বৃষ্টি_থামার_পরে পর্ব ২৪: #I_forever_you লেখিকা: #Lucky_Nova

0
434

গল্পের নাম : #বৃষ্টি_থামার_পরে
পর্ব ২৪: #I_forever_you
লেখিকা: #Lucky_Nova

“রিল্যাক্স কাপকেক! আমি থাকতে কোনো ভূত ছুঁতে পারবে তোমাকে?” ফিচেল গলায় বলল এরোন।
কাঙ্ক্ষিত আওয়াজ কানে আসতেই মিহি কান্না থামিয়ে দিলো। ধরফরিয়ে মাথা তুলল সে। কিন্তু না। চারিপাশ এখনো অন্ধকার। কোনো আলোর ছিটেফোঁটাও নেই। কিন্তু কথা ত শুনলো ও মাত্রই!
“কোথায় আপনি?” প্রশ্নাত্মক ভেজা কন্ঠে বলে অন্ধকারেই চোখ বুলাতে লাগলো মিহি। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল ও।
কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানেও কোনো উওর এলো না৷ কিছু দেখাও গেল না। আবার আগের মত শুনশান নীরবতা। আর ঘুটঘুটে অন্ধকার।
মিহি জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো। একহাতে চেয়ারের ব্যাকসাইড চেপে ধরলো।
“সামনে কেনো আসছেন না!” উতলা হয়ে অস্থির কন্ঠে বলল মিহি।
সে আবার নিশ্চুপ! সে কি মজা নিচ্ছে! ভয়ে মরে যাচ্ছে একজন আর সে মজা নিচ্ছে!
“আপনি অনেক জঘন্য। অনেক খারাপ।” অভিমানী স্বরে বলল মিহি।
মিহির এখন সত্যিই কান্না পাচ্ছে। অন্ধকারটা সত্যিই সহ্য হচ্ছে না।
মিহির চোখের কোনে জল চলেও এলো। মাথা নিচু করে নাক টেনে চোখ মুছে ফেলল সে।
ঠিক সেই মুহূর্তেই ফোনের ফ্ল্যাসলাইট জ্বাললো এরোন।
মিহি ঝট করে মাথা তুলল। ওর থেকে বেশ খানিকটা দূরত্বে দাঁড়ানো সে।
মিহি যেন প্রাণ ফিরে পেল। তবে কাছে যাবার উদ্দেশ্যে দুই পা বাড়াতে না বাড়াতেই বন্ধ হয়ে গেল লাইট।
মিহি থম মেরে দাঁড়িয়ে পরলো।
“তোমার পিছনে কি যেন একটা আছে। বিদঘুটে আকৃতির কিছু।”
শোনা মাত্র মিহির কলিজার পানি শুকিয়ে গেল। চোখ কোটর থেকে বের হয়ে আসার উপক্রম। শরীর যেন অসার হয়ে গেল ভয়ে।
“সত্যিই। পিছনে দেখো একবার।”
মিহি কালবিলম্ব না করে অন্ধকারেই দৌড়ে গিয়ে এরোনের গলা ঝাপটে জড়িয়ে ধরল।
আচমকা এভাবে ধরায় ব্যালেন্স রাখতে মিহিকে সহ দুইপা পিছিয়ে গেল এরোন। অতঃপর নিঃশব্দে হেসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিলো ওকে।
মিহি চোখ বুজে হাঁপরের মত শ্বাস নিতে লাগলো। ভালই ভয় পেয়েছে সে। যা এ জীবনে আগে পায়নি।
“জোঁক, ভূতের চেয়ে আমি প্রিয়?!” ফিসফিসিয়ে ফিচেল গলায় জিজ্ঞেস করল এরোন।
মিহি উওর দিলো না। আদৌও কথা কানে নিয়েছে কিনা সন্দেহ।
এরোন আর কিছু বলল না। মুহূর্তটাকে অনুভব করতে লাগলো। অদ্ভুত একটা ভালোলাগা কাজ করছে যেন।
বেশ খানিকটা সময় নিয়ে শান্ত হলো মিহি। নিজের অবস্থা বুঝে হাতের বাঁধন আলগা করলো। বুক ধুকধুক করছে আবার। এভাবে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরছিলো চিন্তা করেই অস্থিরতা বাড়লো। লজ্জায় সরে যেতে চাইলো ও।
কিন্তু আরেকজন ত ছাড়ছে না।
“ছাড়ুন আমায়।” মিনমিনে গলায় বলল মিহি।
“উহু।”
মিহি কিছুসময়ের জন্য হতবুদ্ধি হয়ে গেল। তারপর নিজেকে সামলে এরোনকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে মিনমিনে কন্ঠে বলল,”ছাড়ছেন না কেনো আপনি?!”
“আমার ইচ্ছা।” আদুরে গলায় বলেই এরোন মিহিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
মিহি হকচকিয়ে গেল। দম যেন বন্ধ হয়ে যাবে এখুনি। এত শক্ত করে কেউ ধরে!
“আ…আপনি ছাড়বেন?” বলেই মিহি ছটফট করতে শুরু করে দিলো।
“চুপচাপ থাকতে পারো না!” হালকা বিরক্তি নিয়ে বলে এরোন।
“না পারি না। ছাড়ুন আমাকে।” আবার সেই তেজী কন্ঠ মিহি।
“আমার ত মনে হয় আপনিই অন্ধকার বানিয়েছেন। যাতে এসব করতে পারেন। আমাকে এত ভয় দিয়ে তারপর…। ছাড়ুন আমাকে।”
এরোন মুচকি হেসে হাত আলগা করলো। সাথে সাথে মিহি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সরে দাঁড়ালো।
অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তবে দুইজন দুজনের উপস্থিতি ঠিকই অনুভব করতে পারছে।
মিহি ঠোঁট কামড়ে কি করবে ভাবতে লাগল। এতই অন্ধকার যে, সাহস করে নিজের রুমে গিয়েও একা বসে থাকতে পারবে না ও।
এরোন ফোনের লাইটটা আবার জ্বাললো। মিহি চোখ তুলে তাকালো।
এরোন মৃদু হেসে অন্য হাত বাড়িয়ে মিহির হাত ধরলো।
মিহি বিচলিত হয়ে কিছু বলতে যাবার আগেই এরোন ওর হাত ধরে সিঁড়ির দিকে অগ্রসর হলো।
মিহি কপালে ভাজ ফেলে চুপচাপ এগিয়ে গেলো।
এরোন ওকে নিয়ে সোজা ছাদে চলে এলো। ছাদে এনে মিহির হাত ছেড়ে সামনে থেকে সরে দাঁড়ালো।
মিহি ভ্রুকুটি করে এরোনের দিকে তাকালো। এরোন ইশারা করে সামনে তাকাতে বলল।
মিহি চোখ সরিয়ে সামনে তাকালো। কুচকানো ভ্রু জোড়া সোজা হয়ে এলো তৎক্ষনাৎ।
সামনেই একটা সাদা কাপড় বিছানো টেবিল। যার উপর কিছু খাবারের বাহার। টেবিলের মধ্যভাগে একটা মোমদানি। যাতে আছে তিন চারটা জলন্ত মোম। মৃদুমন্দ বাতাসে তাদের অগ্নিশিখা দুলছে। টেবিলের দুইপাশে দুইটা চেয়ারও রাখা।
এই সবের সাথে উপরের পরিষ্কার আকাশের অর্ধেক চাঁদ। দারুন অপূর্ব পরিবেশ।
ভুল না হলে এটাকেই হয়তো ক্যান্ডেল লাইট ডিনার বলা হয়।
মিহি এসব দেখে খুশিতে লাফিয়ে ওঠে নি। লাফিয়ে ওঠার কথাও না, তা এরোন জানে। তবে মনে মনে মিহি কতটুকু খুশি হয়েছে সেটাই বোঝার চেষ্টা করছে এরোন। যদিও তার মুখোভাব স্বাভাবিক।
“তারমানে আপনি ইচ্ছে করে আমাকে ভয় দিয়েছেন?” কাঁটাকাঁটা তবে নমনীয় গলায় বলল মিহি।
“আর এখানে এসব… এগুলো করে আপনি আমাকে…।” কথা শেষ না করেই থেমে গেল মিহি।
“আমি তোমাকে কি?” নমনীয় ভাবে প্রশ্ন করে বুকের কাছে হাত গুজলো এরোন।
মিহি শক্তপোক্ত মুখ করে কপালে ভাজ ফেলে নখ খুটতে খুটতে আড়চোখে এরোনের দিকে তাকালো। বলল, “আপনি যদি মনে করেন এসব করলে আমি আপনাকে মেনে নেব…”
“আমাকে মানতে কি সমস্যা তোমার? যখন সবাই সব মেনেই নিয়েছে!” রাগ দমিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বলল এরোন।
মিহি এরোনের দিকে ঘুরে তাকালো।
“আপনি নিজেও জানেন আমার মত ছিলো না। তাও আমাকে পাওয়ার জন্য আপনি আমাকে মিথ্যা বলে বিয়ে করলেন। আমি বার বার বলেছিলাম আমি ভুল করেছি। বার বার। অস্বীকার ত করছি না। আর না করবো। কিন্তু সেই ভুলের শাস্তি আপনি আমার সাথে সাথে আমার বাবাকেও কেনো দিলেন? আমাকে আমার বাবার কাছে কতটা ছোটো করে দিলেন! নিজের জেদ বহাল রেখে আমাকে তুলে আনলেন। ঠকিয়ে বিয়েও করলেন। আপনার এমন বেঠিক জেদ থাকলে আমার জেদ থাকতে পারে না! রাগ হতে পারে না? যেখানে আপনার জেদের জন্য আমার সাথে আপনি অন্যায় করতে পারেন সেখানে আমার জেদ থাকবে না? আপনি হয়তো বলবেন সবাই মেনে নিয়েছে। তোমার বাবাও নেবে বা নিয়েছে। কিন্তু আমি ত জানি। আমার বাবা মেনে নেবে না। তবে হয়তো একদিন মানিয়ে নেবে। কিন্তু যে দাগটা মনে লেগেছে সেটার কি হবে?” ক্ষীণ তবে ক্ষিপ্ত কন্ঠে কথাগুলো বলল মিহি। চোখের কোণে জল চিকচিক করছে ওর।
এরোন স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তিক্ত হলেও ত সত্যি! জেদের জন্য মিহির বাবার সাথে মিহির সম্পর্কটা ত সত্যিই বেশ খানিকটা হলেও নষ্ট হয়েছে।

একটু থেমে মিহি আবার বলল, “আপনার মনে হয় না, আমার নাটক করার প্রতিদান হিসেবে বিয়ে করে অনেক বড় প্রতিশোধ তুলে নিয়েছেন আপনি?”
শেষোক্ত কথাটায় এরোনের মেজাজ বিঘড়ে গেল। প্রখর দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁতেদাঁত চিপে বলল, “আমার অনুভূতি, ভালোবাসা এসব প্রতিশোধ মনে হয় তোমার! তোমার মনে হয় যে প্রতিশোধ নিতে বিয়ে করেছি তোমাকে?!”
“ভালোবাসলে কেউ জোর করতে পারে এটা আমি ত জীবনেও শুনি নি। ভালোবাসলে কেউ ঠকাতে পারে এটাও শুনি নি।” একরোখা হয়ে বলল মিহি।
এরোন কয়েক সেকেন্ড স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তারপর শীতল কন্ঠে বলল, “তাহলে শুনে রাখো আর দেখেও রাখো।”
মিহি কপাল কুচকালো।
“সব পারবো। দরকার হলে যে দাগ পরেছে তা মুছে দেওয়ার সম্পূর্ণ চেষ্টা করবো। শুধু তোমাকে ছাড়তে পারবো না।” গাম্ভীর্যের সঙ্গে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল এরোন।
মিহি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে অন্যদিকে তাকালো।
“জানো কেনো ছাড়তে পারবো না?” বলতে বলতে এগিয়ে আসতে লাগল এরোন।
মিহি হালকা অপ্রস্তুত হয়ে গেল। এলোমেলো দৃষ্টিতে তাকিয়ে পিছিয়ে যেতে লাগল সে।
আচমকা এরোন এক হাতে কোমড় আকড়ে ওকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। মিহি প্রচন্ড চমকালো।
“আ..আপনি..।”
“শিসস।” অন্যহাতের তর্জনী মিহির ঠোঁটের উপরে রাখলো এরোন।
মিহি বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকালো এরোনের দিকে।
এরোন গম্ভীর গলায় বলল, “ঠিক বলেছো তুমি। Actually I Don’t love you.”
মিহি হতবাক হয়ে তাকালো এরোনের মুখপানে। হৃদস্পন্দন যেন থেমে গেলো। অস্ফুটে বলে উঠল,”ম… মানে?”
এরোন মিহির মুখোভাব হয়তো পড়ে ফেললো।
ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা টেনে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে আবিষ্ট কন্ঠে বলল,”I don’t love you but I forever you Cupcake. I Really forever you.”
কথাগুলো কর্ণগোচর হতেই হৃদপিণ্ড নামক বস্তুটা যেন ধক করে উঠলো। চোখের কালো মনি প্রসারিত হয়ে এলো।
“চিরকালের জন্য তুমি আমার। এজন্যই। এজন্যই আমি ছাড়বো না। জোর করেই রাখবো।”
মিহির ভিতরে ভিতরে যেন ঝড় শুরু হয়ে গেল।
এরোন মুখ সরিয়ে এনে মিহির দিকে তাকালো। সে স্থির হয়ে মাথা ঈষৎ নুয়ে আছে।
“তুমি নিজেও ত ডিভোর্স চাও না।” নিচু তবে গাঢ়তর স্বরে বলল এরোন।
মিহি চমকে চোখ তুলে তাকালো। আবার সেই চোখে চোখ পরে গেল মিহির।
মোমের হালকা কমলাটে আলোয় সেই গভীর চোখের দৃষ্টি স্পষ্ট।
মিহি চোখ নামালো। শ্বাস নিতেও যেন হাঁসফাঁস লাগছে এখন।
এরোন অন্য হাতে মিহির গাল ছুঁয়ে দিতেই কেঁপে উঠলো মিহি। নামানো চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলল সে। অকপটে ঢোক গিলল কয়েকটা।
“চাও বলো?” আলতো গলায় প্রশ্ন করলো এরোন।
মিহি উওর দিল না। বুক ধুক ধুক করছে আবার।
এরোন গাল থেকে হাত গলিয়ে গলায় ডুবিয়ে দিল। মিহি শিউরে উঠে এরোনের বাহুর কাছের শার্ট খামচে ধরলো।
এরোন মুচকি হেসে একই স্বরে বলতে লাগল, “তুমি নিজেও জানো না তুমি কি চাও।”
বলতে বলতে মিহির মুখটা তুলে ধরলো এরোন। মিহি শিউরে উঠে চোখটা আরো খিচে নিলো।
দুজনের দূরত্ব আরো কমে এলো। উষ্ণ নিঃশ্বাস মুখে আছড়ে পরতেই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা হয়ে গেল মিহির। লোকটা কি করতে চাইছে!
মিহি কম্পিত অধরে কিছু বলতে চাওয়ার আগেই মুখ আগিয়ে এনে অধরযুগল বন্দি করে ফেললো এরোন।
মিহি চমকে চোখ খুলল। তবে অধরের গাঢ়তর স্পর্শে পরক্ষণেই চোখ বন্ধ করে ফেলতে হলো।
শীতল শিহরণ বয়ে যেতে লাগল শিরদাঁড়ায় বয়ে। শরীর অসাড় হয়ে গেল কিছুক্ষণের নিমিত্তে।

মিনিট পার হতে তবেই ছাড়া পেল মিহি। ছিটকে সরে গিয়ে উল্টোদিকে ঘুরালো ও। কাধ কাপিয়ে মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে লাগলো। হৃদপিণ্ড যেন গলার কাছে এসে লাফাচ্ছে।
“Tastes sweetest.” মৃদু হেসে গম্ভীরতার সাথে ক্ষীণ স্বরে বলল এরোন।
মিহির গাল লাল হয়ে এলো।
“অসভ্য, লুচ্চা লোক।”এক হাত দিয়ে ঠোঁট ঘষে মুছতে মুছতে বিড়বিড়িয়ে উঠলো মিহি। কপাল আর নাক কুচকে গেল তার।
এরোন নিঃশব্দে হাসলো।
“আসো আরেকটা করি।”
মিহি যেন লাফিয়ে উঠলো। চোখ ছানাবড়া করে দ্রুত গতিতে কয়েক পা সামনে এগিয়ে গেল সে।
ওর অবস্থা দেখে এরোন মৃদু আওয়াজ তুলে হেসে ফেললো।

(চলবে….)

(আজ দেওয়ার কথা ছিল না তাও দিলাম। কারণ গতদিন ছোটো দিয়েছিলাম। ব্যস্ত তাই পরের দিন থেকে আবার একদিন পর পর দেব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here