মোহ_মায়া #সানজিদা_বিনতে_সফি #পর্ব_১৬

0
418

#মোহ_মায়া
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_১৬

সকালের স্নিগ্ধ বাতাসে হালকা কেপে উঠলো সম্রাট। রাতে জানালাটা হয়তো লাগানো হয় নি। তার পরি পেক্ষিতেই এখন সকালের ঠান্ডা হাওয়া রুমে প্রবেশ করছে।চোখ পিটপিট করে খুলতেই নিজেকে বারান্দায় আবিষ্কার করলো সম্রাট।মাথাটা এখানো কেমন ভারি হয়ে আছে। কয়েক বার ঘাড় ঘুরিয়ে নিজেকে কিছুটা ধাতস্থ করে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।

এক ঘন্টা সময় ধরে গোসল করে বের হতেই যুবরাজ কে কফি নিয়ে বসে থাকতে দেখে তার দিকে এগিয়ে গেলো। যুবরাজ ভাইকে দেখে মুচকি হেসে কফির কাপ এগিয়ে দিলো।

– কি ব্যাপার! সকাল সকাল আমার বাসায় কি মনে করে?

– সকাল সকাল নয়।কাল রাত থেকেই আমি এখানে আছি।তুই তো ভাই নিজের হুসেই থাকিস না।আমাদের খবর রাখার সময় আছে নাকি তোর কাছে?

যুবরাজের কথায় হালকা মুচকি হাসলো সম্রাট।কফিতে চুমুক দিয়ে মুখ কুচকে ফেললো। ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আর কিছু না বলে পুনরায় কফিতে চুমুক দিলো।

– আগে কি করবি চিন্তা করেছিস?

– না।কিছুই করতে চাই না। যেমন আছে তেমন চলতে থাকুক।

সম্রাটের নির্লিপ্ত ভাব দেখে চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেলো যুবরাজের। অনেকটা রাগী গলায় বললো,

– দেবদাস হয়েছো?এই সব রঙ ঢং বন্ধ করে কাল থেকে অফিসে বসবে।কাল থেকে কেন,আজ থেকেই অফিসে যাবে।আমি এ বিষয়ে আর কোন কথা শুনতে চাই না তোমার কাছ থেকে। আমি আমার রুমে যাচ্ছি। এসে যেন তোমাকে রেডি পাই।

যুবরাজ উঠে চলে যেতেই সম্রাট সোফা থেকে উঠে বারান্দায় চলে গেলো। সব কিছু বিষাদময় লাগছে তার কাছে।ভাইকে কিভাবে বোঝাবে,তার মন যে কোন জায়গায় স্থির হয়ে বসে না।সেখানে অফিসে কিভাবে বসবে সে।দেখা যাবে কাজের জায়গায় অকাজ টাই বেশি হচ্ছে।

কফি শেষ করে কাভার্ড থেকে কাপড় বের করে অফিসের জন্য রেডি হতে চলে গেলো। ভাই ক্ষেপে গেলে সমস্যা।

🌸

তারাহুরো করে রেডি হচ্ছে আদওয়া। আজ ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেড়ি হয়ে গেছে। রাতে সম্রাটের কথা ভাবতে ভাবতেই শেষ রাতের দিকে একটু ঘুমিয়ে ছিলো। এই লোককে শাস্তি দিতে গিয়ে এখন নিজেকেই শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে। নিজের খাওয়া ঘুম সব হারাম হয়ে গেছে।

– তোর হলো?(তানি)

– এইতো হয়ে গেছে। (তারাহুরো করে)

– তারাতাড়ি কর ইয়ার।অলরেডি অনেক লেট হয়ে গেছে। ওরা কল দিচ্ছে।

– হ্যা হয়ে গেছে চল। আজকে ওহিদ আমার চুল ছিড়ে ফেলবে। ক্লাস কি শুরু হয়ে গেছে? উদ্বিগ্ন হয়ে)

– না।তবে আর দশ মিনিটের মধ্যে হয়ে যাবে।

কথা বলতে বলতে হোস্টল থেকে বেরুতেই সামনে ওহিদ তৌহিদ দাঁড়িয়ে আছে। ওহিদ কটমট করে আমার দিকে তাকাতেই আমি একটা ক্যবলাকান্তের মতো হাসি দিলাম।আমার বলদ মার্কা হাসি দেখে ও বিরক্তিতে মুখ ঘুরিয়ে ফেললো।

– এতো দেড়ি হলো কেন?আচ্ছা বলতে হবে না। এখন তারাতাড়ি চল।ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।

তৌহিদের তারায় আর কিছু বলার সুযোগ হলো না। আমার পা চালাতেই ওহিদ কটমট চোখে আমাদের দিকে তাকিয়ে বললো,

– মহিলা মানুষ নিয়া কোথাও যাওয়াই উচিত না।এক একটা আস্তো প্যারা।এতো সাজুগুজু করার ইচ্ছা থাকলে ভোর রাত থেকা সাজতে পারে না। সকালে নাইকা দের মতো দেড়ি করে উঠে আবার মডেলদের মতো সাজুগুজু করার কি দরকার।

আমি আর তানি কিছুক্ষণ তব্দা খেয়ে দারিয়ে থেকে জ্বলন্ত চোখে তাকালাম ওহিদের দিকে। ও মহিলা কাকে বললো!আমরা কি দেখতে মহিলাদের মতো! ওকে তো এই মুহুর্তে সাগরে চুবিয়ে মারা উচিত। চরম অসভ্য ছেলে।

তানিয়া নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে কয়েক ঘা লাগিয়ে দিলো। সবশেষে পায়ের মধ্যে কয়েকটা লাথি মেরে বললো,

– আরেক দিন আমাদের মহিলা বললে লাথি মেরে মানচিত্রের বাইরে পাঠায় দিমু শালা খাটো জিরাফ।

– জিরাফ খাটো হইলেও সেইটা তোর থেকা লম্বাই হইবো পেত্নি।তোরে নিয়া বাইর হইলে আমি আতংকের মধ্যে থাকি।কবে জানি পেত্নি নিয়া ঘুরার অপরাধে আমাদের সরকার জেলে ঢুকায় দেয়।ভাই আওয়ার লাইফ ইস নাউ ইন ডেঞ্জার!

তৌহিদের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলতেই আরো কয়েকটা চড় থাপ্পড় খেয়ে ফেলেছে ওহিদ।

তৌহিদ আমাদের দিকে তাকিয়ে বিরক্তিকর শব্দ করে সামনে এগিয়ে গেলো। ও হয়তো এখন নিজের ভাগ্য কে দোষ দিচ্ছে আমাদের মতো বন্ধু পেয়ে।

আমি ওদের কাহিনি দেখতে দেখতে নিজের মন খারাপের কথা ভুলে গেলাম।বন্ধু থাকলে জীবনে কোন মন খারাপই স্থায়ী হয় না। বন্ধু হচ্ছে কোন কিছু না করে ও মন ভালো করার এক অন্যতম মেডিসিন।

🌸

অফিসে ঢুকতেই সবাই দাঁড়িয়ে গুড মর্নিং জানালো সম্রাটদের। রিফার আজ খুশিতে নাচতে ইচ্ছা করছে।কতোদিন পর আজ সম্রাট স্যার অফিসে এসেছে। এতো দিন তার জন্য চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করতো সে।আজ দেখা পেয়ে যেন মরুর বুকে এক পলশা বৃষ্টি হলো। তার সামনে দিয়েই গটগট করে নিজের কেবিনে চলে গেলো সম্রাট।যুবরাজ ও নিজের কেবিনে চলে গেলো।

রিফা সম্রাটের অফিসের ফ্রন্ট ডেস্কে কাজ করে। মেয়েটা সম্রাট বলতে পাগল। তবে এই পাগলামি তে কোন চাওয়া পাওয়া নেই।আছে শুধু একরাশ শ্রদ্ধা আর সম্মান।
সম্রাট রিফা কে ছোট বোনের মতোই স্নেহ করে।সম্রাট আগে থেকেই রিফার অনুভূতি বুঝতে পেরেছিল।রিফার জায়গায় অন্য কেউ হলে এতো দিনে তার চাকরি চাদে চলে যেতো। কিন্তু রিফার ব্যাপার টা ভিন্ন। বাবা মা ছাড়া এতিম মেয়ে রিফা।সম্রাটের ভার্সিটির জুনিয়র ছিল। সব কিছু শুনে সম্রাট ওকে নিজের অফিসে চাকরি দেয়।তার এই সামান্য সহযোগিতা রিফার মনে তার জন্য একটা অন্য রকম ভালো লাগার সৃষ্টি করে। তবে সে কখনো নিজের লিমিট ক্রস করেনি।তাই সম্রাট ও কিছু বলেনি।সারাজীবন যারা ভালবাসার অভাবে ভোগে তাদের একটু ভালবাসলেই তারা নিজের মনে অনেক বড় জায়গা দিয়ে দেয়।রিফার সাথে ও তাই হয়েছে।

সম্রাটের কেবিনে নক করে ঢোকার অনুমতি চাইলো ম্যানেজার। সম্রাটের অনুমতি পেতেই হাতের ফাইল টা সম্রাটের দিকে এগিয়ে দিলো।
কিছুক্ষন পরেই একটা মিটিং আছে। তার সমস্ত ডিটেইলস ফাইলে দেয়া আছে। সম্রাট ভ্রু কুচকে ফাইল দেখায় মনোযোগ দিলো।ম্যানেজার এখনো নিজের জায়গায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। যেন নড়লেই কেউ তাকে কান ধরে উঠবস করাবে!

– আপনি এখন আসতে পারেন। আমি কিছুক্ষনের মধ্যেই মিটিং রুমে আসছি।

ম্যানেজার যেন হাফ ছেরে বাচলো।অনুমতি পাওয়ার সাথে সাথেই কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো।

মিটিং রুমে সামনা সামনি বসে আছে এ কে কোম্পানির এম ডি ফারহান সাহেব। সম্রাটের বাবার সাথে অনেক পুরনো ব্যবসা তার।সম্রাট কে দেখেই হাল চাল জিজ্ঞেস করলো।

– দেখো বাবা।তুমি তো জানোই,আমারা কক্সবাজার একটা হোটেল কিনেছিলাম। কিছুদিন যাবত বিল্ডার্সরা সমস্যা করছে।ওখানে আমাদের কারোর যাওয়া উচিত। এমনিতেই বিজনেসের অবস্থা খুব একটা ভালো না। শেয়ার হোল্ডাররা তাদের টাকা ফেরত চাইছে। এখন হোটেলের ঝামেলা হলে আমরা অনেক বড় লসের মুখে পরতে পারি।

কক্সবাজারের কথা শুনেই বাকা হাসলো সম্রাট।বড় থাই গ্লাসের দিকে চোখ দিয়ে আপন মনে বিরবিরালো,

– কক্সবাজার তো যেতেই হবে আংকেল। আমার পাখি তো ওখানেই ডানা ঝাপ্টাচ্ছে।তাকে যে আমার মনের খাচায় এখানো বন্দী করা বাকি।

– আপনি চিন্তা করবেন না আংকেল।সম্রাট কাল সকালের ফ্লাইটেই কক্সবাজার চলে যাবে। ওখানকার সমস্যা সমাধান করেই আসবে ও।আপনার চিন্তা করতে হবে না।

কথাটা বলেই যুবরাজ সম্রাটের দিকে তাকালো। ভাই কে আপন মনে হাসতে দেখে নিজেও মুচকি হাসলো।

চলবে,,

(রিচেক দেয়া হয় নি। অনেক বিজি আছি।তাই দেড়ি হলো। মন্তব্য আশা করছি। ভালবাসা সবাইকে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here