#পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে❤❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤
#পর্বঃ ১৪❤
.
.
🍁
.
জ্ঞান ফিরে আশেপাশে তাকাতেই বা পাশে উনাকে চোখে পড়ল। আমার কাটা জায়গাটা বেন্ডেজ করা তার উপর হাত রেখে স্লাইড করছে আর কিছু একটা বলছেন। খুবই আস্তে কথা বলছিলেন। যার জন্য কথাটা স্পষ্ট শুনতে পারছিলাম না। আমি আচমকা হাতটা টান দিতেই চমকে উঠে আমার দিকে তাকালেন উনি। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে অন্যদিকে ঘুরে চোখের পানিটা মুছে আবার আমার দিকে ঘুরে বসলেন। ধীর গলায় বললেন…..
.
—- আ.. আলো আসলে আমি ইচ্ছে করে তোকে ব্যাথা দিতে চাইনি। আম সো সরি। বিশ্বাস কর আমি বুঝতে পারিনি তোর হাত কেটে যাবে তুই ব্যাথা পাবি। প্লিজ আমায় ভুল বুঝিস….
.
উনাকে মাঝ পথে থামিয়ে দিলাম আমি। অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম…
.
—- আপনাকে আর কিছুই বলতে হবে না। আমি কাউকে ভুল বুঝিনি।
.
কথাটা বলে উঠে যেতে নিলে উনি আমার বা হাতটা চেপে ধরে। আমি ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠতেই ছেড়ে দিয়ে অপরাধী স্বরে বলেন….
.
—- সরি সরি আমি বুঝি নি। তুই চলে যাচ্ছিস তাই ধরলাম। সরি!
.
—- ইটস ওকে। আসছি..
.
—- আসছি মানে? কোথায় যাচ্ছিস?
.
—– আমার রুমে যাচ্ছি।
.
—- তাহলে এটা কার রুম?
.
—- কেন আপনার।
.
—- আমার রুম আর তোর রুম নয়?
.
—- অবশ্যই না। রুমের মানুষটাই আমার হতে পারল না রুমটা কি করে আমার হবে?
.
কথাটা বলে উনাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে এলাম। সোজার আমার রুমে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ডুব দিলাম সেই কালো অতীতে…..
.
—————–
.
নার্সের ডাকে দৌড়ে গেলেন ভাইয়া। পেছন পেছন গেলাম আমি। সূর্যের ঘরে গিয়ে যা দেখলাম তাতে সবাই অবাকের শেষ পর্যায়। সূর্যের জ্ঞান ফিরেছে? আমি সত্যি দেখছি তো? আবার ঘুম ভাঙলে সব শেষ হয়ে যাবে না তো? ভাবনার মাঝেই ভাইয়া আমাকে ডাক দিল। আমি আস্তে করে সূর্যের পাশে গিয়ে বসলাম। ডক্টর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন….
.
—– ইটস ইনক্রেডিবাল! আমার লাইফে প্রথম এমন কোনো পেশেন্ট দেখছি। সাধারণত খুব কম সংখ্যক মানুষ কোমা থেকে ফিরতে পারে। আর এতো কম সময় তাতো অসম্ভব! আর তাছাড়া এই ৬ মাসে আপনারা কম ট্রাই করেননি সূর্যর জ্ঞান ফেরানোর জন্য। ওকে সাধারণ লাইফে ফিরিয়ে আনার জন্য। বাট ওর কোনো রেসপন্স পাই নি। আমরা তো ভেবেই নিয়েছিলাম ও হয়তো কখনোই কোমা থেকে বের হবে না। বাট তা সম্পূর্ণ ভুল। আজ আলো আসতে না আসতেই ওর জ্ঞান ফিরেছে। হ্যাঁ.. আলোই পারবে ওকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে। ওর মাঝেই আছে সূর্যর জীবনের আলো।
.
কথাটা বলে ডক্টর আঙ্কেল আমার মাথায় হাত রেখে বললেন….
.
—- দোয়া করি মা সুখী হও। ভালো থাকো। আর সূর্যকে সবার মাঝে ফিরিয়ে আনো। তবে আগে তোমাকে সুস্থ হতে হবে মাই চাইল্ড!
.
জবাবে আমি কিছু বললাম না শুধু মুচকি হাসলাম।
.
🍂
.
আজ প্রায় দুমাস কেটে গেছে। এখন আমি আর উনি দু’জনেই অনেকটা সুস্থ। এই দু’মাসে অনেক ঝড়ঝাপটা গেছে আমার উপর দিয়ে। সারাক্ষণ ওনার সাথে থাকতে হতো। উনাকে খাওয়ানো থেকে ঘুম পাড়ানো,, মেডিসিন দেওয়া সব আমার করতে হয়েছে। বলতে গেলে এই দু’মাস উনি আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝেন নি। সব কাজে আমাকেই চাই। সারাদিন উনাকে সামলে রাতে ঘুম পাড়িয়ে একটু আধটু পড়তাম। সর্বোচ্চ ৩/৪ ঘন্টা ঘুম হতো আমার। দিন শেষে খুব কষ্ট হতো ক্লান্ত লাগতো। বাট উনার মায়া ভরা মুখ আর ডক্টরের কথাগুলো মনে করে সব হাসি মুখে মেনে নিতাম। কিন্তু ভাবিনি পরিনাম এতোটা খারাপ হবে। আজ আমাদের বিয়ে। বাড়ির সবাই চায় সূর্য আমাকে নিয়ে, পড়াশোনা, অফিস এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকুক। বিয়েটা হলে হয়তো উনি ব্যস্ত থাকতে পারবেন। আর এসবের চাপে আপুকে ভুলে মুভ অন করবেন। কিন্তু সবার ধারণা পাল্টে যাবে কেউ ভাবেনি।
.
সকাল ১০ টা বেজে ১৫ মিনিট পুরো বাড়ি সাজানো হচ্ছে। মূলত ঘরোয়া ভাবেই বিয়েটা হচ্ছে। কারণ আমি এখনো ছোট। এইচএসসি এক্সাম সামনে পড়াশুনার খুব চাপ। বড় করে অনুষ্ঠান করার সময় নেই। তাই আপাতত বিয়েটা পড়িয়ে রাখবে পরে বড় করে অনুষ্ঠান করবে। সন্ধ্যা ৭ টায় বিয়ে। সকাল থেকে সবাই নানা কাজে ব্যস্ত। আমাকে সময় দেওয়ার মতো কেউ নেই। ভাইয়াকেও দেখতে পাচ্ছি না। মেজাজ আমার ফর্টি নাইন। ইচ্ছা করছে সব কটার মাথায় নারিকেল ফালাই। সকাল থেকে ঐ সূর্যর বাচ্চার সাথেও দেখা হয়নি। দেখা হলে ভালো হতো একটু ঝগড়া করতাম। এট লিস্ট আমার মুডটা ঠিক থাকতো। বিরক্ত লাগতো না। ইচ্ছে তো করছে খুঁজে এনে ঝগড়া করি। অসভ্য লোক একটা৷ হুহ,,😤 হঠাৎ ভাবি পেছন থেকে ডেকে বলল…..
.
—- কি হলো আলো? এখানে দাঁড়িয়ে কাকে খুঁজছো?
.
—- কাউকে না। ( গোমড়া মুখে)
.
—- কি হয়েছে আমার পিচ্চি ভাবীটার? মুড অফ কেন? রেগে আছে কি?
.
—- না রেগে নেই। টাটা ঘুমোবো।
.
কথাটা বলে ওখানে আর এক সেকেন্ডও দাঁড়ালাম না। রুমে এসে দরজা দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম। উদ্দেশ্য ঘুমানো৷ এভাবে একা একা বিরক্ত না হয়ে ঘুমানোটাই বেটার।
বিছানায় শুয়ে কম্বল মুড়ি দিতেই দরজায় করা আঘাত পড়ল। সাথে সাথেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। এতোক্ষণ ধরে কাউকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আর এখন ঘুমের কথা ভাবতেই আমার ঘুমের ১২ টা বাজাতে এসে হাজির! মাই গড! কি পরিমাণ নিষ্ঠুর মানুষ রে বাবা! দরজা খুলতাম না। থাক দরজা পিটাইতে পিটাইতে শহীদ হো হু কেয়ারস? আমি এহন ঘুমামু গুড বাই।
.
কথাটা বলে কম্বল মুড়ি দিতেই আরো এক দফা দরজা নক করল। বিরক্তি নিয়ে উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখি ভাবী এক হাতে আইসক্রিম অন্যহাতে মেহেদী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি চিরকালই আইসক্রিম পাগলী। আইসক্রিম দেখে মাথাটা ঠান্ডা কুল হয়ে গেছে। খুশি হয়ে ভাবী বললাম….
.
—- ধন্যবাদ আপু আইসক্রিম আনার জন্য৷ কি করে বুঝলে আমার আইসক্রিম চায়? এখন দাও খেয়েনি।
.
—- হু খাবে তো। ভেতরে চলো।
.
—– কেন ভেতরে কেন?
.
—– কারণ আমি এখন তোমার হাতে মেহেদী লাগাবো।
.
—- না না আমি এখন ঘুমাবো।
.
—- তাহলে আমি যাই। আইসক্রিম গুলো খেয়ে নিই।
.
—– না না প্লিজ! আমি মেহেদী পড়ব।
.
দীর্ঘ ২ ঘন্টা ১০ মিনিট পরে আমাকে মেহেদী পড়ানো শেষ করে ভাবী দরজা দিয়ে চলে গেলেন। আর আমি জায়গায় শুয়ে পড়েই ঘুম।
.
🍁
.
ভাবীর ডাকে ঘুমু ঘুমু চোখে তাকালাম। ভাবী সাথে আরো দু’জন নিয়ে আমাকে সাজাতে চলে এসেছে। বিরক্তি নিয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই চোখ কপালে উঠে গেল আমার। একি ৫:০০ বাজে? এতোক্ষণ ঘুমালাম অথচ কেউ ডাকলো না? লাফিয়ে উঠে বসলাম। ভাবী টেনেটুনে শাওয়ার দিতে নিয়ে গেলেন। আমার তো এক কথা এখন গোসল করব না। কিন্তু কে শুনে কার কথা। প্রায় ৩০ মিনিট পর শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে এলাম। আয়নার সামনে দাঁড়াতেই নিজেই নিজেকে দেখে অবাক হলাম। কোনো সাজ নেই শুধু লাল রঙের একটা মাড়ি আর ভেজা চুলে কি মারাত্মক লাগছে আমায়। আজ যেন নতুন করে রূপ খুলছে আমার! যেমনটা খুলে বর্ষার মৌসুমে গাছপালার। যৌবনে পা রাখা কোনো কিশোরীর! ঠিক তেমনি। ভাবীর ডাকে ঘোর কাটলো…..
.
—- আলো কি ভাবছো? তাড়াতাড়ি তৈরি হতে হবে অনেক লেট হয়ে গেছে।
.
প্রতি উত্তরে আমি কিছু বললাম না শুধু মাথা নাড়ালাম।
.
প্রায় ১:৩০ ঘন্টা পর আমাকে সাজানো শেষ হলো। পড়নে ভারী বেনারসি, গা ভর্তি ভারী গহনা,চোখে গাঢ় কাজল,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, হাত ভর্তি চুরি,পায়ে নুপুর। একদম মনে হচ্ছে সর্গীয় কোনো অপ্সরী। নিজেই নিজেকে দেখে অবাক। সত্যিই আমি এতো সুন্দর? নাকি আমার কাছেই মনো হচ্ছে? ভাবনার মাঝেই ভাবী বলে ওঠে….
.
—- মাশাল্লাহ! আমাদের পিচ্চি আলোকে কতো সুন্দর লাগছে। একদম সর্গীয় কোনো অপ্সরা।
.
—- হ্যাঁ,, আপু আপনি ঠিক বলছেন।
.
আমি লজ্জায় মাথা নামিয়ে ফেললাম।
.
রাত ৮ টা বেজে ১৫ মিনিট একটু আগেই বিয়ের পর্ব শেষ হয়েছে। ভাবী আর আমার আরো দু’জন কাজিন আমাকে ফুলে ঘেরা বাসরে বসিয়ে দিয়ে গেল। তারপর থেকেই অপেক্ষা। জানিনা এই অপেক্ষা আদৌও শেষ হবে কিনা? আর তারপর থেকে তো সবই আপনাদের জানা।
#চলবে……..
[#বিঃদ্রঃ জানিনা কি লিখেছি কেমন হয়েছে। মনের অবস্থা খারাপ । একটু ছোট হয়েছে। প্লিজ মানিয়ে নেবেন। জানি গল্প দিতেও লেট হয়েছে। বাট কি করব বলুন বাসা থেকে ফোন দিতে চায় না। অনেক বকা শুনতে হয়। এখন সবাই ঘুমে এই সুযোগে লিখতে বসলাম। নেক্সট টাইম থেকে তাড়াতাড়ি দেওয়ার ট্রাই করব। সরি গাইস! সবাইকে শুভ রাত্রি। ধন্যবাদ ❤]