মোহ_মায়া #সানজিদা_বিনতে_সফি #পর্ব_২৬

0
322

#মোহ_মায়া
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_২৬

— কেমন আছো মন?

— মন??

ইসহাকের কথা শুনে হু হা করে হেসে উঠলো তানিয়া। যেন খুব মজার কোন কথা বলা হয়েছে।

— এই মন টা আবার কে ইসহাক সাহেব?

তানির তাচ্ছিল্য মাখা কথা শুনে কিছুটা ব্যাথিত হলো ইসহাক। করুন চোখে তাকিয়ে রইলো তানিয়ার দিকে।

— এভাবে কেন বলছো মন!আমি জানি, আমি যা করেছি তা খুবই জঘন্য একটা অপরাধ। কিন্তু আমি তখন শুধু তোমাকে একটু শায়েস্তা করতে চেয়েছিলাম। ব্যাপার টা এতটা খারাপ পর্যায়ে চলে যাবে তা আমি ভাবতেও পারি নি। (করুন স্বরে)

ইসহাকের কথা শুনে রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো তানিয়ার।দাতে দাত চেপে বললো,

— তাই নাকি ইসহাক সাহেব? কই,আমি তো আপনার চোখে এমন কিছু দেখি নি যাতে আমার মনে হয় আপনি শুধু আমাকে শায়েস্তা করতে চেয়েছিলেন।আমি বলি আমি আপনার চোখে কি দেখেছিলাম,
আমি আপনার চোখে আমার জন্য তাচ্ছিল্য দেখেছিলাম। আমাকে ভেঙে যেতে দেখে আপনার চোখে আনন্দ দেখেছিলাম। আমার আহাজারি, আকুতি দেখে আপনার চোখে আমি পরম তৃপ্তি দেখেছিলাম।
আসলে তখন বুঝতে না পারলে ও পরে ঠিক ই বুঝতে পেরেছিলাম আপনি আমাকে কখনো ভালোবাসেন নি।আরে ভালোবাসা তো দূর আপনি কখনো আমাকে মানুষ বলেই মনে করেন নি। যদি আমাকে মানুষ বলে ভাবতেন তাহলে অন্তত আমাকে এভাবে নির্জন জায়গায় একা ফেলে আসতে পারতেন না।

তানি’র ছলছল চোখে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো ইসহাক। তখন না বুঝলেও এখন খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারছে সে কতো বড় ভুল করে ফেলেছে। মেয়েটা কে ওভাবে ফেলে আসা উচিত হয় নি। কিন্তু তখন এতো কিছু মাথায় ছিলো না তার।

শুস্ক ঠোঁট গুলো জিভ দিয়ে ভিজিয়ে কাপা কাপা গলায় বললো,

— আমাকে ক্ষমা করে দাও মন।আমি বুঝতে পারি নি তোমাকে ওভাবে ফেলে আসা উচিত হয় নি। আমি ভেবেছিলাম তোমার পরিচিত জায়গা, তুমি একা একাই চলে যেতে পারবে।আই এম সো সরি মন।

তানিয়ার দু চোখ রক্ত বর্ন ধারণ করেছে।রক্তিম চোখে তাকিয়ে বললো,

— ক্ষমা আজ আপনাকে করেই দেই, কি বলেন?আচ্ছা ঠিক কি কারণে ক্ষমা করবো বলুন?আমার মন নিয়ে খেলার জন্য? আমাকে নিজের চোখে ছোট করার জন্য? আমাকে ভেঙে টুকরো টুকরো করার জন্য? নাকি আমাকে ধর্ষনের মুখে ফেলে আসার জন্য?

তানি’র শেষের কথাটায় চমকে উঠলো ইসহাক। তার সাথে আরও কিছু মানুষ চমকালো। ইসহাক অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তানি’র দিকে।তার বুকটা অস্বাভাবিক ভাবে কাপছে।কি বললো তানিয়া এইমাত্র!সে কি ঠিক শুনেছে?

— ক কি ব বলছো মন?(কাপা কাপা গলায়) এটা সত্যি না তাই না?

ইসহাকের কথা শুনে তানিয়া মলিন হাসলো।

— ক্ষমা আপনি পাবেন না ইসহাক সাহেব।আপনাকে ক্ষমা করলে আমার আত্মা আমাকে ক্ষমা করবে না।

”প্রতারকদের ক্ষমা করতে নেই।তারা হচ্ছে বিষাক্ত সাপের মতো। যতই বুকে আগলে রাখতে চাই না কেন, প্রয়োজন শেষ হলে বুকে ছোবল মেরে ঠিক বেরিয়ে যাবে”

ইসহাক টলমল চোখে তাকালো তানিয়ার দিকে।তানিয়া সে দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে। এখানে আর থাকতে ইচ্ছে করছে না। যতই সব কিছু ভুলে যেতে চায় না কেন। পরিস্থিতি এসে আবার সেখানেই দাড় করিয়ে দেয়।

তানিয়া চলে যেতেই ইসহাকের চোখ থেকে দু ফোটা পানি বেরিয়ে এলো। কতো বড় অন্যায় করেছে সে এখন বুঝতে পারছে।আসলেই সে ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য না।

তানিয়া চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ওহিদ তৌহিদ আসলো।
আমার খুব রাগ হচ্ছে ইসহাক ভাইয়ার উপর। তানিয়ার সাথে হওয়া সেই জঘন্য ঘটনার জন্য যে ইসহাক ভাইয়া দায়ী এটা আমি কল্পনাতে ও ভাবিনি।

পরের সময় গুলো আমাদের মুখ ভার করেই চলে গেলো। কোন রকম লাঞ্চ করে আমি তানির জন্য খাবার নিয়ে বেরিয়ে পরলাম ওহিদের সাথে। তৌহিদ থেকে গেলো।

🌸

ক্ষিপ্ত বাঘের মতো ইসহাকের দিকে তাকিয়ে আছে সায়েম।সম্রাট ও গম্ভীর হয়ে বসে আছে। কারোর মুখেই কোন কথা নেই।

— তুই বলেছিলি তুই ওকে ভালোবাসিস।তাহলে এইসব কি?কেন করলি এমনটা?তুই তো জানতি আমি ওকে ভালোবাসি।তবুও তোর দিকে তাকিয়ে চুপ ছিলাম।আর তানিয়া ও তোকে ভালোবাসতে শুরু করেছিলো। তাহলে এই সবের মানে কি?

সায়েমের ভয়ংকর লাল চোখ দেখে চমকে উঠলো সবাই।

— আহা,এভাবে রাগ করছিস কেন?একটু শান্ত হয়ে বস ভাই।

সুমনের কথায় রাগ টা আরও ভয়ংকর হয়ে গেলো সায়েমের।ভাবতেই বুকটা কেপে উঠছে,কতটা খারাপ সময় পার করেছে তার ভালোবাসার মানুষ টা।

— আমাকে শান্ত হতে বলছিস!একটা মেয়ের সাথে এমনটা কিভাবে করতে পারে ও।(রেগে)আচ্ছা ইসহাক, তোর ও তো একটা বোন আছে। তার সাথে যদি এমন কিছু হয় তখন কেমন লাগবে তোর? বেচে থাকতে পারবি তো বোন কে এই অবস্থায় দেখে? নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন কর।

ইসহাক কে কথা গুলো বলে সাথে সাথেই বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো সায়েম।সবাই এখনো স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। ইসহাক সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। তিরতির করে ঠোঁট কাপা প্রমাণ করছে কান্না আটকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে সে।

— তোর কাছে এটা আশা করি নি। একটা মেয়ের কাছে তার সম্মান সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তুই সেই জায়গায় আঘাত করেছিস।ওর রাগ সম্পুর্ন জায়েজ।

সম্রাটের কথা শুনে অসহায় চোখে তাকালো ইসহাক। ও নিজে ও জানতো না এমন কিছু হবে। তাহলে কখনোই এমন কিছু করতো না। এখন নিজের উপর ই রাগ হচ্ছে।

তৌহিদ গম্ভীর হয়ে বসে আছে। কোন কথা বলছে না আপাতত। রাগ ওর ও কিছু কম লাগছে না। রেগে চিৎকার করা ওর সম্পুর্ন বিপরীত। তাই দাতে দাত চেপে চুপ করে বসে আছে।

🌸

— হ্যালো।

–হ্যা আব্বু বলো।কেমন আছো তুমি?

— ভালো আছি আম্মু।তুমি কেমন আছো?

— আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

— আমি আর এক সপ্তাহ পরে দেশে আসছি আম্মু।তোমার কিছু লাগবে?

আব্বু আসার কথা শুনে খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম আমি।

— সত্যি!

— হুম মা।

— আমর কিছু লাগবে না আব্বু।তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো।কতোদিন তোমাকে দেখি না।(মন খারাপ করে)

আমার কথা শুনে আব্বু মলিন হাসলো।

— আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আম্মু।আমি চাই দেশে এসে তোমার আর সম্রাটের বিয়ে টা দিয়ে দিতে।তোমার কোন আপত্তি আছে?

আব্বুর কথা শুনে লজ্জায় পরে গেলাম। আব্বুর সাথে আমি অনেকটা ফ্রী। তবুও আজ খুব লজ্জা লাগছে।

— তুমি যা ভালো মনে করো।

বলেই কল কেটে দিলাম আমি।খুশিতে আমার চোখে পানি চলে এসেছে। অবশেষে আমি আমার ভালোবাসায় মানুষটিকে পাবো।

রাস্তায় পরিচিত মুখ দেখে চমকে উঠলাম আমি। সেই সাথে চোখের কোনায় পানির অস্তিত্ব অনুভব করলাম।কিছুটা দৌড়ে গিয়ে জরিয়ে ধরলাম সেই মানুষটাকে।

— আরে ছাড় ছাড়।চেপ্টা করে দিলি তো বইন।

প্রিয়ার কথা শুনতেই কান্নার মধ্যে ও হাসি চলে আসলো আমার। কতো দিন পরে দেখা আমাদের।অথচ আগে একজন আরেকজন কে না দেখলে পেটের ভাত হজম হতো না।

— আরে আমিও আছি।আমাকে ও কেউ ঝাপ্পি দেক একটা।

ভাইয়ার গলা শুনে পিছনে তাকিয়ে আমি আরো অবাক হয়ে গেলাম।রাস্তার মাঝেই ভাইয়া কে ধরে শব্দ করে কেদে দিলাম।

ভাইয়া ও কান্না করে দিয়েছে। আমরা একজন আআরেকজন কে ছেড়ে এতো দিন কখনো থাকি নি।

আমাদের কান্না দেখে সম্রাট বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে আছে। এই লোকটা আমার সব কিছুতেই বিরক্ত হয়।আস্তো করল্লা একটা।

চলবে,,,

(বানান ভুল হতে পারে। রিচেক হয় নি। আইডি তে সমস্যার কারণে কাল দিতে পারি নি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here