মোহ_মায়া #সানজিদা_বিনতে_সফি #পর্ব_১৭

0
417

#মোহ_মায়া
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_১৭

রাতের আকাশে জ্বলজ্বল করা নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে ভাবছি, আমি চলে এসেছি দু মাসের বেশি হলো। অথচ সে আমার কোন খোঁজ নিলো না! আমি কোথায় আছি?কেমন আছি তার কি একটুও জানতে ইচ্ছে হয় না!
নিজের ভাবনার উপর নিজেই বিরক্ত হলাম।তাকে শাস্তি দিতে আমি তাকে ছেড়ে চলে এসেছি। আমি তো তার থেকে দূরে থাকতে চাই। তাহলে আমার মন কেন বারবার চাইছে সে আমাকে খুজে বেড় করুক। আমার সামনে এসে আমাকে জোর করে নিজের করে নিক।কিন্তু তার তো কোন খবরই নেই। আমি আড়াল হলাম বলে সে ও কি আ।আমাকে আড়াল হতে দিবে নাকি!এই তার ভালোবাসা!
নিজের বেহুদা ভাবনা থেকে বেরিয়ে রুমে যেতেই কারোর ফিসফিস করে কথা বলা কানে এলো। ভ্রু কুচকে সামনে এগুতেই দেখি তানি কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে।

– ভাইয়া টেনশন করবেন না। আমি আছি তো ওর সাথে।

– ………..

– সত্যি!তাহলে তে ভালোই হলো।

-………….

– আচ্ছা ঠিক আছে। আপনিও ভালো থাকবেন।

এই তুই কার সাথে কথা বলছিস?

আমি আচানক প্রশ্ন করার লাফিয়ে উঠলো তানি।ঘাবড়ে আমার দিকে তাকিয়ে তোতলানো গলায় বললো,

– এ এভাবে ক কেউ ভুতের মতো চলে আসে!আরেকটু হলেই আমার কলিজা লাফিয়ে বাইরে চলে আসতো! (রেগে)

– আমি কি করলাম। (অসহায় ভাবে)

– কি করলি মানে?এখন কি আমাকে মেরে ফেলতে চাইছিস।(কটমট করে)

– আমি তো শুধু জানতে চাইলাম।

– আমার ভাইয়ার সাথে কথা বলছিলাম।(বাকা চোখে তাকিয়ে)

– ওহ।কিন্তু এতো ফিসফিস করে বলার কি হলো। (চোখ ছোট ছোট করে)

– এমনিই বলছিলাম। কেন?কি সমস্যা?

– নাহ।কোন সমস্যা নাই।যেভাবে খুশি বল।

আমি আবার বারান্দায় চলে গেলাম।কিছুই ভালো লাগছে না। পড়তে ও ইচ্ছে করছে না। ধুর।

🌸

রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে সম্রাট। আজকে প্রায় আরাই মাস পরে আদওয়ার গলা শুনলো সে।এতো দিন পরে কলিজা টা একটু ঠান্ডা হয়েছে। পকেট থেকে সিগারেট বের করে তাতে আগুন ধরিয়ে টান দিতেই মুখ কুচকে গেলো। স্মোকিং টা মোটেও ভালো লাগে না তার।বুকের ভিতর জ্বালা পোড়া শুরু হয়ে যায়।কিন্তু তার ভালোবাসা তার মনের ভিতরে যে আগুন লাগিয়েছে তার জ্বালা পোড়া এর থেকেও অনেক প্রখর।

– আমাকে এতোটা না পোড়ালে ও পারতি জান।আমি যে দহনের আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে গেলাম।আমি তো শাস্তি পেতে চেয়েছিলাম। বিচ্ছেদ তো চাইনি! একবার নিজের মনকে প্রশ্ন করে দেখতে পারতি,আমার কোন ভুল ছিল কি না!ভুল না করেও মৃত্যুর সমান শাস্তি পেয়ে গেলাম। আপন মানুষ গুলো এতটা কঠিন শাস্তি কিভাবে দিতে পারে! আমি যে তোকে মাফ করতে পারছি না জান!আমার ও যে তোর সাথে কঠিন হতে ইচ্ছে করছে। পাষাণ প্রেমিক হয়ে তোকে ও শাস্তি দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু দেখ,আমি তা ও করতে পারছি না। কারন ভালবাসি তোকে।ভালোবাসলে ক্ষমা করতে জানতে হয়।

– এখনো রেডি হোস নি!একটু পরেই তোর ফ্লাইট।

যুবরাজের ডাকে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো সম্রাট। বারান্দা থেকে রুমে এসে ট্রলি ব্যাগ টা হাতে নিয়েই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

যুবরাজ কিছুক্ষণ হা করে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে তারাতাড়ি ভাইয়ের পিছনে দৌড় লাগালো।

– আরে ভাই দাড়া। তুই কি এই টাউজার আর গেঞ্জি পরেই কক্সবাজার চলে যাবি!এট লিস্ট নিজের হুলিয়া তো বদলে যা।

– কেন?এই পোশাকে কি সমস্যা! আমাকে কি এভাবে ফ্লাইটে ঢুকতে দিবে না! (ভ্রু কুচকে)

– অবশ্যই দিবে।তবুও লুকটা একটু চেঞ্জ করা উচিত। না হলে হয়তো কারোর প্রিয় মানুষটাই তাকে চিনতে পারলো না! (বাকা হেসে)

ভাইয়ের কথা শুনে মুচকি হাসলো সম্রাট। ভাইয়ের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,

– আমি তো সেটাই চাই।

বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে কাউকে কল করলো।

– আমি আজ কক্সবাজার যাচ্ছি। তুইও কালকের ফ্লাইট ধরে চলে আয়।ভালো লাগবে।

সম্রাটের কথা শুনে মলিন হাসলো সুমন।

– তুই কি বিজনেস ট্রিপে যাচ্ছিস নাকি ফ্যামিলি টুরে যাচ্ছিস?

– আরে ধুর। দুইটাই করতে যাচ্ছি। ইসহাক কে ও সাথে করে নিয়ে আসিস।

– আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু কয় দিন থাকবি তা তো বল?

– কয়েক মাস থাকা লাগতে পারে। ওখানের সব কিছু ঠিক করে তারপর আসবো।

– আমি এতো দিন ওখানে কি করবো! আমার বিজনেস তো লাটে উঠবে শালা।

– উঠবে না।আংকেল সব সামলে নিবে।আমি কথা বলেছি।উনি সব সামলে নিবেন।সায়েম ও যাচ্ছে আমার সাথে।ও হয়তো এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেছে এতক্ষণে।

– কি আর করার।কালকে তাহলে দেখা হচ্ছে। ফ্লাইটের টাকা তুই দিবি। আমি দিতে পারবো না। এমনিতেই আমি গরীব মানুষ।

– আ গায়া না অকাদ পে।টিকেট কনফার্ম করা আছে।ভাই থেকে নিয়ে নিস।

– আচ্ছা সাবধানে যাস।গিয়ে আমাকে কল করিস।

– ঠিক আছে। আল্লাহ হাফেজ।

– আল্লাহ হাফেজ।

এয়ারপোর্টে সায়েম ওয়েইটিং জোনে অপেক্ষা করছে সম্রাটের। পাশেই প্রজাপতির মতো সুন্দরী রমনীরা উরা উরি করছে।তাদের দিকে আক্ষেপের চোখে তাকালো সায়েম।আজ কিসমত ভালো হলে তার ও একটা ন্যাকা টাইপের গফ থাকতে পারতো। কিন্তু বন্ধুদের অবস্থা দেখে বেচারার প্রেম করার সাধ পুরো পুরি মিটে গেছে।তার বোনই যখন তার নাদান বন্ধুর সাথে মীরজাফরি করতে পারে তাহলে অন্য মেয়েদের ধারে কাছে ও যাওয়া যাবে না।দেখা যাবে মাসুম ফেসের পিছনে আস্ত একটা নাগিন লুকিয়ে আছে।
এনাউন্সমেন্ট হতেই কাদো কাদো চেহারা হয়ে গেলো সায়েমের। নির্ঘাত ওই পোলা মদ গিলে মটকা মেরে পরে আছে। আর আমি এখানে আজাইরা বসে মাছি তাড়াচ্ছি।

– চল।ফ্লাইটের সময় হয়ে গেছে।

সম্রাটের দিকে ভুত দেখার মতো করে তাকিয়ে আছে সায়েম।

– তুই কখন আসলি!

– যখন তুই আমাকে গালি দেয়ায় ব্যাস্ত ছিলি।

– তুই আমার উপর এমন জঘন্য অপবাদ দিতে পারিস না।আমি কিছুতেই মেনে নিবো না। না না না।

সম্রাট কপাল কুচকে তাকিয়ে আছে সায়েমের দিকে।

– এতো নাটক কেমনে করোছ ভাই।ড্রামা বাজের বংশধর। তোরা সব গুলা ড্রামা বাজ।অসভ্যের মতো এখানে যাত্রা না করে তারাতাড়ি চল।

– হুম।(মিনমিন করে)

ফ্লাইটে বসে এক মনে বাইরে তাকিয়ে আছে সম্রাট। কালকেই প্রেয়সীর মুখ দেখতে পারবে সে।তবে তাকে আর বিরক্ত করবে না। থাক না সে নিজের মতো। আমি না হয় দূর থেকেই ভালোবেসে যাবো।

কক্সবাজার পৌঁছে নিজেদের ফ্ল্যাটে চলে গেলো সম্রাটরা।হোটেল থেকেই তাদের একটা ফ্ল্যাট দেয়া হয়েছে।
ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দুজনেই শুয়ে পরলো।খাবার হোটেল থেকেই পাঠানো হয়েছে।

বিছানায় যেতেই মনটা আনন্দে নেচে উঠলো। প্রেয়সীর শহরে প্রেয়সীর পাশাপাশি আজ আর ঘুম হবে না। আজ রাতটা ও নির্ঘুম কাটাতে হবে। যতোদিন নিজের ভালোবাসাকে বুকে জরিয়ে না ঘুমাতে পারবে ততদিন বুঝি আর শান্তিতে ঘুমানো হবে না তার।দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই আদওয়ার হোস্টেলের দিকে চোখ গেলো। হোটেল কতৃপক্ষ কে বলে হোস্টেলের পাশেই ফ্ল্যাট নিয়েছে সে।কাছাকাছি থেকেও দূরে থাকলে দম বন্ধ হয়ে যেতো। এখন শুধু কাল সকালের অপেক্ষা।

🌸

আজকেও লেট হয়ে গেছে ঘুম থেকে উঠতে। তানির কটমট চাহনি উপেক্ষা করে তারাহুরো করে রেডি হচ্ছি আমি।

আজকে ও তোর জন্য আমাদের খাওয়া হবে না। একটু আগে ঘুম থেকে উঠলে কি হয় বইন।তোকে ডাকতে ডাকতে আমার গলা ভেঙে গেছে।

– বকবক না করে এখন চল।আমার হয়ে গেছে।

বাইরে আসতেই একটা গাড়ির দিকে চোখ যেতেই আপনা আপনি পা থেমে গেল আমার।চোখ দুটো কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে মনে হচ্ছে।

– সম্রাট ভাইয়া,,,,

গাড়ির সামনের ডোর খুলে সিটে বসেই এক পা রাস্তায় দিয়ে মাথার নিচে হাত দিয়ে আপন মনে সিগারেট টানছে সম্রাট ভাইয়া।

তার হাতে সিগারেট দেখে আমি যতটা অবাক হয়েছি তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছি তার কবির সিং মার্কা লুক দেখে।

চলবে,,,

(রিচেক করা হয় নি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here