পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤ #লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤ #পর্বঃ ১৮❤ .

0
463

#পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤
#পর্বঃ ১৮❤
.
.
🍁
.
বিকেল ৪ টা বেজে ২৫ মিনিট। বিছানায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছি। শরীরটা খুবই খারাপ। সকাল থেকে জ্বর। তার সাথে এসে যোগ হয়েছে মুড সুয়িং। শুধু শুধু ভীষণ মুড সুয়িং করছে। জানিনা হঠাৎ করে কেন মনটা এতো খারাপ। কালই এক্সাম শেষ হলো। এক্সামের পর কালই তন্নিটার সাথে লাস্ট দেখা হয়েছে। ইভেন তারপর এই পর্যন্ত কোনো কথা হয়নি। ভালো লাগে না কিছুই। আজকাল ভাইয়াটাও সময় দেয় না তেমন। আর উনি তো আছেনই। যতক্ষণ নিজে না থাকবে ততক্ষণ আমাকে শ্রেয়া আপুর কাছে রেখে যাবে। পড়া থেকে উঠলেই উনার ফোন।আর নিজে বাড়িতে ফিরলে নিজে টর্চার। এই কয়েকটা দিনে জাস্ট অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি আমি। এতো প্যারা লাইফে আগে কখনোই পাই নি। এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে বিয়েটাতে অমত করাই আমার জন্য বেটার ছিল। এট লিস্ট এতো প্যারা এতো কষ্ট সহ্য করতে হতো না। আগে করতো মেন্টালি টর্চার এখন শুরু করেছে পড়াশুনা, খাওয়া দাওয়া নিয়ে। জাস্ট বিরক্ত হয়ে গেছি আমি। ভালো লাগে না তার এসব টর্চার। আই নো আমার ভালোর জন্য করে। তাই বলে সারাদিন একটা মানুষ কখনোই পড়তে পারে? ব্রেইনেরও একটা রেস্ট চাই। বাট উনি? না,, উনার মতে আমি রোবট আর আমার ব্রেইন নানারকম যন্ত্রপাতি দিয়ে তৈরি। যে কিনা ২৪ ঘন্টাই চলবে। এটা কোনো সুস্থ মানুষের কথা? মাঝে মাঝে খুব কান্না পায়। আম্মু-আব্বু কেন এমনটা করলেন? কি করেছিলাম আমি? তাদের কাছে কি বোঝা হযে গিয়েছিলাম? আচ্ছা! যখন বোঝাই হয়েছি বিয়েই দিয়েছে এটা ভালো ছেলের সাথেই দিত। এরকম এটা মেন্টালি সিক মানুষের সাথে দেওযার কি ছিল। সত্যি আমি খুব বেশিই বিরক্ত এসবে। বিরক্তির পরিমাণটা এতটাই বেশি যে,, ইচ্ছে তো করে সব ভেঙে গুড়িয়ে দিই। কিছুক্ষণ কান্না করি। এট লিস্ট হালকা হব। আজকাল কান্না করাটাও আমার দোষ। যদি চোখে পানি দেখে শুরু হয়ে যায় তার হাজারটা কথা। সত্যি এগুলো আর নিতে পারছিনা আমি। এর থেকে মরে যাওয়া বোধহয় বেটার আমার জন্য। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে চোখ থেকে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল। সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নিলাম। উদ্দেশ্য ঘুমের দেশে পাড়ি জমানো। কতোদিন ধরে ঘুমোই না একটু। একটু সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখিনা। যেই মেয়েটার স্বপ্ন দেখাই ছিল নেশা সে আজ স্বপ্ন দেখতেই ভুলে গেছে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ভেতর থেকে একটা দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে এলো।
.
স্বপ্নের দেশে পাড়ি জমাবো বলে গায়ে কাঁথাটা টেনে নিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম। সাথে সাথেই ফোনটা বেজে উঠল। মুহূর্তেই আমার রাগ যেন সপ্ত আসমান ছুঁয়েছে। কোনোরকম নিজেকে শান্ত করে ফোনটা হাতে নিলাম। উদ্দেশ্য তন্নি হলে একটু ঝেড়ে মুছে রাগটা কমানো। বাট ঐযে আমার পোড়া কপাল। সবসময়ের মতো এবারও উনি আমার ভাবনায় এক বালতি না না কম হবে এক সমুদ্র পানি ঢেলে দিলেন। ফোনের স্ক্রিনে উনার নামটা দেখে শত চেষ্টার পরেও নিজেকে শান্ত রাখতে পারলাম না। আসলে উনার প্রবলেমটা কি? উনি চায়টা কি? এতোদিন না হয় পরীক্ষার জন্য টর্চার করেছেন। ঘুমোতে দেন নি। তাহলে আজ কেন? উনি কি আমায় আদৌও শান্তিতে থাকতে দিবে না? এভাবে চললে উনার সাথে থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব! জাস্ট অসম্ভব! কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই ফোনটা চোখের সামনে কেটে গেল। এবার ফোনটা সাইলেন্ট মুডে রেখে শুয়ে পড়লাম। কথা বলতে ইচ্ছে করছে না এইমুহূর্তে কারো সাথে। কোথাও একটা যে ভীষণ জ্বলছে। জানিনা কেন! কিন্তু খুব কান্না পাচ্ছে। চোখের কোণে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু জল মুছে নিয়ে পাড়ি জমালাম আমার স্বপ্নের দেশে। যেখানে কোনো কষ্ট নেই। নেই কোনো যন্ত্রণা। সেখানে শুধু সুখ আর সুখ। অসাধারণ সব স্বপ্নের বসবাস। কেউ সেখানে আমায় কষ্ট দেয় না। সবাই সবার মতো। কতটা শান্তির জায়গা। কথাগুলো বিরবির করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
.
______________
.
কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানিনা। তবে কারো হেঁচকা টানে ঘুম থেকে উঠে যাই। হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়ায় বুঝতে পারছি না আমার সাথে ঠিক কি হলো। চোখে এখনও প্রচুর ঘুম। ঘুমু ঘুমু চোখে সামনের মানুষটার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি সে কি বলতে চাইছে। বাট ফলাফল শূন্য। ইনফ্যাক্ট মানুষটাকেও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি না। কিছুক্ষণ বকবক করে আমার কোনো সাড়াশব্দ না পেযে উনি টেবিলের কোণে থাকা পানির গ্লাসটা নিয়ে সম্পূর্ণ পানিটা আমার মুখে ছুড়ে মারে। ঘটনায় চমকে আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি। তাকিযে আছি বললে ভুল হবে। আসলে বুঝতে চাইছি উনি কেন এমনটা করলেন। আমাকে একপ্রকার টান দিয়ে বিছানা থেকে নামিয়ে উনার সামনে দাড় কড়িয়ে আমার দু’বাহু চেপে ধরলেন। চেপে ধরাটা এতোটাই জোড়ে ছিল যে আমি ব্যথায় কুঁকড়ে উঠি। আমি অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলে যাচ্ছি। কি করব আপনারই বলুন? এক্সামের এতোদিন নানারকম টর্চার করলেও কখনো গায়ে হাত তুলেন নি। বকেছে, ঘুমোতে দেয়নি। বাট এভাবে টর্চার করে নি। হয়তো এক্সাম খারাপ হবে তাই এসব করেনি। এখন এক্সাম শেষ আবার শুরু। না জানি আর কি কি সহ্য করতে হয় আমাকে। কেন এমন করলে বাবা। তোমার ছোট্ট প্রিন্সেসটাকে এই জাহান্নামে পাঠালে? কেন? আমার কাঁদতে দেখে উনি বললেন……
.
—– চুপ একদম চুপ। একদম নেকামো করবি না বলে দিচ্ছি।
.
আমি কিছুই বলছিনা। চুপচাপ নিচে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলে যাচ্ছি।
.
—– তোর ফোন কই? তোকে ফোন কেন দেওয়া হয়েছে? বল! ( জোড়ে ধমক দিয়ে)
.
—– আ…আ.. আসলে….
.
—– কি আসলে? হ্যাঁ কি আসলে? কতবার কল করেছি কোনো ধারণা আছে তোর? যদি দরকারের সময় তোর ফোন কাজে না লাগে তাহলে ফেলে দিস। এভাবে টেনশন দেওয়ার মানেই হয় না।
.
—– মা….মানে? কতোবার ফোন দিয়েছেন?
.
—– এই দেখ। নিজেই দেখ….( ফোনটা হাতে নিয়ে কল লিস্টে গিয়ে)
.
ইয়া আল্লাহ! ৯৫ বার কল? এটা কি করে সম্ভব? আমি তো একটু আগেই ঘুমোলাম তাহলে?
.
—- মানুষ ফোন দরকারে ইউজ করে। দরকারের সময় না পেলে সেই জিনিস রেখে কি করে?
.
—- আচ্ছা! স…সরি!
.
—- সরি? সরি মাই ফুট! তোর সরি তোর কাছেই রাখ ডাফার! সকাল থেকে বলছিলি পেতে ব্যথা করছে। জ্বর দেখে গিয়েছিলাম তোর। তোর শরীরের খবর নেওয়ার জন্য এতোগুলো ফোন দিয়ে যখন তোকে না পেলাম তখন বাড়ির নম্বরে ফোন দিলাম রহিমা ধরে বলর কেউ নেই বাড়িতে। সবাই সেই সকালে উত্তরা গেছে মামুর বাড়ি। তোকে যেতে বলেছিল তুই যাসনি। সারাদিনে নাকি রুম থেকে বেরও হসনি। খাসও নি। তাই রহিমাকে বলেছিলাম তোকে বলতে আমাকে ফোন দিতে। বাট ও নাকি প্রায় ৩০/৩৫ মিনিট যাবৎ দরজা নক করেও তোর সাড়াশব্দ পায়নি। কথাটা শুনে আমি কতটা ভয় পেয়েছি জানিস? কোনো ধারণা আছে তোর কতটা টেনশনে ছিলাম? ১ঘন্টার রাস্তা ৩০ মিনিটে এসেছি। ভাগ্য ভালো যে ছিটকিনিটা না লকটা দিয়েছিলি আর ডুবলিকেট চাবিটা আমার সাথেই ছিল। রুমে ঢুকে তোকে যখন এভাবে শুয়ে থাকতে দেখলাম ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আরও বেশি। বাট যখন দেখলাম তুই হালকা নড়েচড়ে উঠলি তখনই আমার ভয়টা রাগে পরিণত হলো।
.
এইটুকু বলে থামলেন উনি। ঠিকই তো মানুষটা তো ভুল কিছু বলেন নি। আমি একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি। সকালে ঘুমের ঔষধ খেয়েছিলাম মনেই তো নেই। তাইতো এভাবে মরার মতো ঘুমিয়েছি। ইনফ্যাক্ট এখনো ঘুম পাচ্ছে ভীষণ। কোনোরকম ভয়ে ভয়ে বললাম…..
.
—- আচ্ছা সরি! আর হবে না প্রমিজ। (নিচু স্বরে)
.
উনি কিছু বললেন না। রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন। আর আমি উনার যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবারও শুয়ে পড়লাম। ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। আজ ঘুমোবো। শুয়ে চোখটা বন্ধ করতেই উনি কোথা থেকে এসে আরেক দফা চেঁচিয়ে উঠলো…..
.
—- আলো! আবার শুয়েছিস? ওঠ খাবি।
.
—- আমি এখন খাবো না। ঘুমোবো। ভীষণ ঘুম পাচ্ছে আমার।
.
—- কানের নিচে ঠাটিয়ে একটা দিলে ঘুম পালাবে। তাড়াতাড়ি ওঠ।
.
—- আমি খাবো না।
.
—- খাবার খাবি নাকি মার?
.
—- কোনোটাই না।
.
—- ওকে দেন,, আইসক্রিমও পাবি না।
.
আইসক্রিমের কথা শুনে আমার ঘুম দৌড়। আইসক্রিম ! লাফ দিয়ে শোয়া থেকে উঠে উত্তেজিত হয়ে বলি…..
.
—- আইসক্রিম দিবেন আমায়?
.
—- হুম দিব।
.
—- তাড়াতাড়ি দিন।
.
—- একশর্তে দিব। যদি খাবার খাস?
.
—– এ্যা….?
.
—– এ্যা না হ্যাঁ। এখন বল খাবি কিনা?
.
কি আর করার খাটাশটার শর্তে রাজি হযে গেলাম। অবশেষে নিজের হাতে খাইয়ে দিলেন আমায়।
.
রাত ১১টা বেজে ১৫ মিনিট…….

#চলবে……..

[রি-চেইক করা হয়নি ভুলক্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাইকে শুভ রাত্রি। ধন্যবাদ❤।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here