#পারবনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤
#পর্বঃ ৩৭❤
.
🍁
.
সকাল ১১টা। একটু আগেই রিয়া আপু ও ফরহাদ ভাইয়াকে গাড়ি তুলে দিয়ে আমরাও রওনা হলাম বাসার উদ্দেশ্যে! পরীক্ষা ঘনিয়ে এসেছে। বিয়ের ঝামেলায় পড়ে এই ক’টাদিন একদমই বই ধরা হয়নি! আজ থেকে অনেক হার্ড ওয়ার্ক করতে হবে। যে করেই হোক না কেন ঢাকা মেডিক্যালে চান্স পেতে হবে। নয়তো সূর্য আমার ১২টা বাজাবে!
.
গাড়িতে বসে জানালা দিয়ে একমনে তাকিয়ে আছি বাহিরে! হঠাৎ করে কেউ জোড়ে ধাক্কা দেওয়ায় কিছুটা হকচকিয়ে গেলাম! সে কিছু বলবে তার আগেই আমি কিছুটা রেগে বললাম……
.
—- সমস্যা কি? ধাক্কা দেন কেন?
.
আমার কথা শুনে উনি ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলেন…..
.
—- কোন জগতে ছিলি?
.
—- মানে?
.
—- মানে, আপনি কাকে নিয়ে ভাবনার জগতে ডুবে ছিলেন যে এতোবার ডাকার পরেও শোনেন নি!
.
—- আপনি আমায় কখন ডাকলেন?
.
এবার উনি আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন…..
.
—- তোকে কানের ডক্টরের কাছে নিতে হবে বোঝা গেছে!
.
—- কেন? কানের ডাক্তারের কাছে কেন?
.
—- কারণ তুই কানে কম শুনিস! (অন্যদিকে তাকিয়ে)
.
—- এই আপনি আমাকে কানে কালা বললেন?
.
—- তো কি বলব?
.
—- আপনি কানে কম শোনেন। আপনার চৌদ্দ গোষ্ঠী কানে কম শোনে! হুহ
.
—- দেখেছিস, তুই স্বীকার করলি যে তুই কানে কম শুনিস!
.
—- মানে? আমি কখন স্বীকার করলাম? আমি তো বললাম আপনার চৌদ্দ গোষ্ঠী কানে কম শোনে!
.
—- হুম! আমার চৌদ্দ গোষ্ঠীর মধ্যে তুইও আছিস। তার মানে তুই কানে কম শুনিস!
.
কথাটা বলেই উনি ভুবন কাঁপানো হাসিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আর আমি রাগে চোখ লাল করে তাকিয়ে আছি উনার দিকে! এই লোকটার সাথে কথায় কাজে কোনোটাতেই আমার মতো মাসুম বাচ্চার পেড়ে ওঠা সম্ভব নয়। প্রতিবারই আমার কথায় আমাকেই ফাঁসায় খাটাশটা! আসলেই একটা সাদা বিলাই! তোর কপালে বউ নাই৷ তোরে আমি উগান্ডার কালো হাতির সাথে বিয়ে দিমু দেখিস হুহ!
.
____________________
.
বিকেল ৪টা বেজে ৩০ মিনিট! একটু আগে আছরের নামাজ পড়ে ছাঁদে এলাম। বিকেলের রোদটা পড়ে গেছে। থেকে থেকে শীতল হাওয়া শরীর ও মন জুড়ে অদ্ভুত এক ভালো লাগার দোলা দিয়ে যাচ্ছে! প্রকৃতিও শীতের আগমনী বার্তা জানান দিচ্ছে! এসময় তো গ্রামে খেজুরের গুড়ের পায়েস, পিঠা,পুলির ধুম পড়ে যায়। বিশেষ করে শীতের সকালে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের দৃশ্য খুবই সুন্দরও মনোরম হয়! কিন্তু শহরে এতো সুন্দর মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা সম্ভব নয়! আবার শীতের সকালে কুয়াশায় ভেজা ঘাস! ইশ! কিন্তু এখানে এসব কই পাবো? ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল।
.
বেশকিছুক্ষণ ছাঁদে হাঁটাহাঁটি করে রুমে চলে আসি। সূর্যের কড়া নির্দেশ যেন মাগরিবের সময় ছাঁদের আশেপাশেও আমাকে না দেখে!
.
কিছুক্ষণের ভিতর মাগরিবের আজান পড়ে যায়। নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ তেলাওয়াত করে উঠে নিচে চলে যাই। তবে আড্ডা দিতে নয় চা খেতে!
.
সবাই মিলে গল্প করছি আর চা খাচ্ছিলাম। এরই মাঝে দরজায় বেল বেজে ওঠে। আমি দরজা খোলার জন্য যেতে চাইলে ভাবী আমাকে না যেতে দিয়ে সে উঠে যায় দরজা খুলতে। বড় আম্মু আমাদেরকে একটা হাসির গল্প শোনাচ্ছিলেন ওটা নিয়ে আমরা হাসাহাসি করছিলাম! এরই মাঝে ভাবী দরজার কাছাকাছি যাওয়ার আগেই মাথা ঘুরে পরে যায়। আচমকা এরকম হওয়ায় আমি চায়ের কাপ ফেলে রেখে দৌড়ে ভাবীর কাছে চলে যাই। আমাকে এভাবে দৌড়ে আসতে দেখে আমাকে অনুসর করে আম্মু আর বড় আম্মুও ভাবীকে ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে দৌড়ে আসেন!
.
—- ভাবী, ভাবী? কথা বল না! কি হল তোমার?
.
—- শ্রেয়া! এই শ্রেয়া কথা বল!
.
আমরা সবাই ডাকছি কিন্তু ভাবী কোনো সাড়া দিচ্ছে না৷ ঐদিকে দরজায় বেল বেজেই চলেছে। রহিমা ভেতর থেকে দৌড়ে এসে দরজা খুলে দিয়ে গেল। আমি ডাক্তার আঙ্কেলকে ফোন করে আসতে বললাম!
.
ভাইয়া ভাবীকে কোলে করে রুমে এনে বিছানায় শুইয়ে দিয়েছে। ভাবীর মাথার কাছে ভাইয়া আরেক পাশে আম্মু আর বড় আম্মু! আমি ভাইয়ার পাশে দাঁড়িয়ে অনবরত কান্না করেই যাচ্ছি। কেমন যেন অজানা ভয় কাজ করছে ভেতরে। হুট করে একজন সুস্থ মানুষ এভাবে পড়ে যাওয়ার কারণ কি হতে পারে? হঠাৎ করে আপুর কথা মনে পড়ে গেল! আপুর মতো যদি ভাবীও….. নাহ্! এসব কি ভাবছি আমি? আমি কি পাগল হয়ে গেলাম নাকি? আপুর এক্সিডেন্ট হয়েছিল! কিন্তু? আমি আর কিছু ভাবার আগেই ডাক্তার বলে উঠলেন……
.
—- আলো মামুনি!
.
ডাক্তার আঙ্কেলের ডাকে আমি ভয়ার্ত চোখে ফিরে তাকালাম! আমার চোখে এসে ভর করল বিন্দু বিন্দু নোনাজল আর মনে এসে ভর করল এক পাহাড় সমান ভয়! আমি কিছু বলত যাবো তার আগেই ডাক্তার আঙ্কেল বললেন……
.
—- এবার তো কান্না থামিয়ে একটু হাসো!
.
আঙ্কেলের কথার কোনো অর্থ না বুঝে আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম! এরই মাঝে ভাইয়া প্রশ্ন করলেন…..
.
—- হাসবে মানে? আঙ্কেল আপনি এই পরিস্থিতিতে কি করে হাসতে বলছেন? একটা সুস্থ মানুষ হুট করেই জ্ঞান হারিয়েছে!
.
ভাইয়ার কথার উত্তরে আঙ্কেল মুচকি হেঁসে বললেন….
.
—- এসব তো হুট করেই হয় বাবা!
.
আঙ্কেলের কথা শুনে আমি আরও কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। তবে এই মুহূর্তে ভয়ের থেকে রাগ বেশি লাগছে। এভাবে হেয়ালি কেন করছেন? আমি আর কিছু না ভেবে বলে ফেললাম……
.
—- কি হয়েছে ভাবীর? কিসবের কথা বলছেন আপনি? আর এতো হেয়ালিই বা কেন করছেন আঙ্কেল?
.
আমার কথার উত্তরে আঙ্কেল মুচকি একটা হাসি উপহার দিলেন! কিছুক্ষণ চুপ থেকে বল উঠলেন……..
.
—- তুমি ফুপি হতে যাচ্ছো!
.
ডাক্তার আঙ্কেলের কথা আমার সবার কান পর্যন্ত যাওয়ার আগেই যেন আমি খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম। দৌড়ে গিয়ে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলাম! ভাইয়া স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো কথাটা ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না।
.
—- ভাইয়া! কংগ্রাচুলেশনস! তুমি বাবা হবা আর আমি ফুপি হবো! ভাইয়া আমাদের বাড়িতে ছোট ছোট হাত-পা ওয়ালা বাবু আসবে। ইশ! ভাবতেই আমার খুশিতে নাঁচতে ইচ্ছে করছে।
.
এতোক্ষণে ভাইয়া বোধহয় ধ্যানে ফিরল! শুরুতে আমায় মাথায় একটা চুমু দিয়ে বলল…….
.
—- তাই নাকি বুড়ি?
.
—- হুম!
.
এরইমাঝে ভাবীর জ্ঞান ফেরে। ডাক্তার আঙ্কেল তাকে উদ্দেশ্য করে বলে…..
.
—- নিজের খেয়াল রাখবে শ্রেয়া! ঠিকমতো খাবে, মেডিসিন নিবে, ঘুমাবে। সব টাইমলি করতে হবে। আর আপনাদেরকে বলছি ওর খেয়াল রাখবেন ভারী কোনো কাজ করতে দেবেন না! (আম্মু আর বড় আম্মুকে উদ্দেশ্য করে) আমি উঠছি!
.
ডাক্তার আঙ্কেল চলে গেলে আমি ভাবীর পাশে বসে তাকে ডান হাতের কনুই দিয়ে খোঁচা দিয়ে বলি…..
.
—- ও আমার লক্ষি ভাবী? কি চাই তোমার বলো!
.
আমার কথা শুনে ভাবী ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো….
.
—- কিসের জন্য আলো?
.
—- এইতো এতোদিনে একটা মাত্র ননদিনীর দাবি পূরণ করার জন্য! ইশ আমার তো ভাবতেই কি খুশি খুশি লাগছে! ভাবীর একটা ছোট বাবু হবে? (খুব এক্সাইটেড হয়ে)
.
আমার কথা শুনে ভাবী লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলে! এরই মাঝে ভাইয়া চলে আসে! আমি দৌড়ে গিয়ে ভাইয়ার সামনে দাঁড়াই! আমাকে সামনে গিয়ে এভাবে দাঁড়াতে দেখে ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে……
.
—- কি? এভাবে সামনে এসে দাঁড়ালি কেন?
.
—- আমার পাওনা কই ভাইয়া?
.
—- কিসের পাওনা?
.
—- যাব্বাবা! আজ বাদে কাল বাচ্চার বাবা হচ্ছো তো সেই খুশিতে ছোট বোনকে কিছু দিবানা?( অন্যদিকে তাকিয়ে)
.
—- ওহ্ তাই?
.
—- হু তাই! জলদি বের করো!
.
—- কি?
.
—- আবার? (রেগে)
.
—- যাব্বাবা! বুড়ি তুই তো দেখছি বিয়ের পর খুব রেগে যাস?
.
—- তুমি কি কোনো ভাবে কথা ঘুরাও? আগেই বলে দিচ্ছি কোনো লাভ না কথা ঘুরিয়ে। আমার পাওনা না দেওয়া পর্যন্ত তোমার ছাঁড় নাই!
.
ভাইয়া কিছু বলার আগেই আম্মু চেঁচিয়ে উঠলো…..
.
—- আলো! ছেলেটা বাহির থেকে এসেছে। সারাদিন কতো কাজ করে৷ ওর পথ ছাড়!
.
আম্মুর কথা শুনে আম্মুর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ভাইয়ার দিকে অসহায় ফেস করে তাকালাম! বিরবির করে বললাম……
.
—- আমি এখন আর তারো বোন না জানি তো! বিয়ের পরই বোনকে এতো ভুলে গেছে। বাবা হলে তো একদমই ভুলে যাবে!
.
ভাইয়া আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিল। তারপর মুচকি হেসে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে থেকে বলল…….
.
—- তাই নাকি?
.
—- হুম! আমি কারো বোন নেই!(মাথা নিচু করে)
.
—- ওরে আমার বুড়িটা! কে বলেছে তোকে?
.
—- কেউ না! আমি বুঝি! (ভেঙচি কেটে)
.
—- তা বড় আপা আপনার কি চাই বলেন।
.
ভাইয়ার কথা শুনে আমি হেসে উঠলাম! ভাইয়ার হাতটা টেনে নিয়ে বললাম…..
.
—- আমার এখন ছোট বেলার মতো কোনো আবদার নেই। আমার আবদার হলো, ভাবীকে সবসময় ভালো রাখবে। আর আমার এই ভাইয়াটাকেই আমার সারাজীবন চাই। কখনো চেঞ্জ হয়োও না প্লিজ ভাইয়া! শত ব্যস্ত থাকোনা কেন,একদম বুড়ো হয়ে চুল পেকে গেলেও চেঞ্জ হয়োও না! আমাকে এতোটাই ভালোবেসো। আমার ভাগের ভালোবাসাটা কাউকে দিবেনা। কাউকেই না! প্রমিস?(টলমল চোখে)
.
ভাইয়া টলমর চোখে আমাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় একটা চুমু দিলেন! ধরা গলায় বলল….
.
—- কোনোদিনই দিবনা! আমার বুড়ির ভাগের ভালোবাসাটা শুধুই আমার বুড়ির! প্রমিস তার সব কথা রাখব। আর সারাজীবনো এমনই থাকব ইনশাল্লাহ্! এখন জলদি করে চোখটা মোছ নয়তো ছোটবাবু বলবে তো তার ফুপি কাঁদুনে!
.
ভাইয়ার কথায় সবাই হুহা করে হেসে উঠলাম!
#চলবে………
[সরি গাইস! একটু ছোট হয়েছে। নেক্সট পার্ট থেকে বড় করে দিব ইনশাল্লাহ্!]