মোহ_মায়া #সানজিদা_বিনতে_সফি #পর্ব_১৪

0
419

#মোহ_মায়া
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_১৪

কলিং বেলর শব্দে অনেকটা দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো বনানী।ক্লান্ত সম্রাটের কোলে অজ্ঞান আদওয়া কে দেখে দরজা থেকে সরে দারালো।
আদওয়াকে নিয়ে সোজা বেডরুমে চলে গেলো সম্রাট। কৌতুহলি চোখে দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলো বনানী। নিজেকে কিছুটা ধাতস্ত করে দ্রুত দরজা বন্ধ করে ওদের পিছনে ছুটলো।

– ওর কি হয়েছে বলবি সমু।অজ্ঞান কিভাবে হলো (অস্থির হয়ে আদওয়ার পাশে বসে) এই তুই কি করেছিস ওর সাথে? মেরে টেরে ফেলিস নি তো? (উদ্বিগ্ন হয়ে)

বনানীর এমন ভিত্তিহীন কথাবার্তা শুনে বিরক্তিতে মুখ থেকে ‘চ’ শব্দ উচ্চারণ করলো।

– থাম বইন। আজেবাজে কথা বন্ধ করে আগে ওর জ্ঞান ফেরানোর ব্যবস্থা কর।

– আলহামদুলিল্লাহ। বেচে আছে তাহলে। আমি তো ভাবলাম টপকে দিছোস। (স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে)

– তুই যাবি।(রেগে)

– আরে যাচ্ছি যাচ্ছি। রাগ করিস ক্যা।

দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো বনানী। ড্রয়িং রুমে আসতেই আবার কলিং বেল বেজে উঠল। বিরক্তিতে কপাল কুচকে গেল বনানীর। এখন আবার কে এলো! ভাবতে ভাবতেই দরজা খুলতেই হুরমুরিয়ে ভিতরে ঢুকলো সায়েম।সম্রাটের বের হওয়ার কিছুক্ষন পরেই সায়েম বেরিয়ে পরে।তার সাথেই রাব্বি দাড়িয়ে। ওদের দেখে কিছুটা হচকচিয়ে যায় বনানী। সায়েম আর রাব্বি অস্থির চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো,

– আদু কোথায়?

মুহুর্তের মধ্যে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো বনানীর।অনেকটা ক্ষিপ্ত হয়ে বললো,

– ডাকাতের মতো একজনের বাড়িতে হামলা করতে লজ্জা করলো না তোর।পায়ে কি রেল গাড়ির চাক্কা লাগাইছোস!এভাবে কেউ ভদ্রলোকের বাড়িতে ঢোকে? মেনারসলেস পিপলস।

সায়েম বনানীর দিকে ভালো করে তাকিয়ে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত নজর বুলালো, ভাবুক হয়ে জানতে চাইলো,

– এখানে ভদ্রলোক কে?

রাব্বি ওদের কথায় বিরক্ত হয়ে মাঝ পথেই থামিয়ে দিলো।বনানীর দিকে তাকিয়ে বললো,

– আপু আদু কোথায়? (অস্থির হয়ে)

বনানী সায়েমের দিকে কটমট করে তাকিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে রুম দেখিয়ে দিলো।

আদুর সন্ধান পেতেই দুই ভাই আর একমুহূর্ত দেরি করলো না। দ্রুত পায়ে সেদিকে এগিয়ে গেলো।

বনানী সায়েম কে বিরবির করে গালি দিতে দিতে এক গ্লাস পানি নিয়ে ওদের পিছনে গেলো।

– পানি আনতে এতক্ষন লাগে?
সম্রাট রেগে প্রশ্নটা করতেই বনানী আদওয়ার পাশে বসে থাকা সায়েম কে দেখিয়ে বললো,

– আমাকে না বলে এই মানুষ রুপি রেলগাড়ী কে বল।এখন কথা না বারিয়ে ওর জ্ঞান ফেরা।

সম্রাটের দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিতেই সম্রাট আদওয়ার চোখে কিছুটা পানি ছিটিয়ে দিলো।

– ভাই ও অজ্ঞান কিভাবে হলো বল তো?(সায়েম)

– অতিরিক্ত শকে।

শান্ত গলায় কথাটা বলতেই রাব্বি নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারলো না।

– আমার বোনকে নিয়ে কি শুরু করেছো তোমরা?একটার পর একটা ধাক্কা পেয়েই চলেছে ও।কতটা মানুষিক স্ট্রেসের মধ্যে আছে আইডিয়া আছে তোমাদের? ওকে নিয়ে টানাটানি করা বন্ধ করো।ওকে ওর মতো থাকতে দাও।ওর জীবনে শুধু ওর ডিসিশন চলবে।কেউ কিছু চাপিয়ে দিতে পারবে না।এমনকি আমার আব্বু আম্মু ও না।

রেগে চিৎকার করে কথা গুলো বলতেই সায়েম দ্রুত পায়ে এসে জরিয়ে ধরলো রাব্বি কে।

– মাথা ঠান্ডা কর ভাই। আমি সবকিছু বুঝিয়ে বলছি।আমরা কেউ আদুর খারাপ চাই না।মনি রাগের মাথায় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে আদুর পুরো জীবন টা নষ্ট হয়ে যেত। একটু বোঝার চেষ্টা কর।

– কি বুঝবো বলো?আমার সামনে আমার বোন নিস্তেজ হয়ে পরে আছে। কিসের শাস্তি পাচ্ছে ও!ওর তো কোন দোষ নেই।তাহলে ওকে কেন সাফার করতে হচ্ছে?সবার কাছে আমার বোন কেন অপরাধী? জবাব আছে কোন?

কোন রকম চোখের পানি আটকে কথা গুলো বললো রাব্বি। সায়েমের কাছ থেকে নিজেকে ছারিয়ে ধির পায়ে সম্রাটের দিকে এগিয়ে যায়।মাথা নিচু করে বসে আছে সম্রাট। রাব্বি নিজেও সম্রাট কে খুব ভালোবাসে।ওর কষ্ট বুঝতে পারে।কিন্তু আদওয়ার সাথে হওয়া একটার পর একটা ঘটনা ভাই হয়ে মেনে নিতে পারছে না।

– ভাইয়া,আমি জানি আপনি খুব ভালোবাসেন আদু কে।কিন্তু পরিস্থিতিতে আপনাদের সম্পর্কে তিক্ততা অনেকটা বেড়ে গেছে। চাইলে ও সবকিছু আগের মতো হবে না। আপনার কি উচিৎ ছিল না আদু কে কিছুটা সময় দেয়া? অন্তত পক্ষে সব কিছু জানিয়ে নিজের অপারগতা স্বীকার করে ওর কাছে ক্ষমা চাওয়া। অন্তত ওর মতামত তো নেয়া দরকার ছিল!

– আমি জানি পরিস্থিতি আমার অনুকূলে নেই।আমার সমস্ত অপারগতার জন্য আমি অবশ্যই ক্ষমা চাইবো।কিন্তু তার জন্য আমার আদু কে চাই।আমাকে শাস্তি দেয়ার জন্য হলেও আমার ওকে চাই। ও আমার সাথে রাগ করুক,অভিমান করুক, হাজার হাজার অভিমানের পসরা সাজিয়ে বসুক,আঘাতে আঘাতে আমাকে নিশ্বেস করে দিক।তবুও আমার ওকে চাই।আমাকে ক্ষত বিক্ষত করার জন্য হলেও আমার ওকে চাই। আজ যদি ও অন্য কারো হয়ে যেতো!(কথাটা বলেই সম্রাট শুকনো ঢোকে গিললো)
আ আমি শ শেষ হয়ে যেতাম।

কাপা কাপা গলায় কথাটা বলেই আদওয়ার মুখের দিকে তাকালো সম্রাট। এখনো জ্ঞান ফিরেনি। মুখের উপর হালকা পানি গুলো আলতো হাতে মুছে দিয়ে রাব্বির দিকে তাকালো। পুনরায় আদওয়ার দিকে তাকিয়ে হালকা গলায় বললো,

– ওর মতামতের মুল্য আছে আমার কাছে।পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতেও কিছুদিন সময় লাগবে আমার।গ্রামের মানুষের চিন্তা ভাবনা আগের দিনের মানুষের মতো। তাদের চিন্তা ধারা বদলানো যাবে না। কিন্তু আদুর সম্মান আদু কে ফিরিয়ে দেয়া যাবে। সব কিছু ঠিক হলে আন্টি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন এটা আমার বিশ্বাস।

ওদের কথার মাঝেই পিট পিট করে চোখ খুললো আদওয়া।আবছা চোখে সবাইকে দেখে হচকচিয়ে গেলাম। সব কিছু মনে পরতেই হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলাম।
সায়েম আর রাব্বি এক প্রকার হামলে পরলো ওর উপরে। এখন কেমন লাগছে?শরীর ঠিক আছে কিনা?কোথাও কোন সমস্যা হচ্ছে কি না?প্রশ্ন করে করে আবার অজ্ঞান করে দেয়ার জোগাড়।

– আমি ঠিক আছি ভাইয়া।

শান্ত গলায় কথাটা বলতেই দুই ভাইয়ের প্রশ্নের ঝড় থেকে গেলো।
সম্রাট এখনো তাকিয়ে আছে আদওয়ার দিকে। কিন্তু আদওয়া ওর দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না।

বনানী এতোক্ষন সব দেখে যাচ্ছিলো, এবার গলা খাকারি দিয়ে সায়েম আর রাব্বি কে বললো,

– তোরা একটু আমার সাথে আয়।কিছু জরুরি কথা আছে।
চোখ টিপে ইশারা করতেই দুজন সুর সুর করে বেড়িয়ে গেল।

আধশোয়া হয়ে বিছানার ব্যাক সাইডে হেলান দিয়ে বসে আছি আমি ।সম্রাট কিছুটা এগিয়ে গিয়ে মুখোমুখি হয়ে বসলো। আমার হাত নিজের হাতে নিতেই আমি হাত ছাড়িয়ে নিলাম। প্রচন্ড অভিমান নিয়ে তাকালাম সম্রাটের দিকে। কেন জানি চেষ্টা করেও ঘৃণা করতে পারি না ।তবে এই মুহূর্তে আমার সহ্য হচ্ছে না তাকে।

– আমার কথা গুলো একটু শুন জান।অনেক কিছু বলার আছে তোকে। প্লিজ একটা সুযোগ দে সব কিছু এক্সপ্লেইন করার।

আমার হাতে দু ফোটা পানির অস্তিত্ব অনুভব করতেই হচকচিয়ে গেলাম।অবাক হয়ে সম্রাট ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখলাম সে নিশ্বব্দে কাদছে।আরে কাদার কি হলো!আমি কি তাকে মেরেছি নাকি! কাদার কথা আমার।আমি কাদবো।কাদতে কাদতে এই রুমে বন্যা বানিয়ে দিবো।কিন্তু উনি কাদছেন কেন? এখন কি আমার কাদা ও সে কাদবে!আমাকে নিজের মন মতো কাদতেও দিবে না? আজব!
নিজের চিন্তা ভাবনা কে গালি দিয়ে দূরে পাঠিয়ে সম্রাট ভাইয়ার দিকে বিরক্ত চোখে তাকালাম। আমাকে তাকাতে দেখে উনি বলতে শুরু করলো,

সাফা আপুর সাথে হওয়া সব কিছু বলতেই ডুকরে কেঁদে উঠলেন।আমার চোখে ও পানি চলে এসেছে। মানুষ এতটা খারাপ কিভাবে হতে পারে!আমাকে এড়িয়ে যাওয়া,আমার পাশে না থাকা,মায়ের সাথে হওয়া সমস্ত কথা, সবুজের সাথে বিয়ে ঠিক করা,আব্বু কে আমাদের ব্যপারে বলা।সব কিছু একটা একটা করে খুলে বললেন।সব কিছু শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে বসে আছি। কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না। সব কিছু বিষাদময় লাগছে।

– সত্যিই কি আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে? (শান্ত স্বরে)

– না।ওইটা নকল ছিলো। আন্টিকে দেখানোর জন্য। তুই আমাকে যতটা পারিস শাস্তি দে।কিন্তু আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা চিন্তা ও করিস না প্লিজ। (কাতর গলায়)

– আমি একটু একা থাকতে চাই।

চলবে,,,,

(প্রত্যকটা চরিত্র বাস্তবে বিলং করে।তাই কাউকে গালি দিবেন না প্লিজ। একমাত্র আদওয়া চরিত্রেটা কাল্পনিক। সম্রাট ভাইয়া জানতে পারলে আমাকে প্যারিস থেকে এসে তুলে আছাড় মারবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here