বৃষ্টি_থামার_পরে পর্ব ৩০: #ভালোবাসি_কেন_বোঝোনা! লেখিকা: #Lucky_Nova

0
350

গল্পের নামঃ #বৃষ্টি_থামার_পরে
পর্ব ৩০: #ভালোবাসি_কেন_বোঝোনা!
লেখিকা: #Lucky_Nova

এরোন আচমকা এক হাতে কোমড় আকড়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে আনলো মিহিকে।
শিউরে উঠল মিহি। ভয়ে চুপসে এদিক ওদিক তাকাতে লাগল সে।
“তুমি আমার, মানে আমার। আর কোনো জিনিস যখন আমার হয়ে যায় তখন সেটার উপর অন্যকারো নজর সহ্য করতে পারিনা আমি। তাই তোমার উপর অন্যকারো নজরও আমি সহ্য করবো না। একদমই না।” দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল এরোন।
মিহি ভয়ার্ত দৃষ্টিতে একপাশে চেয়ে আছে। গলা শুকিয়ে কাঠ কাঠ। ঢোকটাও গিলতে পারছে না। গলার মাঝপথেই আটকে আছে সেটা।
এরোন অন্যহাতটা গলিয়ে দিলো মিহির গলায়। মিহি হকচকিয়ে চোখ খিচে নিলো।
এরোন ওর মুখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিচু তবে গাঢ়ভাবে শীতল কন্ঠে বলল,”I never go half way, Mihi.”
মিহি আস্তে আস্তে চোখ খুলল। তবে দৃষ্টি নামিয়ে রাখলো। বুক ওঠানামা করছে অতিদ্রুত। ঘনঘন শ্বাস নিয়েও যেন শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা হচ্ছে।
এরোন স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাতের বাঁধন শক্ত করলো আরো।
আঁতকে উঠল মিহি। তাকালো চকিত দৃষ্টিতে।
“কি কথা বলছিলা ওর সাথে? দেখাই বা করলা কেন?” থমথমে মুখে বলল এরোন।
মিহি চোখ নামিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগল। ইনি ত উল্টো বুঝে বসে আছেন! সত্যিই কি খুন টুন করবে নাকি!
“ভুলে যেও না যে বিয়ে হয়ে গেছে আমাদের। আমি ছাড়া অন্যকারো দিকে…।”
“আপনি যা মনে করছেন সেরকম না।” এলোমেলো কন্ঠে বলে উঠল মিহি।
“তাহলে কী রকম?” তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে কথার পিঠেই প্রশ্ন করল এরোন।
মিহি এরোনের হাতের উপর হাত রেখে কপাল কুচকে কাতর বলল, “লাগছে আমার!”
“লাগা উচিত তোমার।” দাঁতেদাঁত চিপে বলল এরোন।
মিহি অবাক চোখে তাকালো।
“আমাকে জ্বালাচ্ছো কেন এত?! কি পাচ্ছ এমন করে? এত যে ভালোবাসি তুমি কি বোঝোনা?” ব্যথিত চোখে চেয়ে ভরাট গলায় বলল এরোন।
মিহি থমকে গেলো।
“বলো কেন? কী কারণে ভালোবাসতে পারছ না আমায়?”
মিহি চোখ নামিয়ে নিলো। ভিতরে ভিতরে আলোড়ন তুলল কথাগুলো। ধকধক করতে লাগলো বুকটা।
“বলছ না কেন কিছু?” এরোন আরো আঁকড়ে ধরলো মিহির কোমড়।
মিহি চোখ কুচকে ব্যথাতুর আওয়াজ তুলে তাকালো এরোনের দিকে।
“আপনি যা ভাবছেন তা নয়! লাগছে, প্লিজ ছাড়ুন না!” চোখ মুখ কুচকে ফেলল মিহি।
এরোন ছেড়ে দিলো ওকে। তার মুখোভাব এখনো শক্তপোক্ত।
মিহি জ্বলে যাওয়া কোমড়ে বাম হাত রেখে ঠোঁটে ঠোঁট চিপে মাথা নোয়ালো।
এরোন থমথমে মুখ করেই এগিয়ে এসে ওর হাত সরালো কোমড় থেকে। মিহি চোখ তুলে তাকালো।
সে আঁচল ঘাড়ে উপর তুলে দিয়ে কোমড়ের দিকে তাকিয়ে কপাল কিঞ্চিৎ কুচকে ফেলল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে থমথমে গলায় বলল, “এন্টিসেপটিক আছে কোনো!”
মিহি দাঁতেদাঁত চিপলো। নখ দাবিয়ে আঁচড় টাঁচড় কেটে এখন সেবা করতে এসেছে!
এরোন গম্ভীর চোখটা তুলে তাকালো মিহির দিকে। সে সদ্য করা প্রশ্নের উওর চায়।
“লাগবে না আমার।” মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে আঁটসাঁট স্বরে বলল মিহি। পাশ কাটিয়ে চলে যেতে উদ্যত হতেই হাত ধরে টেনে দাঁড় করলো এরোন।
মিহি বিরক্ত হয়ে তাকাতেই এরোনের থমথমে মুখ দেখে চুপসে গেলো।
“কোথায় আছে?” রাশভারি কন্ঠ তার।
“দরদ দেখাতে হবে না। ছাড়ুন।” নামানো দৃষ্টিতে কপালে ভাঁজ ফেলে বলেই হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলো মিহি।
এরোন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে বিছানায় বসালো। মিহি বসলো। মুখে গুমোট ভাব তারও।
এরোন এগিয়ে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারগুলো টেনে টেনে খুঁজতে লাগল। পেয়েও গেলো একটা এন্টিসেপটিক ক্রিম।
সেটার মুখ খুলতে খুলতে এগিয়ে এলো মিহির কাছে। মিহি আড় চোখে দেখল।
সে ডান হাতের তর্জনীতে ক্রিম লাগিয়ে নিতে না নিতেই উঠে দাঁড়ালো মিহি।
অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে ক্রিমটা নিতে হাত বাড়িয়ে বলল, “দিন। আমি নিজেই লাগিয়ে নিচ্ছি।”
এরোন যেন কানেই শুনতে পেল না ওর কথাটা। বিছানায় বসে বাম হাতে মিহির ডান কোমড় আগলে দুই পায়ের মাঝখানে দাঁড় করালো মিহিকে।
মিহি বিচলিত হয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগল। মিহির কোমড় বরাবর এরোনের মুখ।
রাগের বশে নখ বসিয়ে ফেলেছে। নখের আঁচড়ের দাগ স্পষ্ট। গম্ভীর চোখে তাকিয়ে সেখানটায় বুড়ো আঙুল ছুঁয়ে দিলো এরোন।
গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো মিহির। একহাতে শাড়ির আঁচল চেপে ধরে শ্বাস বন্ধ করে আড়ষ্ট হয়ে রইলো। ধকধক করে উঠছে ভিতরটা।
এরোন কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে তর্জনী আঙুলে থাকা ক্রিম লাগিয়ে দিতে লাগলো মিহির কোমড়ে।
পুরো সময়টা অন্যদিকে মুখ করে কেঁপে কেঁপে উঠল মিহি।
এরোন হাত সরিয়ে নিতেই সরে দাঁড়ালো মিহি। গালের পাশে পরে থাকা চুলগুলো একহাতে কানের পিছনে গুজে নিলো।
এরোন উঠে দাঁড়িয়ে ওর বাহু ধরে নিজের দিকে ঘুরাতেই মিহি কাঁচুমাচু হয়ে গেল।
এরোন হাত বাড়িয়ে ওর এক হাত ধরলো। মিহি চোখ নামিয়ে রেখেই ঘনঘন পলক ফেলতে লাগলো।
এরোন হাতটা নিয়ে নিজের বুকের উপর রাখতেই মিহি হতবুদ্ধি হয়ে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে একপলক তাকালো ওর দিকে। তার চোখেমুখে এখনো গভীর গাম্ভীর্যের ছাপ।
“আমার এখানে সবটা জুড়ে শুধু তুমি থাকো। ঠিক তেমন তোমার সবটা জুড়ে শুধু আমিই থাকতে চাই।” গম্ভীর নিষ্কপট কন্ঠে বলল এরোন।
কথাটা কর্ণগোচর হতেই ধক করে উঠলো মিহির বুকটা। প্রসারিত হয়ে এলো চোখ।
এরোন ধরে থাকা হাতটা আলতো করে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরলো ওকে।
মিহি বাধা দিলো না। জড়সড় হয়ে রইল ওর বুকের মাঝে।

🌸
বিকেল গড়িয়েছে। মিহি লম্বা ঘুম দিয়ে উঠে বিছানায় বসে আছে। এরোন নেই। সে সকালের পর বেরিয়ে এখনো ফেরে নি। যাওয়ার আগে কিছু বলেও যায়নি।
উল্টাপাল্টা রাগ করে, ধমকাধমকি করে, পরে আবার ভালোবাসা দিয়ে উধাও হয়ে গেছে। আশ্চর্য লোক!
সবসময় এত হুকুম কেন চালায় সে!
যদি তাকে কেউ হুট করে তুলে নিয়ে যেত! তারপর মিথ্যা বলে যদি বিয়ে করত তাহলে সে কী করত? এসবের কারণে পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ একজনের কাছে ছোট হয়ে গেলে কী করত? সব কিছুতে তাকে জোরাজুরি করা হলে সে কি মেনে নিত? সহজেই সব মেনে নিত!
শুধু তারই কষ্ট আছে অন্য কারো কষ্ট নেই?!
দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল মিহি। বিছানা থেকে নেমে নিজের ফোনটার কাছে গেল। একশো পার্সেন্ট চার্জ হয়ে গেছে। ফোনটা খুলল চার্জ থেকে।
এই কয়েকদিন ঘরে বসে থেকে আর ভালো লাগছে না। তাই আজ বাহিরে যাওয়ার ইচ্ছে জাগছে।
অর্নিকে সাথে নিতে বের হতে চাইল মিহি। কিন্তু অর্নি যাবে না। সে এখন সিনেমা দেখছে।
মিহি একাই বের হল। আগেও প্রায় একাই ঘুরতে বের হতো ও। অর্নি ঘরকুনো। খুব কম সময়ই সে আসতে রাজি হতো।

মিহিদের বাড়ির আশপাশটা নিরিবিলি গ্রাম্য পরিবেশ। লোকজনের হাঁকডাক নেই বললেই চলে। কারণ এদিকে সব বাগান, জমি আর মাঠঘাট দিয়ে ভরা। তবে কয়েক বছরের মধ্যে এদিকটাও শহরে পরিনত হয়ে যাবে। সবাই নিজ নিজ জমিজমা বিক্রি করা শুরু করে দিয়েছে।
মিহি বাগানের মধ্যে ঢুকে একটা গাছ থেকে কতক কুল ছিড়ে নিল। নিচেও অনেকগুলো পড়ে আছে। কেউ খায় না। নষ্ট হচ্ছে শুধু শুধু।
মিহি নিচ থেকেও কিছুটা কুড়িয়ে নিয়ে হাঁটু ভাঁজ করে গাছটার গোড়ায় হেলান দিয়ে বসল। হালকা শীতল বাতাস বইছে। গাছের ফাঁকফোকর দিয়ে আলো পরছে। সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে বলে রোদ নেই।
বসে বসে চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়লো মিহি। একটা চিঠি থেকে শুরু হয়ে কাহিনী কতদূর অব্দি এসে ঠেকেছে!
তমার উদ্ভট কথাগুলো যা নিছকই গুজব, সেসব শুনে কি ভুলটাই না করেছে সে! যার মারাত্মক ফল এ কয়েকদিনে ভুগেছে।
তমাকে কয়েকটা থাপ্পড় দেওয়া উচিত বলে মনে হচ্ছে মিহির। কিন্তু শুধু তমার দোষ ত না। সেও দোষী। কিন্তু এখন সব উল্টোপাল্টা হবার পর আফসোস করে কি লাভ!
চিন্তা করতে করতে গাছটায় মাথা হেলিয়ে দিল মিহি। বসে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে পড়লো টেরই পেল না।
যখন চোখ খুলল তখন চারিদিকে আবছা অন্ধকার। অর্থাৎ সন্ধ্যে ঘনিয়ে গেছে অনেক আগেই। হতভম্ব হয়ে হুড়মুড়িয়ে সোজা হয়ে বসলো মিহি। দুপুরের এত বড় ঘুমের পরেও কি করে ঘুমিয়ে পড়ল ও! অদ্ভুত ত!
জলদি গা ঝেড়ে উঠে দাড়ালো সে। ফোন হাতে টর্চ জ্বালাতে যাওয়ার আগেই স্ক্রিনে দেখলো পঞ্চাশের উপরে মিসকল।আর সাতাশটা মেসেজ।
জিভ কাটলো মিহি। মুখ দিয়ে বিরক্ত সূচক শব্দ বের করে চট করে লক খুলল ফোনের।
‘বিপদ’ লেখা! মানে এরোন। এতগুলো কল কেন দিয়েছে!
মিহি হাঁটতে হাঁটতে মেসেজে ঢুকলো।
সব তারই মেসেজ। প্রথম কয়েকটা মেসেজ ‘কোথায় আছে?’ ‘একা একা কেন ঘুরতে বের হয়েছে?’ এগুলো লেখা থাকলেও পরের সবগুলোতে কড়া কড়া কথার সাথে রাগী ইমোজি।
আজ মনে হয় কাঁচাই চিবিয়ে খাবে লোকটা ওকে।
একটা মেসেজে গিয়ে চোখ আটকালো মিহির।
সেটায় লেখা ‘ওই রিজুর সাথে দেখা করতে গেছ আবার? এত সাহস হয় কি করে তোমার? আবার আমাকে বলো চরিত্রহীন?! ফোন তোলো।’
এটা দেখে ভ্রু কুচকালো মিহি। লোকটা ওকে চরিত্রহীন বলতে চাচ্ছে! না জেনে শুনেই! মেজাজ বিঘড়ে গেল মিহির। এর পরের মেসেজ গুলোতে সব হুমকি দিয়ে ভরা। আর মেসেজগুলোরও কি ছিরি!
চেক করতে করতেই তার ফোন এসে ঢুকলো।
ফোন পুরোপুরি সাইলেন্স মুডে রাখা। তাই শব্দ হলো না।
মিহি সূচালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল স্ক্রিনের দিকে। বিড়বিড়িয়ে বলল, “ধরব না ফোন। ধরলেই ত কথা শুনতে হবে আবার। কিছু না করেই সকালে উনি কথা শুনিয়ে গেছেন।”
ফোন বেজে বেজে কেটে গেল। তারপর পুনরায় বাজতে লাগলো।
কেটে যাওয়ার পর পরই মেসেজ এলো, ‘pick up the phone damn it!’

মিহি থেমে দাঁড়িয়ে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস ফেলে সংকুচিত চোখে তাকালো ফোনের দিকে। না ধরা অব্দি এই লোক ফোন দিতেই থাকবে। পাগল হয়ে গেছে সে।
ফোন ঢুকলো আবার।
মিহি বাধ্য হয়ে ফোন রিসিভ করতে না করতেই পিছন থেকে পুরুষালী শক্ত হাতে কেউ কোমড় শক্ত করে আঁকড়ে মুখ চেপে ধরল।
শিউরে উঠল মিহি। বন্ধ হয়ে গেল হৃদস্পন্দন। ভিতরটা মুড়ে গেলো ভয় আর আতঙ্কে। মুখ দিয়ে গুঙিয়ে প্রাণপণে চেষ্টা করল নিজেকে ছাড়ানোর। কিন্তু শক্তিতে পেরে উঠলো না।
রিসিভ হওয়া ফোনটা হাত ফসকে পরে আছে পায়ের কাছে।
মিহি ছটফটিয়ে যেতেই লাগলো।
ওর ছটফটানির মধ্যেই জঘন্য লোকটা ওকে জোর করে কাধে তুলে নিলো।
সাথে সাথে চেঁচিয়ে উঠলো মিহি।
“ছাড়ুন আমায়। নামান! কেউ আছেন!” লোকটার পিঠে জোরে জোরে আঘাত করতে করতে চিৎকার করতে লাগল মিহি।

(চলবে…)

[এই গল্পের নাম আমি “ভালোবাসি কেন বোঝোনা” দিতে চেয়েছিলাম। পরে মনে হলো না ‘বৃষ্টি থামার পরে’ দিই। এটা দেওয়ার পিছনেও কারণ আছে।
যাইহোক। কাল পর্ব রাত করে হলেও দেওয়ার চেষ্টা করব। ১২ টাও বাজতে পারে।
মিহির টেনশনে আপনারা দুইদিন হয়তো অপেক্ষা করতে পারবেন না, তাই কাল দিব।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here