বৃষ্টি_থামার_পরে পর্ব ২৫: #প্রতিশোধ লেখিকা: #Lucky_Nova

0
442

গল্পের নাম : #বৃষ্টি_থামার_পরে
পর্ব ২৫: #প্রতিশোধ
লেখিকা: #Lucky_Nova

“অসভ্য, লুচ্চা লোক।”এক হাত দিয়ে ঠোঁট ঘষে মুছতে মুছতে বিড়বিড়িয়ে উঠলো মিহি। কপাল আর নাক কুচকে গেল তার।
এরোন নিঃশব্দে হাসলো।
“আসো আরেকটা করি।”
মিহি যেন লাফিয়ে উঠলো। চোখ ছানাবড়া করে দ্রুত গতিতে কয়েক পা সামনে এগিয়ে গেল সে।
ওর অবস্থা দেখে এরোন মৃদু আওয়াজ তুলে হেসে ফেললো।
হাসতে দেখে মিহির গা জ্বলে গেল। এখানে আর এক মুহূর্ত দাঁড়ানো যাবে না। না জানে আবার কি করে বসে।
মিহি কোনো দিকে না তাকিয়ে দ্রুতপদে ছাদের দরজার দিকে এগিয়ে গেল।
এরোন বাঁধা দিলো না। কারণ পুরো বাড়িটা এখনো অন্ধকারময়। মিহি যা ভিতু, অবশ্যই ফিরে আসবে।

ছাদের দরজা দিয়ে বের হতেই মিহির রাগী মুখটা মলিন হয়ে গেল। আবার সেই ঘুটঘুটে অন্ধকার।
এখন কি করবে! ফিরে যাবে! না অসম্ভব। ফিরে যাওয়া মানে নিজের অপমান।
কিন্তু এদিকে অন্ধকারের মধ্যেও তো ভয় করে।
মিহি মলিন মুখে বিরাট চিন্তায় মগ্ন হয়ে পরল।
মিহি ঘাড় ঘুরিয়ে ছাদের দরজার দিকে তাকালো একবার। তারপর কিছু একটা চিন্তা করে দরজার পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পরলো।
এটাই সঠিক হবে। ওখানেও যাবে না আবার নিচে অন্ধকারেও যাবে না। দুইয়ের মাঝামাঝি থাকবে। সাপও মরবে লাঠিও ভাঙবে না।

এরোন সন্দিহান চোখে তাকিয়ে রইল। এখনো আসছে না দেখে হালকা অবাকও হলো। ভূতের ভয় শেষ!
এরোন ব্যপারটা দেখার জন্য এগিয়ে গেল। তবে দরজার কাছে আসতেই পুরো বিষয়টা স্বচ্ছ পানির মতো পরিষ্কার হয়ে গেল।
মিহি এরোনকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে সরে দাঁড়ালো। একটু আগের ঘটনাটা আবার মনে পরে গেল ওর। মুখ ঘুরিয়ে নিলো সে।
এরোন এগিয়ে গিয়ে ওর হাত ধরলো। মিহি চমকে উঠে তাকালো।
তেজী স্বরে বলল, “আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন।”
এরোন হাসলো। নিঃশব্দ সেই হাসি। তারপর মিহিকে টেনে আবার ছাদে নিয়ে এলো।
মিহি হাত মোড়ামুড়ি করেও লাভ হলো না। ওকে চেয়ারে এনে বসিয়ে দিলো এরোন।
বসাতেই মিহি উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো। তবে তার আগেই এরোন একহাত টেবিলে আর অন্যহাত চেয়ারের হ্যান্ডেলে রেখে ওর দিকে ঝুঁকলো।
মিহি ভড়কে গিয়ে গুটিশুটি মেরে বসে অন্যদিকে মুখ ফিরালো।
“চুপ চাপ বসো। নড়লে কি করবো তা তো জানোই।” শীতল কণ্ঠে বললো এরোন।
মিহি শক্তপোক্ত মুখ করে মনে মনে গালি দিলো এরোনকে। গাল আবার লাল হয়ে এলো ওর।
এরোন সরে গিয়ে মুখোমুখি ওপাশের চেয়ারে বসলো।
“তোমাকে ভয় না দিয়ে কিছুই করানো যায় না। তার উপর ইদানীং আবার বেশিই পটরপটর শুরু করেছ! বিয়ের আগে তো সাধাসিধে, ভিতু টাইপ কাপকেক ছিলে। এখন যে স্পাইসি, হট-কাপকেক হয়ে যাচ্ছ!” কটাক্ষ করে বলল এরোন।
মিহি গরম চাহনিতে আড়চোখে একবার তাকালো।

আর কেউ কথা বলল না। আবার সেই নিস্তব্ধতা।
মিহি বেশ বুঝতে পারছে যে এরোন বুকে হাত গুজে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে ওর দিকে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে আছে।
মিহির অস্থির অস্থির লাগছে। শরীর ঘামছে। গলাও শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। ইদানীং এসবই হয়। কিন্তু কেন!
হয়তো লোকটার বেহায়াপনার জন্য। একটু আগেই তো…। মনে পরতেই মিহি আরো লাল হয়ে গেল। ভিতরে ভিতরে যেন আবার তোড়পাড় শুরু হলো।
“আ..আমি নিচে যাব।” কোনমতে বলল মিহি।
“কেনো?” কথার পিঠেই প্রশ্ন করলো এরোন।
মিহি চোখ সংকুচিত করলো।
“আপনি সব ইচ্ছে করে অন্ধকার করে রেখেছেন তাই না! জলদি সব ঠিক করুন। আমি আমার রুমে যাব। অন্ধকার পছন্দ না আমার।” একরোখা স্বরে বলল মিহি।
“রুমে যাবা! সিওর?” অন্যরকম ধাঁচে বলল এরোন।
মিহি চমকে তাকালো। এরোনের মুখে দুষ্টুমির হাসি।
যার অর্থ ভালোভাবেই বুঝে গেল মিহি। আর বুঝতেই হিঁচকি উঠে গেল।
এরোন প্রসস্থ করে হাসলো।
মিহি হিঁচকি তুলতে তুলতেই বলল,”এ..একদম উল্টাপাল্টা ক…কিছু করার চিন্তাও করবেন না।”
“উল্টোপাল্টা যেমন?” নিষ্পাপ ভঙ্গিমা তার।
মিহি দাঁতেদাঁত চিপলো। এমন ভাব করছে যেন জানে না কিছু!
এদিকে হিঁচকি থামাথামির নাম নেই। কী একটা অসহ্য!
“আপনাকে আমি জীবনেও মানি না।” কড়া নজরে তাকিয়ে বলল মিহি। কথার মাঝে দুইবার হিঁচকিও তুলল মিহি।
“তুমিও মানবা তোমার বাপও মানবে।” তীক্ষ্ণ চাহনির সাথে ত্যাড়াভাবে বলল এরোন।
“আমি নিচে যাব। আপনার সাথে কোনো কথা বলতে চাই না আমি।” তিক্ততার সাথে বলল মিহি।
এরোন নির্বিকার চিত্তে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। আর কত! এখন কি শ্বশুরকে হাত না করা অব্দি এমনই চলবে! কিন্তু শ্বশুড় তো আরেক ত্যাড়া। মানলেও ঘাড়ত্যাড়ামি করে স্বীকার করবে না। ওনাকে পথে আনতেই কিনা জীবনের অর্ধেক পার করে ফেলতে হয়!
‘শালার শ্বশুড়।’ বিরক্ত হয়ে মনে মনে বলল এরোন। তারপর মিহির দিকে তাকিয়ে বলল, “চুপচাপ এখানেই বসে থাকবা তুমি।”
“হ্যাঁ সেটাই! উঠলেই তো শুরু করবেন অসভ্যতা।” তর্ক করে বলল মিহি।
“এত তর্ক করো কেন তুমি?” বিরক্ত হয়ে গেল এরোন।
“সবসময় হুকুম চালাতে থাকেন কেন আপনি? সবকিছুতে জোর করতেই থাকেন।” মিহিও চোখমুখ পাকিয়ে উওর দিল।
এরোন মহা বিরক্তি নিয়ে তাকালো।
হিঁচকির জন্য গলা বুক ব্যথা হয়ে যাচ্ছে মিহির।হাত মুঠ করে বুকে আস্তে আস্তে চাপড় দিতে লাগল মিহি।
এরোন একটা ড্রিংকসের গ্লাস ঠেলে এগিয়ে দিয়ে থমথমে গলায় বলল, “এটা খাও।”

মিহি কথা বাড়ালো না। নিয়ে ঢকঢক করে গিললো সেটা। তাও হিঁচকি থামে না।
এরোন কিছু একটা চিন্তা করে আরেকটা গ্লাস এগিয়ে দিলো। মিহি সেটাও গিলে নিলো। হিঁচকির বেগ কমলেও এখনো আছে। অসহ্য লাগছে মিহির। এই হিঁচকি কত সময় থাকবে কে জানে। মাথা নুয়ে মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে লাগল মিহি।
এরোন আরেকটা গ্লাসে ড্রিংকস ঢেলে এগিয়ে দিলো। মিহি সেটারও অর্ধেক খেয়ে রেখে দিলো। পেট ভরে গেল কিন্তু হিঁচকি থামাথামির নাম নেই।
এরোন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে উঠে নিজের চেয়ার মিহির পাশে টেনে নিয়ে গেল।
মিহি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকাতেই এরোন চেয়ারে বসে মিহির কোমড় জড়িয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসলো ওকে।
মিহি ছানাবড়া চোখ করে এরোনের দিকে তাকালো। তাকাতেই চোখের চঞ্চল দৃষ্টি স্থির হয়ে গেল। এবার আর দৃষ্টি নামিয়ে নিল না মিহি। বরং তাকিয়েই রইলো। এমনকি পলক ফেলতেও ভুলে গেল।

কিছুক্ষণ পেরুতেই এরোন ক্ষীণ ভাবে বলল,”থেমে গেছে…হিঁচকি।”
মিহির টনক নড়লো। দ্রুত চোখ সরিয়ে নিয়ে ধরফরিয়ে নিজ অবস্থানে ফিরলো সে। অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে একহাত দিয়ে চুলগুলো কানের পিছনে গুজে নিলো। বুকের মধ্যে আবার টিপটিপ করছে ওর।
এরোন পুনরায় হাত বুকে গুজে নিয়ে বসল। মোমের আলোতে মিহি চেহারার এক পাশ জ্বলজ্বল করছে। বিশেষ করে আপেলের মত গালটা।
এরোন সরু চোখে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে হাত বাড়িয়ে দুই আঙুল দিয়ে মিহির গাল চেপে ধরলো।
মিহি তৎক্ষনাৎ ‘আহ’ বলে চমকে উঠে এরোনের হাতটা সরিয়ে দিলো। বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে এরোনের দিকে তাকালো ও। আচমকা এমন এমন কাজ করে বসে এই লোক! অদ্ভুত!
এরোন ঠোঁট এলিয়ে হাসলো। যা দেখে মিহি ভ্রু কুচকে এক হাতে গাল ঘষতে ঘষতে অন্যদিকে তাকালো।
“আরেকবার ধরি?” বিমোহিত কন্ঠে আবদার করে বসলো এরোন।
“জীবনেও না।” মিহি চমকে উঠে দাঁড়ালো। সরে গিয়ে রেলিঙ ঘেঁষে দাঁড়ালো সে। একটা হার্ট এট্যাক মনে হয় আজ এই ছেলে করিয়েই ছাড়বে!
“আপনি ফোন কেন করছেন না ইলেকট্রিসিটির লোকদের?” নিজেকে সামলে কটাক্ষ করে বলল মিহি।
“করলে আমার কি লাভ?” তেরছাভাবে বলল এরোন।
মিহি বোকা বনে গেলো।
“মানে?”
“তর্ক না করে এখানে আসো।” আদেশ করার ভঙ্গিতে বলে চেয়ারে হাত রেখে বসতে ইশারা করলো এরোন।
“বসব না আপনার পাশে।” কাঁটাকাঁটা গলায় বলে দিলো মিহি।
এরোন মুখ ফুলিয়ে একটা নিঃশ্বাসের ফেলল।তারপর দাঁতেদাঁত চিপে বিড়বিড়িয়ে বলল, “যেমন ঘাড়ত্যাড়া বাপ, তেমন মেয়ে!”
মিহি সরু চোখে তাকালো।
“আমার বাবাকে কি বললেন আপনি?”
এরোন প্রত্যুত্তরে কিছু বলার আগেই ওর ফোন ভাইব্রেট করে উঠলো। পকেট থেকে ফোন বের করে হাতে নিলো ও।
এরিক ফোন করেছে।
ফোন তুলে কানে দিলো এরোন,”কী?”
“বেল বাজে নাই? নাকি? কখন থেকে দাঁড়াই আছি দরজার কাছে? আর দুনিয়া অন্ধকার বানাই রাখছস কেন? পুরা বাসা অন্ধকার বানাইয়া ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করা লাগে?” তেরছাভাবে গটগট করে একসাথে অনেকগুলো প্রশ্ন করে বসলো সে।
“আসছি।” ভাবলেশহীন ভাবে বলেই ফোন কাটলো এরোন।
মিহি একহাতে কপাল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে হঠাৎ করেই। অদ্ভুত লাগছে। কী হচ্ছে নিজেই বুঝতে পারছে না।
খানিকক্ষণ আগে থেকেই এমন লাগছিলো যদিও সেভাবে পাত্তা দেয় নি।
এরোন ফোনটার ফ্ল্যাসলাইট জ্বালাতে জ্বালাতে বলল, “নিচে চলো। আর যদি একা ভয় না লাগে তো থাকো, আমি আসছি নিচ থেকে।”
“আপনি তখন কী খাইয়েছেন আমাকে?” কপাল ধরে রেখেই মিনমিনে কণ্ঠে প্রশ্ন করলো মিহি।
এরোন ভ্রুকুটি করে তাকালো।
তারপর কিছু একটা আন্দাজ করল।
বাঁকা গলায় বলল এরোন, “যাক অবশেষে কাজ করেছে! এখন যদি একটু মুখ থেকে মধুর কথা বের হয় তোমার!”
মিহি ভ্রুকুটি করে তাকালো।
“মানে?” কণ্ঠ জড়িয়ে গেল তার।
এরোন উঠে এসে ওর হাত ধরে বলল,”চলো নিচে। একা রেখে যাওয়া যাবেনা এখন। দেখা গেল আবেগে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়লা।”
মিহিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে এরোন ওকে নিয়ে নিচে নামতে লাগলো।
মিহির অদ্ভুত লাগছে চারিপাশ। সব গোল গোল ঘুরছে মনে হচ্ছে। চোখ ছোটো করে খুলে আছে সে কোনোমতে। মনে হচ্ছে মাথার মধ্যে ঝিঁঝিঁ পোকা ডাকছে। পা এলোমেলো ভাবে পড়ছে। শরীরের তাল ঠিক রাখতেই পারছে না যেন। আচমকা হুমড়ি খেয়ে পরতেই এরোন দুহাতে ধরে নিলো ওকে।
মিহি অনেক কষ্টে খুলে রাখা ছোটো ছোটো চোখে তাকালো এরোনের দিকে। ঠোঁট উলটে জড়ানো কণ্ঠে বলল,”মাথায় পোকা ডাকে কেনো?”
এরোন মুখ দিয়ে একটা নিঃশ্বাস বের করে দিয়ে মিহিকে সোজাভাবে দাঁড় করালো। কিন্তু সে দাঁড়াতেই পারছে না। মাথাও নুয়ে আছে। বোকামি করে বেশি খাওয়ানো হয়ে গেছে মনে হয়।
“ড্যাম ইট।” ক্ষীণ স্বরে বলে উঠল এরোন।
তারপর মিহির দিকে ঝুঁকে কপালে ভাঁজ ফেলে প্রশ্ন করলো, “আমার ফোনটা ধরতে পারবা না?”
মিহি কোনমতে চোখ পিটপিটিয়ে তাকালো।
এরোন মিহির হাতে ফ্ল্যাসলাইট জ্বালানো ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে ওকে কোলে তুলে নিলো। মিহি চুপচাপ বুকে মাথা গুজে রইলো।
নিচে এসে এরোন সোফাতে বসিয়ে দিলো মিহিকে।
মিহি ওর ফোন হাতের মুঠোয় নিয়ে ঝিমানো চোখে তাকিয়ে দেখতে লাগল।
“বসে থাকো।”
এরোন এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললো।
এরিক ক্লান্ত ভঙ্গিতে তাকালো। অবশেষে দরজাটা খুললো কেউ।
তবে ঘর পুরোই অন্ধকার।
“মেইন সুইচ অফ করেছিস নাকি তারই ছিড়ে ফেলেছিস!” সন্দিহান কণ্ঠে প্রশ্ন করলো এরিক।
এরোন ভ্রু কুচকে ফেললো।
“বউ পটেছে?” বলতে বলতে ভিতরে ঢুকলো এরিক। তারপর ভনিতা করে বলল,”বলিস না যে পটে নি! কারণ এত প্লান দিয়েও যদি কাজ না হয় তাহলে তো তোর ডুবে মরা উচিত।”
“ফালতু না বকে নিজের কাজ কর।” কটাকটা গলায় বলে এরোন দরজা বন্ধ করলো।
এরিক কিছু বলতে গিয়েও সোফার দিকে তাকিয়ে চুপ করে গেল।
মিহি মাথা হালকা নুয়ে থাকায় চুলগুলো সব মুখের সামনে এসে ঝুলে আছে। সাথে হাতে ফোনের ফ্ল্যাসলাইট ধরে থাকায় মনে হচ্ছে ভূত বসে আছে।
“তোর বউকে কি ভূতে ধরেছে নাকি? এমন করে কেন?” আগাগোড়া লক্ষ্য করে বলল এরিক।
“মদ খাইয়ে দিয়েছি। সারাদিন ঝগড়া করে তাই।” ভাবলেশহীন ভাবে বলে মিহির দিকে এগিয়ে গেল এরোন।
এরিক টাসকি খেয়ে দাঁড়িয়ে রইল। এটা কি শুনলো!
“চলো, উপরে চলো।” বলেই মিহিকে আবার কোলে তুলে নিলো এরোন।
“মেইন সুইচ অন করে নিস।” এরিককে উদ্দেশ্য করে বলে উপরে উঠে গেল এরোন।
এরিক নিঃশব্দে হাসলো।

🌸
মিহিকে নিজের রুমের বিছানায় এনে বসালো এরোন।
মিহি ঘাড় বাঁকিয়ে আশেপাশে তাকালো। অন্ধকার সব। শুধু ফোনের ফ্ল্যাসলাইট জ্বলছে।
“চুপচাপ শোও আর ঘুমাও।” বলতে বলতে ওকে শুইয়ে দিতে চাইলো এরোন। কিন্তু মিহি বাহু ধরে থামিয়ে দিয়ে জড়ানো গলায় বলল, “এত তাড়াতাড়ি ঘুমাবো না।”
“তো কি করবা তুমি?”
“পালাবো এখান থেকে।”
এরোন সরু চোখে তাকালো।
মিহি বিড়বিড়িয়ে বলতে লাগল,”এখান থেকে পালিয়ে যাব। রাক্ষসটা আসার আগে।”
এরোন প্রশস্ত হাসলো।
“পালিয়ে কার কাছে যাবা?” ভ্রু উঁচু করে নামালো এরোন।
মিহি চোখ তুলে ওর দিকে তাকানোর চেষ্টা করলো।
তবে পারলো না। চোখ খুলে রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ভার ভার লাগছে।
হঠাৎই ইলেকট্রিসিটি চলে এল। পুরো ঘরময় আলো জ্বলে উঠতেই মিহি চোখ মুখ কুচকে ফেললো।
এরোন বুঝতে পেরে উঠে গিয়ে লাইট বন্ধ করে ড্রিম লাইট জ্বাললো।
মিহির পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল,”জেদ না করে ঘুমাও এখন।”
মিহি শুনলো না। এরোন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল।
হঠাৎ মিহি চোখ মুখ কুচকে নিজের পেট চেপে ধরে ছটফট করতে শুরু করে দিলো।
দেখেই এরোন অনেক ভড়কে গেল, “কি হয়েছে? ব্যথা করছে?”
“বাথরুম যাব। বাথরুম। বাথরুম।”
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো এরোন। ধরে ধরে বাথরুমের সামনে নিয়ে আসল ওকে।
ভিতরে ঢোকার সময় মিহি এরোনের হাত টেনে ধরে বলল,”যদি ভূত আসে।”
“আসবে না। যাও।”
“আপনিও আসেন না।” করুণ ভাবে বলল মিহি।
“মাথা ঠিক আছে তোমার?!” চোখ পাকালো এরোন।
অবশেষে ঠেলেঠুলে ঢুকিয়ে দিয়ে দম নিলো এরোন।
কিন্তু ভিতরে গিয়ে তার বের হবার নাম নেই। এ কেমন জ্বালা! আরো খানিকক্ষণ অপেক্ষা করলো। তাও আসার নাম নেই।
“হয়নি তোমার? বের হও।” বাহিরে থেকে দরজায় নক করে জিজ্ঞেস করল এরোন।
“হয়েছে তো।” মিনিমিনে গলায় বলল মিহি।
“আজব! তো বের হও!” কপাল কুচকে বলল এরোন।
মিহি ধীরে সুস্থে বের হয়ে দেয়াল ধরে দাঁড়ালো।
ওকে দেখে এরোনের কপাল আরো কুচকে গেল।
“মাথা ভিজিয়েছ কীভাবে?”
“মাথায় পানি দিয়ে। ঝিঁঝিঁ পোকাগুলো ডাকছিলো মাথায়।” জড়ানো গলায় বলে মিহি।
মুখ দিয়ে একটা বিরক্তির নিঃশ্বাস বের করে এরোন। নিজের বোকামির জন্য আজ এই দশা।
“চলো বিছানায় বসো।”
ধরে ধরে মিহিকে বিছানায় বসালো এরোন। তারপর তোয়ালে এনে মাথা মুছিয়ে দিলো।
“এখন শোও।” বলেই ওকে শুইয়ে দিতে চাইতেই,
“এখনি না,” বলে বাধ সাধলো মিহি।
“চুপ।” কড়া গলায় বলে ওকে চুপ করিয়ে দিলো এরোন।
মিহি মুখ লটকালো।
“নড়বা না।” এরোন ওর গায়ে চাদর টেনে দিতে দিতে বলল। তারপর ফ্রেস হতে ঢুকে গেল।
এরোন যেতেই মিহি ভ্রুকুটি করে চাদরটার দিকে তাকালো। তারপর গা থেকে সরিয়ে নিচে ফেলে দিলো। মাথার চুলগুলো একহাতে টেনে ধরলো। মাথার মধ্যে এখনো ঝিমঝিম করছে। পানি দিয়েও লাভ হলো না।

ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে মিহির দিকে তাকায় এরোন। মাথার চুল এক হাতে টেনে ধরে চোখ মুখ খিচে আছে সে। গায়ের চাদরও নিচে পরে আছে।
“মাথা কি বেশি ব্যথা করছে?”
মিহি চোখ খুলে তাকালো ওর দিকে।
“ব্যথা না। ঝিঁঝিঁ ডাকে।” করুণভাবে জড়ানো গলায় বলল মিহি।
এরোন মুচকি হাসলো। এগিয়ে গিয়ে মেঝে থেকে চাদরটা উঠিয়ে নিয়ে মিহির পাশে গিয়ে শুয়ে পরে।
“আপনি আমার পাশে কেন শুচ্ছেন?” ভ্রুকুটি করে বাচ্চাদের মত প্রশ্ন করে মিহি।
এরোন উওর না দিয়ে মিহির গায়ে চাদরটা দিয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে যায়।
সাথে সাথে মিহি বিরক্ত হয়ে সরিয়ে দিয়ে বলে, “উফ, গরম লাগে। অসহ্য আপনি! বার বার কেন দেন!”
এরোন ভ্রু কুচকে তাকায়।
“আবার শুরু করেছো পটর পটর!”
মিহি এরোনের দিকে কিছুক্ষণ সরু চোখে তাকিয়ে রইলো। তারপর এগিয়ে এসে খপ করে ওর কাধের কাছের শার্ট হাতের মুঠোয় টেনে ধরলো।
এরোন বেশ অবাক হলো।
“আমাকে অনেক জ্বালিয়েছেন এই কয় দিন। খারাপ লোক একটা। আমি এর প্রতিশোধ নিবো।” চোখ পাকিয়ে বলল মিহি।
এরোন প্রশ্নাত্বক চোখে তাকালো।
বুঝে ওঠার আগেই মিহি মুখ এগিয়ে নিয়ে এরোনের গলায় জোরেই কামড় বসিয়ে দিলো।
ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেল এরোন। তবে শুধু একটা দিয়েই থামে নি সে। আরো দিতে থাকে।
“কী শুরু করেছো হঠাৎ!” বলেই মিহিকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে এরোন।
কিন্তু সে যেভাবে শুরু করেছে, তা থামানোর মত নয়। গলা থেকে কাধ অব্দি দাঁত বসিয়েছে। জ্বলে যাচ্ছে পুরোটা।
ওকে থামাতে এরোন ওর দুই হাত চেপে ধরে বিছানায় মিশালো।
মিহি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই এরোন বলল, “চুপচাপ থাকো। নাহলে পস্তাতে হবে পরে তোমার। তখন আমার দোষ দিতে পারবা না।”
মিহি কানে তুলল না। মাথা তুলে আবার কামড় বসিয়ে দিলো এরোনের গলায়।

(চলবে..)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here