পারবনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤ #লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤ #পর্বঃ ৪০ ❤ . .

0
755

#পারবনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤
#পর্বঃ ৪০ ❤
.
.
___________________
.
জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে খুব চেনা কোনো জায়গায় আবিস্কার করলাম। চারদিকে চোখ ঘুরিয়ে বুঝতে আর বাকী রইল না আমি কোথায় আছি। কিন্তু ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা আমি বাসায় এলাম কি করে? আমি তো হসপিটালে ডক্টর আঙ্কেলের চেম্বারে ছিলাম তাহলে? কথাগুলো ভাবতে ভাবতে বিছানা থেকে উঠতে নিতেই পাশ থেকে সূর্য আমাকে উঠিয়ে বালিশে হেলান দিয়ে আধ শোয়া করে বসিয়ে দিলেন! আমি কিছু জিজ্ঞেস করতে যাব তার আগেই বড় আম্মু তারাহুরো করে এসে আমাকে বুকে জড়িয়ে নেন। মাথায় চুমু খেয়ে বলেন……
.
—- সোনায় সোহাগা হ মা! জীবনে অনেক বড় হ। অনেক অনেক ভালো থাক জীবনে!
.
কথাটা বলে বড় আম্মু উঠে যেতেই আম্মু আমাকে এসে বুকে জড়িয়ে নেন। বুক থেকে ছাড়িয়ে গালে, কপালে অনেকগুলো চুমু খান। টলমল চোখে বলেন………
.
—- আমার এই ছোট মেয়েটা কবে এতটা বড় হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না! সেই ছোট গোল গোল হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আধো আধো গলায় আম্মু ডাকা মেয়েটা কবে এতো বড় হয়ে গেল? আজ সে শুধু আমার মেয়ে নয় কারো ঘরের বউ! আবার কাল কারো মা হবে আমার এই ছোট মেয়েটা!
.
আম্মুর কথা শুনে জ্বলে আমার দু’চোখ ভিজে এলো! সত্যিই তো কবে এতো বড় হয়ে গেলাম আমি? সেই ছোট আলো নাকি আজ বাদে কাল ডাক্তার হবে। যে ছিল বাবার প্রিন্সেস, ভাইয়ের বুড়ি আজ সে অন্য কারো বউ? বেঁচে থাকলে হয়তো কারো মা হবে! এতটুকু মনে পড়তেই আমার আবার রিপোর্টের কথা মনে পড়ে গেল! কি ছিল রিপোর্টে? আমার ভাবনার মাঝে ভাবী পাশে বলে ওঠে……
.
—- কি হলো আলো? তুমি খুশি নও? মুখ শুকিয়ে রেখেছো কেন?
.
ভাবীর কথার মানে না বুঝে আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। আমি কিছু বলার আগে ভাইয়া বলল……
.
—- বনু! (টলমল চোখে)
.
কতোদিন পর ভাইয়া আমাকে বনু বলল! আমি দু’হাত বাড়িয়ে দিতেই ভাইয়া আমাকে জড়িয়ে নিলেন। আমি একদম গুটিশুটি মেরে লুকিয়ে গেলাম ভাইয়ার বুকে। একদম একটা বিড়াল ছানার মতো!
.
—- আমার সেই ছোট বুড়িটা কবে এতো বড় হয়ে গেল? এখন আমার সেই ছোট বুড়ির কোলে আরেকটা বুড়ি আসবে! আমাকে আধো আধো গলায় মামু বলে ডাকবে বুড়ি!
.
ভাইয়ার কথা শুনে আমি চমকে উঠে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। দেখে মনে হতে না ভাইয়া মজা করছে। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব? আমি কিছু বলব তার আগে ভাইয়া বলল.…..
.
—- তুই ছোট বুড়ি আসার পর একদম বদলে যাস না বনু! একদম বড় হযে যাস না প্লিজ! আমার সেই বাচ্চা বুড়িটা থাকিস! এখন রেস্ট নে বনু। আমরা সবাই যাই।
.
এইটুকু বলে ভাইয়া আমার মাথায় একটু চুমু দিয়ে ভাবীকে নিয়ে চলে গেলেন!
.
সবাই চলে যেতেই উনি দরজা বন্ধ করে এসে পাশে বসতেই আমি নড়েচড়ে বসলাম! কিছুটা দ্বিধা নিয়ে বললাম….
.
—- সবাই এসব কি বলে গেল?
.
—- কেন ম্যাডাম বোঝেন নি? উই আর গোয়িং টু বি প্যারেন্টস!
.
আমার যেন উনার কথা বিশ্বাসই হচ্ছে না! আমি অবিশ্বাসের চোখে তাকাতেই উনি আবার বললেন…..
.
—- ইয়েস ম্যাম! ইট’স ট্রু! রিপোর্টে এটাই এসেছে।
.
কথাটা বলে উনি উঠে গিয়ে আলমারি থেকে রিপোর্টটা এনে আমার সামনে দিয়ে বললেন…..
.
—- নিন দেখুন ম্যাডাম!
.
আমি উনার হাত থেকে রিপোর্টটা নিয়ে রিপোর্টে চোখ বুলিয়ে টলমল চোখে উনার দিকে তাকালাম!
.
—- আরে আরে, তুমি কাঁদছো কেন? এটা তো খুশির খবর! তুমি তো এটাই চাইতে তাই না?
.
—- সত্যিই আমাদের একটা ছোট প্রিন্স বা প্রিন্সেস আসবে? আমাকে ছোট ছোট হাতে জড়িয়ে ধরে আধে আধো স্বরে আম্মু বলে ডাকবে? (টলমল চোখে)
.
—- হুম! ডাকবে তো! এবার প্লিজ কান্না থামাও আলোরাণী!
.
কথাটা বলে উনি আমাকে বুকে জড়িয়ে নিলেন!

_______________________

রাত ১২টা বেজে ৫ মিনিট! বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছি। একটু আগেই পড়ার টেবিল থেকে উঠেছি। ভীষণ মাথা ধরেছে! সূর্য নিচে কফি বানাতে গেছেন। সন্ধ্যার ঘটনাটা যেন আমার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না! সত্যিই আমাদের সন্তান হবে? আমাকে আম্মু ডাকবে? কথাটা ভাবতেই ঠোঁটের কোনে হাসি ফুঁটে উঠলো!
.
আকাশটা ভীষণ মেঘলা! কোথাও কোনো তারার মেলা নেই! নেই কোনো চাঁদের আলো। মনে হচ্ছে এই বুঝি শুরু হবে মুশলধারা বৃষ্টি। অনেকদিন হলো বৃষ্টিতে ভিজি না! আজ ভিজলে মন্দ হয়না। তবে কথা হচ্ছে বৃষ্টি হবে তো? আর বৃষ্টি হলেও উনি ভিজতে দিবেন তো? আমার ভাবনার মাঝেই উনি পাশে এসে দাঁড়ালেন! কফির কাপটা এগিয়ে দিয়ে বললেন…….
.
—- কি ভাবছেন ম্যাডাম?
.
উনার কথা শুনে উনার দিকে একবার ফিরে তাকালাম। মুহূর্তেই চোখটা ফিরিয়ে ঐ মেঘলা আকাশে নিক্ষেপ করে মুচকি হেঁসে বললাম…..
.
—- ভাবছি, বৃষ্টি হলে খুব ভালো হতো!
.
—- তাই নাকি? কেন আমার আলোরাণীর মাথায় কি অন্যকোনো ফন্দি ঘুরছে নাকি?
.
উনার কথা শুনে আমি ফিক করে হেঁসে ফেললাম। উনি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন! আমি হাসি থামাতেই বললেন……
.
—- নিশ্চয়ই বৃষ্টিতে ভেজা?
.
আমি এবার হাতে থাকা কফির মগটাতে চুমুক দিয়ে চেয়ারের উপর রাখলাম! চোখ বন্ধ করেই উনাকে জড়িয়ে ধরলাম!
.
উনি হয়তো আমার মতলব বুঝতে পেরেছেন। আমি কিছু বলার আগেই উনি বললেন……..
.
—- খবরদার আলোরাণী! যাই করো না কেন? কোনো লাভ নেই!
.
—- প্লিজ! আমার সাদা বিলাই প্লিজ! একটু বেশি না!
.
—- একদম না! আর বৃষ্টি তো হচ্ছে না শুধু শুধু কেন এমন বাচ্চামো করছো?
.
—- আরে বৃষ্টি হবে। আপনি দেখে নিয়েন!
.
—– ওহ্ তাই? আচ্ছা আগে হোক দেন দেখা যাবে!
.
—- দেখুন, এটা…..
.
এইটুকু বলতেই শুরু হলো মুশুলধারে বৃষ্টি! আমি অবাক হয়ে তাকালাম বাহিরে! বাহির থেকে চোখ সড়িয়ে উনার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে বললাম…….
.
—- কি মহাশয়? বৃষ্টি হবেনা?
.
উনি মুখটা শুকনো করে রুমে যেতে নিতেই আমি পেছন থেকে বা হাতটা ধরে উনাকে আটকে বললাম……
.
—- প্লিজ! প্লিজ! প্লিজ! একটু………
.
—- একটুও না! (কড়া গলায়)
.
আমি আর কিছু বললাম না! গাল ফুলিয়ে বিছানা থেকে বালিশ নিয়ে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। উনি আমাকে সোফায় শুতে দেখে বললেন…..
.
—- বাব্বাহ্! এতো রাগ?
.
আমি কিছু বললাম না। মুখ ভেঙচি কেটে অন্যদিকে ঘুরে শুলাম! এবার উনি এসে আমাকে কোলে তুলে নিলেন। উনার এ কান্ডে আমি অবাক কম রাগ বেশি। কারণ আগেও এমন অনেক হয়েছে৷ আমি রাগ করে সোফায় শুলে উনি কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দেন!
.
—- আমাকে নামান বলছি!
.
উনি কিছু বললেন না! এমনকি আমাকে বিছানায়ও নামালেন না। বরং বিছানা পেড়িয়ে দরজার দিকে পা বাড়ালেন। উনার কান্ড দেখে আমার ভ্রু জোড়া খানেকটা কুঁচকে এলো! তবে কিছু বললাম না!
.
রুম পেড়িয়ে উনি আমাকে নিয়ে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো! এবার মুখ খুললাম আমি…..
.
—- সমস্যা কি? এভাবো কোলে তুলে কোথায় যাচ্ছেন?
.
উনি আমার কথার জবাবে কিছুই বললেন না! এমন ভাব করছেন যেন উনার আশেপাশে কেউ নেই। উনার এমন ডোন্ট কেয়ার ভাবে আমার গা জ্বলে পুড়ে গেল বলে মনে হলো! কিন্তু কিছু বললাম না!
.
সিঁড়ি পেড়িয়ে আমাকে নিয়ে ছাঁদের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে আমাকে কোল থেকে নামিয়ে দিলেন! আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকালাম। সত্যি এটা উনি? আচ্ছা উনাকে ভুত প্রেত ধরে নি তো? আমার ভাবনার মাঝেই বললেন……
.
—- নিন ম্যাডাম! ভিজুন! তবে অনলি ১০ মিনিট।
.
—- এ্যাঁ! ( অসহায় মুখ করে) ১০ মিনিটে গা ভেজে নাকি? প্লিজ ৩০ মিনিট! প্লিজ!
.
—- দেব এক ঠাটিয়ে। কথায় আছে বসতে দিলে খেতে চায়, আর খেতে দিলে শুতে! তোর অবস্থা হচ্ছে সেরকম! একটু আগে বললি একটু ভিজবি রাজি হইনি মুখ ফুলিয়ে রেগে মেগে আগুন হয়ে ছিলি। যদি আজ ভিজতে না দিতাম আগামী ১০ বছরেও মনে হয় কথা বলতি না। তাই ১০ মিনিট ভেজার পারমিশন দিলাম। এখন ১০ মিনিট দিয়েছি বলে ৩০ মিনিট চাচ্ছিস?
.
—- প্লিজ!
.
—- বেশি প্লিজ প্লিজ করলে ৫মিনিট মাইনাস করব! রাজি?
.
—- এ্যাঁ! না না।থাক ১০ মিনিটই ভিজব!
.
—- লক্ষি বউ!
.
উনার কথার জবাবে মুখ ভেঙচি কেটে ছাঁদের ঠিক মাঝখানে চলে এলাম।
.
—- আলো! খবরদার চোখের আড়ালে যাবিনা। যেখানে আছিস ওখানেই দাঁড়িয়ে ভেজ। নয়তো ঘরে নিয়ে যাব!
.
উনার কথার জবাবে আমি আর কিছু বললাম না।
.
.
🍂
.
দেখতে দেখতে চলে গেল আরও কয়েকটা মাস। ভাবীর ডেলিভারির দিন ঘনিয়ে এলো! এদিকে দিন দিন আমার শরীরও খুব খারাপ হচ্ছে। আমিও আর আগের মতো সেই সুন্দর আলীশা নেই! আমি কেমন যেন রোগা হয়ে গেছি। নিজেকে দেখলে নিজেরই হাসি পায়!
.
বিকেল ৪টা বেজে কিছুক্ষণ হবে। বিছানায় আধ শোয়া হয়ে পড়ছিলাম।সূর্যও পাশে বসে লেপ্টপে কাজ করছেন। হঠাৎ করে কারো চিৎকারে চমকে উঠে একে ওপরের দিকে তাকালাম। আমি উঠতে নিলে সূর্য আমাকে বসতে বলে নিযে দেখতে যায়।
.
বেশকিছুক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরও সূর্যকে না দেখতে পেয়ে আমি উতলা হয়ে পড়লাম। কে ওভাবে চিৎকার করল? আর সূর্যও বা কেন আসছেনা? টেনশনে আমি ঘেমে নেয়ে একাকার! অবশেষে না পেরে আমি বিছানা থেকে ওড়না নিয়ে একপা দু’পা করে হাটতে হাঁটতে রুম থেকে বেড়িয়ে সোজা নিচে চলে এলাম। নিচে এসে কাউকে পেলাম না! এখন তো আমি আরও ভয় পেয়ে গেলাম। ফোনটাও আনি নি যে সূর্যকে কল করব। আবার আস্তে আস্তে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালাম। রুমে গিয়ে বিছানা থেকে ফোনটা হাতে নিতেই পেছন থেকে রহিমা হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলল………..
.
.
#চলবে………
.
[সরি গাইস! সরি ফর লেট। আসলে কালকে জার্নি করে অসুস্থ হয়ে গেছি। যার জন্য কাল গল্প দিতে পারিনি। জানি আজকের পর্বটাও বেশি বড় হয়নি তবুও একটু মানিয়ে নেবেন প্লিজ! নেক্সট দিন থেকে বড় করে দেওয়ার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ্! রি-চেইক করার সময় হয়নি ভুলক্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন!

হে প্রিয় পাঠক/পাঠিকা সমাজ! আপনারা আলো-সূর্যর বাচ্চাদের নাম ঠিক করা শুরু করে দিন! 😴 এই মহান দায়িত্বটা লেখিকা আপনাদের দিয়েছে☺। সো গাইস, গেট স্টার্টেড! ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here