#পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤
#পর্বঃ ১৫❤
.
.
🍁
.
আজ প্রায় ৬ দিন হলো উনাকে ইগনোর করছি। সাধারণ ইগনোর নয় চোখে লাগার মতো ইগনোর করছি। উনার থেকে একশো হাত দূরে থাকছি। যেখানেই উনাকে দেখছি সেখান থেকেই চলে আসছি। গত ৩ দিন তো টোটালি দেখা হচ্ছে না আমাদের। যদিও আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে উনাকে দেখতে পারছিনা। ঝগড়া করতে পারছিনা। ভীষণ মিস করছি এসব কিছু। কিন্তু ইগো বলে একটা শব্দ আছে না? আমার আবার ইগোটা বেশি। কিন্তু আমার কাছে এটা যথেষ্ট। একটা মানুষের আর কিছু থাক বা না থাক সেল্ফ রেস্পেক্টটা থাকা প্রয়োজন। আর আমার এই জিনিসটা যথেষ্ট আছে। তাইতো শত কষ্টের পরেও বুকে পাথর বেঁধে উনাকে ইগনোর করছি। উনি আমাকে এতো অপমান করেছে তারপরেও কেন যেয়ে চেয়ে উনার কাছে নিজেকে ছোট করব। বার বার নিজেকে মহৎ প্রমাণ করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। এটা তো কোনো কালেই আমি করব না। দু’দিন বাদে এক্সাম শুরু পড়াশুনা নিয়ে অনেক টেনশনে আছি। অনেকটা পিছিয়ে গেছি। না জানি রেজাল্ট কি হয়? খুব ভয়ে আছি। রেজাল্ট যদি খারাপ হয় আমার মেডিকেলে চান্স পাওয়া অসম্ভব! কি করব মাথা কাজ করছে না।
.
রাত ১০ টা বেজে ২২ মিনিট। সবাই খাবার টেবিলে বসে আছি। কিছুক্ষণের মাঝেই সবাই খাওয়া শুরু করলেন। এক প্তাস পরে আজ উনাকে দেখলাম। মুখটা কতটা শুকিয়ে গেছে। মনে হয় কতটা রাত নির্ঘুম কাটিয়েছে। চুলগুলো এলোমেলো। চোখ লাল। দেখে খুব মায়া হচ্ছে। আচ্ছা! উনি কি আপুর জন্য এখনও কাঁদেন? আমি খুব স্বার্থপর। কতো সুন্দর নিজের রাগটা বাঁচানোর জন্য একটা মানুষকে একা করে দিলাম। আমি ছাড়া উনি আগের জীবনে ফিরতে পারবে না জানার পরেও আমি কীভাবে উনাকে আবার সেই কালো অন্ধকারে ঠেলে দিলাম? ছিঃ আমি কতটা বাজে মেন্টালিটি বহন করি। আমি উনাকে বলছি চিপ মেন্টালিটি বহন করে। বাট আমি তো তার থেকেও বাজে। না আজ থেকে যাই হোক ওনার সাথেই থাকব। শুধু আর শুধুই উনার সাথে থাকব। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই চোখ থেকে দু’ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ল। কারো চোখে পড়ার আগেই পানিটা মুছে নিলাম। খাবারের প্লেটটা সরিয়ে উঠে যেতে নিলে পাশ থেকে কেউ একজন আমার বা হাতটা চেপে ধরে। ঘটনায় চমকে পেছনে তাকাতেই চোখ যেন আমার কপালে উঠে যায়।
.
একি উনি আমার হাত চেপে ধরেছেন? এতো কিছুর পরেও উনি আমার উপর রেগে নেই? মানুষ এতটা ভালো কি করে হয়? এতো কিছুর পরেও উনি আমার হাত ধরলেন? উনার জায়গায় অন্যকেউ হলে কি আদৌও পারতো? হয়তো হ্যাঁ নয়তো না! আমার ভাবনার মাঝেই উনি বলে ওঠেন…….
.
—– খাবার ছেড়ে কোথায় যাচ্ছিস?
.
—– খেতে ইচ্ছে করছে না। খাব না।
.
—– তুই বস আমি চলে যাচ্ছি।
.
—– একি আপনি যাবেন কেন?
.
—– এমনি। তুই খেতে বস।
.
—– না আপনি গেলে আমি খাবো না।
.
—– কেন?
.
—– এমনি!
.
—– চুপচাপ খেতে বলেছি আলো।
.
—– আপনি খেতে বসুন আগে।
.
উনি বসে আমাকে আরো এক দফা চমকে দিয়ে আমার চেয়ার টা উনার আরো কাছে টেনে নিলেন। আমাকে চেয়ারে বসিয়ে প্লেটটা হাতে তুলে নিয়ে আমার মুখে খাবার পুরে দিতে দিতে বড় আব্বুকে উদ্দেশ্য করে বললেন……
.
—- বাবা পরশু থেকে ওর এক্সাম শুরু।
.
—– হু তাতো ভালো কথা। তা আম্মু তোর প্রস্তুতি কেমন?
.
বড় আব্বুর কথা শুনে আমার খাবার আমার নাকে উঠে গেছে। কি বলবো? আমি তো টেনশনেই শেষ। ফাজিল পোলা বাঁশ দিতে হাজির😡। এহনই এসব কথা তুলতে হলো? তোরে তো আমি বুড়িগঙ্গার পঁচা পানিকে চুবাবু অসভ্য ছেলে। আমার মতে মাসুম একটা বাচ্চারে কতো ভালো ভালো বাঁশ দেস😡? তুই বউ পাবি না। বউ বিয়ার দিন পেত্নীর ঘাড় মটকানী খাইবো। হুহ😤। আল্লাহ আমি কিন্তু আপাতত উনার বউ না। তাই আমার উপর কথাটা প্রয়োগ কইরো না। আমিন। বড় আব্বুর ডাকে টলমল চোখে তাকালাম……
.
—– আলো আম্মু!
.
—— বড় আব্বু! আমি মেডিকেলে চান্স পাবো তো?
.
—– অবশ্যই! কেন পাবে না? আমার আম্মুটা অবশ্যই চান্স পাবে।
.
—– বড় আব্বু আমার রেজাল্ট যদি খারাপ হয়?
.
—– এগুলো বলতে নেই আম্মু। তোমার রেজাল্ট অনেক ভালো হবে। আর তুমি ভালো একটা মেডেকিলে চান্স পাবে। এমনকি ভালো একজন ডক্টর হবে।
.
—– সত্যি বড় আব্বু!
.
বড় আব্বু কিছু বলার আগেই উনি বলেন……
.
—– অবশ্যই! এখন খাবারটা শেষ করে রুমে চল। পড়াতে বসাবো।
.
—– আমার আর ক্ষুধা নেই তো। ( টলমল চোখে)
.
—– তাহলে সারারাত এখানেই বসে থাক কেমন?
.
—- মানে 🥺🥺?
.
—– খুব ইজি। তুই খেলেই এখান থেকে উঠতে পারবি। নয়তো না।
.
এবার যেন আমি কেঁদেই দিব। সবাই মুচকি আসছে উনার কান্ড দেখে। প্রতিবারের মতো এবারও হার মানতে হলো উনার কাছে। অবশেষে সবটা খাবার খাইয়েই ছাড়ল। অসভ্য,বান্দর, সাদা বিলাই,লাল হনুমান,কালো কুমির,খাটাশ, বিচ্ছু,ইদুর তোরে তো আমি সাত তলা থেকা ধাক্কা দিয়া ফালামু।
.
🍂
.
রাত ১২ টা বেজে ২০ মিনিট। উনি লেপটপে কাজ করছেন। আর আমি খাটে বসে ঝিমুচ্ছি। প্রচুর ঘুম পাচ্ছে। একটু আগেই যুদ্ধ হয়েছে।
ফ্লাসব্যাক……
.
রুমে এসেই সোজা বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই উনি দৌড়ে এসে আমাকে টেনে হিঁচড়ে তুললেন। মনে হয় মহা অন্যায় করে ফেলছি।
.
—– একি এভাবে টেনে তুললেন কেন? আমি খুব টায়ার্ড। একটু রেস্ট নিতে দিন প্লিজ!
.
—– এমুহূর্তে কোনো রেস্ট নেওয়া হবে না। আগে পড়া কমপ্লিট কর দেন রেস্ট।
.
—– আরে ভাই আমি তো বলিনি পড়ব না। পড়ব আগে রেস্ট নিয়ে নিই প্লিজ! নাহলে একটুও পড়তে পারব না।
.
—— আমি তোকে এখন রেস্ট নিতে দিই আর তুই ঘুমা তাই না?
.
—— মানুষ এতটা নিষ্ঠুর কি করে হয় বলুন তো? আপনি খুব পঁচা!
.
—– হ্যাঁ,, আমি জানি আমি পঁচা৷ এবার পড়তে বয়। নয়তো সারারাত জাগিয়ে রাখব।
.
—– আচ্ছা বসছি। কিন্তু আপনি নিচে আমার সাথে ওরম করলেন কেন?
.
—— আমি আবার কি করলাম?
.
—– কেন জানেন না? আপনি সবার সামনে আমাকে আমাকে খাইয়ে দিলেন কেন? সবাই কি ভাবছে বলুন তো?
.
—– যার যা ইচ্ছা ভাবুক। আমার কি? আমার যেটা মনে হয়েছে ওটাই করেছি। এখন তুই পড়বি সব কথা পরে।
.
অবশেষে উনার অত্যাচারে বাধ্য হয়ে বই নিয়ে বসে পড়লাম। আর উনি ল্যাপটপ নিয়ে আমার পাশে বসে পড়লেন।
.
পড়তে পড়তে বইয়ের উপরই শুয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ কারো হেঁচকা টানে ঘুম ভেঙে গেল। ঘটনায় হকচকিয়ে আমি ঘুমু ঘুমু চোখে তাকাতেই সেই চিরচেনা মুখটি দেখতে পেলাম। সূর্য কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি ঘোর ধরা গলায় বললাম…..
.
—– কি হয়েছে এভাবে টেনে তুললেন কেন? এখনো সকাল হয়নি। একটু ঘুমোই প্লিজ!
.
সাথে সাথেই উনি ধমকে উঠলেন। উনার ধমক শুনে যেন আমার ঘুম পাখি উড়ে পালিয়েছে।ভীতু স্বরে বললাম…..
.
—— এভাবে আমার মতো একটা মাসুম বাচ্চাকে ধমকাচ্ছেন কেন?
.
—— কিচেনে চল!
.
—- মানেহ? এতো রাতে কেন?
.
—– কফি খাবো।
.
—- আপনি এতো রাতে কফি খাওয়ার জন্য আমার ঘুম ভাঙিয়েছেন?
.
—- জ্বী না ম্যাডাম। আপনাকে নিয়ে ছাঁদে যাবো। কফি খেতে খেতে একটু হেঁটে আসবেন ঘুম উধাও। তখন ভালো পড়া হবে।
.
—– এ্যা 🥺
.
—– এ্যা না হ্যাঁ। কুইকলি চল। পড়া কমপ্লিট করতে হবে।
———————
রাত প্রায় ২ টো। পশ্চিম দিকে ছাঁদের কার্ণিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছেন উনি। আমি এতোক্ষণ দোলনায় বসেছিলাম। বেশকিছুক্ষণ ধরে দেখছি উনি কিছু একটা ভাবছেন। উনার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে কাঁধে হাত রাখতেই উনি ফুপিয়ে উঠলেন। সাথে সাথে আমাকে একটানে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন। হঠাৎ এমর ঘটনা ঘটবে আমি ভাবতে পারিনি। এখনো মনে হচ্ছে একটা ঘোরের মাঝে আছি। বিয়ের পরে এই প্রথম উনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। আমি কি করব বুঝে উঠতে পারছিনা। ভয়ে ভয়ে হালকা করে উনার পিঠে হাত রাখতেই আমাকে নিজের সাথে আরো শক্ত করে চেপে ধরলেন। আমি কি করব বুঝতে পারছি না। আমি কিছু বলার আগেই উনি আমাকে আরো কয়েক দফা চমকে দিয়ে বললেন…….
.
—— আম রিয়ালি সরি আলো। আমি তোর সাথে এতোদিন খুব অন্যায় করেছি। প্লিজ ক্ষমা করে দে। প্লিজ আর আমার থেকে দূরে থাকিস না। সহ্য হয় না আমার। বিশ্বাস কর আমার এসব ভালো লাগছে না। বল না তুই রাগ করিসনি। প্লিজ বল! ( কাঁদতে কাঁদতে)
.
—– আমি রাগ করিনি। আর কখনো যাবোনা আপনাকে ছেড়ে। প্লিজ শান্ত হোন!
.
উনি আমাকে ছেড়ে গিয়ে পশ্চিম আকাশের দিকে ঘুরে দাড়িয়ে তারা গুনতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
.
বেশকিছুক্ষণ নীরবতা কাটিয়ে বলে উঠলেন……
.
—– চল চোখে এখন ঘুম নেই পড়তে হবে।
.
—- এখনই🥺। প্লিজ!
.
—-না এখনই
.
সালা তুই ভাঙবি মচকাবী না? তুই কখন কি কস নিজেই জানস না? তোরে উষ্টা দিয়া উহান্ডা পাঠামু। হুহ😤
#চলবে……..
[ রি-চেইক করা হয়নি ভুলক্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাইকে শুভ রাত্রি। ধন্যবাদ ❤]