমার হাতে।যা বলার তারাতাড়ি বলো।
রুবিনা বেগমের কথার ধরন আজ একটু অন্যরকম লাগছে সম্রাটের কাছে।তবু্ও খুব শান্ত ভাবেই ও সব কিছু খুলে বললো রুবিনা বেগমের কাছে।শুধু মারিয়েকে মেরে ফেলার বিষয় টা চেপে গেলো।
– আমার অবস্থাটা একটু বোঝার চেষ্টা করুন আন্টি।আমি আমার বোনের জীবন বাচানোর জন্য সব কিছু করেছি।(অসহায় ভাবে)
– তো কোথায় তোমার বোন?বেচে আছে নিশ্চয়ই। যাকে বাচানোর জন্য এতকিছু তার তো বেচে থাকার কথা। কিন্তু সে বেচে নেই কেন।(নির্লিপ্ত ভাবে)
– মনি প্লিজ। কি সব আবোল তাবোল বলছো তুমি।আমরা সবাই জানি সাফার সাথে কি হয়েছে।এতে কারোর হাত নেই।সম্রাট ভাই হিসেবে নিজের বোনকে সেইফ করতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। একদল পশু যদি ওকে মেরে ফেলে তাহলে এখানে ওর কি দোষ।তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছ ও নিজের কলিজার টুকরো বোনকে হারিয়েছে। ওর পুরোনো ঘা তাজা করে দিয় না প্লিজ।
– তুই চুপ থাক।যা বুঝিস না তা নিয়ে কথা বলতে আসবি না।সাফার সাথে যা হয়েছে তাতে আমাদের কোন হাত নেই। তবু্ও আমাদের পদে পদে অপমানিত হতে হয়েছে। সবার কাছে আমার মেয়েকে চরিত্রহিন হতে হয়েছে। রাস্তার বখাটে ছেলেদের নোংরা কথা সহ্য করতে হয়েছে।কেন?,কি জন্য এইসব অপবাদ নিবে ও?কার জন্য?
– আমার জন্য। কারণ আমি ভালোবাসি আদু কে।
নিচের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলতেই তেতে উঠলেন রুবিনা বেগম। চিৎকার করে বললেন,
– তাহলে প্রতিবাদ করোনি কেন।ভালোবাসার মানুষকে কি কেউ এইভাবে ক্ষত বিক্ষত হতে ছেড়ে দেয়?সব কিছু দেখেও চুপ ছিলে কেন?
– আমার বোন আর আমার ভালোবাসা কে বাচানোর জন্য।
রুবিনা বেগম আর সায়েম দুজনেই অবাক হয়ে তাকালো সম্রাটের দিকে।
– মানে?কি বলতে চাইছিস?
– হুম।সাফার কোন খোঁজ পাচ্ছিলাম না।এদিকে জানতে পারলাম আদওয়াকে কেউ ফলো করছে। আমার বুঝতে বাকি রইলো না এটা কার কাজ।আদওয়ার পাশে আমি দাড়াতে পারতাম।কিন্তু আমার ভয় ছিল তাহলে ওরা সাফার কোন ক্ষতি করে দিতে পারে। আর আদওয়ার পাশে দাড়ালে ওরা সিউর হয়ে যেত আমি আদওয়াকে ভালোবাসি।তহলে ওরা ওকে মেরে ফেলতে এক মিনিট ও ভাবতো না।ওই সময় আদওয়ার সাথে সব সময় থাকা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। আর আমি কাওকে ভরসা করে আদওয়ার দ্বায়িত্ব দিতেও পারছিলাম না। কারণ কে শত্রুর সাথে হাত মিলিয়ে ফেলবে তার কোন বিশ্বাস নেই।
আমি আদুর পাশে না দারাতে ওদের বিশ্বাস হয়ে যায় আমি আমার আর আদুর মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই।আমি সব কিছু ঠিক করতে চেষ্টা করছিলাম।তার আগেই,,,
সম্রাটের চোখ থেকে এক ফোটা পানি বেরিয়ে গেলো।
রুবিনা বেগম এখনো আগের মতোই বসে আছে।
– আন্টি আমি আদু কে খুব ভালোবাসি। আপনি প্লিজ ওকে অন্য কোথাও বিয়ে দেয়ার কথা ভাববেন না।আর সজিব মোটেও ভালো ছেলে না। প্লিজ আমার কথা বিশ্বাস করুন।(অনুনয়ের স্বরে)
– তোমার কথা শেষ?
– আন্টি প্লিজ। আদু ও আমাকে ভালোবাসে।ও আমাকে ছাড়া ভালো থাকবে না।
-তাই নাকি! আদু ওটাই করবে যেটা আমি বলবো। দেখতে চাও?
ব্যাগ থেকে ফোন বের করে আদওয়াকে কল করলো রুবিনা বেগম।
– হ্যালো।
– আদু,আমি তোমার বিয়ে ঠিক করেছি।তোমার কোন আপত্তি আছে?
– কি বলছো মা!(অবাক হয়ে) বিয়ে মানে?
– হুম বিয়ে। মায়ের উপর ভরসা আছে তো?নাকি এখনো সম্রাট কে ভালোভাসো?
– এসব কি বলছো মা। সম্রাট ভাইয়ার কথা আসছে কেন?আর আমি এখন বিয়ে করতে চাই না।প্লিজ এইসব চিন্তা বন্ধ কর।
– হতেই পারে সম্রাট আবার তোমার কাছে ফিরে আসতে চাইলে তুমি আবার তার কাছে চলে গেলে।তাই তুমি বিয়েতে রাজি হচ্ছ না।
– এমন আর কখনো হবে না মা।আমি এমনিই বিয়ে করতে চাইছি না। আমি আমার ক্যারিয়ারে ফোকাস করতে চাইছি। তুমি এসব বাদ দাও।
– ক্যারিয়ার বিয়ের পরেও করতে পারবে।এখন শুধু আকদ করিয়ে রাখবো। আমি চাই তুমি এই বিয়েতে অমত না করো।
– তুমি যা ভালো বোঝ।
ফোন কেটে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম। মাকে মুখের ওপর না বলতে পারছিলাম না।না করেই কি করবো। আমার জন্য তো আর কম অপমানিত হতে হয় নি।তাই হয়তো বিয়ে দিয়ে আপোদ বিদায় করতে চাইছে। চোখ থেকে আপনা আপনি পানি চলে আসলো। কান্না করতে না চাইলে ও কান্না চলে আসে।বালিশে মুখ গুজে কাদতে কাদতে কখন ঘুমিয়ে গেছি বুঝতেই পারি নি।
এদিকে ফোন কেটে দাম্ভিকতার হাসি হাসলেন রুবিনা বেগম। তার মেয়ে তার অবাদ্ধ হবে না এটা সে ভালো করেই জানেন।
– আমি আমার মেয়ের জীবন তোমার সাথে জরাতে চাইছি না সম্রাট। আমি চাই আমার মেয়ে সুখে থাকুক।তোমার কাছে তা সম্ভব না। মানুষ সব সময় বলবে আমার মেয়ে তোমাকে ফাসিয়ে বিয়ে করেছে।আমি মা হয়ে কখনো তা মেনে নিতে পারবো না। তুমি তোমার লেভেলের কাওকে বিয়ে করো।আমার মেয়ের আকদ আজকে।আশা করবো কোন ঝামেলা করবে না।
রুবিনা বেগম বেরিয়ে যেতেই সম্রাট মাথা তুলে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। এতক্ষন তাদের কথা মাথা নিচু করে শুনছিলো সে।
পকেট থেকে ফোন বের করে কল করলো আদওয়ার বাবা কে।
– আংকেল,আমি আদওয়াকে আজকেই রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করতে চাই।
চলবে,,,,
(কালকের কমেন্ট পড়ে আমি অনেক টা হতাশ।একটু ধৈর্য ধরা উচিত ছিল। যাই হোক,আপনাদের জন্যই লেখা। ভালো খারাপ অবশ্যই জানানোর অধিকার আপনাদের আছে।আমার লেখা কে এতটা ভালবাসা দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। ভালোবাসা সবাইকে)