পারবনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤ #লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤ #পর্বঃ ৩৯ ❤ .

0
481

#পারবনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤
#পর্বঃ ৩৯ ❤
.
🍁
.
বিকেল ৪টা বেজে ৪৫ মিনিট। একটু আগে হসপিটালে কাল শেষ করে কোচিং শেষ করে বাসায় ফিরলাম। সকাল থেকেই শরীরটা ভীষণ টায়ার্ড লাগছে। মাথাটা ঘিরছে! মনে হচ্ছে যেকোনো মুহূর্তে মাথা ঘুরে পড়ে যাব। বাসায় ফিরে দীর্ঘ একটা শাওয়ার নেওয়ার পর বিছানায় গা এলিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করতেই রহিমার আগমণ ঘটল।
.
—- ছোড আফা!
.
রহিমার ডাকে চোখ খুলে জিজ্ঞাস্যু দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম ওর দিকে! ও ঘরে এসে আমার মাথার কাছে দাঁড়ালো!
.
—- কি বলবে?
.
—- হ! আপনারে বড় মায় ডাকছে।
.
ওর কথার উত্তরে মুচকি হেঁসে বললাম…..
.
—- গিয়ে বলো আসছি!
.
আমার কথার উত্তরে রহিমা স্মিত হেসে বেড়িয়ে গেল!
.
রহিমা চলে গেলে বালিশের পাশ থেকে ওড়নাটা নিয়ে বিছানা থেকে উঠে দরজার কাছাকাছি যেতেই আমার চারপাশটা কেমন যেন ঝাপসা হয়ে এলো। সবকিছু ঘোলাটে লাগতে শুরু করল! মনে হতে লাগলো সবকিছু যেন ঘুরছে। ধীরে ধীরে শরীরটা নিস্তেজ হতে লাগলো! দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিটুকু হারাতেই লুটিয়ে পড়লাম মাটিতে!

____________________

চোখ খুলে বোঝার চেষ্টা করলাম আমি কোথায় আছি? কিছুক্ষণের মাঝে সফলও হলাম! চোখ খুলে শুরুতেই সূর্যের ফেকাসে মুখটা দেখতে পেলাম। এতো সুন্দর মুখটা কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে কেমন ফেকাসে হয়ে গেছে। কেমন শুকনো লাগছে মুখটা। আমাকে চোখ খুলে তাকাতে দেখে অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলো!
.
—- আলো! আলো তুমি ঠিক আছো? তোমার কোথাও লাগে নি তো? ব্যথা পাও নি তো! আমাকে বলো…
.
উনাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে বললাম……
.
—- আমি ঠিক আছি! কোথাও লাগেনি। আপনি শান্ত হন প্লিজ!
.
—- সত্যি লাগে নি তো? মিথ্যা বলছো না তো? রহিমা, তোরা থাকতে ও সেন্সলেস হলো কি করে?
.
—- আসলে ভাই…
.
—- কিসের আসলে? বাড়িতে এতো মানুষ থাকতেও ওর দিকে কেউ খেয়াল রাখতে পারিস না? অদ্ভুত! আর আম্মু তুমি?
.
এইটুকু বলতেই উনাকে চুপ করিয়ে দিয়ে বললাম…….
.
—- আজব! আপনি সবাইকে কেন বকছেন? আমার সকাল থেকেই মাথাটা কেমন যেন ঘুরছিল। আর বাড়িতে এতো মানুষ থাকতেই পারে তাতে কি? তাদের তো আমার দেখাশোনা ছাড়াও আরও কাজ আছে নাকি? আর তাছাড়া আমি তো বাচ্চা নই!
.
কথাটা শেষ করতেই উনি বলে উঠলেন…..
.
—- কি? সকাল থেকে তোর মাথা ঘুরছে?
.
—- হুম!
.
—- এই শরীরে তুই ক্লাস, কোচিং দু’টোই করেছিস অথচ আমাকে একবার বলিসও নি?
.
—- আসলে…
.
এইটুকু বলতেই উনি কিছু না বলে বেড়িয়ে গেলেন। উনি বেড়িয়ে যেতেই বড় আম্মু আমার দিকে অসহায় মুখ করে তাকালেন!
.
—- আরে তুমি মন খারাপ করছো কেন? দোষ তো তোমাদের নয়!
.
—- শুনছো বউমা! আমার ছেলে বউ পাগল হয়ে গেছে। বউর জন্য মাকে বকে। আর কি দিন দেখাবে আল্লাহ্?
.
বড় আম্মু খুব মজার মানুষ! বড় আম্মু কথাটা বলে হুহা করে হেঁসে উঠলেন। সাথে বাকিরাও!
.
—- বড় আম্মু! তুমি এগুলা কি বলো? উনি কি তোমাকে বকেছে নাকি?
.
আমি এইটুকু বলতেই বড় আমি চোখ বড় বড় করে বলে উঠলো…..
.
—- দেখেছিস সাজিদের মা! আমার বউমারও দেখি আমার ছেলের হয়ে কথা বলছে। এই বুড়ি বয়সে আমাকে সবাই একা করে দিল রে! হায় আল্লাহ্ তুমি আমাকে এদিন দেখানোর জন্য বাঁচিয়ে রাখলে?
.
—- বড় আম্মু! তুমি কিন্তু বেশি বকছো! আমি কারো হয়ে কথা বলি না। আর তুমি সেই কখন থেকে আমাকে বউমা বউমা করছো কেন? আমি তো তোমার মেয়ে!
.
আমার কথা শুনে বড় আম্মু মুচকি হেঁসে আমাকে বুকে টেনে নিলেন।
.
—- হ্যাঁ! তুই তো আমার আরেকটা মেয়ে। আমাদের সকলের চোখের মনি! এখন বলতো, তোর শরীর খারাপ কেন? রাতে ঘুমাস না?
.
—- ঘুমাই তো! প্রতিদিনই ৭ ঘন্টা ঘুমানো হয়, ঠিকমতো খাওয়া হয়! তারপরেও কেন মাথা ঘুরছে তা ঠিক বুঝতে পারছি না।
.
আমার কথা শুনে বড় আম্মু ভ্রু কুঁচকে তাকালো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলো……..
.
—- সূর্য আসলে ওকে নিয়ে ডক্টরের কাছে যাবি। তুই না বলতে পারলে বলিস আমি ডেকেছি। আমার কাছে গেলে আমি বলে দিবনি। এখন রেস্ট নে!
.
এইটুকু বলে বড় আম্মু উঠে যেতে নিবে ঠিক তখনই সূর্য ডাক্তার আঙ্কেলকে নিয়ে রুমে আসে।
.
ডাক্তার আঙ্কেল এসে আমার পাশে বসেন! তারপর চেক আপ করে কয়েকটা টেস্ট দেন। আর বলে টেস্টগুলো দ্রুত করিয়ে উনাকে রিপোর্টগুলো দেখাতে। এইটুকু বলে কিছু মেডিসিন দিয়ে উনি চলে যান!
.
ডাক্তার আঙ্কেল চলে গেলে বড় আম্মু বলেন……
.
—- সম্ভব হলে আজই টেস্ট গুলো করিয়ে ফেল। আলোর খেয়াল রাখিস। আর কোনো কিছু দরকার পড়লে বা কোনো সমস্যা হলে আমাদের ডাকিস!
.
—- আচ্ছা, আম্মু!
.
তারপর আম্মু আর বড় আম্মু রহিমাকে নিয়ে চলে গেলেন। সবাই চলে যেতেই উনি আমার পাশে এসে বসলেন। হুট করেই কোলের উপর মাথা রেখে কোমড় জড়িয়ে শুয়ে পড়লেন! আমি উনার কর্মকাণ্ড দেখছি! হুট করে এরকম আচরণের মানে কি? আমি আস্তে করে উনার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে জিজ্ঞেস করলাম……
.
—- কি হয়েছে? মন খারাপ?
.
এইটুকু বলতেই উনি ফুপিয়ে উঠলেন! উনাকে ফুঁপাতে দেখে আমি চমকে উঠলাম। অস্থির ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলাম…..
.
—- কি হয়েছে? কাঁদছেন কেন? আমাকে বলুন না! আপুর কথা মনে পড়ছে ক….
.
কথাটা শেষ করার আগেই উনি বলে উঠলেন……
.
—- আমার খুব ভয় করছে আলো! ভীষণ ভয় করছে। আমি আগেও বলেছি আমি তোকে ছাড়া বাঁচতে পারব না। চাঁদকে ছাড়া আমি বেঁচে আছি। তা শুধুমাত্র তোর জন্য! কিন্তু…. কিন্তু তোকে ছাড়া তা সম্ভব নয়! তোকে ছাড়া চলবে না আমার।
.
উনার কথা শুনে আমি স্মিত হেসে বললাম…..
.
—- আরে বাবা আপনি বোকার মতো কাঁদছেন কেন? আমি তো জানতাম আপনি খুব বুদ্ধিমান। এখন তো দেখছি আপনি বোকা! আমার সামান্য মাথাটাই ঘুরেছে আর কিচ্ছু না! সামান্য মাথা ঘুরোনোতে কেউ মরে যায় না।
.
এইটুকু বলাতে উনি তেতে উঠলেন। রাগী স্বরে বললেন…..
.
—- একদম উল্টা পাল্টা কথা বলবি না! আমি আগেও বলেছি এসব আমার ভালো লাগে না! তৈরি হয়ে নে৷ হসপি
যাবো!
.
এইটুকু বলে উনি উঠে ওয়াশরুম চলে গেলেন। আর আমি তৈরি হতে!
.
__________________
.
ডাক্তার আঙ্কেলের চেম্বারে বসে আছি। আমার বা পাশে বসে আছেন সূর্য! উনার চোখ হচ্ছে আঙ্কেলের সামনে থাকা টেস্ট রিপোর্টের উপর আর এক হাত আমার কাঁধে অন্য হাতে আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলেই আমি পালিয়ে যাচ্ছি। ডাক্তার আঙ্কেল রিপোর্ট চেক করছেন। সূর্য বারবার উশখুশ করছেন। উনাকে দেখে মনে হচ্ছে উনি খুব অস্থির। কোনো কারণে হয়তো খুব টেনশনে আছেন। আমার রিপোর্ট অথচ আমার চেয়ে বেশি অস্থির উনাকে লাগছে। আমি উনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম!
.
ডাক্তার আঙ্কেলের ডাকে ফিরে তাকালাম!
.
—- মামুনি!
.
আমি কিছু বলব তার আগেই উনি বলে উঠলেন……
.
—- আঙ্কেল রিপোর্ট ঠিক আছে তো? সব নরমাল? আলোর কিছু হয়নি তো তাই না? ও একদম সুস্থ আছে তাই না আঙ্কেল?
.
উনার এতো শত প্রশ্ন দেখে আঙ্কেল হুহা করে হেঁসে উঠলেন! হাসি থামিয়ে বললেন……
.
—- কুল ডাউন ইয়াং ম্যান! এতো এতো প্রশ্ন করলে কোনটা রেখে কোনটার উত্তর দিব বলো তো? আমি অনেক স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক দেখেছি।কিন্তু তোমাদের মতো দেখিনি কখনো! আমি তোমাদের দু’জনের চোখে শুধু দু’জনের জন্য ভালোবাসা নয় সম্মান,শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, ভরসা,চিন্তা সব দেখেছি। এমন কি আমি রিপোর্টটা দেখার সময় দেখেছি তুমি কতেটা অস্থির ছিলে। সত্যিই আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর জুটি তোমরা। আলো খুব ভাগ্যবতী এমন একজন স্বামী পেয়ে!
.
আঙ্কেলের কথা শুনে আমি মুচকি হাসলাম। আর খাটাশটা? আবার একই প্রশ্ন!
.
—- আঙ্কেল, এসব প্লিজ পরে বলুন। আগে রিপোর্টে কি দেখলেন তা বলুন।
.
এবার আঙ্কেল স্মিত হেসে রিপোর্টের একটা জায়গা মার্ক করে উনার দিকে এগিয়ে দিলেন!
.
—- বুঝো তো এটা নাকি?
.
উনি রিপোর্টটা দেখে নিয়ে আঙ্কেলের দিকে তাকালেন! আঙ্কেল এবার চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বললেন…..
.
—- ইয়েস ইয়াং ম্যান! ইট’স ট্রু!
.
উনি এবার টলমল চোখে আমার দিকে তাকালেন। উনাকে এভাবে তাকাতে দেখে আমার পায়ের নিচের মাটি যেন সড়ে গেল। চারপাশটা যেন আবছা অন্ধকারে ঢেকে যেতে লাগলো! তাহলে কি উনার ভয়ই ঠিক? আমিও কি আপুর মতো উনাকে ছেড়ে চলে যাব? সত্যিই আমি উনাকে একা করে চলে যাব? সত্যিই!

#চলবে……..

[সরি গাইস! অনেক টেনশনে আছি। পড়াশোনা নিয়ে খুব ব্যস্ত তাই একটু লেট হলো!আসলে এক্সাম ঘনিয়ে আসছে সময় খুব কম! তাই হয়তো রেগুলার গল্প দিতে পারবো না! তবে একদিন পর পর নিশ্চয়ই দিব!ইনশাল্লাহ্! রি-চেইক করা হয়নি ভুলক্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন! ধন্যবাদ❤]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here