#পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤
#পর্বঃ ১৭ ❤
.
.
🍁
.
রাত ১২ বেজে ২৫ মিনিট। খুব মন দিয়ে পড়ছিলাম। পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই চোখে ভর করল রাজ্যের সকল ঘুম। না চাইতেও ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ কারো রাম ধমকে লাফ দিয়ে উঠে বসলাম। ধমকটা কে দিতে পারে আমার জানা। তবুও ভয়ে ভয়ে উনার দিকে তাকাতেই আমার আত্মা শুকিয়ে গেছে। উনি প্রচন্ড রেগে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি কোনো রকম একটা শুকনো ঢোক গিলে কিছু বলতে যাবো তার আগেই আরেক দফা চেঁচিয়ে উঠলেন উনি…..
.
—– তোর সমস্যাটা কি? সেই ৪ ঘন্টা ঘুমিয়েও তোর ঘুম পুড়েনি? আবার ঘুমোচ্ছিস? আচ্ছা,, তোর কি এক্সাম নিয়ে কোনো টেনশন আছে আলো? আমার তো মনে হচ্ছে না। মানুষ এতোটা কেয়ারলেস কি করে হয়? তুই নাকি মেডিকেলে পড়বি? এই পড়াশোনা দিয়ে আর মেডিকেলে চান্স পেতে হবে না।
.
—– আ..আ.. আসলে…
.
—– কি আসলে?
.
—- খুব টায়ার্ড লাগছিল। তাই বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বিছানায় গা এলিয়ে দিতে চোখটা লেগে আসলো আরই তে আপনি এসে দিলেন এক ধমক। একটু ঘুমোতেও পারলাম না। এতো সুন্দর ঘুমটা ভাঙিয়ে দিলেন। আপনি আসলেই একটা বুইড়া খাটাশ ।
.
—- কি বললি আমাকে?
.
—- ক..ক..কই? কিছুনা।
.
—- যা হাত মুখে পানি দিয়ে আয়। ছাঁদে যাবো।
.
—- এ্যা… এতো রাতে ছাঁদে ? ভুতে ধরবে তো ! আমি যাবো না বাবা আপনি যান।
.
—- চুপ একদম চুপ। সাইন্সের স্টুডেন্ট হয়ে ভুতে বিশ্বাস করে ডাফার একটা! ভুত বলতে কিছু হয়না যা আছে সব জ্বীন।
.
এবার যেন আমি কেঁদে দিব। বলে কি জ্বীন? জ্বীন তো আরও সাঙ্ঘাতিক ? না না ছাঁদে যাওযা যাবে না। উনার ঘাড়েও নিশ্চিত জ্বীন ভর করেছে। ছোট বেলায় শুনেছি জ্বীন ভর করলে মানুষ আবোল তাবোল বকে। মাঝ রাতে বাহিরে ছাঁদে যেতে চায়, অল্পতে রেগে যায়। তার মানে সত্যি উনার ঘাড়ে জ্বীনে ভর করল! এখন আমার কি হবে? যদি আমাকে মেরে ফেলে ? আম্মু…. কই তুমি। কথাগুলো ভাবতেই কান্না পাচ্ছে আমার। আমার ভাবনার মাঝে আরেকটা ধমক পড়ল আমার উপর। জীবনটাই তেজপাতা আমার ।
.
—- এই ডাফার! এখনো বসে আছিস কেন? যা ফ্রেশ হয়ে আয়।
.
—- আপনি কে ?
.
—- মানে? এটা কেমন প্রশ্ন? তুই জানিস না আমি কে?
.
—- জানি তো! তবুও আপনি বলুন আপনি কে?
.
—- আশ্চর্য! এটা কেমন বাচ্চামো আলো? আমি কে তুই জেনে জিজ্ঞেস করছি?
.
—- আরে ভাই বললে কি হয় ?
.
এবার উনি উল্টোদিকে ঘুরে দু’হাতে মাথা চেপে ধরলেন। ঘটনায় আমি আরও ভয় পেয়ে যাই। জ্বীনটা আবার নড়ে চড়ে উঠছে না তো? এখন কি করব? দৌড়ে বের হতেও পারবো না। কে বলেছিল উনার রুমে আসতে আবার। আর জীবনেও আইতাম না খালি একবার বাঁইচা লই আজকে জীবনেও এই ভ্যাম্পায়ারের ঘরে আইতাম না। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আমার টেবিলের উপরে নজর যায়। ওখানে কুরআন শরীফটা দেখেই মনে পরে যায় ছোট বেলায় শুনেছি “খারাপ জ্বীন নাকি কুরআন শরিফ ভয় পায়” । লাফ দিয়ে উঠে কুরআন শরিফটা নিয়েই উনার সামনে গিয়ে দাঁড়াই। শুকনো ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে বলি…..
.
—– আমি জানি তুই সূর্য না। তুই কোনো খারাপ জ্বীন। তাড়াতাড়ি বল কি চাস এখানে? যা এখান থেকে। নয়তো কুরআন শরিফটা দেখতে পাচ্ছিস? এটা তোর মাথায় চেপে ধরব। তাড়াতাড়ি পালা এখান থেকে। নয়তো আমি চেঁচাবো বলে দিলাম।
.
ঘটনায় উনি হয়তো অবাকের সপ্তম আসমানে। উনি কিছুই বলছেনা ড্যাব ড্যাব করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। এখন তো আমার আরও ভয় করছে আমাকে মেরে ফেলার প্ল্যান করছে নাতো? এখন! আমি আবার বললাম……
.
—- কিরে ভয় পাইছোস? জানতাম ভয় পাবি। তোরা কাউরে ভয় না পাইলেও আল্লাহরে ঠিকই পাস। যা পালা। তোরে কিছু কমু না। আমি আবার দয়ালু মানুষ ।
.
আমার বকবকানির মাঝেই উনি আচমকা আমার বা হাতটা টান দিয়ে ধরে উনার বুকের সাথে মিশিয়ে নিলেন। ঘটনায় আমি তো কেঁদে দেওয়া অবস্থা। একি ভয় পেল না কেন ? এটা আবার কেমন জ্বীন? আমি আজকে শেষ। আমার আর ডাক্তার হওয়া হইলো না। আম্মু, আব্বু, ভাইয়া সবাইকে বিদায়। আর বেঁচে থাকা হলো না। কথাগুলো ভাবছিলাম হঠাৎ উনি আমাকে জোড়ে একটা চিমটি কাটলেন। সাথে সাথে আমি ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলাম। এ আবার কেমন জ্বীন রে বাবা আমারে চিমটি মারছে!
.
—- এই ডাফার! আমাকে তোর জ্বীন মনে হয?
.
—- জ্বীনকে কি ভুত মনে করব নাকি ? তাহলে আমাকে ছেড়ে দিবেন জ্বীন ভাই? প্লিজ! আমি এক অবুঝ বাচ্চা আমাকে মারবেন না।
.
আমার কথায় উনি রুম কাপিয়ে হেঁসে উঠলেন। কোনোরকম নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন…..
.
—- আমি জ্বীন? লাইক সিরিয়াসলি আলো?এতোদিন তোকে বোকা বলতাম বাট আজ বুঝলাম তুই বোকার থেকেও অধম।
.
এইটুক বলে উনি আবারও রুম কাপিয়ে হেঁসে উঠলেন। রাগে আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে। ব্যটায় বলে কি আমি নাকি বোকার থেকেও অধম? সালা জ্বীনের বাচ্চা আজকে তোর একদিন কি আমার একদিন! কিছুটা রেগে বললাম…..
.
—- কি বললেন আমি বোকা? বোকামির কি করেছি?
.
—- বোকা না। তোকে বোকা বললে বোকারাও লজ্জা পাবে।
.
— কি করছি আমি?
.
—- কি করিস নি? তুই কখনো শুনেছিস জ্বীন ঘরে ঢুকে? তাও যেই ঘরে কুরআন শরিফ থাকে সেই ঘরে। আচ্ছা ওটা বাদ দিলাম এই যে আমি তোর এতো কাছে তোকে ধরে আছি তোর হাতে কুরআন শরিফ সেটাও ভয় পাইনি। তাহলে আমি জ্বীন কি করে হলাম?
.
এবার আমার মাথা কাজ করল। সত্যি তো! উনি ভয় পেল না কেন? তাহলে কি উনি জ্বীন না? তাহলে এতো রাতে ছাঁদে যাবে কেন?
.
—- কিরে বল…
.
—- আপনি এতো রাতে ছাঁদে যাবেন কেন বলছেন?
.
—- তোর ঘুম পাচ্ছিল ছাঁদ থেকে হেঁটে এলে ভালো লাগবে। ঘুমটা চলে যাবে। দেন পড়তে বসবি তাই।
.
উনার কথা শুনে তো আমার শরীরে আগুন ধরে গেল। খাটাশটা বলে কি? সামান্য এইটুকুর জন্য এতো কাহিনী? এটা কি আগে বলতে পারতো না? খালি খালি এতো ভয় দেখানোর কি ছিল। দাঁড়া খাটাশ তোরে দেখ কি করি আমি? তোর বউরে রোজ রাইতর জ্বীনে ধরব আর তোর বউ তোরে খুন্তি দিয়া মারব। দেইখা লইস হুহ…। আল্লাহ! আমি কিন্তু এই খাটাশের বউ না। আমি এক অবুঝ বাচ্চা মাইয়া।
.
________________
.
রাত ১ টা বেজে ১২ মিনিট। খাটাশটা বসে বসে ফোন টিপছে। আর আমাকে এই রাতে ছাঁদের মধ্যে হাঁটাচ্ছে। কেমনডা লাগে। ইশ! একটু ঘুমামু দিলনা ঘুমাইতে । কে কইছিল এই খচ্চরটারে বিয়ে করতে? আমার জীবনটাই তেজপাতা ।
.
—- কিরে হাঁটার জোড় নাই? দ্রুত পা চালা।
.
—- যাচ্ছি…..
.
—- ঘুম চলে গেলে বলিস।
.
—- আমার ঘুম নেই তো! চলুন রুমে গিয়ে বিশ্রাম নিব। খুব টায়ার্ড!
.
—- কি বললি? শুনিনি আবার বল..
.
—- বলেছি বিশ্রাম নিব।
.
—- দেব কানের নিচে এক ঠাটিয়ে? এই না বললি ঘুম নেই? তাহলে আবার কিসের বিশ্রাম?
.
—- দেখুন আমি খুব ক্লান্ত । এখন ঘুমাই সকালে উঠে পড়ব। প্রমিজ!
.
—- না এখনই।
.
—- প্লিজ… প্লিজ! ভাইয়া আমি না আপনাদের সবার আদরের বোন। প্লিজ!
.
—- এই দাঁড়া দাঁড়া… আমি তোর ভাইয়া কিভাবে ?
.
—- কেন? আপনি বড় আব্বুর ছেলে। সো ভাইয়া । আমি আবার গুড গার্ল বড়দের সম্মান দিয়ে কথা বলি অলটাইম।
.
—- দেব এক ঠাটিয়ে বেয়াদব মেয়ে? আহা! কি আমার গুড রে বরকে বলে ভাইয়া। ডাফার! যা ঘুমা। সকাল ৫ টায় যেন উঠতে পারেন মনে থাকে যেন।
.
—- এ্যা… ৫টা??? এখনই তো বাজে ১:৩০ । মাত্র সাড়ে ৩ ঘন্টা?
.
—- হ্যাঁ..। কেন?
.
—- প্লিজ এটা ঠিক না। এট লিস্ট ৪ ঘন্টা ঘুমোনো উচিত।প্লিজ ….
.
—- ওকে যা।
.
কথাটা শুনে খুশিতে উনাকে জড়িয়ে ধরে বা গালে একটা চুমু দিয়ে আমি রুমে দৌড়। ঘটনায় চমকে গিয়ে উনি ওখানেই ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো বুঝতে পারে নি আমি এমর কিছু করব। আর এইদিকে আমি কি করলাম নিজেও বুঝলাম না। হয়তো খুশিটা সামলে নিতে পারিনি। কিন্তু হয়তো এই খুশির ১২টা উনি কাল বাজাবেন।
.
রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম। সাথে সাথে পাড়ি জমালাম স্বপ্নের ঠিকানায়। যেখানে নেই কোনো কষ্ট,নেই কোনো ভয়, নেই কোনো ব্যাথা,দুঃখ,যন্ত্রণা । যেখানে শুধু সুখ আর শান্তি।
#চলবে……..