পারবনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤ #লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤ #পর্বঃ ৩৩ ❤

0
688

#পারবনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤
#পর্বঃ ৩৩ ❤
.
🍁
.
জানালা ভেদ করে সূর্যের আলো সোজা এসে চোখে পড়তেই এতো সুন্দর স্বপ্নটা ভেঙে গেল। সাথে সাথেই মেজাজ হয়ে গেল উনপঞ্চাশ! এই সূর্যের আলোটা কি রুমে আসার সময় পেল না নাকি? মানুষ নামে সূর্যটা যেমন দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টা জ্বালিয়ে মারে। ঠিক তেমনি সত্যিকারের সূর্যটাও তাই শুরু করল? এদের কি আমার মতো বাচ্চা মেয়ের পেছনে লাগা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই? রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে মনে মনে বিরবির করে কাঁথাটা মুড়ি দিয়ে উল্টোদিক ঘুরে শুয়ে পড়লাম। সাথে সাথেই কেউ ষাঁড়ের মতো চেঁচিয়ে উঠলো!
.
—- আলোওওওওও!
.
তার চিৎকার শুনে আমার ঘুম তো পালিয়েছেই। সাথে ভীষণ ভয়ও পেয়েছি৷ সালা বজ্জাত, অসভ্য, খাটাশ, খচ্চর, সাদা বিলাই, নীল টিকটিকির সবুজ লেজ, লাল টিকটিকির সাদা রক্ত, লাল তেলাপোকার হলুদ পাখা, আফ্রিকার গন্ডার, অস্ট্রেলিয়ার হাতির দুলাভাই, আস্ত এক ভাল্লুক, শাঁকচুন্নির জামাই, পেত্নী তোর বউ! ডাইনী হবে দেখে নিস সালা। তোর গলায় আমি সুপার গ্লু ঢালমু দাঁড়া তুই! দিলি তো আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে তোরে তো আমি বুড়িগঙ্গার পঁচা পানিতে গুনে গুনে হাজার বার চুবামু সাদা বিলাই! মনে মনে একের পর এক গালি দিয়েই যাচ্ছিলাম। হঠাৎ উনার ধমকে চমকে উঠলাম!
.
—- ঐ কি ভাবছিস?
.
—- কককই কিচ্ছুনা তো!
.
—- কযটা বাজে বেলা?
.
—- কেন? ১০টা হবে! (হাই তুলতে তুলতে)
.
—- দেব এক চড়! ১০টা বাজে? (রেগে)
.
—- ওহ্ তাহলে বোধহয় বেশি বলে ফেলেছি সরি! ৮টা কিংবা ৯টা বাজে।
.
—- দেব এক ঠাটিয়ে। বাহিরের পরিবেশ দেখে তোর মনে হয় ৮/৯টা বাজে?
.
—- এবারও ভুল বললাম যাহ্! আসলে অনেক সকালে উঠেছি তো তাই ভুলভাল বকছি! যাই আরেকটু ঘুমাই দেন মাথা ফ্রেশ হলে সঠিক সময়টা বলব!
.
এইটুকু বলে শুতে নিতেই উনি আমার হাত ধরে বসিয়ে বললেন……
.
—- তুই কোন মাটির তৈরি?
.
উনার এমন প্রশ্নের আগা মাথা না বুঝে আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম! উনি আবার বললেন…..
.
—– এতো ঘুম কই পাস বলতো? আমায়ও একটু দে! আমার ঘুম তো কেড়ে নিয়ে নিজে দিব্যি ঘুমাচ্ছিস!
.
আমর কুঁচকানো ভ্রু জোড়া আরও খানেকটা কুঁচকে এলো! ঘুমু ঘুমু গলায় প্রশ্ন ছুড়লাম…….
.
—- আপনার ঘুম আমি কেড়ে নিয়েছি? কবে? কখন? কি করে? এতো বড় মিথ্যা বলতে পারলেন? মাই আল্লাহ্!
.
—- দেব এক চড়! এতো প্রশ্ন করিস কেন? পাগল বানিয়ে ফেলবি নাকি?
.
উনার কথা শুনে আমি খিলখিল করে হেঁসে উঠলাম! আর উনি ওনার নেশা ভরা চোখে তাকিয়ে রইলেন আমার সেই হাসিতে!
.
হঠাৎ করে উনার দিকে চোখ যেতেই আমি হাসি থামিয়ে ফেললাম! উনি এখনও ওভাবেই তাকিয়ে আছেন!
.
—- কি হলো? (উনার সামনে তুড়ি মেরে)
.
—- আরো কিছুক্ষণ হাসতে আলো রানী! তোমার ঐ হাসিতেই যে আমার সমাপ্তি! রবীন্দ্রনাথ বলেছেন মনে আছে?
“প্রহর শেষে আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস!
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ!”
আজ যে রবীন্দ্রনাথের এই দুটি চরণ বারে বার আমার কানে বেজে চলেছে! খুশিতে চিকচিক করা তোমার ঐঘন পল্লবে ঘেরা চোখ, তোমার ঐ হাসিতেই যে আমার ইতি! যতবার তুমি হাসছো ঠিক ততবার বুকের বা’পাশটা চিনচিনে ব্যথা করছে। শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে আলোরাণী! কি যাদু জানো বলো তো? মেরে ফেলার ফন্দি করছো নাকি? আমি যে তাতেও রাজি!
.
আমি কিছু বলছিনা স্থির দৃষ্টিতে উনার ঐচোখের দিকে তাকিয়ে আছি। আজ যেন উনার ডার্ক রেড ঠোঁট জোড়া নয় উনার স্নিগ্ধ চোখ জোড়া বেশি কথা বলছে! দেখে মনে হচ্ছে আজ সে তৃপ্ত! যুগের পরে যুগ তৃষ্ণায় ছটফট করা চোখ জোড়া আজ বড্ড তৃপ্ত! পেয়ে গেছে সে তার তৃষ্ণা নিবারণের বস্তু! কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বিছানা ছেড়ে উঠে গেলাম। ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ারটা অন করে দিলাম। আজ যে আমারও কেন যেন খুব ভালো লাগছে! মনে হচ্ছে অনেকটা শান্তি! কেমন যেন এক অদ্ভুত শীতলতা বয়ে যাচ্ছে শরীরের সাথে সাথে মন জুড়ে।কিন্তু কেন? আবার সেই কেন? আচ্ছা! এই “কেন” শব্দটা কি কখনোই আমায় ছাড়বে না? হয়তো ছাড়বে নয়তো না! দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিজেকে ভাসিয়ে দিলাম শাওয়ারের বিন্দু বিন্দু পানির মাঝে! সেই সঙ্গে মনকে ভাসিয়ে দিলাম সুন্দর এক স্বপ্নের মাঝে!
.
__________________
.
বিকাল ৩টা বেজে ২০ মিনিট! সবাই যে যার মতো তৈরি হচ্ছে। ছেলেদের বাড়িতে যাবে। ছেলের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ করে এসে রাতে রিয়া আপুরটা করা হবো। একটু আগে রিয়া আপুকে সাজিয়ে রেখে এসেছি! রিয়া আপুর ফ্রেন্ড মামানি, আম্মু, বড় আম্মু সবাই সেখানে! বাকী যারা আছি রিয়া আপুর অন্যান্য কাজিন, আমরা সবাই তৈরি হচ্ছি। হলুদের ড্রেসে মেয়েদের হচ্ছে হলুদ ব্লাউজ, হলুদ পাড়ের সাদা শাড়ি! আর ছেলেদের হলো সাদা পায়জামা হলুদ পাঞ্জাবি! সবার শাড়ি পড়া প্রায় শেষের দিকে। বাঁধ সাধলো আমার! সবাই বাঙালি নিয়মে শাড়ি পড়েছে। কিন্তু আমি তো ঐরকম পারিনা! আমি তো কুঁচি দিয়ে পড়তে পারি। প্রায় ৩০-৩৫ মিনিট চেষ্টা করেও পারলাম না। মনটাই খারাপ হয়ে গেল। সূর্যটাও ঘরে নেই! এই অবস্থায় আম্মুকে ডাকতে যাওয়াও অসম্ভব! ধুর ভাল্লাগে না!
.
শাড়িটা সোফায় ফেলে রেখে বিছানায় এসে ধপাস করে শুয়ে পড়লাম। সাথে সাথেই দরজা ঠেলে কে যেন ভেতরে ঢুকে এলো। আমি তার মুখ না দেখেই চোখ মুখ খিঁচে চিৎকার করতে গেলে সে তাড়াতাড়ি এসে মুখটা চেপে ধরে। আর আমি চোখ খুলে উনাকে দেখে কি করব না করব খুঁজে না পেয়ে বিছানা থেকে কাঁথা নিয়ে তার নিচে ঢুকে পড়ি৷ ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললাম……
.
—- আপনি কি দরজায় নক করতে জানেন না?
.
—- অদ্ভুত! নিজের ঘরে কোন লোকই নক করে আসে?
.
—- কেউ না আসলেও আপনি আসবেন। কারণ আপনি একা নন আমিও থাকি এই রুমে।
.
—- আজব তো! কেন তুই কি একাই আমার ঘরে থাকিস নাকি? আর লোকজন কি বউ বিয়ে করে বাপের বাড়ি রাখে? ইডিয়ট!
.
উনার কথা শুনে মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। আমি নাকি ইডিয়ট!
.
—- আমি নাকি আপনি ইডিয়ট?
.
—- অবশ্যই তুই!
.
—- জ্বী না আপনি!
.
—- দেব এক চড় বেয়াদব মেয়ে! বরের মুখে মুখে তর্ক করিস! আর দিনে দুপুরে ফুল স্প্রীডে ফ্যান চালিয়ে কাঁথা জড়ানোর মানে কি?
.
—- কেন আপনি জানেন না?
.
—- আজব তো! আমি কি করে জানবো?
.
—- আপনার জানা লাগবেনা বের হোন!
.
—- হবোনা! তোর প্রয়োজন হলে তুই বের হ! ভালো কথা তোরা মেয়েরা তো বিয়ে বাড়িতে গেলে কি সব আটা ময়দা মাখিস! সবাইকে দেখলাম মেখে ভুত হয়েছে তুই সাজবিনা পেত্নী?
.
—- কিহ্ বললেন? আমরা আটা ময়দা মাখি? আপনার এতো বড় সাহস? আর আমি পেত্নী?
.
—- সাহসের কি? যা সত্য তাই! আর তোকে তো তার থেকে আমার কম কিছু মনে হয়না! যা যা তাড়াতাড়ি মাখতে বস। তোর জন্য পরে আবার লেট না হয় যেন তাহলে রেখেই চলে যাব!
.
—- আপনি যান না আপনাকে নিতে বলেছে কে? আপনি ঐ সাদিয়া, নাজনিন ওদের সাথেই যান হুহ! লাগতো আমারে নেওয়া আমি তো ওদের মতো রূপবতী না। সব ছেলেদের চেনা শেষ। ছেলেরা মানেই ক্যারেক্টর লেস! এক নাম্বার লুচুর হাড্ডি! হুহ!( ভেঙচি কেটে)
.
—- কি বললি? আমরা লুচু? ক্যারেক্টর লেস?
.
—- কেন সন্দেহ আছে?
.
—- এক থাপ্পড় দিয়ে গাল লাল করে ফেলব বেয়াদব!
.
—- জানি তো সত্যি কথা কারোই সহ্য হয়না!
.
—- ওকে যা! আমি তো লুচু তাই না? আমি সত্যিই আজ নাজনিন, সাদিয়া, শাফিয়া সবার সাথে ঘুরবো!
.
—- ওকে! আমিও আজ আকাশ ভাইয়ার সাথে…..
.
উনি তখন আমার ওপর পাশে বসা। এইটুকু বলতেই উনি আমাকে একটানে নিজের কাছে নিয়ে বিছানার সাথে চেপে ধরেন! রাগী গলায় বলেন…..
.
—- খবরদার যদি আরেকবার আকাশের নাম নিয়েছিস তো!
.
—- একবার কেন বার বার নিব! হাজার বার নিব! আকাশ, আকাশ, আকাশ, আকা…..
.
শেষ করার আগেই উনি ঠোঁট জোড়া দখল করে নেন। আমি আশ্চর্য হয়ে চোখগুলো রসগোল্লার মতো করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। কি থেকে কি হলো এটা? উনার এক হাত ধীরে ধীরে আমার কোমড় ছুঁলো! আমার উষ্ণ কোমড়ে উনার ঠান্ডা হাতের স্পর্শে কেঁপে উঠলাম! সাথে সাথে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলাম!
.
প্রায় ৫-১০ মিনিট পরে উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসে হাঁপাতে লাগলেন। সেই সঙ্গে হাঁপাচ্ছি আমিও! কারো মুখে কোনো কথা নেই! আমি লজ্জায় নেতিয়ে গেছি। আর উনি? তা আমার অজানা!
.
কিছুক্ষণ পর……
.
—- নেক্সট টাইম যদি অন্য কোন ছেলের নাম তোর মুখে শুনি তাহলে এর থেকেও খারাপ অবস্থা করব বলে দিলাম। এখন তৈরি হয়ে নিচে আয়!
.
এইটুকু বলে বেড়িয়ে যেতে নিলে আমি শান্ত স্বরে বললাম……
.
—- আম্মুকে বলবেন আমি ডেকেছি!
.
উনি দরজার কাছে গিয়ে থেমে গেলেন। পেছন ঘুরে প্রশ্ন করলেন….
.
—- কেন? ছোট মাকে বিচার দিবি নাকি? দে তাতেও লাভ নেই!
.
—- আপনি আসলেই একটা নির্লজ্জ! মাকে বলব তার মেয়ে জামাই তার মেয়ের সাথে কি করে না করে তাই না? আপনি এতোদিন আমায় ডাফার বলতেন! আজ তো আপনাকে ডাফার মনে হচ্ছে!
.
কথাটা বলে মুখটা ভেঙচি কেটে অন্যদিকে ঘুরে যেতেই উনি আবার প্রশ্ন করলেন…..
.
—- আমাকে তোর ডাফার মনে হয়?
.
—- হু! ডাফারকে কি মনে হবে?
.
উনি এবার তেতে উঠলেন! কিছু বলতে যাবেন তার আগেই আমি বললাম……
.
—- আরে না না! আমি তো মজা করেছি! আপনি আম্মুকে ডাকুন না আমি শাড়ি পড়ব। সবার সাজ শেষ আমি এখনও শাড়িই পড়তে পারিনি। সাজব কখন! (মন খারাপ করে)
.
আমার কথায় উনি ভ্রু কুঁচকে তাকালেন! কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকেই রুম কাঁপিয়ে হেসে উঠলেন! উনার হাসিতে রাগে আমার সারা শরীর জ্বলে গেল! আজিব তো! হাসার কি হলো? উনি কোনোমতে হাসি থামিয়ে বললেন…..
.
—- এতো বড় ধিঙ্গী মেয়ে শাড়ি পড়তে পারিস না?
.
এইটুকু বলে আবারও হাসিতে ফেটে পড়লেন! মেজাজটাই গেল আরও খারাপ হয়ে।আজব! এখানে হাসির কি হলো? নাই পারতে পারি।এটা কি এমন! আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম…..
.
—- আমি ধিঙ্গি? আর শাড়ি নাই পড়তে পারি! এটা কি এমন ব্যাপার? আপনি আর একটাও কথা না বলে এই মুহূর্তে বেড়িযে যান। আপনার বোনের বিয়ে আপনি যান আমি যাব না!
.
আমি আর কিছু বললাম না। রাগ দেখিয়ে বসে রইলাম। কিছুক্ষণ সারা রুম জুড়ে নীরবতায় ছেয়ে গেল!
.
হঠাৎ করে…….

#চলবে……….
[#বিঃদ্রঃ গল্প দেওয়ার কথা ছিল না। তবুও আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকাদের কথা ভেবেই দিলাম। তাছাড়া মনটা বড্ড বেশি খারাপ। আর তা থেকে ক্ষানিকের জন্য দূরে থাকার সঙ্গী হলো গল্প লিখা! মাথাটা হালকা করার খুব প্রয়োজন ছিল তাই লিখলাম। কাল গল্প দিব কিনা জানিনা হয়তো হ্যাঁ! নয়তো না! দিলে সবাই অবশ্যই পাবেন। আর যদি না দিতে পারি তাই আগের থেকেই দুঃখিত সবার কাছে! সবাই ভালো থাকুন! শুভ রাত্রি ❤!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here