#পারব না আমি ছাড়তে তোকে ❤❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤
#পর্বঃ ২৭❤
.
.
🍁
.
জানালার পর্দা ভেদ করে আসা কড়া রোদে ঘুম ভেঙে গেল। আড়মোড়া দিয়ে উঠে বসলাম। বেড সাইড থেকে ফোনটা হাতে নিতে স্ক্রিনে তাকাতেই চোখ যেন আমার কপালে। ওয়াট! দুপুর ১২টা বেজে ৫০ মিনিট ? আমি এতোক্ষণ ঘুমালাম। আর উনি আমায় ডাকলেন না? আশ্চর্য! আচ্ছা উনিই বা কই? সেই সকাল ৬টায় ছাঁদ থেকে নিয়ে এলো। এনে খাইয়ে মেডিসিন দিযে বাচ্চাদের মতো ঘুম পাড়িয়ে দিলেন। তারপর আমাকে একা রেখে কই গেল? আমাকে একা বাড়িতে রেখে আবার গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঘুড়তে গেল না তো ? যদি সত্যিই এমন হয় তাহলে আজকে ওনার একদিন কি আমার একদিন! হুহ!
মনে মনে বিরবির করে বিছানা থেকে নেমে গেলাম। রুম থেকে বেড়িয়ে একে একে প্রতিটা রুম খুঁজতে লাগলাম। উদ্দেশ্য যদি না পাই তাহলে আজকে তার খবর আছে!
.
প্রতিটা রুম খুঁজে আমি ক্লান্ত প্রায়! একে তো জ্বরের শরীর তার উপর এতো বড় বাড়িতে একটা মানুষকে খোঁজা অসম্ভব। কিন্তু তবুও তো কষ্ট করে খুঁজলাম৷ বাট তাতেও আর লাভ কই হলো? পেলম তো আর না! কথাগুলো ভেবে ফুঁসতে ফুঁসতে রুমের দিকে পা বাড়াতেই রান্না ঘরের থেকে বাসনপত্রের শব্দ পেলাম। কিছুক্ষণ ওখানেই দাঁড়িয়ে থেকে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করলাম। অবশেষে কিছু না বুঝতে পেরে সিড়ির দিকে পা বাড়ালাম। সিড়ি পার হয়ে রান্না ঘরের দরজায় পা রাখতেই কারো সাথে খুবে জোড়ে এক ধাক্কা খেয়ে পড়তে নিলে সামনের ব্যক্তি আমায় সামলে নিলেন। সামনের থাকা মানুষটিকে দেখে আমি ৪৪০ ভোল্টের শক খাই। সামনের মানুষটি আর কেউ না। সূয! কিন্তু আমি এটা দেখে মোটেও শিহরিত নই! আমি তো শিহরিত তার লুক দেখে! কারণ উনাকে দেখে মনে হচ্ছে যেন আটা দিয়ে গোসল করছে ! উনার এই অবস্থা দেখে আমি এই মূহুর্তে ঠিক কি রিয়েক্ট করব বুঝতে পারছি না। বেশ কিছুক্ষণ এভাবে “থ” মেরে উনার দিকে তাকিয়ে থেকে হুট করেই হাসিতে ফেটে পড়লাম। আমার এই হাসির কারণ হয়তো উনার কাছে স্পষ্ট হলো না।
.
—- কি হয়েছে? এভাবে হাসছিস কেন?
.
আমি এখনও হেসেই যাচ্ছি। একদম হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়া টাইপ হাসিতে ফেটে পড়েছি। উনি আমার কোনো উত্তর না পেয়ে কিছুটা ধমকের সুরে আবার প্রশ্ন করলেন।
.
—- হাসছিস কেন? বল আলো!
.
আমি কোনোমতে হাসি কন্ট্রোল করে বললাম…
.
—- সাদা ভুত!
.
এইটুকু বলে আবার হাসিতে ফেটে পড়লাম। উনি এখনও কিছু না বুঝে সোজা ড্রইং রুমে গিয়ে টিবিতে নিজের মুখ দেখে একবার আমি তো একবার টিবিতে দেখা নিজের প্রতিচ্ছবিটার দিকে তাকাচ্ছে। বের কয়েক বার এভাবে তাকিয়ে উঠে এসে আমার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে বললেন…..
.
—- হাসির কি এখানে?
.
—- কই কি?
.
—- তাহলে এভাবে হাসছিস কেন?
.
—- আপনাকে সাদা বিলাইয়ের মতো লাগছে ।
.
এইটুকু বলে আমি আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালাম না। কারণ ওখানে দাঁড়ালে… থাক বাকীটা বলা যাবে না। মান সম্মানের ব্যাপার!
.
_______________
.
বিকেল ৪টা বেজে ২৫ মিনিট! পশ্চিম দিকে ছাঁদের কার্ণিশ ঘেঁষে দাড়িয়ে আছি। বৈশাখ মাসের আর মাত্র কটা দিন আছে। সাধারণত এমাসেই কালবৈশাখী হয়ে থাকে। সারাদিন আকাশ ভালো হুট করেই কাশে জমে যায় একগুচ্ছ কালে মেঘ। সাথে সাথেই প্রকৃতি জানান দেয় কাল বৈশাখী হতে চলেছে। আজও তার কম কিছু হয়নি। সকাল থেকেই তো কড়া রোদ ছিল। কিন্তু হুট করেই আকাশটা কেমন যেন গুমোট ভাব ধরল। কালো মেঘে ছেয়ে আছে আকাশ! থেকে থেকেই দূর আকাশের মেঘেরা গর্জে উঠছে। প্রকৃতি জানান দিচ্ছে আজ সেই কাল বৈশাখী হতে চলেছে। সবকিছু তছনছ করে দিতে আসছে সে! যেকোনো মুহূর্তেই শুরু হবে মুশল ধারে বৃষ্টি। বারে বারে বয়ে চলা দমকা হাওয়া খোলা চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে। প্রকৃতিও কতটা ক্ষিপ্ত! আচ্ছা! প্রকৃতিরও কি কারো সাথে ঝগড়া হয়েছে? যার কারণে এতোটা ক্ষিপ্ত সে! নাহ্! জানিনা তো! হয়তো হয়েছে! নয়তো না!
.
অনেকদিন যাবৎ বৃষ্টিতে ভেজা হয়না। আজ একটু ভিজব। ইশ! আজ অনেকদিন পর ভিজব। যদিও এই ঝড়ের মাঝে বৃষ্টিতে ভেজাটা দুষ্কর! তবুও একটু ভিজতে পারতাম। কিন্তু সূর্যই তো দিবে না। যদি জানে জ্বর নিয়ে ভিজেছি? আমার কপালে দুঃখই আছে! একটু আগে আমাকে খাইয়ে রেখে বাহিরে গেছে। কি যেন কাজ আছে বলল। এইদিকে আম্মু, বড় আম্মু ওনারা সবাই আজ ফিরবে। অনেক কাজ বাকী আছে নাকি। বিয়ের আর এক উইক বাকী আছে। আজ ২০ তারিখ। আগামী ২৭ তারিখ বিয়ে। ২৩ তারিখ থেকে সব ফাংশন শুরু হবে। অন্যদিকে সূর্য বলেছেন ২/১ দিনের ভিতর ভালো একটা কোচিং দেখে এডমিট করে দিবে। যেহেতু মেডিকেলে চান্স পেতে হবে সেহেতু ভালো একটা কোচিং সেন্টারে পড়তে হবে। অনেকটা কষ্টও করতে হবে। উনার এই কথা শুনে ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ! এর কারণও আছে বটে!কারণ এইচএসসির আগে উনি যেই পরিমাণ টর্চারটাই না করেছে। এখন না জানি আবার কি টর্চার শুরু করে ! কথাগুলে ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো।
.
হঠাৎ করেই শুরু হলে প্রবল বাতাস। সাথে মুশুল ধারে বৃষ্টি! আমি তো সেই খুশি! মেঘ না চাইতেই জ্বল! উফ! কি সুন্দর বৃষ্টি! আমি খুব সুন্দর উপভোগ করছিলাম। কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হলো না।
.
হুট করেই কার হেঁচকা টানে পেছনে ঘুরতেই সাথে সাথেই গালে ঠাস করে একটা চড় পড়ল। ঘটনায় আমি চড়ম আকষ্মিক! তার থেকে বেশি ভীতু বুনে গেছি। কারণ সামনের মানুষটি আর কেউ না। সূর্য! ওনার জায়গায় অন্য কেউ হলে একটার জায়গায় ১০টা দিতাম। কিন্তু উনিই দুনিয়ার একমাত্র মানুষ যাকে আমি ভীষণ ভয় পাই। আমি কিচ্ছু বলছিনা! চুপচাপ দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছি। আমি খুব ব্যথা পেয়েছি চড়টাতে। কিন্তু তাতে কোনো আপত্তি নেই। স্বামী হিসেবে একটা নয় ১০টা মারার রাইট আছে তার। কিন্তু তাই বলে এভাবে কোনো কারণ ছাড়া মারবে? আবার আমার গায়ে হাত তুলল? তাও বিনা দোষে? আজ আবার অসহায় মনে হচ্ছে নিজেকে। বড্ড বেশিই অসহায়! কথাগুলো ভাবতেই ফুপিয়ে উঠলাম। আমাকে ফুপাতে দেখে উনি বলল…..
.
—- একদম চুপ! তোর এই নেকা কান্না আমার কিচ্ছু করতে পারবেনা। কি চাস তুই? হ্যাঁ! কি চাস?
.
আমি এখনও কাঁদছি! আমার কোনো উত্তর না পেয়ে উনি আবার বললেন….
.
—- শাটাপ! আমি বলেছি চুপ করতে? (চেঁচিয়ে)
.
ওনার ধমক শুনে আমি চমকে উঠি। কোনো রকম নিজেকে চুপ করানোর বৃথা চেষ্টা করেও কোনো লাভ হলো না। হেঁচকি তুলে যাচ্ছি। উনি এবার পাশের ফুলের টপটাতে জোড়ে লাথি দিয়ে ফেলে চেঁচিয়ে উঠলেন।
.
—- তুই কি আমার কথা বুঝিস না? চুপ করতে বলেছি। ড্যামড!
.
উনাকে এতোটা রাগতে দেখে ভীষণ ভয় লাগছে আমার। কিন্তু ওনার এতোটা রাগের কোনো কারণই আমি খুঁজে পাচ্ছি না।
.
—- আজকে থেকে তোর ছাঁদে আসা বন্ধ।
.
—- মানেহ?
.
—- আমি যা বলেছি তাই! আই ডোন্ট হিয়ার আ সিঙ্গেল ওয়ার্ড এবাউট দিস!
.
এইটুকু বলে আমাকে নিয়ে টানতে টানতে রুমে চলে এলেন!
#চলবে……..
[#বিঃদ্রঃ জানি ছোট হয়েছে। তাই সরি জানিনা কি লিখছি। মাথা কাজ করছে না। যা মনে এসেছে লিখেছি। কয়েকদিন পার্টগুলে একটু ছোট হবে। প্লিজ মানিয়ে নেবেন। রিচেইক করা হয়নি ভুলক্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ ❤]