পারবনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤ #লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤ #পর্বঃ ২০❤

0
606

#পারবনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤
#পর্বঃ ২০❤
.
.
—- আ… আ… আপনি ?
.
—– কেন? ভয় পেয়ে গেলি নাকি? নাহ্ তুই তো আবার ভয় পাস না। তা কি নিয়ে হাসছিলি আলো ?
.
—- কককই কি? কককিচ্ছু না। ( শুঁকনো ঢোক গিলে)
.
—– কি ভেবেছিস ? আমি শুনিনি কিচ্ছু?
.
এবার তো আমি কেঁদেই দিব।কে বলেছির এতো হাসতে ? ধুরু নিজের দোষে নিজেই ফাঁসি! এই জন্যই আম্মু বলতো বেশি হাসলে কপালে কাঁদতে হয়। এই যে একটু আগে হাসি থামাতে পারছিলাম না। এখন বসে বসে কাঁদছি। না জানি এখন আবার কি করে! আম্মু গো! আমি আর কোনোদিন এই খাটাশের লগে একা বাড়িতে থাকমু না। একদিনেই আমার কি হাল করছে দেখো না! ভাবনার মাঝেই উনি কিছুটা ধমকে উঠলেন….
.
—– কি হলো বল! কি নিয়ে হাসছিলি? আমি কিন্তু সব শুনেছি। তুই বলবি নাকি?
.
—– এ্যা… !
.
—– এ্যা না হ্যাঁ অথবা না বল ডাফার!
.
—– আচ্ছা আপনি তো জানেন তো আবার কেন বলব ?
.
—– আমি বলেছি তাই! বলবি কিনা বল?
.
—– বলছি…
.
—– তাড়াতাড়ি !
.
—– আসলে!
.
—– কি আসলে ?
.
—– আসলে!
.
—- দেব এক ঠাটিয়ে ? আসলে আসলে বন্ধ করে বল ডাফার!
.
—– আমার ভয় লাগছে! আপনি কিছু বলবেন না তো প্লিজ!
.
—– ভয়ের কাজ করার সময় মনে ছিল না? এখন ভয় পাচ্ছিস? বল বলছি! ( ধমক দিয়ে)
.
অবশেষে উনার রাম ধমকে সব বললাম। বলা মাত্রই উনি কিছুক্ষণ চুপচাপ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে হাসিতে ফেটে পড়লেন। আমি উনার হাসির কোনো মানে না খুঁজে পেয়ে ভয়ে ভয়ে উনাকে জিজ্ঞেস করেই বসলাম….
.
—– আপনি হাসছেন কেন?
.
উনি কিছুই বলছেন না শুধু হেসেই যাচ্ছেন। শুধু হেঁসে যাচ্ছে বললে ভুল হবে। হাসতে হাসতে শহীদ হয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। আমি এখনও ওখানে বোকার মতো দাঁড়িয়ে। কি আর করব বলুন! উনার হাসির কারণটা তো আমার অজানা। বেশ কিছুক্ষণ পর উনি কোনো মতে হাসি কন্ট্রোল করে বললেন…..
.
—– আমি বোকা দেখেছি তোর মতো বোকা দেখিনি।
.
—— মানে ?
.
—— এই ডাফার ! আমি যদি সত্যিই তোর হাসির কারণ জানতাম তাহলে কি তোকে আবার আস্ক করতাম? সরাসরি তোকে বলতাম।
.
উনার কথায় আমি মাথা নাড়লাম। ঠিকই তো! উনি জানলে কি আমাকে আস্ক করতেন? তার মানে উনি জানতেন না ? আমার থেকে জানার জন্য এই টেকনিক? এবার যেন রাগে আমার সারা শরীর জ্বলে গেল। ইচ্ছা করছে খাটাশটারে ধাক্কা দিয়ে খাট থেকে ফেলে দিই এতো বড় বোকা বানালো আমায় ? খাটাশটা আমার সাথে চালাকি করল ? আজকে উনার একদিন কি আমার যে কয়দিন লাগে হুহ! উনি আবারও হাসিতে ফেটে পড়লেন। আমি রাগ দেখিয়ে উনার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে দুই হাত কোমরে রেখে বললাম….
.
—– উঠুন!
.
উনি হেসেই যাচ্ছেন!
.
—– শুনেন নি আমি কি বলছি ?উঠুন! (চেঁচিয়ে)
.
এবার উনি হাসতে হাসতে উঠে বসলো।কোনোমতে হাসি চেপে বলল….
.
—– কি সমস্যা ?
.
—– আপনি আমাকে বোকা বানাইছেন কেন ?
.
—– তুই তো এমনিতেই বোকা। তোকে নতুন করে আর কি বোকা বানাবো।
.
কথাটা বলে আবার উনি হাসছেন। এবার আমার সত্যিই রাগ লাগছে। আসলে উনার প্রবলেম কই? সারাদিন আমার পিছে লেগে থাকে কেন? উনার কতো ছোট আমি একটু ছাড় দিলে কি হয? আমাকে অপমান না করলে কি উনার চলে না ? ধুরু আর ভালো লাগে না। কিচ্ছু ভালো লাগে না! থাকবো না এ বাড়িতে। চলে যাবো অনেকদূরে! কথাটা বলে রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে নিলে উনি পথ আটকে দাঁড়ায়…….
.
—– কি মহারানী! কোথায় যাচ্ছেন?
.
—– দেখি! যেদিকে দুই চোখ যায় ঐদিকে ।
.
—– এমুহূর্তে তো দুই চোখ আমার ঘরের দিকে। তার মানে আমার ঘরে যাচ্ছিস? এই তুই তো আমার ঘরেই আছিস আবার নতুন করে আসা লাগবে কেন ?
.
—— দেখুন….
.
—– কি দেখবো ?
.
—– আমার ভালো লাগছে না। সামনে থেকে সড়ুন।
.
—– আমারও না সড়তে ভালো লাগছে না । তাই সরি সড়তে পারছি না।
.
—– আচ্ছা আপনার সমস্যা কি বলবেন প্লিজ !
.
—– আমার কোনো সমস্যা নেই তো! তবে হ্যাঁ একটা জিনিস আছে।
.
—– কি ?
.
—– প্রবলেম! অনেক বড় প্রবলেম।
.
—– মানেহ? সমস্যা আর প্রবলেম কি আলাদা? আপনার কি আদৌও তা মনে হয়? লাইক সিরিয়াসলি?
.
—– বাহ্ রে! আমি কখন বললাম সমস্যা আর প্রবলেম আলাদা ? তুই তো দেখছি খুব মিথ্যা কথা বলিস? এসব কার থেকে শিখছিস? আগে তো কথায় কথায় মিথ্যা বলতি না।
.
—– মানেহ? আমি কখন মিথ্যা বললাম? আশ্চর্য! আপনি কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যান কথা। আপনি কথা এতো পেঁচাচ্ছেন কেন? কথাটা তো আমি সোজা ভাবেই বললাম। যত্তসব আজাইরা পাবলিক! রাস্তা ছাড়ুন।
.
কথাটা বলে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে উনি আমার বা হাত ধরে একটানে আমাকে আলমারির সাথে মিশিয়ে চেপে ধরেন। হঠাৎ উনার এমন ব্যবহারে আমি থতমত খেয়ে যাই। হঠাৎ এবাবে আচমকা চেপে ধরার মানে কি আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। তাই কিচ্ছু না বলে চুপচাপ নিজেকে ছাড়ানোর ট্রাই করছি। ছাড়ানোর চেষ্টা করেও না পেরে অবশেষে মুখ খুললাম……
.
—– সমস্যা কি এভাবে চেপে ধরার মানে কি?
.
—– আমার ইচ্ছা তাই !
.
—– মানেহ? আপনার ইচ্ছা তাই আমাকে চেপে ধরবেন? যান গিয়ে আপনার বউকে ধরেন। আমাকে ছাড়েন!
.
—– আমি তো আমার বউকেই ধরলাম। আমি কি অন্য কোনো মেয়েকে ধরলাম নাকি?
.
—– আমি আপনার বউ না। ছাড়েন আমাকে। আপনার চাঁদের কাছে যান। ছাড়ুন!
.
এইটুকু বলতেই আস্তে আস্তে উনার হাত ঢিলে হয়ে এলো। হুট করেই আমাকে ছেড়ে দিয়ে বাহিরে মুখ করে জানালায় গিযে দাঁড়ালেন। ঘটনায় আমি প্রথমে অবাক হলেও পরে বুঝতে পেরে নিজেই নিজের মুখ চেপে ধরলাম। এটা আমি কি করে ফেললাম। নিজের রাগ ধরে রাখতে গিয়ে উনাকে হার্ট করে ফেললাম। ধুর! বড় আব্বু উনাকে কালো অতীত থেকে বের করার জন্য আমার সাথে উনাকে এই সম্পর্কে আবদ্ধ করেছেন। আর আমি কিনা উনাকে সেই অতীত থেকে বের করার পরিবর্তে আবার উনাকে সেই কালো অতীতে ঠেলে দিলাম? ছিঃ! নিজের উপরই ধিক্কার হচ্ছে আমার। মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
.
ভয়ে ভয়ে উনার কাছে গিয়ে উনার কাঁধে হাত রাখতেই উনি শান্ত গলায় জবাব দিলেন….
.
—– এখান থেকে চলে যা আলো!
.
—– দেখুন….
.
—– আমি কি বলেছি শুনিস নি? এখান থেকে চলে যা। আমাকে একটু একা থাকতে দে।
.
—– আই এম সরি! আমি বুঝতে পারিনি বিশ্বাস করুন! আমার মুখ ফসকে বেড়িয়ে…..
.
উনি আমাকে মাঝ পথে থামিয়ে বললেন…..
.
—— আমি কিছু জানতে চেযেছি? বা তোকে কিছু বলেছি? প্লিজ আমাকে একটু একা থাকতে দে। প্লিজ!
.
আমি করুন চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। জানিনা এই চোখের ভাষা আদৌও উনি বুঝবেন কিনা?
.
—– শুনন না প্লিজ! আমাকে আপনি মারেন কাটেন কথা শোনান যা ইচ্ছে করেন। কিন্তু প্লিজ একা থাকবেন না। প্লিজ! ( কাঁদতে কাঁদতে)
.
—– কান্না থামা আলো!
.
—- না আমি কান্না থামাবো না। আপনি একা থাকবেন না। চলুন আবার ঝগড়া করব। তবুও এভাবে থাকবেন না। আপনাকে এভাবে দেখলে আমার ভীষণ কষ্ট হয়!
.
উনি কিচ্ছু চুপ করে থেকে নরম স্বরে বললেন…..
.
—– বিকেলে মামুর বাসায় যেতে হবে। তৈরি হয়ে ড্রাইভার চাচাকে নিয়ে চলে যাস। আমি বলে দিব।
.
এইটুকু বলে উনি রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন। নিশ্চয়ই এখন কান্না করবেন। উফহ্! কি করে করলাম এতোবড় ভুল? সেদিন উনার হাসির কারণ ছিলাম আমি। আর আজ উনার চোখের জলেরও কারণ এই আমি! কি আশ্চর্য!
.
—- আপুরে কই তুই? কেন এমনটা করলি বল না? আমি আর পারছিনা। তোর সূর্যকে আমি আবার কাঁদিয়েছি। আমাকে কিছু বলবি না? প্লিজ কিছু বল না আমাকে! আমাকে একটু মার প্লিজ! উনাকে আবার কাঁদিয়েছি আমি। উফহ্! কে বলেছিল আমাকে রাগতে? কে কে কে?
.
এতক্ষণ একা একা কথাগুলো বলছিলাম আর চিৎকার করে কাঁদছিলাম। এমুহূর্তে সব ভেঙে গুড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। একদম গুড়িয়ে! হাতের কাছে টেবিলের উপর পানির গ্লাস ছিল। ওটাকে তুলে ড্রেসিং টেবিলে ছুড়ে মারলাম। সাথে সাথে ড্রেসিং টেবিলের আয়না ভেঙে চুরমার সাথে গ্লাসও। সাড়া ঘর ছড়িয়ে আছে কাঁচের টুকরোয়। ইচ্ছে করছে এই কাঁচের টুকরো গুলো দিয়ে হাত কেটে ফালা ফালা করি। না মরার জন্য নয়। যতটা আঘাত উনাকে দিয়েছি তার থেকে নিজেকে দেওয়ার জন্য!

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here