পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে❤❤ #লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি❤ #পর্বঃ ৬

0
885

#পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে❤❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি❤
#পর্বঃ ৬ ❤
.
.
🍁
.
হোটেলে এসে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ২:৩০ বেজে যায়।। ভাইয়া পাশাপাশি দুটি রুম বুক করে।। রুমে এসে দু’জনেই কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নিই।। বিকেল ৪:৩০ এ লাঞ্চ শেষ করে চা বাগানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।।

🍁

মালিনীছড়া চা-বাগানের ফটকে দাঁড়িয়ে আছি আমরা।। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি মালিনীছড়ার উঁচু নিচু টিলায় ছেয়ে থাকা সবুজের গালিচায়।। ভাইয়া ছোট বেলায় অনেক গল্প শুনিয়েছে এই মালিনীছড়া চা-বাগান নিয়ে।। তখন থেকেই আমার ব্যপক কৌতুহল ছিল এখানে আসার নিজের চোখে দেখার।। অবশেষে আজ সেই কৌতুহলের সমাপ্তি হলো।। নিজের চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাসই করবে না কতো সুন্দর এই জায়গাটি।। সব কষ্ট ভুলার চেষ্টায় প্রকৃতির প্রতি আকুল মমতায় চোখদুটি বন্ধ করে মন-প্রান ভরে শ্বাস টেনে নিলাম।। বাতাস কতোটা সুন্দরভাবে বয়ে চলেছে।। মনে হচ্ছে যেন এক পাগলকরা উম্মাদনা রয়েছে এই বাতাসে!! সমস্ত শরীরে এক অদ্ভুত শীতলতা বয়ে চলেছে ক্রমাগত।। চোখ মেলে তাকালাম।। মনে হচ্ছে অসম্ভব সুন্দরের বেড়াজালে যেন শ্বাসটুকু আটকে আসছে আমার।। হঠাৎ করেই আগমন ঘটে মেঘকন্যার।। মেঘে ছেয়ে যায় সবুজে মুড়ানো চা-বাগান।। দূরের মেঘালয় থেকে হিমু বাতাস বয়ে নিয়ে আসে অথিতি মেঘ কন্যাকে।। তারপরেই চা-বাগানের আকাশ সাজে শুভ্র মেঘমালায়।। একসময় শুরু হয় মাশুল ধারে বৃষ্টি।। বৃষ্টির পরশে আস্তে আস্তে চায়ের পাতার রং বদলায়।। সাথে বদলায় আমার মুগ্ধ চাহনী।। বৃষ্টি শুরু হতেই ভাইয়া একপ্রকার টেনে হিঁচড়ে আমাকে চা-বাগানের স্টাফ রুমের দিকে নিয়ে যায়।। এতো করে বললাম- ” ভাইযা প্লিজ একটু ভিজতে দাও” কে শুনে কার কথা।। অবশেষে বাধ্য মেয়ের মতে ভাইয়ার সাথে দাঁড়িয়ে রইলাম।। স্টাফ রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে চোখ বুলাচ্ছিলাম চারপাশটায়।। কতো সুন্দর লাগছে দেখতে।। যৌবনে যেমন কোনো তরুণীর রূপ খুলে,,, ঠিক তেমনি এই মুহূর্তে সবুজে মুড়ানো এই চা-বাগানটিকে যৌবনে পা রাখা কোনো তরুণীর ন্যায় লাগছে আমার কাছে।।

বেশকিছুক্ষণ পর…….

বৃষ্টির বেগ বাড়ল বই কমলো না।। আর সাথে বাড়ল আমার মনে বৃষ্টিতে ভিজার এক অদম্য ইচ্ছা।। মুহূর্তেই মনে পরে গেল সেদিনের কথা।। বেশি নয় এই তো ১৫ দিন আগের কথা….

মুশুল ধারে বৃষ্টি হচ্ছিল।। চুপিচুপি রুম থেকে বেড়িয়ে ছাঁদের দিকে হাঁটা দিতেই পিছন থেকে কেউ শক্ত করে ডান হাতটা চেপে ধরল।। পেছন ফিরে তাকাতেই ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ।। সূর্য ভাইয়া!!

—- কই যাস??

—- ওওওঐতো রান্নাঘরে।।

—- তো রান্নাঘরে গেলে এমন চুপিচুপি যাওয়ার কি আছে?? আর রান্নাঘর কি ছাঁদে??

—- ননননা ককই চুপিচুপি গেলাম।।( শুকনো ঢোক গিলে)

—- তুঁতলে যাচ্ছিস কেন?? কাহিনী কি??

—- ককই তুতলাচ্ছি??

—– বনিতা না করে বল কই যাচ্ছিল?? ( ধমক দিয়ে)

এবার আমি যেন কেঁদেই ফেললাম।। ভয়ে ভয়ে বললাম….

—– বববৃষ্টিকে ভিজতে।।

—– কিহহ??? (রেগে)

—– প্লিজ একটু ভিজব।। ( করুন স্বরে)

—- না তোর ভেজা বন্ধ।।

অবশেষে সেদিন আর ভেজা হয়ে ওঠোি।। আমাকে টেনে হিঁচড়ে ঘরে আটকে রেখেছিল।। কথাটা মনে পড়তেই রাগে,, কষ্টে বেড়িয়ে গেলাম স্টাফ রুমের বারান্দা থেকে।। ভাইয়া ডাকছে।। কিন্তু আমার কোনো পাত্তা নেই।। কিছুক্ষণ পর শুধু একটাই কথা বললাম….

—- ” ভাইয়া তুমি যদি চাও আমি আমার কষ্টগুলো ভুলে যাই,, তাহলে প্লিজ ভিজতে দাও ”

ভাইয়া আর কিছু বললেন না।। শুধু বলেন- ” বেশি দূরে যাস না”।।

বৃষ্টিকে ভিজছি আর একেরপর এক বিন্দু বিন্দু চোখের জলকে মিলিয়ে দিচ্ছি বৃষ্টির সাথে।। একমাত্র এই বৃষ্টিই পারে আমার চোখের পানি সকলের চোখের আড়াল করতে।।

বৃষ্টি এতোক্ষণে অনেকটা কমে এসেছে।। সন্ধার আবছা অন্ধকারে ছেয়ে আসছে চারপাশটা।। এখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে।। পাথরের গা বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে কাঁদা মাখানো বৃষ্টির পানি।। বৃষ্টির সাথে সাথে নাকে আসছে কি সুন্দর পাহাড়ি মাটির গন্ধ!! পাখিদের কিচিরমিচির ও কমে আসছে।। সব কিছুই জানান দিচ্ছে সন্ধ্যা নেমে আসছে।। গাড়িতে চেপে রওনা দিলাম হোটেলের উদ্দেশ্যে।।

🍁

রাত ৮ টা বেজে ৩০ মিনিট।। এশার নামাজ শেষে বিছানায় বসে ফোনটা হাতে নিতেই দরজায় কড়া নক পড়ল।।বুঝতে আর বাকি রইল না যে,, ভাইয়া এসেছে।। দরজা খুলে দিয়ে এসে ফোনটা অন করে মেসেঞ্জারে লগইন করতেই সূর্য ভাইয়ার মেসেজ চোখে পড়ল শুরুতে।। প্রায় ৫০ টা তো হবেই।। চোখের কোনে বিন্দু বিন্দু জল এসে জমেছে।। যেকোনো মুহূর্তেই কান্না দেবির আগমন ঘটবে।। নিজেকে কোনোরকম সামলে নিয়ে মেসেজগুলো পড়া শুরু করতেই ফোনটা বেজে ওঠে।। ফোনের স্ক্রিনে বড় বড় করে লেখা ” Shurjo” নামটি ভেসে উঠল।। এতোক্ষণে নিজেকে সামলাতে পারলেও এবার আর তা সম্ভব হলো না।। ডুকরে কেঁদে উঠলাম।। ভাইয়া টিভি দেখছিল।। আমার কান্নার শব্দে সাথে সাথে ফিরে তাকায়।। এতোক্ষণে ফোনটা কেটে যায়।।

—- কি হয়েছে বুড়ি কাঁদছিস কেন??

ফোনটা কেটে যেতেই আবার ফোন দিলেন উনি।। ভাইয়াকে কিছুই বললাম না।। ফোনটা ভাইয়ার হাতে তুলে দিলাম।। ভাইয়া ফোনটা রিসিভ করে লাউড স্পিকার অন করতেই ওপর পাশ থেকে ভেসে এলো সেই চিরচেনা কন্ঠটি…..

—- ফোন অফ ছিল কেন তোর?? শুধু তোর না সাজিদেরও ফোন অফ ছিল।। কেন এমন করছিস?? হুয়াই?? কতটা টেনশনে ছিলাম জানিস?? কতোবার ফোন দিয়েছি কোনো ধারণা আছে তোর?? দেখ তো কতোগুলো মেসেজ দিয়েছি।। আচ্ছা,,, কি করেছি আমি?? আমার জন্য কেন সবার সাথে এমন করছিস?? একবার তো ফোন…..

উনি আর কিছু বলার আগেই ভাইয়া বলল….

—– সূর্য আমি সাজিদ।। আমরা ভালো আছি।। ঠিকমতো পৌঁছেছি।। এভরিথিং ইজ ফাইন।। সো তোকে টেনশন করতে হবে না কষ্ট করে।। তাছাড়া আমি থাকতে আমার বোনের কিছুই হতে দিবনা।। এনিওয়ে বাড়ির সবার কি খবর??

—- সবাই আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।। আলো কই?? ওর ফোন তুই পিক করলি কেন??

—- ঘুমাচ্ছে।।

—- কিহ?? এসময় ঘুমাচ্ছে?? কেন?? শরীর ঠিক আছে তো?? ( চিন্তিত স্বরে)

—- হুম তবে হালকা একটু জ্বর আর মাথা ব্যাথা!! তবে কমে যাবে।। রাখছি..

—- ওয়েট…. মেডিসিন দিয়েছিস?? হঠাৎ করে জ্বর কেন হলো??

—- হুম দিয়েছি।। এমনি হয়েছে।।

—- আচ্ছা,,, ওকে দেখে রাখিস।। আর তোরা আসবি কবে??

—- সঠিক বলতে পারছিনা।। আলো তো বলছে সিলেটের প্রতিটা জায়গা ঘুরে দেখবে।। আচ্ছা রাখছি।। ভালো থাক।। বাই।।

—- মানেহ?? তোরা সিলেটের প্রতিটি জায়গা ঘুরতে গেলে অনেকদিন লাগবে।। এইমাসে আর আসা হবে না।। আর আজকে ১৭ তারিখ।। ৬ দিন বাদে আমাদের বিয়ে।। তোরা থাকবি না এটা কেমন কথা??

—– বাদ দে না সূর্য।৷ তুই তো জানিস,, আলোর কোনো ইচ্ছেই আমি বা আমরা অপূর্ণতা রাখিনা।। তাই এটাও রাখব না।। আল্লাহ হাফেজ।।

সূর্যকে আর কিছু বলকে না দিয়ে ভাইয়া ফোনটা কেটে দিয়ে আমাকে বুকে টেনে নেন।। আমি একটা জিনিসবুঝতে পারিনা আমি আর আপু দু’জনেই একই বাড়ির মেয়ে।। ভাইয়ার নিজের বোন।। তাহলে আমাকেই কেন এতো আদর?? আপুর সব আবদার পূরণ করলেও আমার মতো করে করেনা কেন?? হুয়াই??

🍁

জানালার পর্দা ভেদ করে সকালের মিষ্টি রোদ এসে চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে যায় আমার।। ঘুমু ঘুমু চোখে ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি ১০:২০ বাজে।। আড়মোড়া দিয়ে গায়ে কম্বলটা টেনে আবার শুয়ে পড়ি।। খুব টায়ার্ড লাগছে।। মনে হচ্ছে জ্বর এসেছে।। কালকে বৃষ্টিতে ভেজাটা হয়তো বেশি হয়ে গিয়েছে।। চোখ দুটো বন্ধ করে পাড়ি জমালাম ঘুমের দেশে।।

দরজায় কড়া আঘাতে বিরক্তি নিয়ে উঠে পড়লাম।। ঘড়িতে তাকাতেই আমার চোখ কপালে উঠে গেল।। একি ১২:৩০ বাজল কখন!! এতোক্ষণ ঘুমিয়েছি?? দরজা খুলতেই….

—– এতো লেট করলি কেন?? আর চোখ মুখ এমন কেন?? শরীর টিক আছে??

—– হ্যাঁ,,, ভাইয়া।। ও কিছু না।। ফ্রেশ হইছো??

—– হ্যাঁ,, বুড়িটা।। যা ফ্রেশ হয়ে আয়।।

দুপুর ১টা বেজে ৩০ মিনিট নামায পড়ে রেডি হচ্ছি।। খেয়ে আবার মালিনীছড়া চা-বাগানের উদ্দেশ্যে বের হবো।। জায়গাটা সত্যি খুব সুন্দর।। কালতো বৃষ্টির জন্য ভালো করে ঘুরতে পারলাম না।।

—- আমার ফকিন্নি বুড়িটা কি রেডি??

—– তুমি আমাকে আবারও ফকিন্নি বুড়ি বললা??? ( চোখ পিটপিট করে কোমড়ে হাত রেখে দাঁড়িয়ে)

—– ফকিন্নি বুড়িকে কি বলব??

—– আমি ফকিন্নি বুড়ি না…।। তোমার বউ একনাম্বার ফকিন্নি বুড়ি হবে দেখে নিও।। হুহ,,

—– এই ফকিন্নি,, তুই আবার আমার বেচারি বউটার পিছে পড়ছোস?? না জানি বেচার দুনিয়ার কোন প্রান্তে আছে..

—– হাহাহা,,, বিয়ে করে নাই এখনই বুড়াটা বউর জন্য কান্দে…

—– তুই আমারে লইয়া হাসোছ??

—– থাক কান্দে না আমার বুড়াটা…

লাঞ্চ শেষ করে বেড়িয়ে পড়লাম চা-বাগানের উদ্দেশ্যে।। গাড়ি চলছে আপন গতিতে।। ভাইয়াকে বললাম একটা গান বাজাতে।। ভাইয়া দেওয়ার আগেই আমি দিলাম……

চলবে

{ ভাইয়া ও আপুরা এমনভাবে নেক্সট নেক্সট করেন মনে তো নেক্সটের দোকান দিয়ে বসেছেন।। এমনভাবে নেক্সট নেক্সট না করে লেখিকাকে একটু উৎসাহ দিলে কি খুব বেশি কষ্ট হয়ে যাবে?? সরি যদি কেউ আমার কথায় কষ্ট পান।। আমি কাউকে কষ্ট দেওয়ার উদ্দেশ্যে কিছুই বলিনি।। ধন্যবাদ❤❤।।}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here