মোহ_মায়া #সানজিদা_বিনতে_সফি #পর্ব_২৩

0
331

#মোহ_মায়া
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_২৩

সকাল সকাল সম্রাট ভাইয়ার জরুরি তলব পরেছে।এখন সকাল ৭ টা।এতো সকালে কে নিজের প্রেমিকাকে দেখা করতে ডাকে?আজব লোক!

রুম থেকে বের হতেই আমার ফোন টা দৈত্যের মতো বেজে উঠল। ব্যাগ থেকে বের করতেই সম্রাট ভাইয়ার নাম টস জ্বলজ্বল করে ভেসে উঠলো। তার একটা কল ই যথেষ্ট আমার মন ভালো করার জন্য।

— হ্যালো।

— আর কতক্ষন লাগবে।(অস্থির ভাবে)।ইসস আদু, তুই সব সময় আমাকে অপেক্ষার অনলে পোড়াস। একটু তাড়াতাড়ি আয় না প্লিজ। (করুণ স্বরে)

আমি তার কথা শুনে খিলখিল করে হেসে উঠলাম।লোকটা আসলেই পাগল। ধৈর্য বলতে কিছুই নেই।আর আমার বেলায় তো মোটেই নেই।

— আসছি মশাই।এতো উতলা হলে কিভাবে হবে।আমি বেড়িয়ে পরেছি অলরেডি। আর মাত্র দশ মিনিট লাগবে।

— আচ্ছা আমি এগুচ্ছি।তুই ভয় পাস না।আর আমার সাথে কানেক্টেড থাক।ফোন কাটবি না।

— আচ্ছা, এতো সকাল সকাল দেখা করার তাড়া কেন জনাব। বিকেলেই তো দেখা করা যেতো।

— আমি আজ সারাদিন বিজি থাকবো জান।কালকে ও হয়তো দেখা হবে না। (অসহায় গলায়)

— তাহলে পরেও তো দেখা করা যেতো। এখন আপনার এতো সকালে উঠতে হলো। আপনি তো কালকে রাতে অনেক লেট করে বাসায় এসেছেন।

— তাতে কি।আমার যে তোকে দেখার তৃষ্ণা পেয়েছে জান।এখন আমার শুধু তোকে চাই।অনেকটা সময় ধরে আমার চোখের সামনে চাই।যতক্ষণ আমার চোখের তৃষ্ণা না মেটে ঠিক ততক্ষণ চাই।

সম্রাট ভাইয়ার এমন নেশালো কথা শুনে আমি ঘোরের মধ্যে চলে গেলাম।এই লোকটা আমাকে পাগল করে ছাড়বে।

কথা বলতে বলতে আমি অনেকটা পথ চলে এসেছি।দূর থেকে সম্রাট ভাইয়া কে দেখা যাচ্ছে। কালো হুডি আর ট্রাউজারে তাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। ইসস,সে এতো এট্রাক্টিভ কেন!

সম্রাট ভাইয়া অনবরত কথা বলেই যাচ্ছে। আমি শুধু তাকেই দেখছি।সে এখনো আমাকে খেয়াল করে নি হয়তো।

— কথা বলছিস না কেন জান।

— আপনাকে দেখছি তাই।(মুচকি হেসে)

আমার কথা শুনে সম্রাট ভাইয়া সামনে তাকালো।আমাকে দেখে আস্তে আস্তে হাটার গতি কমিয়ে দিলো।কিছুক্ষণ মোহময় চোখে তাকিয়ে থেকে কিছুটা দৌড়ে এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো।

আমি স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছি।এটা কি হলো! কয়েক সেকেন্ড পরে ছোটার জন্য নড়াচড়া করতে ই আমাকে ছেরে একটু দূরে সরে দারালো।

— এই যে মি.।হুটহাট এভাবে জড়িয়ে ধরার মানে কি?এখন আপনার ভার্জিনিটি নষ্ট হয়ে যায় নি?(ভ্রু কুচকে)

— নাহ।আমার ধরায় কোন বদমতলব ছিলো না। আমি খুবই বিশুদ্ধ একটা ছেলে।তোর মতো শয়তানি বুদ্ধি নিয়ে ঘুরি না।(ভাবলেশহীন ভাবে

— আমি শয়তানি বুদ্ধি নিয়ে ঘুরি!(অবাক হয়ে)

— অবশ্যই ঘুরিস।তুই হচ্ছিস আগের দিনের কুটনি বুড়ীর চরিত্রের ইয়াং ভার্সন। (স্বাভাবিক ভাবে)

রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে। এতক্ষন মুখে মধু ঝড়িয়ে কথা বলছিলো।আর আমাকে দেখতেই মুখ থেকে করল্লার রস বেরুচ্ছে। ফাজিল পোলা।আপনি একটা অসহ্যকর মানুষ সম্রাট ভাইয়া। (মনে মনে)

— এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছিস!কি ভয়ংকর মহিলা তুই।আমার ভার্জিনিটি চোখ দিয়ে নষ্ট করে দিচ্ছিস!আমি তা কখনো হতে দিব না। তুই এখন থেকে আমার সামনে আসলে চোখ বন্ধ করে থাকবি।(সিরিয়াস গলায়)

রাগে আমার হাত পা কাপছে।এই ফালতু লোকের ফালতু কথা শোনার জন্য আমি এতো সকালে এই ঠান্ডার মধ্যে কাপতে কাপতে এতো দূর আসলাম!

সম্রাট ভাইয়ার থেকে একটু দূরে গিয়ে আমি তানি কে ফোন দিলাম।

— হ্যালো। (ঘুম ঘুম গলায়)

— একটি খুন করলে কয় বছরের জেল হয়?(উত্তেজিত হয়ে)

আমার কথা শুনে তানি লাফ দিয়ে উঠে বসেছে সেটা আমি শব্দ শুনেই বুঝতে পারলাম।

— দোস্ত,কি হইছে তোর! কারে খুন করবি?(অবাক হয়ে)।হায় হায়,সুস্থ মাইয়াডা রুম থেকা বাইর হইলো। রাস্তায় গিয়া মাথাডা কেমনে খারাপ হইলো!(আহাজারি করে) ওই,তুই এক্সিডেন্ট করছোস? কিয়ের লগে ধাক্কা খাইছস?অটোরিকশা নাকি সাইকেল? দোস্ত তুই বাইচ্চা আছোস তো?(সন্দিহান গলায়)তোরে আনতে কই যাইতে হইবো?কক্সবাজারে মর্গ কই?তরে কি মর্গে লইয়া গেছে?খারা আমি আইতাছি।তুই কোন দিকে যাইছ না আবার।খুজতে সমস্যা হইবো। তোর তো আবার একজায়গায় বেশি ক্ষন থাকতে ভালো লাগে না।ছটফট না কইরা একজায়গায় বয়।আমরা আইতাছি।

— দুইটা খুন করলে কয় বছরের জেল হয়? (দাতে দাত চেপে)

— একটা করলে সাত বছরের জেল। (শান্ত গলায়)।আমারে আর ডিস্টার্ব করবি না। আমি ঘুমামু।বায়।

আমাকে আহাম্মকের মতো দাড়িয়ে থাকতে দেখে সম্রাট ভাইয়া কিছুটা মুচকি হাসলো। আমার হাত ধরে সামনে আগাতে আগাতে বললো,

— সারা সকাল রাস্তায় পার করার ইচ্ছা নেই আমার। প্রতিটি মিনিট খুব ইমপোর্টেন্ট।তাড়াতাড়ি আয়।

আমাকে তাড়া দিতেই আমি নিজের হুসে আসলাম।হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বললাম,

— ছারুন আমাকে।আমি যাব না আপনার সাথে। আপনি একটা অসহ্যকর লোক।

— আর এই অসহ্যকর লোকের সাথেই তোকে সারাজীবন কাটাতে হবে।

— কাটাবো না।আমি আপনার সাথে আর এক মুহুর্ত ও কাটাবো না।

আমি রেগে চিৎকার করে কথাটা বলতেই সম্রাট ভাইয়া আমাকে এক বড়সড় ধমক দিলেন। আমার দিকে তাকিয়ে চোখ পাকিয়ে বললেন,

— রাস্তার মানুষকে তোর কাকের মতো গলা না শোনালে হচ্ছে না। এই ভাবে অসভ্যের মতো চিৎকার করছিস কেন?আজব!

ধমক শুনে আমি গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকালাম।এই লোকটা চরম অসভ্য। আমি আর কখনো আপনার সাথে দেখা করতে আসবো না সম্রাট ভাইয়া। সকালে তো নয় ই।(মনে মনে)

🌸

আমরা এখন একটা দশ তালা বিল্ডিংয়ের সামনে দাড়িয়ে আছি।এই বিল্ডিংয়ের আট তালায় সম্রাট ভাইয়ার ফ্ল্যাট।

— আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন কেন? (অবাক হয়ে)

— আমি রেডি হবো তাই।

— আপনি রেডি হবেন তাতে আমাকে এখানে আনতে হচ্ছে কেন? (ভ্রু কুচকে)

— তোকে আমার সামনে বসিয়ে রাখবো তাই।

— ছি ছি ছি। আপনি দিন দিন অশ্লিল হচ্ছেন সম্রাট ভাইয়া। আমি যাবো না আপনার বাসায়।আমি হোস্টেলে চলে যাচ্ছি।

আমার কথা শেষ হতেই সম্রাট ভাইয়া আমাকে টেনে লিফটের ভেতরে ঢুকে গেলেন। আট তালায় প্রেস করতেই লিফট চলতে শুরু করলো।
আমি নাক মুখ কুচকে দাড়িয়ে আছি তার পাশে।আমার কথার কোন মুল্য নেই এই পাষাণ মানুষটার কাছে।আমি এই লিফটের দেয়ালে দেয়ালে লিখে দিবো আমার অত্যাচারের কাহিনি।

লিফট থেকে বেরিয়ে ফ্ল্যাটের কলিং বেল চাপতেই দরজা খুলে দিলো সুমন ভাইয়া। আমাকে দেখে হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলো,

— কেমন আছো আদওয়া?

— জ্বি ভাইয়া আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি কেমন আছেন?

— আলহামদুলিল্লাহ। এসো ভিতরে এসো।

আমি মুচকি হেসে ভিতরে ঢুকতেই সায়েম ভাইয়া কে সোফায় ঝিমাচ্ছে দেখলাম। ঘুম ঘুম চোখে আমার দিকে তাকাতেই সম্রাট ভাইয়া আমাকে টেনে তার রুমে নিয়ে গেলো। পিছন থেকে সায়েম ভাইয়া চেচাচ্ছে।

— এই সোম।তুই ওকে এভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছিস কেন?আমার কথা আছে আদুর সাথে।

সম্রাট ভাইয়া সায়েম ভাইয়ার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলেন।

পিছনে ঘুরে আমার দিকে তাকাতেই আমি শুকনো ঢোক গিললাম। এভাবে কেন তাকিয়ে আছে?

সম্রাট ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি এক লাফে খাটে উঠে গেলাম। তবুও উনি থামছেন না।আমি ভীত চোখে তাকাতেই উনি একেবারে আমার কাছে চলে আসলেন। আমার দিকে ঝুকতেই আমি ব্যালেন্স হারিয়ে খাটে পরে গেলাম।

সম্রাট ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে আমার ঘারের নিচে হাত দিয়ে হালকা উচু করে তার মুখের বরাবর করলেন। এতক্ষন ভয় লাগলেও এখন আমি তার চোখের দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।

— আমি তো পাগল হয়ে যাবো জান।নিজের উপর খুব বাজে ভাবে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছি আমি।আমার তোকে কাছে চাই।খুব করে কাছে চাই।যতটা কাছে এলে আমি তোকে আমার বুকের ভেতর ঢুকিয়ে রাখতে পারবো। আমাকে সেই সুযোগ দিবি তো?
বিয়ে করবি আমায়?

তার কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে আছি। একটা কথা বারবার কানে বাজছে, “বিয়ে করবি আমায়”

ঠোঁটে কোমল স্পর্শ পেতেই চোখ আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গেলো আমার। ঠোঁটে ঠোঁট রেখে এক ঝটকায় আমাকে দাড় করিয়ে নিজের সাথে চেপে ধরলেন। এক হাত পিঠে আরেক হাত ঘাড়ে রেখে নিজের আরো কাছে টেনে নিলেন। কিছুক্ষণ পরে ছেরে দিয়ে ঘনঘন শ্বাস ফেলেতে ফেলতেই আমাকে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলেন। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি, তার বুক কাপছে।ভয়ানক ভাবে তার বুক কাপছে।

— ভালোবাসি জান।

তার অস্পষ্ট ভালোবাসি কথাটা শুনে ঠোঁটের কোনে হাসি ফোটলো আমার।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here