#পারব না আমি ছাড়তে তোকে❤❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤
#পর্বঃ ৩১❤
.
.
দেখতে দেখতে ২টি দিন কেটে গেছে। এখন আমি পুরোপুরি সুস্থ! সেদিন বিকেলে সূর্য আমাকে কোচিং- এ ভর্তি করে দিয়েছেন। বাসা থেকে ১ঘন্টা লাগে যেতে। কিন্তু তাতে কোনো প্রবলেম নেই। সূর্যই আমাকে দিয়ে অফিস যাবে। আবার ছুটি হলে নিয়ে আসবে বলেছে। কাল থেকেই জয়েন হতে হবে ক্লাসে। এ’কদিন সূর্য ওদের থেকে নোট পত্র যা যা লাগবে সব ম্যানেজ করে বাসায় পড়িয়েছে। উনি বেশ ভালোই বুঝায়। ভালোই লাগে উনার কাছে পড়তে। ইশ! কত্তো সুন্দর করে কথা বলেন উনি! হঠাৎ কারো ডাকে পেছন ফিরে তাকালাম…….
.
—- হেই আলো! কেমন আছো তুমি?
.
একি হৃদয় ভাইয়া? উনি আসলেন কোথা থেকে? তাও আবার এই অসময়ে পারমিশন না নিয়েই? আজিব পাবলিক তো! এটা কেমন ম্যানার্স? তার ডাকে ভাবনার ছেঁদ হলো……
.
—- কি হলো আলো?
.
আমি উনার ডাকে কিছুটা থতমত খেয়ে বললাম…..
.
—- ককই কি?
.
—- কি ভাবছিলে?
.
—- কিচ্ছু না!
.
—- তা কেমন আছো?
.
—- জ্বী আলহামদুলিল্লাহ্, আপনি?
.
—- দেখতেই তো পাচ্ছো।
.
—- ওহ্ আচ্ছা!
.
—- তা আমাকে বসতে বলবে না?
.
—- বসতে কি বলব তোরে তো লাথি দিয়ে বের করতে ইচ্ছে করছে। বেয়াদব ছেলে। যত্তসব আবাল পাবলিক! ঘরে আসার সময় পারমিশন নিস নি তো এখন এতো আহ্লাদ দেখানোর কি তুই বস নয়তো দাঁড়িয়ে থাক আমার কি? (মনে মনে)
.
—- কি হলো?
.
—- হ্যাঁ? কিচ্ছু না। বসুন!
.
—- তা কি করছিলে?
.
—- কেন দেখতে পাচ্ছিস না? কানা নাকি? অহস্য! (বিরবির করে)
.
—- কিছু বললে?
.
—- নাহ্! পড়ছিলাম।
.
—- ওহ্ গুড! তবে এখন কিসের পড়া? এখন তো এক্সাম শেষ ঘুরবে ফিরবে ইনজয় করবে!
.
—- সরি ভাইয়া! আমার এখন ঘোরাঘুরি করার সময় নেই। আমার এখন আগে পড়াশোনা। মেডিক্যালে চান্স পেয়ে নেই আগে? তারপর নাহয় ঘোরাঘুরি করব! ঘোরাঘুরি করার জন্য লাইফটা পড়ে আছে। বাট পড়াশোনার জন্য সময়টা পড়ে থাকবে না! ঘোরাঘুরিটা আমি ৬-৭বছর পরেও করতে পারব। তবে যদি আমি এবার মেডিকেলে চান্স না পাই আমার ক্যারিয়ারটা শেষ হয়ে যাবে। যা আমি বা সূর্য কখনোই চাই না!
.
—- বাব্বাহ্! তুমি তো দেখছি খুবই বুঝদার! সবাই যদি এতো বুঝতো তাহলে খুব ভালো হতো। তা এতো যখন ডক্টর হওয়ার ইচ্ছে তাহলে এতো আগে বিয়ে কেন করলে?
.
—- সেটা সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি কাউকে জবাবদিহি করতে বাধ্য নই!
.
—- এভাবে কেন বলছো?
.
—- আমি কোনোভাবে বলছিনা। আমি ঠিকই বলছি।
.
—- আলো তুমি কি রাগ করেছো?
.
—- জ্বী না ভাইয়া! বাট কিছু মনে না করলে আপনি এখন আসতে পারেন।আমার অনেকটা পড়া বাকী। সূর্য রাতে এসে পড়াগুলো নেবে। উনি বাসায় ফিরতে ৩ ঘন্টা বাকী। এর ভিতরই পড়াটা শেষ করতে হবে। আপনার সাথে বরং পড়ে কথা বলব।
.
—- তুমি সূর্যকে খুব ভয় পাও তাই না?
.
—- আশ্চর্য! নিজের স্বামীকে ভয় পাব না তো কাকে পাবো?
.
—- তুমি রিয়েক্ট করছো কেন?
.
—- নাথিং,বাই পরে কথা হবে। আপনি যান বাহিরে বাচ্চাদের হৈচৈ শুনে পড়ায় ডিস্টার্ব হচ্ছে। আমি দরজা নক করব।
.
হৃদয় ভাইয়াকে দেখে মনে হচ্ছে বেচারা যেতে চায় নি। হয়তো আরও কিছুক্ষণ থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু থাকতে দেয় কে? পৃথিবীতে হয় ইনিই একমাত্র মানুষ যাকে আমি খুব বেশিই ঘৃণা করি। ইউজলেস কোথাকার!
.
বিরবির করতে করতে সামনে থাকা কফির কাপে চুমুক দিয়ে বমি করে দেওয়ার মতো অবস্থা। এই হৃদয়ের বাচ্চার জন্য আমার এতো সুন্দর কফিটা ঠান্ডা হয়ে গেল। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। এখন আবার কফির জন্য দরজা খুললে দেখা যাবে আবার সেই জঞ্জাল এসে হাজির! আমি অসহায় মুখ করে বইটা রেখে বিছানা ছাড়লাম। ফোনটা নিয়ে দক্ষিণ দিকের জানালায় দাঁড়ালাম। জানালাটা খুলে দিতেই বাহিরের শীতল হাওয়া সারা শরীর জুড়ে অদ্ভুত এক শিহরণ বইয়ে দিল। বারে বারের জন্য মনে হতে লাগল সূর্যকে প্রয়োজন হ্যাঁ, সূর্যকে খুব প্রয়োজন এখন। হুট করেই যেন কি হলো কে জানে? খুব কান্না পাচ্ছে। চোখ দু’টোতে পানি টলমল করছে যেকোনো মুহূর্তে গড়িয়ে পড়বে। আমি কিছু না ভেবে উনার নাম্বারে ডায়াল করলাম। প্রথমবার রিং হতেই ফোনটা রিসিভ হলো। ভেবেছিলাম হয়তো ধরবে না। ফোনটা রিসিভ হতেই ওপর পাশ থেকে…..
.
—- কেমন আছো আলো রাণী? সারাদিনে ঠিক মতো খেয়েছো?
.
উনি এইটুকু বলতেই আমি ফুপিয়ে উঠলাম। আমার হঠাৎ এভাবে ফুপিয়ে উঠা দেখে উনি চমকে গিয়ে প্রশ্ন করলেন…..
.
—- কি হয়েছে আমার আলো রাণীর? কাঁদছে কেন?
.
আমার কান্নার রেশ যেন ক্রমশই বেড়েই চলেছে।
.
—- আলো বল কি হয়েছে? কেউ বকেছে? ছোট মা কিছু বলেছে? বল না? আরে টেনশন কোন দিচ্ছিস?
.
আমি কান্নার জন্য কিছু বলতে পারছিনা! উনি এবার রেগে গেলেন। হয়তো কোনো কিছু ছুঁড়ে ফেললেন নয়তো কিছুতে লাথি দিলেন। বিকট শব্দ এলো কানে। আমি কিছুটা ভয় পেলাম। উনি আবার বললেন…..
.
—- একটা কথা তোকে কতবার জিজ্ঞেস করা লাগে? বল!
.
এবারও কিচ্ছু বললাম না। একের পর এক হেঁচকি তুলে যাচ্ছি।
.
—- ড্যাম ইট! আমি আস….
.
উনি এইটুকু বলতেই আমি ফুপাতে ফুপাতে বললাম…….
.
—- ভালোবাসি!
.
এইটুকু বলে আবার কান্নার করছি। ওপর পাশে নিস্তব্ধ সব। কোনো সাড়া নেই। উনি হয়তো বুঝতে পারছেন না এখন উনার কি উত্তরটা দেওয়া উচিত! বেশকিছুক্ষণ নিরব থেকে বলে উঠলেন…..
.
—- আমি আসছি!
.
এইটুকু বলে আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে ফোন কেটে দিলেন! আমার এখন আরও বেশি কান্না পাচ্ছে। একটু কথা বললে কি হতো? আমি কি বাসায় আসতে বলেছি? বলিনি তো! তাহলে? উনি এখনও আমায় ভালোবাসেন না। কতো অল্পতেই আমার উপর রাগ করেন উনি! কথাগুলো ভাবতে আরও কান্না পাচ্ছে।
.
আসলে আমার হঠাৎ কি হয় আমি জানিনা। কোনো কারণ ছাড়াই কান্না পেত। শুধু শুধু কান্না করে বালিশ,বিছানা ভেজাতাম যখন একা থাকতাম। কিন্তু যখন ভাইয়া বা সূর্য থাকতো তখন আমাকে কাঁদতে দেখলেই ব্যস্ত হয়ে পড়ত কান্না থামাতে। আমার মনে পড়ে না আমি দুজনের সামনে কখনো কাঁদতে পেড়েছি। ভাইয়ার সামনে কেঁদেছিলাম সূর্যর জন্য। আরেকবার আপুর জন্য আর সূর্যের সামনে বিয়ের পরে কেঁদেছিলাম যখন উনি আমাকে নানা রকম কথা শোনাতো গায়ে হাত তুলত। বিয়ের আগে কখনোই আমার একফোঁটা চোখের পানি দু’টি মানুষ ফেলতে দেয়নি। বাসার কেউ আমায় বোঝে না এই দু’জনের মতো করে। তাই তো বলি আমি খুব লাকি ভাইয়ার মতো ভাই আর উনার মতো স্বামী পেয়ে!
.
_________________
.
রাত ৮টা বেজে ৪৫ মিনিট। সূর্য সেই কখন বলেছে উনি ফিরছে কিন্তু তার তো কোনো নামই নেই। কাঁদতে কাঁদতে আমার চোখমুখ লাল হয়ে ফুলে আছে। ফর্সা হওয়ায় চেহারার লাল আভাটা স্পষ্ট! আমার ভাবনার মাঝেই দরজায় কড়া নড়ল! আমি উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই উনি হনহনিয়ে ভেতরে এসে দরজাটা বন্ধ করেই আমায় পাশের দেয়ালে চেপে ধরল।
.
—- কি হয়েছে কি তোর? কিছু জিজ্ঞেস করছিলাম আমি?
.
উনাকে দেখে যেন জমে থাকা কান্না গুলো বারবার চোখে এসে বলছে আমরা ঝড়ে পড়তে চাই! টলমল চোখে উনার মলিন মুখটার দিকে তাকালাম।
.
—- আলো, আমি না করছি একদম কাঁদবিনা কিন্তু! তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।
.
আপনারাই বলুন আমার কি দোষ? আমি কি ইচ্ছে করে কাঁদছি? আর কান্না কি আটকে রাখা সম্ভব? আমার যে ভয় হচ্ছে! হঠাৎ করে কেন যেন মনে হচ্ছে যদি হারিয়ে ফেলি? আমি মরেই যাব!
.
আমি কিচ্ছু বললাম না। ডান হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে উনার বা গালটা ছুঁয়ে দিলাম। সাহস করে ঠোঁট ছুইয়ে দিলাম উনার বা গালে। উনি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে আমি কি করছি। কিছুক্ষণ টলমল চোখে তাকিয়ে থেকেই উনাকে জড়িয়ে ধরেই আবার ফুপিয়ে উঠলাম আমি। কান্না পাচ্ছে। আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। একদম মনে হচ্ছে কান্না না করতে পারলে দম বন্ধ হয়ে যাবে। আচ্ছা হঠাৎ এতো কান্না পাওয়ার কারণ কি? উনি তো আমারই! আমি উনাকে কেন হারাবো? তাহলে কান্না কেন পাবে? আমার ভাবনার মাঝেই উনি আমায় আলতো হাতে জড়িয়ে নিলেন! নরম স্বরে বললেন……
.
—- কি হয়েছে আমার আলো রাণীর? সে কাঁদছে কেন? তার কি কিছু চাই!
.
—- আপনাকে!
.
—- আমাকে কি?
.
—- আমার আপনাকে চাই! (কাঁদতে কাঁদতে)
.
—- আমি তো তারই আছি পাগলী!
.
—- আমি তো জানি! কিন্তু কেন যেন খুব ভয় করছে মনে হচ্ছে এই বুঝি হারিয়ে ফেললাম। আপনি আমাকে ছেড়ে যাবেন না প্লিজ! আমি মরে যাব কি….
.
—- এভাবে বলতে নেই আলো রাণী! আমি তো শুধুই তোমার। তো তোমাকে ছেড়ে কোথায় যাব? ইনশাল্লাহ্ কখনো ছেড়ে যাব না আমার পিচ্চিটাকে!
.
এইটুকু বলে আমাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলেন উনি। একহাত কোমড়ে রেখে কিছুটা কাছে টেনে আমার ওষ্ঠদ্বয় উনার দখলে নিয়ে নিলেন। দুজনে পাড়ি জমালাম সুখের রাজ্যে। যেখানে নেই কোনো হারানোর ভয়। নেই কোনো কষ্ট। নেই কোনো কালো অতীত। সেখানে শুধু আছে সুখ আর শান্তি! আছে ভালোবাসা! যা দু’টো জীবনকে খুশি, আনন্দে ভরিয়ে দিতে পারে! এটা হয়তো শ্রেষ্ঠ পাওয়া! তাই তো কবি হুমায়ুন আহমেদ বলেছিলেন- ” পৃথিবীতে ভালোবাসার চেয়ে শ্রেষ্ঠ কিছু নেই!”
#চলবে…….
[#বিঃদ্রঃ সরি গাইস একটু লেট হওয়ার জন্য! সেদিন লিখেছিলাম। বাট পুরোটা ডিলিট হওয়ায় আর লিখতে ইচ্ছে করেনি। কাল সারাদিন জ্বর ছিল তাই কালও দেওয়া হয়নি! সরি এগেই! রি-চেইক করার সময় পাইনি। ভুলক্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ❤]