পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤ #লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤ #পর্বঃ ১৯ ❤

0
676

#পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤
#পর্বঃ ১৯ ❤

______________
.
রাত ১১ টা বেজে ১৫ মিনিট। পশ্চিম দিকে মুখ ছাঁদের কার্ণিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছি। পড়নে একটা সাধা স্কার্ট, নীল টপস আর গলায় পেঁচিয়ে রাখা ওড়না বা হাতে এক মুঠ নীল কাচের চুরি। চুরি আমার খুব প্রিয় তাই অলটাইম আমার এক হাত ভর্তি করে চুরি থাকে। পশ্চিম দিকে মুখ করে থাকায় বারবার দক্ষিণা শীতল বাতাস আমার খোলা চুলগুলো এলোমেলো করে বারবার মুখের উপর পড়ছে। আমি ঠিক করছি আর বাতাস এলোমেলো করছে। ঘটনায় চরম থেকে চরম বিরক্ত আমি। ইচ্ছা তো করছে চুলগুলো টেনেটুনে ছিঁড়ে ফেলি । বেদ্দপ চুল একটু শান্তিতে থাকতে দেবে না নাকি? হঠাৎ মনে হলো পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। মনের ভিতর একটা ভয় কাজ করল। ভুত প্রেত না তো? এখন কি হবে ? আমার ঘাড় মটকে দিলে? কে বলেছিল উনার সাথে না গিয়ে একা একা এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে? আল্লাহ আমারে বাঁচাও প্লিজ! আর জীবনেও এতো রাতে একলা ছাঁদে আইতাম না। এহন কি করমু ? আল্লাহ ফেরেশতা পাঠাও আমারে বাঁচাও প্লিজ । চোখ বন্ধ করে বিরবির করছিলাম। হঠাৎ পরিচিত কোনো কন্ঠ স্বরে পেছনে ফিরে তাকালাম…..
.
—- আপনি ?
.
—- কেন তুই কি অন্য কাউকে ভেবেছিলি ?
.
—- আমাকে ভয় দেখানোর মানে কি?
.
—- আমি তোকে ভয় দেখালাম কখন ?
.
—- এভাবে চুপচাপ পেছনে এসে দাঁড়িয়ে থাকার মানে কি? এতে যে কেউই ভয় পাবে !
.
—– তা তুই ভয় পাওয়া শুরু করলি কবে থেকে ? কে যেন বলেছে আমি ভয় পাই না ?
.
—– কে আবার আমি ।
.
—– সিরিয়াসলি?
.
—- কোনো সন্ধান আছে ?
.
—- অবশ্যই! ভয় পাসনা দেখেই তো বিরবির করছিলেন। “আল্লাহ আমারে বাঁচাও। আর ছাঁদে আইতাম না” এগুলো আমি বলছি?

—- হ্যাঁ,। আপনি তো আস্ত এক ভীতু ।
.
—- কি বললি?
.
—- ভীতু বলছি।
.
—- ওকে থাক তাহলে সাহসী নারী। আমি ছাঁদের দরজা বাহির থেকে লক করে দিই কেমন ?
.
—- এ্যা..
.
—- এ্যা না হ্যাঁ। টাটা!
.
—– এই দাঁড়ান শুনেন না। যাইযেন না প্লিজ । আমারে নিয়ে যান ।
.
কে শুনে কার কথা। এতো ডাকার পরেও শুনলো না। অবশেষে সে দরজা লক করে দিয়ে খাটাশটা চলেই গেল। এখন কি হবে ? আম্মু আব্বু কেউ বাড়িতে নেই সারা বাড়িতে আমরা ৩ জন। ফোনটা আনলে রহিমাকে কল করতে পারতাম। এখন কি হবে? কিভাবে বের হবো? যদি সত্যিই ভুত চলে আসে ? ভাবতেই কান্না পাচ্ছে আমার। শুধু কান্না না মরা কান্না! কে বলেছে উনার সাথে লাগতে? উনার সাথে কোনো কালেই পারিনা আমি। আর ভবিষ্যতেও পারব না। এখন ইচ্ছা করছে খাটাশ, লাল বানর,ইদুর,তেলাপোকা, টিকটিকি, কালো কুমির,হনুমান , সাপের নানা,বিচ্ছুর দাদা,হাতির বাপরে। ভুতের খাদ্য বানাই। ছাঁদ থেকে ধাক্কা দিয়া ফালাই। সামনে পাইলে বুড়িগঙ্গার পঁচা পানিতে চুবামু সালা তোরে দেইখা লইস হুহ….!
.
এতো কান্নাকাটি করার পরেও নিষ্ঠুর বনমানুষটার দয়া হলো না। অবশেষে কাঁদতে কাঁদতে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
.
🍁
.
সূর্যের তেজস্ক্রিয় রশ্মি চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেল। পিটপিট করে চোখ খুলে বোঝার ট্রাই করছি আমি ঠিক কোথায় আছি? চোখ খুলে উপরে ছাঁদ দেখে এক প্রকার লাফিয়ে উঠলাম আমি। একি আমার উপর তো খোলা আকাশ ছিল। তাহলে ছাঁদ এলো কি করে? তার মানে ভুত আমাকে ওর সাথে নিয়ে এসেছে? আমি আর আম্মু আব্বু কাছে যেতে পারব না? কথাগুলো ভাবতেই কান্না পাচ্ছে। এরই ভিতর কেউ দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করল। সাথে সাথে সূর্যকে দেখে মনে হলো ৪৪০ ভোল্টের শক খেলাম। ভুত আমাকে সাথে আনলে উনি কেন? হঠাৎ করে দরজার পাশের দেয়ালে রাখা সূর্যের ছবির দিকে চোখ যেতেই আমার মাথায় খেলে যায় এটা তো খাটাশটার রুম। কিন্তু কথা হলো আমি এখানে কি করে এলাম? আমি তো ছাঁদে ছিলাম। ভাবনার মাঝেই খাটাশটা চেঁচিয়ে উঠলো….
.
—– এইযে মহারানী কয়টা বাজে বেলা? একটা মানুষ এতোক্ষণ ঘুমোয়? নামাজও পড়িস নি।
.
—– কয়টা বাজে ? আমাকে না ডাকলে নামাজ পড়ব কি করে?
.
—– মানেহ? তুই জানিসই না তোকে আমি ডেকেছি?
.
—– আপনি আমায় ডাকলে তো জানবো।
.
—– ৩০ মিনিট ধরে ডাকছি। অবশেষে কে বলেছে আমাকে ডাকবেন না। একটু ঘুমোই। মানুষ এতো কেমনে ঘুমায়? আল্লাহ! আমারে উঠাইয়া নাও।
.
—– আমিন।
.
—– চুপ বেয়াদপ মেয়ে! দেব এক ঠাটিয়ে । স্বামীর মৃত্যু কামনা করে ।
.
—– আমি কখন আপনাকে মরতে বললাম ? আমি তো আমিন বললাম। জানেন না কেউ কোনো দোয়া করলে আমিন বলতে হয়?
.
—– এই একদম চুপ ডাফার! সারারাত নাক ডেকে ঘুমিয়ে এখর আসছে আমিন বলতে। রাতে আমার কতটা জ্বর ছিল জানিস? এতটা জ্বর নিয়েও তোর মাথা টিপে দিতে হয়েছে।
.
—– কিহ?? কখন? আপনি আমার মাথা কেন টিপবেন? আমি বলেছি টিপতে?
.
—– মানেহ? তোর কিচ্ছু মনে নেই কাল রাতে কি হয়েছে?
.
—– কিছু হলে তো মনে থাকবে।
.
—– এই তুই ঠিক আছিস তো? ভুলভাল কিছু খাস নি তো?
.
—– মানেহ? আমি কি খাবো ?
.
—- কাল রাতে তোকে ছাঁদ থেকে কোলে তুলে আনার সময় তুই আমার গালে কিস করেছিস সেটাও ভুলে গেছিস ?
.
—– এ্যা,,, আমি কখন কিস করলাম?
.
—– আল্লাহ মানুষ নাকি এভাবে ঘুমোয়! কি করেছে কিচ্ছু মনে নেই এই মেয়ের। মাঝ রাতে মাথা ব্যথায় চেঁচিয়ে আমাকে ঘুম থেকে তুলেছে কে? তারপর কে বলেছে আমার মাথাটা একটু টিপে দিন না?
.
আমি কিছু বলছিনা৷ চুপচাপ শুনছি আর মুখ টিপে হাসছি। আসলে আমার সবই মনে আছে। শুধু ঘুম থেকে উঠার পরে ঠিক মনে করতে পারছিলাম না কিভাবে কখন ঘরে আসলাম। বাট পরে সবই মনে পরে যায়। শুধু শুধু খাটাশটাকে পাগল করার বুদ্ধি । কাল রাতে আমাকে ছাঁদে লক করেছে তার শাস্তি । আমাকে চুপ থাকতে দেখে আবার বলল……
.
—– সত্যি তোর কিচ্ছু মনে নেই আলো?
.
—– কি মনে থাকবে ভাইয়া ?
.
—- ভাইয়া! কে তোর ভাইয়া?
.
—- আপনি ভাইয়া।
.
—- আমি তোর ভাইয়া হলাম কবে?
.
—- কেন ভাইয়া? যেদিন বড় আব্বুর ছেলে হয়েছেন ঐদিনই।
.
—- মানে কি বলছিস এসব?
.
—- কই কি বললাম ভাইয়া?
.
—- আলো তুই সত্যিই পাগোল হয়ে গেছিস?
.
—- পাগল হয় কিভাবে ভাইয়া?
.
—- উফহ্ অসহ্য! এতো ভাইয়া ভাইয়া করছিস কেন ?
.
—- তো কি বলব ভাইয়া? ভাইয়াকে কি আপু বলে ?
.
—- ধুর থাক তুই। তোর সাথে থাকলে আমিও পাগল হয়ে যাবো। অদ্ভুত!
.
কথাটা বলে উনি বেড়িয়ে গেলেন। উনি যাওয়া মাত্রই আমি হাসিতে ফেটে পড়লাম। ইশ! হাসি থামছেনা কেন রে? আল্লাহ! একটু রেস্ট করে নিই। হাসিটা কমিয়ে দাও। আর হাসতে পারছিনা। ইশ! কি পরিমাণ পাগলই না বানালাম। ব্যাটা খাটাশ! শিক্ষা হলে আর আমার সাথে লাগতে আসবি না।
.
হঠাৎ কেউ একজন দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে এলো। মানুষটিকে দেখে আমার জান যায় যায় অবস্থা। এখন আমার কি হবে?

#চলবে…..

[#বিঃদ্রঃ সরি গাইস একটু লেট হওয়ার জন্য। রি-চেইক করা হয়নি। ভুলক্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ ❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here