#পারবনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি❤
#পর্বঃ ৩৮❤
.
__________________
.
রাত ১০টা বেজে ৫০ মিনিট! সারা রুম ময় পায়চারি করছি। খুশিতে এতোটাই এক্সাইটেড যে নিজের এক্সাইটমেন্টটাকে সামলাতে না পেরে একবার রুমের এই মাথা তো একবার ঐমাথা। প্রায় ২ঘন্টা হয়ে যাচ্ছে এরকম সারা রুমে ঘুরে বেড়াচ্ছি। কখন উনি আসবে আর কখন খবরটা দিব। কিন্তু খাটাশ তো যখন আমার দরকার তখন কি আসবে নাকি? আস্ত এক সাদা বিলাই কোথাকার!
.
২ঘন্টা যাবৎ সারা ঘরময় পায়চারি করে ক্লান্ত হয়ে নিজে নিজে বিরবির করতে করতে উঠে বারান্দায় চলে গেলাম! বারান্দার গ্রিলে থুতনি ঠেকিয়ে স্থির দৃষ্টিতে তাকালাম ঐ ঘোলাটে আকাশে। চাঁদটা পর্যন্ত আলো দিচ্ছে না! একটাও তারার দেখা মিলছেনা! সারাদিনে যেই নীল রঙা আকাশটা এতোটা স্নিগ্ধ দেখায়! রাতের অন্ধকারে সেও কতটা ঘোলাটে রূপ ধারণ করে। ঢেকে যায় কুয়াশার ঘোলাটে আবরণে। এমনকি চাঁদটা পর্যন্ত ঢেকে যায় মেঘের আড়ালে! আমার ভাবনার মাঝেই পেছন থেকে কেউ একজন এসে আমার কোমড় জড়িয়ে কাঁধে থুতনি রাখল! আমি কোনো রেসপন্স করলাম না। এমনকি চোখ ফিরিয়ে তাকালাম পর্যন্ত না! কারণ আমার বুঝতে বাকী নেই এটা কে হতে পারে! কিন্তু এই মুহূর্তে আমার তার সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র আগ্রহ বা ইচ্ছে কোনোটাই নেই।
.
আমান কোনো রেসপন্স না দেখে এবার উনি আমাকে ছেড়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেন! থুঁতনি ধরে মাথা একটু উঁচু করে বলেন…..
.
—- কি হয়েছে? ম্যাডাম এভাবে স্ট্যাচু হয়ে আছে কেন?
.
আমি কোনো জবাব দিলাম না। আবার আগের মতো ঘুরে আকাশে চোখ রাখলাম! উনি আবার আগের মতোই পেছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। উনার গরম নিশ্বাস আমার কাঁধে পড়তেই আমি থেকে থেকে কেঁপে উঠছি। উনি শান্ত স্বরে ছোট করে বললেন…..
.
—- সরি পিচ্চি! আসলে আমি ইচ্ছে করে লেট করিনি তো। আজকে না অফিসে অনেক কাজ ছিল। প্লিজ, রাগ করো না!
.
আমি এবারও কিছু বললাম না! উনি আবার বললেন…….
.
—- আরে বাবা এতো রাগ করার কি আছে? সরি বলেছি তো নাকি? রাগ না কমালে কিন্তু আমি এভাবেই জড়িয়ে ধরে থাকব।
.
আমি আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছি! এবার উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। হুট করেই দাঁড়ানো থেকে আমার সামনে কান ধরে বসে পড়লেন। উনার কান্ড দেখে আমি কিছুক্ষণ ‘হা’ করে দাঁড়িয়ে থেকেই খিলখিল করে হেসে উঠলাম। উনি বা দিকে কাঁধটা হালকা কাত করে বললেন…..
.
—- সরি আলোরাণী! আর হবে না প্রমিজ!
.
উনার কথা শুনে আমি এক দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। মানুষটা এতো ভালো কেন? এতো সুন্দর করে কিভাবে রাগ ভাঙাতে পারে? উনার করা প্রতিটা কাজ এতো সুন্দর কেন? আমি মুচকি হেঁসে উনাকে দাঁড় করিয়ে জড়িয়ে ধরে বললাম….
.
—- ভালোবাসি! ভীষণ ভালোবাসি!
.
—- আমিও আমার পিচ্চিটাকে এতোগুলো ভালোবাসি!
.
—- ফ্রেশ হয়ে আসুন খাবার দিচ্ছি।
.
কথাটা বলে চলে আসতে নিলে উনি আমার বা হাতটা ধরে একটানে উনার সাথে মিশিয়ে নিলেন!
.
—- হুম পরে! আগে গুড নিউজটা তো দিন ম্যাডাম। আমার তো অপেক্ষা করতে ইচ্ছে করছে না।
.
—- ছাড়ুন! এখন আগে খাবেন তারপর সব। সেই কোন দুপুরে খেয়েছেন।
.
—- উহু! আগে নিউজ।
.
—- আগে খাওয়া।
.
অবশেষে উনার সাথে এতো তর্ক করেও কোনো লাভ হলো না। সে গুড নিউজটা না শুনে খাবেইনা। অবশেষে কি আর করার? বললাম….
.
—- আমি ফুপি হবো! (এক্সাইটেড হয়ে)
.
আমার কথা শুনে উনি কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলেন….
.
—- ফুপি কি করে?
.
—- কেন? আমার ভাইয়ের বেবি তো আমাকে ফুপিই বলবে!
.
—- সত্যিই শ্রেয়ার বেবি হবে?
.
—- হুম! (খুশি হয়ে)
.
—- কিন্তু তুমি ফুপি না মামী হবে!
.
—- একদমই না। মামী ডাক সুন্দর না। ফুপি সুন্দর। আপনি ফুপা আর আমি ফুপি।
.
—- একদমই না! আমার বোনের বেবি আমাকে মামু বলবে। এজ ইউ আর মাই ওয়াইফ সো, তোমাকে মামী বলবে।
.
—- একদমই না। কারণ আমি আপনার বউ আর ওর মামী পরে। আগে আমার ভাইর বোন আর শ্রেয়া আপুর ননদ!
.
—- দেখেছো আলোরাণী! তুমি আপু বলছো। তারমানে শ্রেয়া তোমার ননদ আর তুমি ভাবী। তার মানে বাবু তোমাকে মামী বলবে!
.
অবশেষে উনার সাথে তর্কে আর পেড়ে উঠলাম না। হাঁপিয়ে গিয়ে চুপ করে গেলাম। আর উনি ভুবন কাঁপানো হাসিতে ফেটে পড়ল। আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি উনার সেই মুগ্ধ করা হাসিতে। ইশ! কি সুন্দর হাসে উনি। এই হাসি দেখার জন্য আমি সব করতে রাজি সব!
.
🍂
.
দেখতে দেখতে কেটে গেল ৪মাস। আমি এখন ঢাকা মেডিক্যালের স্টুডেন্ট। এটা হয়তো সূর্যের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল। উনি কম করেন নি গত ৪টা মাসে। আমার থেকে বেশি কষ্ট উনি করেছেন। যেই মানুষ প্রতিটাদিন ফজর নামাজের পর আবার ঘুমাতেন। সকাল ৯টার আগে ঘুম ভাঙতো না। যার রুটিনই ছিল দৈনিক ৮-৯ ঘুমানো। সেই মানুষ এই ৪মাসে ভালো করে ৪ ঘন্টা ঘুমাতেন না! প্রতিদিন রাত দেড়টা-দু’টো পর্যন্ত জাগতেন। ফজরের সময় উঠলে আর ঘুমাতেন না। অফিসের কাজ রুমে বস করতেন। সারাক্ষণ আমাকে গার্ড দিতেন। কখন কি চাই? কি খাব? কখন ঘুমাবো? সব উনি করতেন। যেখানে উনি চার ঘন্টা ঘুমাতেন না। সেখানে আমাকে ৭ ঘন্টার নিচে ঘুমাতে দিতেন না। আমার পড়াশোনার বা যত্নে কোনো কমতি রাখেন নি মানুষটা। আজ তার জন্যই আমি একজন মেডিক্যাল স্টুডেন্ট। এতো এতো মেডিক্যাল স্টুডেন্টের মাঝে আমিও আছি। সত্যিই আমি খুব কপাল করে এমন একজন স্বামী পেয়েছি। অনেক ভাগ্যবতী আমি!
.
.
সকাল ৮টা বেজে ৫ মিনিট। আজকে ঘুম থেকে উঠতে একটু লেট হয়ে গেছে। আজ সূর্যও সকালে ডাকেনি। কাল সারা রাত প্রচন্ড হেকেড হচ্ছিল। যার জন্য ঘুমাতে পারিনি৷ সারা রাত উনি মাথা টিপে দিছেন। ২-ত বার চা করে খাইয়েছেন। দু’টো নাপা এক্সট্রা খেয়েছি। শেষ রাতের দিকে একটু চোখ লেগে এসেছিল। তারপর কখন এতো বেলা হয়ে গেল বলতেই পারিনি। আমার ভাবনার মাঝেই উনি কোথা থেকে যেনএসে বললেন…..
.
—- কি ম্যাডামের ঘুম ভাঙলো তাহলে?
.
আমি উনার কথার উত্তরে মুচকি হেঁসে ছোট করে বললাম…..
.
—- হুম!
.
—- তা ম্যাডাম, আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আজ খুব সুন্দর স্বপ্ন দেখছিলেন। ঘুমের মধ্যে কার সাথে এতো হাসছিলেন হুম?
.
উনার কথার উত্তরে আমি ভ্রু কুঁচকে উনার দিকে তাকালাম। আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি আমার পাশে বসে পড়লেন! আমার থেকে কাঁথাটা টেনে নিযে বললেন…..
.
—- থাক বলত হবেনা। আপনি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন। আজ হসপিটাল যেতে অনেক লেট হযে যাবে।
.
আমি কিছু বললাম না। তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। আর উনি বিছানা গোছাতে লেগে গেলেন!
.
____________________
.
ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি উনি খাবার নিয়ে রেডি। আমাকে বের হতে দেখেই এগিয়ে এলেন!
.
—- চলো আলোরানী! আগে খাবে পরে রেডি হবে।
.
—- না আজ খাব না। ক্ষুধা নেই। তাছাড়া আজ অনেক লেট হয়ে যাব।
.
—- আগে খাওয়া পরে সব। এতে লেট হলে হবে।
.
—- আমি খাব না!
.
—- তুমি খাবে।
.
আমি উনার দিকে অসহায় মুখ করে তাকালাম। কিন্তু এতে বিশেষ কোনো লাভ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। উনি আবার বললেন…..
.
—- তুমি তৈরি হও আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
.
আমি চোখ মুখ কুঁচকে উনার দিকে তাকালাম। যার অর্থ আমি খাব না। কিন্তু খাটাশ তো আমার কথা শুনবে না!
.
অবশেষে সেই খেতে আমাকে হলোই! আমাকে খাওয়ানো শেষ করে নিজে না খেয়েই তৈরি হতে নিলে আমি রেগে গিয়ে বললাম……
.
—- আপনি যান। আমি যাব না।
.
আমার কথা শুনে উনি আয়না চোখ সড়িয়ে আমার দিকে তাকালেন! ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলেন…..
.
—- কেন? কি হলো? শরীর বেশি খারাপ লাগছে?
.
আশ্চর্য! আমি রেগে বললাম আর উনি? আমি এবার রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললাম…..
.
—- যেই কাজটা নিজে করেন। সেটা ওপরকে করতে কেন দেন না!
.
উনি হয়তো আমার কথার কোনো মানে বোঝেন নি! আমার সামনে এসে আমাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে স্বাভাবিক স্বরে বললেন…..
.
—- কি হয়েছে আলোরাণী? আমি কি কোনো ভুল করেছি?
.
আমি উনার কথার কোনো জবাব দিলাম না। পাল্টা প্রশ্ন করলাম!
.
—- আপনি খাবেন না কেন?
.
আমার কথার জবাবে উনি মুচকি হেঁসে আমার কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো কানে গুঁজে দিতে দিতে বললেন……
.
—- ওহ্! এই ব্যাপার? ম্যাডাম এইটুকু কারণে এতো রাগ?
.
—- এটা আপনার কাছে এইটুকু কারণ? আমি না খেলে জোড় করে খাওয়ান আর নিজে?
.
উনি আমার কথা শুনে উনি মুচকি হেসে আবার আয়নার সামনে চলে গেলেন। উনার কান্ড দেখে মেজাজটা আরও খারাপ হয়ে গেল! কিছুক্ষণ বাদে চুল জেল দিয়ে ঠিক করতে করতে এসে বললেন…..
.
—- যান ম্যাডাম খাবার নিয়ে আসুন। আমি তৈরি হতে হতে খাইয়ে দিন!
.
উনার কথা শুনে কিছু বললাম না! খাবার নিতে চলে গেলাম।
#চলবে……….