#মোহ_মায়া
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_২০
হালকা ঝাকুনিতে ঘুম ভেঙে গেলো আমার। পিটপিট করে চারিদিকে চোখ বুলাতেই নিজেকে নির্জন জায়গায় গাড়ির মধ্যে আবিস্কার করলাম।
চারিদিকে মিটমিট আলো দেখে সকাল না সন্ধ্যা বুঝতে পারছি না। আমার এই এক সমস্যা, ঘুম থেকে উঠলে সময় ঠিক ভাবে বুঝতে পারি না। নিজেকে ধাতস্থ করতেই মনে পরে গেলো সব কিছু। আরে আমি তো সম্রাট ভাইয়ার সাথে ছিলাম। তারা আমাকে ফেলে চলে গেলো নাকি!
যাক্,চুলোয় যাক সবগুলো। আমি এখন থেকে রি গাড়িতেই থাকবো।আজ থেকে এটাই আমার বাড়ি।
— হয়ে গেছে?
পাশ থেকে কারোর শান্ত কন্ঠ শুনে হচকচিয়ে গেলাম। আস্তে আস্তে পাশে চোখ ফিরাতেই সম্রাট ভাইয়ার বিরক্ত দৃষ্টি চোখে পড়লো। ও,তারমানে উনি এখানেই ছিল। ভালো ভালো। দায়িত্বশীল পোলা।
— কি হলো? চুপ করে আছিস কেন?
— কি করবো তাহলে? (অসহায় ভাবে)
— নাচ।আমি দেখি(দাতে দাত চেপে)।
— গাড়ির মধ্যে কিভাবে নাচবো?? আর আপনি আমার নাচ দেখার জন্য এখানে নিয়ে এসেছেন?(ভ্রু কুচকে)
সম্রাট ভাইয়া আমার দিকে কিছুক্ষণ কটমট করে তাকিয়ে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলেন। বুঝলাম না রেগে গেলেন কেন!
— কি ব্যাপার ভাইয়া।আপনি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন কেন ভাইয়া?হোস্টেলে যেতে হবে ভাইয়া।কিছুক্ষন পরে আর ঢুকতে দিবে না ভাইয়া।আমার কথা শুনছেন ভা,,,,
— চুপ।একদম চুপ।ভাইয়া ডেকে কান পচিয়ে দিলো।এই আমি তোর মায়ের পেটের ভাই লাগি?নাকি কোন কাজিন লাগি?প্রত্যেক সেনটেন্সে একবার করে ভাই ডাকছিস কেন বেয়াদব।
সম্রাট ভাইয়ার রাম ধমক খেয়ে আমার কলিজা একটুর জন্য বেরিয়ে আসে নি। ভাই না ডেকে কি ডাকবো! নাম ধরে ডাকলে তো আমার গাল লাল করে দিবে।তাহলে কি বাবু সোনা বলে ডাকবো! বেপ্পি ও বলা যায়। ভাবতেই আমি ফিক করে হেসে দিলাম।ছিহ কি অবান্তর চিন্তা আমার!
— দেখুন,আমাকে হোস্টেলে দিয়ে আসুন।আমার লেট হচ্ছে।
সাহস করে কথাটা বলতেই সম্রাট ভাইয়া শান্ত চোখে আমার দিকে তাকালো। আমি তার থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম।
— তাকা আমার দিকে। (নরম গলায়)
–,,,,,,,,
— আদু।
অনেক দিন পরে তার মুখে নিজের নাম শুনে পুরো শরীর শীতল হয়ে গেলো আমার।
আমার গালে আলতো ছুঁয়ে তার দিকে ফিরালো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আলতো করে চুমু খেলো কপালে।
— প্রচন্ড ভালবাসি বলেই কি এই অবহেলা! (ধরা গলায়)
আমি চোখ নামিয়ে নিলাম তার থেকে। ওই চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার সাধ্য আমার নেই।
আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে সম্রাট ভাইয়া আবার বললেন,
— আমাকে কি একটু ও ভালোবাসিস না?
তার আকুতি শুনে আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না। ঝরঝর করে কেদে দিলাম। আমার কান্না দেখে অনেকটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেন সম্রাট ভাইয়া। অস্থির হয়ে আমাকে তার বুকের ভেতর চেপে ধরলেন।
— আরে কাদছিস কেন?আচ্ছা আমাকে ভালোবাসতে হবে না। তুই কান্না থামা।(অস্থির হয়ে)
তার কথা শুনে আমি আরো জোরে কেদে উঠলাম। ভালোবাসতে হবে না মানে কি!তার এখন আমাকে দরকার নেই! এই তার ভালোবাসা! বেঈমান লোক!
— আরে আরে।কি হলো আবার।আচ্ছা আমি তোকে দিয়ে আসছি। তবুও কান্না করিস না।
— আ,,আমি ভা,,ভালবাসি আপনাকে। (নাক টেনে)
আমার কথা শুনে থমকে গেলো সম্রাট ভাইয়া।অস্ফুটস্বরে জানতে চাইলেন
— ক,কি বললি?আরেক বার বল।
আমি মাথা নিচু করে ফেললাম। তখন বললেও এখন খুব লজ্জা লাগছে।
— আরেক বার বল জান।আমার মনে হয় আমি ভুল শুনেছি।
— আমি পারবো না (কাপা কাপা গলায়)
আমার কথা শুনে মুচকি হাসলো সম্রাট ভাইয়া। আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে রইলেন।
— ক কি করছেন।ছারুন।
— নাহ।ছারবো না।চুপ করে থাক।একদম নড়াচড়া করবি না।
জানালায় টোকা পড়ায় আমি নড়েচড়ে উঠলাম। লজ্জায় আমার কান লাল হয়ে যাচ্ছে। কি একটা লজ্জাজনক অবস্থা।
— নাউজুবিল্লাহ। ভাই কি করছিস তুই।ওই আমার বইনের থেকা দূরে যা।আমি ওর ভাই এখনো এখানে আছি।শরম নাই তোর।এরকম নির্লজ্জ পোলার কাছে আমি বোন বিয়ে দিবো না।
সায়েম ভাইয়ের কথা শুনে বিরক্তিকর শব্দ করলো সম্রাট ভাই।
— তোর কাছে অনুমতি চাইছে কে।যা ভাগ।
ইসহাক ভাইয়া আর সুমন ভাইয়া মিটমিট করে হাসছে।
সায়েম ভাইয়া কিছু বিশ্রী গালি দিয়ে কিরমির করতে করতে বললো,
— দুই ঘন্টা ধরে বিচে দার করায় রাখছিস। মশার কামরে ডেঙু রোগী হয়ে যাচ্ছি। তোর প্রেম করার হইলে বাইরে গিয়ে কর।
সুমন ভাইয়া সায়েম ভাইয়ার পিঠে চাপড় মেরে বললো,
— তুই তো ভিলেন ভাইদের মতো করতাছোস মামা।
— ধুর বাল। ওই তুই দরজা খোল। আর আদু কে হোস্টেলে দিয়ে আসতে হবে।কিছুক্ষণ পরে আর ঢুকতে দিবে না।
— সায়েম ঠিক বলেছে সোম।ওকে দিয়ে আসতে হবে।
ইসহাক ভাইয়ার কথা শুনে সম্রাট ভাইয়া নড়েচড়ে বসলেন।মুখ ভার করে দরজা খুলে দিলো।
আমি এতক্ষণ মুখ টিপে হাসছিলাম।সম্রাট ভাইয়া আমার দিকে চেপে হুট করেই আমার গালে চুমু দিয়ে দিলো।আমার হাসি আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গেলো। চোখ বড় বড় করে তাকাতেই চোখ টিপে দিলো।
🌸🌸
হোস্টেলে আসতেই আমাকে চেপে ধরলো তানি।ওকে কোন রকম ছাড়িয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।
দশ মিনিট পরে বের হতেই আমাকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করতে লাগলো,
— এই সম্রাট ভাইয়া তোকে আস্তো রাখছে।আমি ভাবছি তোকে আনতে আমাদের মর্গে যাওয়া লাগবো। তুই নিজে নিজে আইলি ক্যা।
— চুপ করবি।মাথা ব্যাথা করে দিলি।সারা দিন কিছু খাওয়া হয় নাই।কিছু খেতে দে।
— কিহ!!খাছ নাই ক্যা।ভাই তোরে খাওয়ায় নাই কিছু?
— নাহ।উলটা আমারে ধমকাইছে।
আমি মুখ ফুলিয়ে এই কথা বলতেই তানি আশ্চর্য হয়ে বললো,
— শুধু ধমকাইলো!!চুমু টুমু খায় নাই?ভাই তো সেই আনরোমান্টিক।আমার আর বরফের মতো বাচ্চা পয়দা করা হইলো না মনে হয়। (হতাশ হয়ে)
তানির কথা শুনে আমি ফিক করে হেসে দিলাম।
— হাসতে হইবো না।টেবিলে বিরিয়ানি রাখা আছে।ভাই পাঠাইছে।গিয়ে খেয়ে নে।
— কখন পাঠালো?(অবাক হয়ে)
— তুই যখন ওয়াশরুমে ছিলি।
— ওহ।
আমি গিয়ে বিরিয়ানি দেখেই নাক মুখ কুচকে নিলাম।এখানকার বিরিয়ানি মানে পোলাও এর সাথে বিফ অথবা চিকেন রান্না করে এক সাথে দিয়ে দেয়া।আমরা যেটাকে পোলাও মাংস বলি এখানে সেটা কে বিরিয়ানি বলে।
কি আর করার।এগুলোই খেতে হবে।
খেয়ে দেয়ে কল করলাম ওহিদ কে।কয়েকবার রিং হয়ে কেটে গেলো। ফোন রিসিভ না করায় আমার একটু কেমন লাগলো। এতো কিছু না ভেবে শুয়ে পরলাম। খুব ক্লান্ত লাগছে।
চোখ বন্ধ করতেই তখনকার দৃশ্য গুলো চোখের সামনে ভাসতে লাগলো। লোকটার আজ হঠাৎ করে কি হলো! আগে তো কখনো কাছেই আসতো না।
একদিন কলেজ থেকে আসার সময় তাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আমার রিক্সায় উঠতে বলেছিলাম। তার সেদিনের রিয়্যাকশনের কথা মনে হলে এখনো হাসি আসে।যদিও তখন খুব রাগ হয়েছিল।
সেদিন সম্রাট ভাইয়া কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আমি তাকে বললাম,
— দাড়িয়ে আছেন কেন ভাইয়া? আপনার গাড়ি কোথায়?
— আরে আর বলিস না।গাড়ি টা হঠাৎ করে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কোন রিক্সা ও পাচ্ছি না। (বিরক্ত হয়ে)
— আপনি আমার সাথে আসুন।আমি ও বাসায়ই যাচ্ছি।
আমার কথা শুনে সম্রাট ভাইয়া দুই হাত দূরে সরে গেলেন।সন্দিহান দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
— এই তোর মতলব কি হ্যা? আমার। মতো একটা হ্যান্ডসাম পোলার ভার্জিনিটি নষ্ট করতে চাস! আমি এখনো কোন মেয়ের সাথে এক রিক্সায় বসি নি।তোর সাথে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
— আমি কখন আপনার ভার্জিনিটি নষ্ট করতে চাইলাম? (অসহায় ভাবে)। আমি তো শুধু সাহায্য করতে চাইছিলাম।
— আমি বলেছি আমাকে সাহায্য করতে? এই তুই দিন দিন লুচু হয়ে যাচ্ছিস না?আজকেই আন্টি কে বলবো, তুই রাস্তায় রাস্তায় ছেলেদের নিজের রিক্সায় বসিয়ে সাহায্য করতে চাইছিস।
চলবে,,,
(ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন)