পারব না আমি ছাড়তে তোকে ❤❤ #লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤ #পর্বঃ ২৮ ❤

0
715

#পারব না আমি ছাড়তে তোকে ❤❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤
#পর্বঃ ২৮ ❤

.
রুমে এনে আমাকে বিছানায় ছুরে মেরে উনি রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন। আমিও কিছু বলিনি। উঠে গিয়ে কাপড় চেঞ্জ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই চোখ দুটো ভারী হয়ে এলো। হয়তো বেশি কান্না করা হয়ে গেছে। সবারই ক্লান্তি আছে। তোমনি কাঁদতে কাঁদতে চোখ জোড়াও ক্লান্ত হয়ে গেছে। তাই আর জোড় দেখালাম না! তার সাথে তাল মিলিয়েই পারি জমালাম ঘুমের দেশে। আজ একটা ভালো স্বপ্ন দেখলে মন্দ হয় না। কাঁথাটা শরীরে টেনে নিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলাম। সাথে সাথে এসে ভর করল রাজ্যের সকল ঘুম সেই সাথে খুব সুন্দর স্বপ্নেরা।
.
__________________
.
কতোক্ষণ ঘুমিয়েছি জানিনা। কপালে কারো ঠোঁঠের স্পর্শ লেগে ঘুম ভেঙে গেল। চোখ জোড়া খুলে আমি অবাক! এটা কি করে সম্ভব? হাউ ইজ পসিবল? আমি চোখ জোড়া গোল গোল করে সামনে থাকা ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে আছি। আমার যেন কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না। মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখছি। কিন্তু আমার ভাবনার মাঝেই সামনে বসে থাকা ব্যক্তি খুব জোড়ে তুরি বাজায়! সাথে সাথেই আমি চমকে উঠি!
.
—- কিরে এভাবে হা করে কি দেখছিস?
.
—- আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না।
.
—- কেন অবিশ্বাসের কি আছে?
.
—- নাহ্! কিচ্ছু নেই। কিন্তু এটা সত্যি তুমি তো ভাইয়া?
.
—- অবশ্যই! কেন কোনো সন্দেহ আছে?
.
—- নাহ্! যদি আবার ভুত টুত হয়! তখন কি হবে ?
.
—- মানেহ্? তুই ভুতে বিশ্বাস করিস আলো?
.
—- হ্যাঁ! আমি দেখেছি ।
.
—- আলো! এটা আমি। তোর ভাই।
.
—- আমি বিশ্বাস করি না । এই ভুত কি চাই তোর?
.
—- আমি সত্যিই সাজিদ!
.
—- আচ্ছা তুই যদি সত্যিই আমার ভাইয়া হস তাহলে বলতো ভাইয়া আমাকে কি বলে ডাকে?
.
—-
.
—- কি হলো পারলি না তো ? আমি জানতাম তুই আমার ভাই না। আমার ভাই তো মালেশিয়া। এখানে আসবে কেমনে? আচ্ছা! তুই কি চাস ? সব নিয়ে যা কিন্তু আমাকে ছেড়ে দে । আমি আর জীবনেও একা বাড়িতে থাকমু….
.
আমি কথাটা শেষ করার আগেই ভাইয়া চেঁচিয়ে উঠলো।
.
—- বুড়ি……
.
—- ভাইয়া এটা সত্যি তুমি ! দাঁড়াও একটা চিমটি দিই!
.
ভাইয়া অসহায় মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার কান্ড দেখে। হয়তো ভাবছে তার বোন পাগল হয়ে গেছে!
.
—- আউচ!
.
—- নে ব্যথা পেলি তো!
.
—- হুম!
.
—- আচ্ছা! বনুটা কাঁদে না । নিচে চল সবাই অপেক্ষা করছে তো!
.
—- কখন এসেছো ভাইয়া?
.
—- এইতো কিছুক্ষণ! এসেই তোর কাছে এলাম।
.
—- কিন্তু তুমি মালেশিয়া থেকে কবে এলে?
.
—- সকালের ফ্লাইটে রে বুড়িটা!
.
—- আমাকে বলোনি কেন? আর সকালের ফ্লাইটে এলে এতো টাইম লাগল কেন? মালেশিয়া থেকে আসতে তো বেশি সময় লাগার কথা না।সর্বোচ্চ ৪ ঘন্টা রাস্তায় জ্যাম থাকলে সব মিলিযে বাসায় আসতে নাহয় আরও ২-৩ ঘন্টা। সব মিলিয়ে নাহয় ৭-৮ ঘন্টা লাগবে। কিন্তু তুমি তো প্রায় ১২ ঘন্টা লাগিয়ে ফেললে।
.
—- ওরে আমার বইন! একটু থাম। আমাকে বলতে দে! মায়েদের মতো এভাবে জেরা করিস না। আমি এয়ারপোর্ট থেকে সোজা অফিসে গেছি একটু কাজ ছিল। সেটা শেষ করে আসতেই এতো সময় লাগল।
.
—- আগে বললে কি হতো ?
.
—- তুই সুযোগ দিছিস?
.
—- তোমার শাস্তি আছে!
.
—- কিসের শাস্তি ?
.
—- এইযে কথা পেঁচানোর।
.
—- আমি কখন কথা পেঁচালাম?
.
—- এখনই !
.
—- এ্যাঁ!
.
—- এ্যাঁ না হ্যাঁ! এখন শাস্তি হলো আমাকে নিয়ে কাল বেড়াতে যেতে হবে।অনেক কিছু কিনে দিতে হবে। বিশেষ করে চুড়ি,নুপুর আর কালো গোলাপ !
.
—- এতোকিছু ?
.
—- জ্বী! রাজি কিনা বলো! রাজি বললে কথা বলব । নয়তো না !
.
—- এ্যাঁ ! কেন?
.
—- কুইকলি আন্সার দাও !
.
ভাইয়া কিছু বলার আগেই সূর্য হনহনিয়ে ঘরে ঢুকে এলো! ঠিক আমার আর ভইয়ার মাঝে বসে পড়ল। আমি কিছু বলব তার আগেই বলল….
.
—- কোনো কিচ্ছু হবে না! সাজিদ তুই টেনশন করিস না।ও তোর সাথে কি করে কথা না বলে তা আমি দেখব!
.
—- ও কথা বলবে না সূর্য!
.
—- ও বলবে না ওর ঘাড় বলবে। তুই ওকে মাথায় তুলেছিস!
.
—- বাদ দে না সূর্য! ও ছাড়া আর কে বায়না ধরবে আমার কাছে।ওই তো সব আমার!
.
ভাইয়া এইটুকু বলতেই আমি ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে বললাম।
.
—- ইউ আর দ্যা বেস্ট ব্রাদার ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড! লাভ ইউ ভাইয়া!
.
আমার কথার মাঝেই সূর্য ধমকে উঠলেন!
.
—- দেব এক চড় বেয়াদব। যা সোজা হয়ে বস !
.
আমি উনার কথায় কিছুটা ভয় পেয়ে ভাইয়াকে ছেড়ে সোজা হয়ে বসি। উনি আবার বলে…..
.
—- সাজিদ তোকে কিছুই কিনে দেবে না। তুই ওর সাথে কথা বলবি না?
.
—- নাহ্! ভাইয়া আমাকে অনেক কিছু কিনে দিবে। আর আপনি আমাদের ভাই-বোনের মাঝে কেন আসছেন? প্রবলেমটা কি আপনার? এতো জ্বলেন ক্যান ? হিংসুটে পুরুষ!
.
—- কি বললি আমি হিংসুটে ?
.
—- তা নয় তো কি? আমাদের ভাই-বোনের ভালোবাসা আপনার সহ্য হচ্ছে না তা তো বোঝাই যাচ্ছে ।
.
—- আলো……
.
—- জ্বী ভাইয়া ? কিছু বলবেন ?
.
—- কি বললি ?
.
—- কেন ভাইয়া শোনেন নি ? ভাইয়া ডেকেছি ।
.
—- দেব এক চড় বেয়াদব !
.
—- কেন ভাইয়া ? কি করলাম আমি ভাইয়া ?
.
—- আবাররররররর?
.
—- কি ভাইয়া ?
.
—- ড্যাম ইট!
.
এতোটুকু বলে উনি হনহন বেড়িয়ে গেলেন। আমি ওনার যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হাসিতে ফেটে পড়লাম। ভাইয়া এতোক্ষণ বসে বসে আমাদের কান্ড দেখছিলেন। দুই ভাই-বোন হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়াে উপক্রম! আমি মূলত ভাইয়া সামনে থাকায় এতোটা সাহস পেয়েছি। কারণ উনি যাই করুক ভাইয়ার সামনে কিচ্ছু বলবেনা ঐ ধমকানো পর্যন্তই শেষ। কিন্তু আমাকে একা পেলে ১২টা বাজাবে।
.
বেশকিছুক্ষণ হাসাহাসি করে ভাইয়া আমাকে নিয়ে নিচে চলে গেলেন!
.
________________
.
রাত ১১টা বেজে ২০ মিনিট। সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। আমিও সবার সাথে বসে আছি। আম্মু,বড় আম্মু,শ্রেয়া আপু খাবার সাজাচ্ছে। আমি করতে চেয়েছি৷ আমাকে দেয়নি অসুস্থ বলে।
.
খাবার সাজানো শেষে সবাই সবার মতো খেতে বসেছে। কিন্তু সূর্য নেই! আম্মু আমাকে বলল সূর্যকে ডেকে আনতে। কিন্তু সূর্যকে ডাকতে গেলে আমার আর আস্ত ফেরা লাগবেনা। এখন কি করব?
আম্মুকেও কিছু বলা যাবেনা। এখন উপায়? আমি ভীত চোখে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ভাইয়া হয়তো ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে। আমাকে বসতে বলে ভাইয়া উঠে গিয়ে ওনাকে ডেকে আনলেন।
.
আমার পাশে উনি অন্যপাশে ভাইয়া। সবাই সবার মতো খাচ্ছেন। আজ অনেকদিন পর ভাইয়ার হাতে খাবো। ভাইয়া খাইয়ে দিবে। সূর্য নিজের মতো খাচ্ছে। নিচের দিকে তাকিয়ে খাচ্ছে! এমন ভাব করছে যেন খাবার থেকে চোখ সরালেই মহা প্রলয় সংগঠিত হবে। উনার এমন আচরণ দেখে মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল।
.
খা খা! খাইতে খাইতে বেলুন হয়ে আকাশে উড়ে যা। কে না করছে? খাটাশ একটা! একা একা বিরবির করতে করতেই সকলের খাওয়া শেষ। সবাই সবার মতো রুমে চলে গেলেন। আমিও সোজা রুমে চলে এলাম।
.
ঘরের দরজায় পা রাখতেই………..

#চলবে……..

[রি-চেইক করা হয়নি। ভুলক্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ। শুভরাত্রি❤!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here