#মোহ_মায়া
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_৩০
হসপিটালের ফিনাইলের গন্ধে মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে যুবরাজের। ছোট বেলা থেকেই তার ফিনাইলের গন্ধ সহ্য হয় না। করিডরের এক পাশে দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে যুবরাজ।
— ভাই,,,
সম্রাটের ডাকে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো ও।ঘুরে সম্রাটের দিকে তাকাতেই ভাইয়ের উদভ্রান্ত চেহারা নজরে পরলো।চোখ মুখ লাল হয়ে ফুলে একাকার অবস্থা। ভালোবাসলে বুঝি এভাবেই ভালোবাসার মানুষ টার জন্য পাগলপ্রায় হতে হয়!নিজের ভাবনা কে দূরে সরিয়ে সম্রাটের দিকে তাকিয়ে বললো,
— হুম বল, শুনছি আমি।
সম্রাটের নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। কিছুক্ষণ আগেই ডক্টরের সাথে কথা হয়েছে ওর।তখন থেকেই মস্তিষ্ক শুন্য মনে হচ্ছে। ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ভয়ার্ত গলায় বললো,
— আদুর ইনজুরি তে ইনফেকশন হয়েছে ভাই।(কান্না আটকে)। মাথায় খুব বাজে ভাবে আঘাত করা হয়েছে। তখন থেকেই খোলা থাকায় ধুলো ময়লা লেগে ইনফেকশন হয়ে গেছে। ওরা আমার আদু কে একটু ড্রেসিং ও করিয়ে দেয় নি ভাই।সারা শরীরে মারের দাগ!আমার ফুল কে ওরা একেবারে মুসরে দিয়েছে ভাই।
সম্রাটের কথায় যুবরাজের কপালে ও চিন্তার ভাজ পরলো।
কথা গুলো বলতেই সম্রাটের চোখ থেকে দু ফোটা পানি বেরিয়ে গেলো। বুকের ভেতর এক অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। যা একমাত্র আদওয়া ঠান্ডা করতে পারবে।আচ্ছ!ও নিজে যদি আদওয়ার জীবনে না আসতো তাহলে কি আজ আদওয়া এই অবস্থায় থাকতো? নিজের কাছে প্রশ্ন করে নিজেই নিজেকে উত্তর দিলো,নাহ,আদওয়ার সাথে এমন কিছুই হতো না। ও খুব ঝামেলা হীন একটা জীবন পেতো।
— এখন ডাক্তার কি বলছে?মানে এখানে তারা কিছু করতে পারবে? না হলে আমরা আদওয়া কে ঢাকা শিফট করবো।
— তাদের আশায় আমি থাকতে চাই না ভাই।আমার আদু কে আ।আমার সুস্থ চাই।আর তা এজ সুন এজ পসিবল।
সম্রাটের কথা শুনে যুবরাজের ও তাই মনে হলো। আদওয়া কে এখানে রাখা ঠিক হবে না। আবার যে কোন বিপদ এসে হানা দিতে পারে।যুবরাজ সম্রাট কে আশ্বাস দিয়ে বললো,
— আমি সব ব্যবস্থা করছি।তুই কোন চিন্তা করিস না।
যুবরাজ কাওকে কল করতে করতে বাইরের দিকে চলে গেলো।
সম্রাট আদওয়ার কেবিনের বাইরে থেকে আদওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার মুখ মলিন হয়ে গেছে। জ্ঞান ফেরার পর আদওয়া কে কিভাবে সামলাবে এটা চিন্তা করে সম্রাটের মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আদু নিজেকে সামলে নিতে পারবে তো!
‘ তারাতাড়ি সুস্থ হয়ে যা জান।তোর এই অবস্থা আমি মেনে নিতে পারছি না। নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। কেন আমি তোকে সেফ রাখতে পারলাম না! তোর এতো কাছে থেকে ও আমি তোকে রক্ষা করতে পারলাম না! ওদের সবাই কে এর মুল্য দিতে হবে। আমার কলিজায় হাত দেওয়ার পরিনতি ওদের ভোগ করতে হবে।
আদওয়ার কেবিনের সামনে থেকে রাব্বির কাছে এসে বললো,
— ওদিকের কি খবর?
কেবিনের বাইরে বেঞ্চে বসে আছে রাব্বি।চোখ মুখে বিষাদের ছাপ।বোনের কষ্টে ভাইয়ের হৃদয়ে সব চেয়ে বেশি রক্তক্ষরণ হয়।দুই দিনের ছোটাছুটি তে শরীর টা নিস্তেজ হয়ে আসছে।তবুও একটুও বিশ্রাম নিতে মন সায় দিচ্ছে না। সম্রাটের কথায় ক্লান্ত গলায় বললো,
— এখনো কোন কল আসে নাই ভাই।
সম্রাটের কপালে চিন্তার ভাজ পরলো। চিন্তিত চোখে রাব্বির দিকে তাকাতেই পাশে ক্লান্ত তানিয়া কে চোখে পড়লো। মেয়েটা একদম মিয়িয়ে গেছে।আদওয়া কে পাওয়ার পর থেকে একটা কথা ও বলে নি তানিয়া।শুধু শুন্য চোখে তাকিয়ে ছিলো কিছু সময়। সম্রাট কিছুটা চিন্তিত তানিয়ার এমন নির্লিপ্ত ভাব দেখে।ভাবনার মাঝেই গালে এক ভয়ংকর চড় পরলো সম্রাটের। চড়ের শব্দে চারিপাশ নিরব হয়ে গেলো কিছু সময়ের জন্য। রাব্বি আর তানিয়া স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে পরেছে।আদওয়ার মা রাগে ফুসছে।
হ্যাঁ, চড়টা আদওয়ার মা দিয়েছে।
রুবিনা বেগম নিজের রাগ কোন ভাবেই সামলাতে পারছে না। এই ছেলেটার জন্য আজ তার মেয়ের এই অবস্থা।আজ আট মাস যাবত মেয়ের মুখ দেখা তো দূরে থাক মেয়ের গলার স্বর টা পর্যন্ত শুনে নি সে।
থাপ্পড় খেয়ে ও সম্রাট নির্লিপ্ত চোখে তাকিয়ে আছে রুবিনা বেগমের দিকে। থাপ্পড় টা সে ডিজার্ভ করে।
আদওয়ার বাবা ভ্রান্ত চোখে তাকিয়ে আছে সম্রাটের দিকে। রুবিনা কেন যে শুধু এই ছেলেটা কে দোষ দিচ্ছে সেটা তার মাথায় আসছে না। দোষ তো দুজনের ই আছে। দুজনেই ভালোবেসেছে। তাহলে দোষ তার একার হবে কেন?বিপদ দেখে যদি ভালোবাসার মানুষ টার হাত ছেড়ে দেয় তাহলে সেটা আবার কেমন ভালোবাসা?
রুবিনা বেগম আবার সম্রাটের দিকে তেড়ে যেতেই আদওয়ার বাবা আফজাল সাহেব তাকে ধরে ফেললেন।রোষপুর্ন গলায় বললেন,
— নিজের সীমার মধ্যে থাকো রুবি।তুমি ওর গায়ে হাত তুলে প্রথমেই একটা ভুল করে ফেলেছো।দ্বিতীয় বার এই ভুল করার চেষ্টা ও করো না।
আফজাল সাহেবের কথায় রুবিনা বেগমের রাগ যেন আকাশ ছুলো।
— আমি কোন ভুল করি নি। এই, এই ছেলেটার জন্য আজ আমার মেয়ের এই অবস্থা।আমি নিষেধ করেছিলাম ওকে।বার বার বলেছিলাম আমার মেয়ের আসেপাশে না থাকতে। কিন্তু আমার কথা কেউ শুনো নি।নিজেদের মর্জি অনুযায়ী সব করেছো।এখন দেখ কি হলো!
কথা গুলো বলতে বলতে কেদে ফেললো রুবিনা বেগম। রাব্বি এতক্ষন চুপ করে থাকলেও মা কে কাদতে দেখে তারাতাড়ি গিয়ে জরিয়ে নিলো।আফজাল সাহেব অসহায় চোখে সম্রাটের দিকে তাকালো। ছেলেটা এখনো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বা পাশের গাল টা লাল হয়ে তিন আঙুলের দাগ স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে। শুকনো ঢোক গিললো আফজাল সাহেব। সম্রাট রুবিনা কে কিছু না বললেও যুবরাজ ছেড়ে কথা বলবে না। ভাই বোনের উপর ফুলের আঁচড় ও সে সহ্য করতে পারে না। এখন তো বোনটা আর নেই।র
তাই একমাত্র ছোট ভাইকে নিয়ে একটু বেশিই পসেসিভ।মেয়ের এই অবস্থায় এই হসপিটালে সিনক্রিয়েট করে বারতি ঝামেলা করতে চাইছেন না তিনি।আর এটা সত্যি যে সম্রাট আর যুবরাজ না থাকলে আজ আদওয়া কে এতো সহজে খুজে বের করতে পারতেন না তারা।
সম্রাটের কাধে ভরসার হাত রেখে স্ত্রী কে নিয়ে আদওয়ার কেবিনের দিকে গেলো আফজাল সাহেব। আপাতত আদওয়ার কেবিনে কারোর ঢোকার পারমিশন নেই।তাই বাইরে থেকে দেখেই ডুকরে কেঁদে উঠলো রুবিনা বেগম। আফজাল সাহেবের চোখ থেকেও দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো।মেয়ে কে সারপ্রাইজ দিতে এসে নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে গেছেন তিনি।
🌸
আধঘন্টা আগে তৌহিদের জ্ঞান ফিরেছে।জ্ঞান ফিরলেও দুর্বলতার জন্য এখন ঘুমাচ্ছে। শরীর থেকে খুব পরিমাণ ব্লাড লস হওয়ায় কয়েক দিন দুর্বলতা থাকবে।এছাড়া ভয়ের কোন কারণ নেই।জ্ঞান ফিরতেই সবার আগে অস্পষ্ট স্বরে আদওয়ার কথা জানতে চেয়েছে তৌহিদ। ওহিদ আদওয়া ভালো আছে বলে আস্বস্ত করতেই চোখ বন্ধ করে নিয়েছে।রাতেই তানিয়া কল করে আদওয়ার কথা জানিয়েছে ওদের।আদওয়ার এই অবস্থার কথা কিছু বলে নি ও।তৌহিদের এই অবস্থায় ওদের আর টেনশনে ফেলতে চায় নি। কিন্তু ওহিদের মন খুব আনচান করছে আদওয়ার জন্য। মন বলছে আদু ভালো নেই।মনের সাথে যুদ্ধ করে এখানে পরে আছে। তৌহিদ একটু সুস্থ হলেই আদওয়ার কাছে ছুটে যাবে সে।আদু কে না দেখা অব্দি চোখ, মন কোনটার শান্তি নেই।প্রিয়া কিছুক্ষণ আগেই বাসায় গিয়েছে। হয়তো আবার একটু পরেই চলে আসবে।ওহিদের অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। উফফফ,সব কিছু এতো বিদঘুটে লাগছে কেন?
🌸
স্টোর রুমে রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছে চারজন লোক।একজনের হালকা জ্ঞান থাকলেও বাকি তিন জন অজ্ঞান।সায়েম জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। হাতের হকিস্টিক ভেঙে অর্ধেক হয়ে গেছে। তবুও সে থামতে চাইছে না। একটা কে কষে লাথি মেরে চেয়ারে বসে পরলো সে।সুমন পানি এগিয়ে দিতেই ঢকঢক করে পুরোটা পানি খেয়ে নিলো।
ইসহাক আর সুমন আয়েসি ভঙিতে বসে ওদের জ্ঞান ফিরার অপেক্ষা করছে।সায়েম যেভাবে মেরেছে!সম্রাট আসলে না জানি কি করবে ওদের।সুমনের মায়া হচ্ছে লোক গুলোর জন্য। আহা,,,কি ভয়ংকর ভাবেই না মরবে!
চলবে,,,
(কালকে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে লেট☹️আর আজ পিঠা বানাতে গিয়ে 😊।কেউ বকা দিয় না। হ্যাপি রিডিং। ডু ইউ নট ফর মাইন্ড 🤪🤪🤪🤪)