#মোহ_মায়া
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_৩৩
নরম কাদা মাটি পুড়তে পুড়তে যদি ইট হয়ে যায় তাহলে তার গায়ে যতই পানি দেয়া হোক না কেন সেটা আর কখনোই কাদা মাটি তে রুপান্তর হবে না। তানিয়া নিজেকে শক্ত ইটের ন্যায় শক্ত করে নিয়েছে।
ইসহাক এখানে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। এই তানিয়া কে সে চিন্তেই পারছে না। মেয়েটা এভাবে কথা বলতে শিখে গেল কবে থেকে!
— ভালোবাসা যেমন স্নিগ্ধ পবিত্র, ঘৃণা তার চেয়ে অনেক বেশি ধারালো। ভালোবাসা মনের মধ্যে খুব যত্নে অনুভূতির এক বাগান তৈরি করে।কিন্তু ঘৃণা এক মুহুর্তের মধ্যে তার ধারালো আঘাতে সব কিছু ধ্বংস করে দেয়।
যুবরাজের কথা শুনে তার দিকে অসহায় চোখে তাকালো ইসহাক।সে ভেবেছিলো তানিয়া কয়েক দিন পরেই সব ভুলে যাবে। কিন্তু মেয়ে টা তার দেয়া আঘাতে একেবারে নিস্তেজ হয়ে গিয়েছিলো। তার কাছে বারবার নিজের ভালোবাসা ভিক্ষা চেয়েছিলো। কিন্তু সে কি করলো? মেয়েটাকে সস্তা রাস্তার মেয়ে উপাধি দিয়ে দিলো।মেয়েটার অসহায় চোখের দৃষ্টি সে কিভাবে উপেক্ষা করলো? ইসহাকের মনে পরলো যেদিন শেষ বার তানিয়া তার কাছে ছুটে গিয়েছিল,
অতীত,
ববন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাসার সামনে আসতেই একটা মেয়েকে ক্লান্ত পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে গেলো সে।সামনে যেতেই তানিয়ার চেহারা স্পষ্ট হলো। বিরক্তি তে মুখ তেতো হয়ে গেলো ইসহাকের। এই মেয়েটা কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না।আজ একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে।
— তুমি এখানে কি করছো?
— আপনি এসেছেন।আমি অনেকক্ষন ধরে অপেক্ষা করছি আপনার জন্য। আপনি আমার কল রিসিভ করছেন না কেন? (অসহায় গলায়)
— দেখো,এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কোন লাভ নেই। আমি ইচ্ছে করেই তোমার কল রিসিভ করিনা।এই সামান্য বিষয় টি বুঝতে তোমার এতো কষ্ট হওয়ার কথা নয় তানিয়া।(দাতে দাত চেপে)
— তানিয়া!(অবাক হয়ে)
— দেখো,আমি আর এই সব ঢং করে মন ডাকতে পারছি না। অসহ্য লাগছে এইসব আমার।তোমার সাথে কথা বলতে ও আমার রুচিতে বাধে।এতো গুলো দিন অভিনয় করে ক্লান্ত আমি।তাই এবার নিজের রাস্তা দেখো।
— কি বলছেন এইসব? কিসের অভিনয়? আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
তানিয়ার কাপা কাপা গলায় কথা গুলো শুনে বিদ্রুপের হাসি হাসলো ইসহাক।
— অনেক দেমাগ না তোমার? গ্রামের সামান্য মেম্বারের মেয়ে হয়ে মাটিতে পা পরে না।তাই আমি সেই দেমাগ ভেঙে দিলাম। বিশ্বাস করো,আমি ভাবতেও পারি নি এতো সহজে তোমাকে পেয়ে যাবো। তোমার মতো মেয়েদের তো যখন তখন পাওয়া যায়। আমি ভালো ছেলে বলে এভাবেই ছেড়ে দিলাম। নাহলে তোমাকে বিছানায় নেয়াও কোন ব্যাপার না। সস্তা রাস্তার মেয়ে হলে যা হয় আরকি।নিজের চেহারা দেখেছো কখনো? এই চেহারা নিয়ে ইসহাক ইমতিয়াজের প্রেমিকা হতে এসেছো!নিজের স্ট্যাটাস এর কারো সাথে গিয়ে প্রেম প্রেম খেলো।হয়তো তারা শরীরের খুধাটাও মিটিয়ে দিবে। আমি ক্লাস মেনটেইন করে চলি।তোমার মতো লো ক্লাসের মেয়ের প্রতি আমার কোন ইন্টেরেস্ট নেই।নাও গেট লস্ট ফ্রম হেয়ার।
শেষের কথা টা চিল্লিয়ে বলায় তানিয়া কিছুটা কেপে উঠলো। সে এখনো একটা ঘোরের মধ্যে আছে। অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে আছে ইসহাকের দিকে। তানিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বুকটা ধ্বক করে উঠলো ইসহাকের। সেসব পাত্তা না দিয়ে সে তানিয়ার হাত ধরে হাটতে লাগলো। কিছুদুর এসে তানিয়ার হাত ছেড়ে দিয়ে নিজের হাত স্যনেটাইজার করলো সে।যেন খুব নোংরা কিছু ধরেছিলো এতক্ষণ। তা দেখে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো তানিয়া।
— হাসছো কেন? আর আমি যতটুকু জানি এটা তোমার পরিচিত এলাকা।যেভাবে একা এসেছো সেভাবে একা চলে ও যেতে পারবে।(বিরক্ত হয়ে)
তানিয়া এতক্ষণ চুপচাপ ইসহাকের কথা শুনছিল।ইসহাক চলে যেতে নিতেই সে বললো,
— মি.ইসহাক ইমতিয়াজ, আপনার কোন কথার জবাব আমি আজ দিলাম না কেন জানেন?(মুচকি হেসে)। জবাব গুলো তোলা রইলো। কোন একসময় একান্তে দেয়া যাবে। সস্তা রাস্তার মেয়ে! তাই না?
আসলে আপনার মতো আমিও ক্লাস মেনটেইন করে চলি। কিন্তু ও-ই যে, ভালোবাসা অন্ধ!তাই মানুষ আর অমানুষের মধ্যে পার্থক্য করতে ভুল করে ফেলেছি।কি করবো বলুন, দেখতে তো মানুষের মতো ই দেখা যায়। ভিতর টা ঠিক কতটা নোংরা তা বুঝবো কি করে বলুন? যাই হোক, ধন্যবাদ দিয়ে আপনাকে ছোট করবো না। অমানুষ চিনতে শিখিয়েছেন বলে কথা। তবে কোন একদিন এই ঋন সুধে আসলে ফিরত দিবো।খুব একটা অপেক্ষা করার দরকার নেই। আমি কারো ধার রাখি না। আর বাকি রইলো এই নোংরা হাত, এই হাত ধরার জন্য একদিন আপনি ছটফট করবেন। কিন্তু হাত কেন হাতের ছায়া ও আপনার নসিব হবে না।
কথা গুলো বলে তানিয়া আর একমিনিট ও দাঁড়ায় নি।ইসহাক ক্ষেপে গেলেও তাকে কোন কথা বলার সুযোগ দেয়নি তানিয়া।
বর্তমান,
রুবিনা বেগম স্থীর হয়ে বসে আছে। মেয়ের অবস্থা দেখে কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে সে। কিন্তু কারোর সাথে এ বিষয় নিয়ে কথা বলে নি।
সম্রাট ডাক্তারের সাথে কথা বলে কেবিনে আসতেই রুবিনা বেগম দৃর গলায় বললো,
— আমার মেয়ের সাথে কি করেছে ওরা?
রুবিনা বেগমের কথা শুনে শান্ত চোখে তাকালো সম্রাট। স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
— কিছুই হয়নি আদওয়ার।অযথা চিন্তা করবেন না আন্টি। এখন আমাদের শান্ত থেকে আদু কে সামলাতে হবে। আপনি প্লিজ উল্টো পালটা কিছু চিন্তা করে নিজেকে আর আমাদেরকে বিভ্রান্ত করবেন না।
সম্রাটের কথা শুনে চুপ করে গেলো রুবিনা বেগম। আসলেই এখন আদওয়া কে সামলানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তানিয়া হাসপাতালে এসে সরাসরি আদওয়ার কেবিনে ঢুকে গেলো। তানিয়াকে দেখে রুবিনা বেগম কিছুটা অবাক হলেও প্রকাশ করলো না। এখন তার সবকিছুই স্বাভাবিক মনে হয়। কিছুক্ষনের মধ্যে ওখানে একে একে প্রিয়া আর ওহিদ উপস্থিত হয়।আজ সকালেই ওরা কক্সবাজার এসে পৌছেছে। তৌহিদ কে হসপিটাল থেকে গতকাল সকালে রিলিজ দিয়ে দিয়েছে। তাই ওকে বাসায় রেখেই ওরা এখানে চলে এসেছে। তৌহিদ একটু সুস্থ হলেই এখানে চলে আসবে।
— আদুর জ্ঞান কখন ফিরবে মামা?
সম্রাট নিজের ঘড়ি চেক করে বললো,
— আর একঘন্টার মধ্যেই ফিরার কথা।চিন্তা করিস না।সি ওইল বি ফাইন।
— হুম।
— ভাইয়া একটু বাইরে আসেন।কিছু কথা আছে।
ওহিদের সাথে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো সম্রাট।
— মারিয়ার বাবা কে নিয়ে পৌঁছে গেছে ওরা।ওনাকে কি আগের জায়গায় ই নিয়ে যাবে?
— নাহ।আপাতত রাস্কেল টাকে আমার ফ্ল্যাটে নিয়ে যেতে বল।ওর ব্যবস্থা আমি নিজেই করবো। (দাতে দাত চেপে)
— আচ্ছা। যুবরাজ ভাইয়া আদু কে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলেছে। কখন রওনা হবেন?
— আর দুইদিন পরে যাবো। এখন এখানেই থাকবে আদু।
সম্রাটের কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাকালো ওহিদ। সম্রাট আদু কে ঢাকা নিয়ে যেতে চাইছে না কেন এটা বুঝতে পারছে না সে। তবুও কথা বাড়াতে চাইলো না।নিরব সম্মতি দিয়ে।হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গেলো।
সম্রাট অনেকটা চিন্তিত আদু কে নিয়ে।এখানে তাদের পরিচিত কেউ নেই।কিন্তু ঢাকা গেলেই আত্মিয় স্বজন হাসপাতালে ভীড় করবে।আর আদুর অবস্থা দেখে কোন কিছু বিবেচনা না করেই বদনাম রটিয়ে দিবে।আইজকা আত্মিয়রাই সবচেয়ে বেশি দুর্নাম ছড়ায়।একজনের বদনাম করে তারা পৈচাশিক আনন্দ পায়।তাই আদু মোটামুটি সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত সম্রাট তাকে ঢাকা নিয়ে যাবে না। দরকার হলে দেশের বাইরে নিয়ে যাবে।তবুও ঢাকা না।
চলবে,,,
(অর্ধেক লিখে রেখেছিলাম।তারপরে গেলো কারেন্ট। ১৭ ঘন্টা পরে আসলো। কি একটা অবস্থা। যাই হোক,সবাই সুস্থ আছেন তো?আমার হাসবেন্ড খুব অসুস্থ। প্রচন্ড জ্বর। সবাই দোয়া করবেন।)