গল্পের নাম: #বৃষ্টি_থামার_পরে
পর্ব ১২: #বউ_বউ_লাগছে
লেখিকা: #Lucky_Nova
পালিয়ে যাওয়ার ধান্ধায় মিহি ঘরের বাহিরে হালকা উঁকি দিলো। আর উঁকি দিতেই ওর চোখ ছানাবড়া হয়ে এলো। পুরো বাড়ি এত সুন্দরভাবে সাজানো।
এভাবে সাজাচ্ছে কেনো সেটাই চিন্তায় এলো না মিহির।
তবে সেটা চিন্তা না করে পালানোর পথ খুঁজতে লাগলো মিহি। পালিয়ে কোথায় যাবে সেটাও ঠিক করে ফেলেছে ও। নিজের বাড়িতে ত এখন এমনিও ঠাঁই হবে না। কিন্তু এতগুলো ছেলেমেয়ের মধ্যে থেকে পালানো অসম্ভব।
তাও মিহি আশা করছে যে সুযোগ একটা না একটা পাওয়া যাবেই। তাছাড়া সকাল থেকে এরোনও আশেপাশে নেই। এখন পালাতে পারলে সবচেয়ে বেশি ভালো হত।
মিহি হতাশ হয়ে আবার বিছানায় গিয়ে বসলো।
গতকাল থেকে না হয়েছে খাওয়া, না হয়েছে ঘুম আর না হয়েছে গোসল।
আজ গোসল না হলে মরেই যাবে ও। কিন্তু জামাকাপড়ও ত কিছুই নেই!
অন্যদিকে খিদেতেও পেট চোঁ চোঁ করছে মিহির। যদিও বিছানার পাশেই খাবার রাখা। তাও জেদ ধরে খাচ্ছে না সে।
“এখনো খাও নি?”
মিহি সচকিত হয়ে দরজার দিকে তাকালো।
প্রীতি মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে।
মিহি চোখ সরিয়ে নিজেকে গুটিয়ে রাখলো।
এদের কাউকে মিহি পছন্দ করে না। কারণ এরা সবাই এরোনকে সাপোর্ট দিচ্ছে। কারোই বিবেক বুদ্ধি নেই।
প্রীতি এগিয়ে এসে বলল,”একটু খেয়ে নেও। তোমার কারণে এরোনও….।” এটুকু বলেই থেমে গেল প্রীতি।
মিহি ভ্রুকুটি করে তাকালো।
“যাইহোক। তোমার জন্য শাড়ি। সেফটি পিন দুইটা পেয়েছি মাত্র।” বলেই প্রীতি একটা শপিং ব্যাগ মিহির পায়ের কাছে রাখলো।
মিহি প্রশ্নাত্বক দৃষ্টিতে তাকালো।
“বাথরুমে তোয়ালে আছে। শাওয়ার নিয়ে নেও। কাল থেকে এক কাপড়ে আছ।” হাসিমুখে বলে প্রীতি বেরিয়ে গেল। আর যাওয়ার আগে দরজা এগিয়ে দিয়ে গেল।
মিহির জন্য ভালই হলো। সে গোসলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল। তাই সব ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে শাড়ি নিয়ে গোসলে ঢুকে পরলো।
অনেক সময় নিয়ে গোসল সারলো মিহি। তারপর লাল জরজেট শাড়ি পরে বেরিয়ে এলো।
ব্লাউজ টা একটু ঢিলে হয়েছে কিন্তু তাও ঠিক আছে। থ্রি-পিস না এনে এই মেয়ে শাড়ি কেন এনেছে সেটাই বুঝতে পারছে না মিহি।
ভিজে চুলগুলো শুকানোর জন্য এখন হেয়ার ড্রাইয়ার দরকার। কিন্তু তা এখানে নেই।
মিহি এগিয়ে গিয়ে বেলকনিতে চোখ বুলালো। ভালোই রোদ উঠেছে। এখানেই চুল শুকানো যাবে।
মিহি চুল থেকে তোয়ালেটা খুলে সব চুল বাম কাঁধে সরিয়ে আনলো।
তারপর বিছানার পাশে রাখা সকালের নাস্তার ট্রে থেকে একটা স্যান্ডউইচ তুলে নিয়ে বেলকোনিতে এসে দাঁড়ালো।
হালকা রোদে দাঁড়াতে মিহির বেশ ভালোই লাগছে। এক হাতে স্যান্ডউইচ অন্য হাতে রেলিঙ ধরে বাহিরের দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগল।
জায়গাটা সত্যিই সুন্দর। বড় একটা জায়গা নিয়েই বানানো। শুধু বাগানের অভাব। বাগান ছাড়া এত বড় উঠান দিয়ে কি হবে!
তবে এটা বসতি বাড়ি না। হয়তো বাংলো বলা চলে। এদের কতগুলো এমন বাংলো আছে কে জানে?
রাজনীতি করলে ত টাকার অভাব হয়না। ভেবেই তাচ্ছিল্যের হাসি দেয় মিহি।
স্যান্ডউইচ খাওয়া শেষ করে মিহি কতসময় চুল নেড়েচেড়ে শুকিয়ে নিলো। তারপর চুলগুলো খালি হাতে খোপা করে নিলো।
আবার নিজের বাবা মায়ের কথা মনে পড়তে লাগল মিহির। মনে হতেই মুখ ম্লান হয়ে এলো। অনেক খারাপ লাগতে লাগলো। কি থেকে কি হয়ে গেল!
ওর চিন্তা ভাঙলো আচমকা কেউ বেলকনিতে ঢোকায়। মিহি চমকে তাকালো।
“তুমি এখানে! আর আমি তোমাকে পুরো রুম খুঁজে…” অস্থিরতার সাথে এটুকু বলেই এরোন থেমে গেল আর মুখ দিয়ে একটা সস্তির নিঃশ্বাস বের করলো। ঘরে ঢুকে মিহিকে দেখতে না পেয়ে অনেক ঘাবড়ে গিয়েছিলো ও। আর বড় বড় নিঃশ্বাসই তার প্রমাণ দিচ্ছে।
এরোনকে দেখে মিহি চোখ সরিয়ে সামনে তাকালো। সে আশেপাশে আসলেই মিহির মধ্যে আড়ষ্টভাব, ভয়, দ্বিধা সব একসাথে চলে আসে। যেমন এখনও এসেছে।
মিহি কপাল কুচকে সামনের দিকে মুখ করে দৃষ্টি নামিয়ে রেখে থেকে থেকে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাতে লাগলো।
এতক্ষণে মিহির দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো এরোন। লাল শাড়িতে খোপা করা চুল। ঈষৎ হলদেটে শরীরে অপূর্ব সুন্দরভাবে মানিয়েছে। শুধু লাল চুড়ির ঘাটতি রয়ে গেছে। তবে চুড়ি ছাড়াও খারাপ লাগছে না।
মিহি কপাল আরেকটু কুচকে চিন্তা করতে লাগল যে এই ছেলে এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো? জীবনেও মেয়ে দেখে নি নাকি?
কয়েক মিনিট হয়ে যাচ্ছে বেলকোনের দরজা ধরে এরোন অপলক দৃষ্টিতে মিহির দিকে তাকিয়ে আছে।
আর মিহি সংশয়ে কাচুমাচু হয়ে আছে।
“তোমাকে বউ বউ লাগছে।” ঘোর লাগা কন্ঠে বলে উঠল এরোন।
মিহি নতজানু হয়েই চোখ গোলগোল করে ফেলল। হঠাৎ এমন একটা কথা বলে উঠবে সেটা আঁচ করতে পারেনি মিহি।
এরোন ধীর পায়ে মিহির দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করল।
বুঝতে পেরে মিহি চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে রেলিঙটা শক্ত হাতে আঁকড়ে ধরল।
এরোন একদম ওর পাশে এসে থেমেছে আঁচ করতে পেরে চোখ আরো শক্ত করে বন্ধ করে ফেলল মিহি।
এরোন হাত বাড়িয়ে ওর খোপা খুলে দিল।
মুহুর্তের মধ্যে চুলগুলো পুরো পিঠে ছড়িয়ে গেল।
মিহি থতমত খেয়ে বড়বড় চোখ মেলে মেঝের দিকে তাকালো।
“চুল খোলা থাক।” সিক্ত গলায় বলে দুইপা পিছিয়ে যায় এরোন।
মিহি আড়চোখে একবার এরোনের দিকে তাকিয়ে আবার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। বুক ধুকপুক করছে ওর।
“রুমে আসো।”
“ক..কেনো?”
“ত কি সারাদিন বারান্দায় থাকবা?” ভ্রু কুচকে বলল এরোন।
মিহি উওর না দিয়ে চুপ করে রইল।
এরোন উওরের অপেক্ষা না করেই বলল, “পেপারস রেডি। সাইন দিবা এখনি।”
মিহি চোখ আর ঠোঁট বাঁকিয়ে মনে মনে এরোনকে কয়েকটা গালি দিলো।
এরোন ততক্ষণে রুমে ঢুকে গেছে। তাই মিহিও এসে ঢুকলো।
এরোন একটা ফাইল মিহির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “এটাতে। দরকার হলে পড়ে দেখতে পারো।”
মিহি দাঁত কিড়মিড় করে ফাইলটা হাতে নেয়। বড় বড় চাকরীতেও মানুষ পেপার সাইন করায় না। আর এখানে বুয়াগিরি করাতে সাইন নেওয়া হচ্ছে। ভেবেই মিহির গা জ্বলে যাচ্ছে।
“কি?”
এরোনের আওয়াজে নড়েচড়ে ফাইলে চোখ বুলায় মিহি। পুরোটা পড়ে দেখে যা বুঝলো এটা সত্যিই বুয়া বানানোর পেপারস। প্রশান্তির বিষয় এটাই যে কোনো শাস্তির বিষয়ে লেখা নেই। মানে মিহি টুস করে পাকিয়ে গেলে জেলে-টেলে যেতে হবেনা ওর।
পৃষ্ঠা উল্টে উল্টে তিনটা পাতাতেই একই কথা লেখা দেখতে পায় মিহি। তাও সময় নিয়ে পরখ করে দেখে। এই ছেলেকে বিশ্বাস করাই যাবে না। তবে পেপার সাইন করাক আর যাই করাক দিন দুই তিনের মধ্যে মিহি ভাগবে। শুধু সুযোগের অপেক্ষা।
“পড়েছি।” রিনরিনে গলায় বলল মিহি।
“গুড। এখন সাইন করো।” বলল এরোন।
“পেন?”
এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজে পেল না এরোন।
তাই মিহিকে বলল, “যাও নিচে থেকে নিয়ে আসো।”
মিহি অল্প হা হয়ে বলল,”আমি কি করে জানবো পেন কোথায়!”
এরোন দায়সারাভাবে বলল, “গিয়ে দেখো। জলদি। আমার অত সময় নেই।”
মিহি দাঁতে দাঁত চিপে মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করলো। চাকরানী বানাতে পারেনি তার আগেই অর্ডার শুরু।
বাধ্য হয়ে বড়ো বড়ো পা ফেলে ঘর থেকে বের হলো মিহি।
সিঁড়ির গোড়ায় আসতে না আসতেই মেঘ বলে উঠল, “কলম খুঁজতে বের হয়েছো তো?!”
মিহি নিজেকে একটু গুটিয়ে নিয়ে মাথা নাড়লো।
মেঘ চোরা হাসিসমেত হাত বাড়িয়ে একটা কলম এগিয়ে দিয়ে চোখের ইশারায় নিতে বলল।
মিহি সন্দেহের চোখে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে কলমটা নিলো।
“অগ্রীম অভিনন্দন।” কথাটা বলে দাঁত কেলিয়ে হাসি দিলো মেঘ।
মিহি বুঝলো না। তাই মেকি হেসে মনে মনে বল উঠলো, পাগোল নাকি!
“কই? পাওনি?” হালকা উঁচু আওয়াজে স্বাভাবিক ভাবে বলল এরোন।
এরোনের গলা শুনে মিহি আবার রুমের দিকে ছুটলো।
“পেয়েছো?”
“হু।” নিচু গলায় বলেই কলমটা দেখালো মিহি।
“সাইন করো।” বলে এরোন ফাইলটা বিছানার পাশের ছোট ওয়ারড্রব টার উপরের সমতল জায়গায় রাখলো।
মিহি আর কিছু চিন্তা না করে এগিয়ে গিয়ে পর পর তিনটা সাইন করে দিলো।
“হয়ে গেছে।” কপালটা একটু কুচকে দৃষ্টি নামিয়ে বলল।
এরোনের ঠোঁটের কোণে হাসি চলে এলো।
মিহি এরোনের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে ভ্রু সংকুচিত করে ফেলল। আর মনে মনে বলল, যত খুশি হওয়ার হয়ে রাখেন। আমি ত পালাচ্ছি সিওর। এসব বুয়া করার ধান্ধায়ই যে সুযোগ নেবেন আমার থেকে সেটা আমি ভাল করে জানি।
এরোন এগিয়ে গিয়ে ফাইলটা হাতে নিলো। তারপর মিহির দিকে তাকালো আর বাঁকা হাসিসমেত বলল, “তুমি অনেক বোকা, কাপকেক।”
কপাল কুচকে ফেলল মিহি।
“মানে?”
এরোন প্রসঙ্গ পাল্টে সিরিয়াস হয়ে বলল, “তোমার দিদির সাথে যা হয়েছে তা তোমার সাথে করবো না আমি।”
মিহি চোখ প্রসারিত করে ফেলে, “আপনি কিভাবে জানেন!”
“আজ তোমার বাসায় গিয়েছিলাম।”
“ত…তারপর?” বিচলিত হয়ে উঠলো মিহি।
“তোমার বাবা বাদে বাকিরা তোমার সাথে আমার বিয়ে করার বিষয়টা মেনে নিয়েছে। বিয়ের পর সেও মেনে নেবে।”
মিহি পীলে চমকে দুইপা পিছিয়ে গেল,”মানে?”
“তোমার বিয়ে ভেঙে গেছে। সাথে তোমার আমার বিষয়ে জানাজানিও হয়ে গেছে। তাই তোমার পরিবার আর তোমার জন্য এটাই ভাল হবে যদি তুমি আমাকে বিয়ে করো।” ছলনাহীন কন্ঠে বলে উঠল এরোন।
মিহি দুইপা পিছিয়ে গিয়ে আতংকিত চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো, “আ..আপনাকে আমি বিয়ে করবো না।”
“বিয়ে করা ছাড়া তোমার কোনো উপায়ও নেই। এখন না বললেও, একদিন হ্যা তোমাকে বলতেই হবে। আর সেটার জন্য আমি অপেক্ষা করতে পারবো।” সরল ভাবে বলল এরোন।
মিহি বলে উঠল,”তার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি আপনাকে ভালো…”
“ভালোবাসো না জানি।” হালকা রেগে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলে ওঠে এরোন।
“তারপরও কেনো আপনি..?” অসস্তিতে চোখ সংকুচিত করে মিহি।
“কারণটা তুমি বুঝলে ত ভালই হতো।” রাগ সমেত সংকুচিত চোখে তাকিয়ে বলল এরোন।
“আমি কিছু বুঝতে চাই না।” হালকা রোষের সাথে বলল মিহি।
এরোন একটা নিঃশ্বাস ফেলে স্বাভাবিক কন্ঠে বলে ওঠে,”আপাতত বুঝতে হবে না। কোনো তাড়া নেই।”
“মানে?”
“মানে এখন কান্নাকাটি বন্ধ করো আর ঘরে ঝাড়ু লাগাও। একটুও ধুলা পেলে খবর আছে তোমার।” কপট হুমকি দিয়ে বলে এরোন।
মিহি সরু চোখে তাকিয়ে তারপর দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো।
“জলদি।” বলতে বলতে এরোন ফাইলটা নিয়ে বেরিয়ে গেল।
বিয়ে ভেঙে গেছে ব্যাপারটায় খুব খারাপ লাগছে মিহির। তবে এটা ত হওয়ারই ছিলো। কারণ এসবের পর কে চাইবে এমন একটা মেয়েকে ঘরে তুলতে। কিন্তু রিজু! সে নিশ্চিয় অনেক কষ্ট পেয়েছে। হতাশ হয়ে পরলো মিহি।ঠোঁট কামড়ে চিন্তা করতে লাগলো ওর সাথে একবার কথা বলতেই হবে। সত্যিটা জানাতে হবে ওকে।
সন্ধ্যা গড়াতেই হৈ হুল্লোড় বেড়ে গেল। সেই আওয়াজেই মিহির ঘুম ভেঙে গেল। বিকালের দিকে বসে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে গেছে টেরও পায়নি।
মিহি উঠে বসে পায়ের কাছের শাড়ি ঠিক করতে না করতেই প্রীতি মেয়েটা এসে ঢুকলো।
“ঘুম ভেঙেছে তাহলে! কতবার এসে ঘুরে গেছি জানো!” কোমড়ে হাত দিয়ে কটাক্ষ করে বলল সে।
মিহি অপ্রস্তুত হয়ে তার দিকে একপলক তাকিয়ে পা গুটিয়ে বসলো।
“চলো তোমার হাতে মেহেদী দিয়ে দিই।”
শুনেই অবাক হয়ে যায় মিহি।
“কেনো?”
প্রীতি ওর কথার উওর না দিয়ে এগিয়ে ওর পাশে এসে বসে হাত টেনে নিলো।
মিহি হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে রইল।
“মেহেদী দেওয়ার কারণ লাগে নাকি?” বলতে বলতে মেহেদী লাগানো শুরু করে দিলো প্রীতি।
যেন সে দিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েই এসেছে।
মিহি ইতস্তত বোধ করলেও চুপ করে রইল।
দুইহাত ভর্তি মেহেদী দেওয়া শেষ করে তবেই প্রীতি দম নিলো। তবে খুব দ্রুতই দিয়েছে মেয়েটা। হয়তো দিতে দিতে অভ্যস্ত।
“এখন তোমাকে শাড়ি পরাতে হবে। কিন্তু তোমার হাতে ত মেহেদী।” বলেই ভাবুক ভাবে মিহির দিকে তাকালো প্রীতি। আগে শাড়ি পরিয়ে নিতে হত সেটাই মনে হচ্ছে প্রীতির।
মিহির কানে সে কথা গেল না। কারণ সে তার হাতে মেহেদী দিয়ে লেখা একটা অক্ষরের দিকে তাকিয়ে ভ্রুকুটি করে আছে। ইংরেজি প্রথম অক্ষর লিখে দিয়ে রেখেছে প্রীতি। কিন্তু কেনো?
“শাড়ি হাজির।” সুর টেনে বলল কেউ।
প্রীতি আর মিহি দুইজনেই চিন্তা থেকে বের হয়ে দরজার দিকে তাকালো।
হলদেটে কমলা রঙের এক শাড়ি নিয়ে ভিতরে ঢুকলো রুমা।
রমরমা সাজে সেজেছে সে।
সবই মিহির মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। কোনো অনুষ্ঠান কিনা প্রশ্ন করতে গিয়েও করলো না মিহি।
“আসো। তোমাকে আমি শাড়ি পরাবো।” একটু ভাব নিয়ে বলল রুমা।
মিহি একটু চমকালো। সে কেনো পড়াবে!
মিহি চোখ নামিয়ে নরম গলায় বলল,”আমি এটাতেই ঠিক আছি। আর শাড়ি লাগবে না।”
“লাগবে।” হালকা চোখ রাঙিয়ে বলল রুমা।
মিহি দমে গেল। এমনিও এরা সবাই ওর সিনিয়র। ইচ্ছে না থাকলেও কিছু করার নেই। কারণ সিনিয়র তাই মুখের উপর কিছু বলতেও ওর অসস্তি হচ্ছে।
“যাও হাত ধুয়ে এসো। এই মেহেদীর রঙ হতে সময় লাগে না।” মৃদুস্বরে বলল রুমা।
মিহি নিরুপায় হয়ে বাধ্য মেয়ের মত উঠে হাত ধুতে গেল।
ওর মনের মধ্যে কেমন খচখচ করতে লাগল। হঠাৎ করে কিসের জন্য সেজেছে ওরা! আর মিহিকেও বা কেন সাজাতে চাচ্ছে!
মিহি উওর খুঁজে পেল না। হাত ধুয়ে বের হয়ে আসলো।
“আসো। এখানে দাঁড়াও।” শাড়িটার ভাঁজ খুলতে খুলতে বলল রুমা।
মিহির অসস্তি হতে লাগল। অচেনা কারো কাছে শাড়ি পরে না সে কখন। ছোট বেলা থেকে মা পরিয়ে দেয়। আর বড় হবার পর এখন নিজেই পরে।
“কি হলো?” ভ্রু উঁচু করে নামালো প্রীতি।
“আম…আমি একা পরব।” বিব্রতবোধ করতে করতে বলল মিহি।
ওরা দুইজনেই হেসে দিলো।
প্রীতি বলল,”লজ্জা পাচ্ছ?”
মিহি উওর দিল না।
“লজ্জার কি! আমরা আমরাই ত।” বন্ধুত্বপূর্ণ হাসির সাথে বলল প্রীতি।
রুমা একটু ঠোঁট কাটা স্বভাবের। সে বলে উঠল,”আমাদের কাছেই এত লজ্জা! বর যখন শাড়ি ধরে টান দিবে! তখন?”
মিহি চমকে উঠলো আর চোখ আরো নামিয়ে নিলো। অসস্তি আর লজ্জায় ওর গাল লাল হয়ে এলো।
“অসভ্য। জুনিয়রের সামনেও শুরু করেছিস!” রুমাকে শাসিয়ে বলল প্রীতি।
“এখানে জুনিয়র সিনিয়র বলে কিছু নাই। সবাই একই প্রসেসের মধ্যে দিয়া যাইবে।” হেসে বলে উঠল রুমা।
তারপর তাড়া দিয়ে বলল, “আসো আসো জলদি আসো।”
“তোর ওকে শাড়ি পড়াতে হবে না।”
এরোনের তিরিক্ষি কন্ঠ শুনে প্রীতি আর রুমা অবাক হয়ে দরজার দিকে তাকালো।
(চলবে…)