মোহ_মায়া #সানজিদা_বিনতে_সফি #পর্ব_৩৪

0
365

#মোহ_মায়া
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_৩৪

পিটপিট করে চোখ খুললো আদওয়া। চারপাশে সব কিছু ঝাপসা লাগছে। সারা শরীরে অসহ্য যন্ত্রণায় মুখ থেকে হালকা আর্তনাদ করতেই সম্রাট অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

— কি হয়েছে জান?কোথায় কষ্ট হচ্ছে? এই ওহিদ তুমি গিয়ে এখুনি ডাক্তার ডেকে নিয়ে আসো।কথা বল জান!

সম্রাট আদওয়ার কছে গিয়ে অস্থির হয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কথা বলার সময় কন্ঠটা কেপে কেপে উঠছে।

অনেক কষ্টে চোখ খুলে সম্রাট ভাইয়ার দিকে তাকাতেই তার চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি এসে আমার গালে পড়লো। আমাকে চোখ খুলতে দেখে সম্রাট ভাইয়া পাগলের মতো আমার সারা মুখে চুমু খেলেন। সবশেষে কপালে লম্বা একটা চুমু খেয়ে আস্তে করে বললো,

— ঠিক আছিস? বেশি খারাপ লাগছে?

আমি ইশারায় না করতেই ওনি একটু শান্ত হলেন।ততক্ষণে ওহিদ ডাক্তার নিয়ে চলে এসেছে।

ডাক্তার আমাকে চেকআপ করে বললেন,

— ভয়ের কোন কারণ নেই।এখন ওনি ঠিক আছেন।তবে সুস্থ হতে কিছুটা সময় লাগবে।ওনাকে কয়েকদিন প্রোপার বেড রেস্ট থাকতে হবে।হাটাচলা না করাই ভালো। আপনি আমার সাথে আসুন। কিছু মেডেসিন লিখে দিচ্ছি। আর ওনার রিপোর্ট চলে এসেছে। কিছু ডিসকাস করার ছিল।

সম্রাট আমার কপালে চুমু দিয়ে ডাক্তারের সাথে বেরিয়ে গেলো।
সম্রাট বেরিয়ে যেতেই আব্বু আর মা ঢুকলো কেবিনে।মা তো এসেই কান্না শুরু করে দিয়েছে।বাবা ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বাবা কে দেখে আমার খুশিতে চোখে পানি চলে আসলো।

— তুমি কেমন আছো আব্বু?(অস্পষ্ট স্বরে)

আমার কথা শুনে আব্বু এসে আমাকে হালকা করে জরিয়ে ধরলো। চোখের পানি ছেরে দিয়ে বললো,

— তোমাকে এভাবে দেখে কিভাবে ভালো থাকি আম্মু।তুমি জানো আমাদের এই কয়েক টা দিন কত যন্ত্রণায় কেটেছে? তুমি আমার একমাত্র মেয়ে। তোমার কিছু হলে আমরা কিভাবে বেচে থাকতাম মা।

আব্বু নিরবে চোখের পানি ফেলছে।আমি ও আব্বুকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলাম। আমাদের কান্না দেখে ভাইয়া পিছন থেকে বললো,

— উফফ আব্বু,তোমার আদর করা হয়ে গেলে আমাদের ও একটু সুযোগ দাও।পিছনে অনেক লম্বা লাইন।

ভাইয়ার কথা শুনে আমি আর আব্বু ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখলাম ভাইয়ার পিছনে ওহিদ, তানিয়া,প্রিয়া,সায়েম ভাইয়া লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের এভাবে দেখে আমি ফিক করে হেসে দিলাম।ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বললাম,

— তৌহিদ?

— ভালো আছে আলহামদুলিল্লাহ। এখন বাসায় আছে। দুই এক দিনের মধ্যে এখানে চলে আসবে দোস্ত।টেনশন নট।

তানিয়ার কথা শুনে আমি মলিন হাসলাম। নার্স কেবিন খালি করতে বলতেই সবাই একসাথে এসে আমাকে হাগ করে বেড়িয়ে গেলো।

🌸

প্রায় আধঘন্টা পরে সম্রাট কেবিনে ঢুকলো। আমার পাসে বসে কপালে দীর্ঘ চুমু খেয়ে সরে আমার পাসে আধসোয়া হয়ে বসে পরলো।

— ডাক্তার কি বললো?

আমার কথা শুনে সম্রাট ভাইয়া মুচকি হেসে বললো,

— ডাক্তার বলেছে আমাকে তারাতাড়ি বিয়ে করে নিতে।কয়েকদিন আদর সোহাগ করলে তুই এমনি এমনি ই ভালো হয়ে যাবি।স্বামীর ভালোবাসা বলে কথা। (দুষ্ট হেসে)

এই লোকটা আর ভালো হলো না।

— অশ্লীল।

— অশ্লীল বলে লাভ নেই। বিয়ে করবিই তো আদর খেতে।আর আমি বললেই অশ্লীল! এখন এতো কথা না বলে একটু বুকে আয় জান।আমার অশান্ত বুকটা শান্ত করার জন্য এখন এই বুকে তোকে চাই আমার।

ওনার অসহায় গলা শুনে আমি আস্তে করে তার বুকে মাথা রাখলাম। সম্রাট ভাইয়া আমার মাথাটা শক্ত তার বুকে চেপে ধরলো। আমি চুপ করে তার বুকের ধুকপুকানি শুনতে লাগলাম। এখন অনেকটা শান্তি লাগছে।চোখ বন্ধ করতেই সেই দিনের কথা গুলো মনে পরে গেলো। এতক্ষণ সবাই কে দেখে সব কিছু আমার মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। সব কিছু মনে পরতেই আমি ছিটকে দূরে সরে গেলাম সম্রাটের কাছ থেকে। আমার এভাবে সরে যাওয়া দেখে সম্রাট আমরা দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

— ও ওরা আ আমাকে ছ ছুয়েছে।আ আমি খ খারাপ হয়ে গ গেছি।ছ ছুবেন ন না আ আমাকে।

আমি কাপা কাপা গলায় কথা গুলো বলে দূরে সরে গেলাম সম্রাটের কাছ থেকে।

আদওয়ার কথা শুনে সম্রাট অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে আদওয়ার দিকে।সম্রাট আগেই জানতো আদওয়া এভাবে রিয়্যাক্ট করবে।আদওয়া পাগলের মতো করতে লাগলো। সারা শরীরে আঁচড় কাটতে লাগলো। আদওয়ার এই অবস্থা দেখে সম্রাট শক্ত করে জরিয়ে ধরলো আদওয়া কে।

— ছাড়ুন আমাকে। আমি আর আপনার যোগ্য নই।আমাকে ছেড়ে চলে যান।আমি অপবিত্র হয়ে গেছি।(চিৎকার করে কান্না করে)

— হুসস।কিছু হয়নি। কিছু হয়নি তোর সাথে। তাই অপবিত্র হওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমি তোকে খুব ভালোবাসি জান।এইসব বলে আমাকে আঘাত করিস না পাখি আমার।আমার বুকে যন্ত্রণা হয়।

সম্রাটের কথা শুনে আমি চুপ হয়ে গেলাম।তারমানে আমার সাথে সত্যিই কিছু হয়নি!আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই সম্রাট চোখ দিয়ে আস্বস্ত করলেন।

— খারাপ কিছু হওয়ার আগেই আমি তোকে আমার কাছে নিয়ে এসেছি।এখন তারাতাড়ি সুস্থ হয়ে যা।আমার খুব বিয়ে বিয়ে পাচ্ছে।

এমন একটা সময়ে সম্রাট ভাইয়ার এমন বেশরম মার্কা কথা শুনে ও আমার রাগ হলো না। আমি বিড়াল ছানার মতো সম্রাট ভাইয়ার বুকে ঘাপটি মেরে শুয়ে রইলাম।

🌸

আদওয়ার চিৎকার শুনে কেবিনের সামনে সবাই জরো হয়ে গিয়েছে।সম্রাট আগেই সবাইকে নিষেধ করেছে কেবিনে ঢুকতে। তাই আর কেউ ভিতরে ঢোকার সাহস করে নি।কিন্তু আদওয়ার কান্না দেখে সবারই চোখ ভিজে গিয়েছে।

এই কয়েকদিনে সায়েম অনেকটা শান্ত হয়ে গেছে। এখন আর আগের মতো দুষ্টামি করে না।প্রয়োজন ছাড়া কারোর সাথে কথা ও বলে না।হাসপাতাল থেকে কিছুক্ষণ আগেই বাসায় এসেছে সে।ড্রয়িং রুমে ঢুকতেই ইসহাকের পাসে বনানী কে দেখে চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো তার।নিজেকে সামলে রুমের দিকে যেতেই বনানী ডাকলো সায়েম কে,

— চোখ কি পৌরসভার ডাস্টবিনে ফেলে আসছোস নাকি?আমি এখানে বসে আছি চোখে পড়লো না তোর! আমার সাথে কথা বলতে কি মুখে ফোসকা পরতো তোর!তুই তো বন্ধু জাতির কলংক।

বনানীর কথা শুনে দাঁড়িয়ে গেলো সায়েম। ঘৃণার দৃষ্টিতে ইসহাকের দিকে তাকালো। সায়েমের চোখে নিজের জন্য এতটা ঘৃণা দেখে চোখ নামিয়ে নিলো ইসহাক।

— কথা বলার জন্য আমাকে লাগবে কেন? তোর পাশে যে আছে সে একাই একশ। সেটা কথা বলার জন্য হোক বা টাইম পাস করার জন্য।

কথা গুলো বলে সায়েম হনহন করে ভিতরে চলে গেলো। বনানী এখনো চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সায়েমের যাওয়ার দিকে। সায়েমের কথার আগা মাথা কিছুই সে বোঝে নি।অবাক চোখে ইসহাকের দিকে তাকাতেই ইসহাক আস্তে করে উঠে চলে গেলো। বনানীর কাছে বিষয় টি একদমই ভালো লাগলো না।এদের মধ্যে নিশ্চয় কিছু একটা হয়েছে। এখানে আসার পর থেকে ইসহাক কেমন অদ্ভুত ব্যবহার করছে।কথা বললে হু হা তে জবাব দিচ্ছে।
বনানী ভাবলো হয়তো আদওয়ার এই অবস্থার জন্য সবার মন খারাপ। তাই সেও খুব একটা পাত্তা দিলো না।

🌸

নিস্তব্ধ রাত্রিতে বিচের বালিতে বসে আছে যুবরাজ। আদওয়ার জ্ঞান ফিরেছে শুনে ও দেখতে যায়নি সে।আদওয়াকে এই অবস্থায় দেখে তার একদম ই ভালো লাগে না। বুকের ভেতর চিনচিন করে একটা ব্যাথা হয়।আজ খুব সাফা কে মনে পরছে যুবরাজের।সাফা কে নিয়ে প্রায়ই মধ্যে রাতে বেরিয়ে পরতো লং ড্রাইভে।সাফা র কোন আবদার ই সম্রাট আর যুবরাজ ফেলতে পারতো না।একটা মাত্র ছোট বোন বলে কথা। কিন্তু সব কিছু শেষ করে দিলো এই নরপশু গুলো। সবাই কে এর দাম দিতে হবে। সাফার কথা মনে হতেই যুবরাজের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। চোখ দুটো রক্ত বর্ন ধারণ করেছে।যুবরাজ শান্ত মেজাজের হলেও ভাই বোনদের খুব ভালোবাসে। এদের জন্য হিংস্র বাঘের মতো হতেও সময় লাগে না ওর।মারিয়ার বাবার সাথে অনেক পুরনো হিসাব মিলানো বাকি আছে।

চলবে,,,

(কি আর বলবো।হাসবেন্ড খুব অসুস্থ। সমস্যা যেন পিছু ছাড়ছে না। সবাই সাবধানে থাকবেন। চারিদিকে অসুস্থতা বেড়ে যাচ্ছে। রি চেক হয়নি।ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। ভালোবাসা সবাইকে। আগামী পর্বে শেষ হয়ে যাবে গল্প।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here