#পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে❤❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤
#পর্বঃ ১০❤
.
.
🍁
.
জ্ঞান ফেরার পর বোঝার ট্রাই করলাম কোথায় আছি।। রুমের ছাঁদ দেখে যা মনে হচ্ছে এটা তো আমার রুম না৷ আমার রুমের ছাঁদটা তো এরকম না। ডান পাশের দেয়ালটাও তো আমার রুমের মতো না। মনে মনে হাজারটা কোশ্চেন নিয়ে বা’দিকে ফিরতেই মনে হলো ৪৪০ ভোল্টের শক খেলাম। একি আমি হসপিটালে কি করছি? আর এভাবেই বা সুয়ে আছি কেন? আর ভাইয়াই বা কই? আশ্চর্য!! আমি তো ভাইয়ার সাথে চা- বাগানে বেড়াতে গিয়েছিলাম তাহলে? বেশকিছুক্ষণ ভাবনা চিন্তার পর সেদিনের কথা মনে পড়তেই শুয়া থেকে লাফিয়ে উঠে বসে পড়লাম। একি আমি বেঁচে আছি!! ওহ মাই গড!!😱 এতো বড় এক্সিডেন্টের পরেও বেঁচে আছি? না না এটা কি করে হয়। আচ্ছা এটা আমার ভুত না তো??🤔 শুনেছি এক্সিডেন্টে মানুষ মারা গেলে নাকি ভুত হয়ে ফিরে আসে। আমিও ভুত হয়ে গেলাম!🥺 যাক ভালোই হলো। কি মজা! এতোদিন মানুষদের হয়ে সবাইকে জ্বালিয়ে মেরেছি এখন ভুত হয়ে জ্বালিয়ে মারব 😂। আমার ভাবনার মাঝে এক বালতি পানি ঢেলে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে এলো একজন ২৫/২৭ বছর বয়সী পুরুষ ডক্টর তার পেছনে দেখা গেল একটি ছেলেকে। বয়স ২৬/২৭ নাগাদ হবে। ছেলেটিকে চিনতে আমার বেশি কষ্ট হলো না। হুম,, আমার বুড়ো ভাইয়াটা 😂। ওহ মাই গড!! একি অবস্থা ওর? মুখে খোঁচাখোঁচা দাঁড়ি গজিয়ে😱। মাথার চুল এলোমেলো। মুখটা কি শুখনো। দেখে মনে হয় কতো টেনশনে আছে,, কতোদিন ঘুমায় না। আচ্ছা!! আমি ভুলভাল দেখছি না তো?? 🤔 আমি কি এক্সিডেন্টের সাথে চোখও হারাইলাম? কানা হইয়া গেছি আমি🥺? ভাবনার মাঝেই ডক্টর বললেন….
.
—– কেমন আছেন মিস. আলো? এখন কেমন ফিল করছেন?
.
—– জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
.
ভাইয়াকে হাতের ইশারায় কাছে ডাকলাম। কথা বলতে কেমন যেন কষ্ট হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। মাথায় লাগছে কথা বলতে গেলে। ভাইয়া আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন….
.
—– কেমন আছিস বনু?( কান্না জড়ানো কন্ঠে)
.
—– ভাইয়া…
.
এইটুক বলেই কেঁদে ফেললাম। খুব ভালো লাগছে আমার। খুব খুশি আমি। এট লিস্ট বেঁচে তো আছি। আবার ভাইয়ার সাথে ঝগড়া করব,, মারামারি করব। আবার প্রিন্সেস ডাকটা শুনব। আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া। ভাইয়ার কথায় ভাবনার ছেঁদ হলো…
.
—- কাঁদছিস কেন বুড়িটা? প্লিজ কাঁদিস না। চুপ কর প্লিজ।
.
আমি কিছু বলব তার আগেই সবাই হুর মুরিয়ে ভেতরে ঢুকে এলো। এসেই আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরে মরা কান্না জুড়ে দিল।
.
—- আম্মু তুমি এভাবে কাঁদছো কেন? আশ্চর্য!! আমি মারা যাইনি তাতেই এমন করছো। মারা গেলে যে কি…
.
আর কিছু বলার আগেই আম্মু আমার মুখ চেপে ধরল।।
.
—– এসব বলতে নেই মা।
.
আম্মুর কথার মাঝেই আব্বু বলে ওঠে….
.
—- তুমিই কি একা কথা বলবে আমার মেয়ের সাথে? আমাকেও কথা বলতে দাও।
.
আব্বু একপ্রকার জোড় করে আম্মুকে সরিয়ে দিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। করুন কন্ঠে বললেন…..
.
—- কবে শেষ হবে তোর বাচ্চামো প্রিন্সেস? কেন দুষ্টুমি করিস বলতো? তুই কি জানিস না তোকে আমরা কতো ভালোবাসি? এতোগুলো দিন তোকে ছাড়া কিভাবে কেটেছে আমাদের জানিস? ( চোখের পানি মুছে)
.
আমি চোখ- মুখ উল্টে বাবার দিকে তাকিয়ে আছি। তাকিয়ে আছি বললে ভুল হবে বোঝার চেষ্টা করছি আমর সাথে ঠিক কি হচ্ছে। বাবা কি বলছে এতোগুলো দিন? এতোগুলো দিন কই? আমি তো কালই এক্সিডেন্ট হলাম।
.
—- এতোগুলো দিন মানেহ? কতোগুলো দিন আব্বু?
.
আব্বু কিছু বলার আগেই আম্মু বলল…
.
—- পুরো ছয়টি মাস।
.
—- কিহ?? তোমাদের মাথা ঠিক আছে? আমার তো কালকেই এক্সিডেন্ট হলো।
.
—- কাল না বনু আজ থেকে ৬ মাস ৭ দিন আগে। অর্থাৎ, ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ তোর এক্সিডেন্ট হয়েছিল। বনু…
.
ভাইয়া কিছু একটা বলতে চেয়ে আম্মুর জন্য থামতে হলো। কারণ ভাইয়া কিছু বলার আগেই আম্মু বলল….
.
—- তোরা কেন বুঝিস না আমাদের কষ্ট? এতো বড় হয়েছিস এখনো কথা শুনিস না কবে শুনবি কথা? এজনতো এমন করে ছেড়ে চলে….
.
ভাইয়া আম্মুকে আর কিছু বলতে দিল না। আম্মুকে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। এতোক্ষণে আমি বুঝতে পারলাম সূর্য আর আপু আসেনি। কিন্তু কাউকে কিছু বললাম না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে আব্বুকে উদ্দেশ্য করে বললাম…
.
—- আব্বু আম্মু কি বলতে চাইলো?
.
—- তেমন কিছুই না প্রিন্সেস।
.
—- তেমন কিছুই না বললে হলো? কি বলতে চাইছে সেটা বলো।
.
আব্বু আমার কোনো কথার উত্তর দিল না। টলমল চোখে আইসিইউ থেকে বেড়িয়ে গেলেন। সাথে সবাই। আমি শত ডাকার পরেও ফিরে তাকালেন না। কি হয়েছে এদের? সবাই কি লুকোচ্ছে আমার থেকে?
.
🍁
.
বিকেল ৫ বেজে ১০ মিনিট। কেবিনে শুয়ে চোখ বন্ধ করে আছি। ভাবছি সূর্য বা আপু কেন এলো না? দেখা করতে আসেনি বুঝলাম এটলিস্ট ফোন তো করতে পারত। তাও করল না। কেন? আমি কি এতোই খারাপ? নাকি প্রয়োজন মনে করেনি? ভাবনার মাঝেই ভাইয়া দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে এলো…..
.
—- বুড়ি কেমন আছিস এখন?
.
আমি কোনো উত্তর দিলাম না। বরং ভাইয়ার দিকে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম।
.
—- আম্মু তখন কি বলতে চেয়েছিল ভাইয়া?
.
—- ক..কই ত..তেমন কিছু না। ( কিছুটা তুতলে)
.
—- ভাইয়া আমি জানি তুমি আমাকে মিথ্যা বলছ। কি লুকচ্ছো প্লিজ বলো। ( মিনতি স্বরে)
.
—- কিছুনা বললাম তো।
.
—- ওকে ফাইন বলা লাগবেনা। আমি বাসায় যাবো।
.
—- হুম যাবি তবে আরো কিছুদিনপর। সবেমাত্র আইসিইউ থেকে বেড়িয়েছিস। ডক্টর এখন রিলিজ করবে না।
.
—- আমি কিছু শুনতে চাই না। আমি বাসায় যাবো মানে যাবো। আর আজই। ( রেগে)
.
ভাইয়া জানে আমি যা চাই তাই আমাকে দিতে হয়। তাই আর রাজি না হয়ে পারল না।
.
—- আচ্ছা ঠিক আছে। এখন এতো রেগে মাথায় প্রেশার দিস না প্লিজ বনু। আমি ডক্টরের সাথে কথা বলে বাসায় সব রেডি করতে বলি।
.
— রেডি মানে? বাসায় আবার কি রেডি করবে?
.
— ও কিছুনা। তোর ঘরটা গুছাতে বলব। তুই এতো প্রশ্ন করিস কেন বলতো বনু?
.
—- মন চায় তাই।
.
ভাইয়া আর কিছু বলল না। কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেল। হয়তো বুঝতে পেরেছে আমি রেগে আছি। আমার তো সেটা নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নেই। আমার মাথায় তো ঘুরছে অন্য বুদ্ধি আর সেটা না জানা পর্যন্ত আমার শান্তি নেই। তাই আজই আমাকে বাড়ি যেতে হবে। এট এনি কস্ট!!
#চলবে….
[ সরি গাইস এতোদিন অপেক্ষা করানোর জন্য। তাও পার্টটা ছোট করে দিলাম। একচুয়ালি খুব অসুস্থ 😥😥। কিছুই ভালো লাগেনা। তবে ইনশাল্লাহ কাল থেকে রেগুলার হবো। রি-চেইক করা হয়নি ভুলক্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ ❤।]