হিয়ার_মাঝে ২২. #মেঘা_সুবাশ্রী ®️

0
660

#হিয়ার_মাঝে ২২.
#মেঘা_সুবাশ্রী ®️

যান্ত্রিক শহরের রাতগুলোও দিনের আলোর মতই, চারদিকে শব্দ আর আলোকসজ্জায় আলোকিত। রাতের আঁধারের ছিটেফোঁটা নেই কোথাও। নুবাহ নিথর শরীর নিয়ে চেয়ারে গা এলিয়ে বসে আছে। দৃষ্টি জোড়া দূর আকাশে জ্বলজ্বল করা তারার দিকে। নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে। আর কতদিন নিজেকে ধরে রাখবে সে। সময় যে ফুরিয়ে যাচ্ছে দ্রুতই। অথচ আজও তার ইমদাদকে খুঁজে পেল না। হতাশায় আচ্ছন্ন। দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়ে আছে বক্ষস্থল।

রুবি রাতের খাবারের জন্য ডাকতে এসে চৌকাঠে দাঁড়িয়ে পড়ল। নুবাহকে বিমর্ষ দেখে নিজের মনটাও ভারী হয়ে উঠল। কিভাবে মেয়েটাকে সত্যিই’টা বলবে। মাত্র কয়েকদিন হাতে সময় আছে। ইয়াফীর বাবা দ্রুতই বিয়ের আয়োজন করতে বলেছেন। উনার মায়ের অসুস্থতা বেড়ে গিয়েছে। তাই তো তোড়জোড় শুরু করেছেন। বিয়ের রিসিপশনের আয়োজন পরে করবেন। কোনো জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন থাকবে না এখন। মসজিদে বিয়ে পড়াবেন। এরপর সোজা নুবাহকে নিয়ে যাবেন তাদের বাড়ি। এই চরম সত্যি কথা মেয়েটাকে আদৌ এখন বলা সম্ভব। নিজের চেয়েও মেয়েটার জন্য বড্ড আফসোস হয়। তার সাধ্য থাকলে তিনি ঠিকই চেষ্টা করতেন, মেয়েটার মুখে হাসি ফুটাতে। নুবাহর পাশ ঘেঁষে দাঁড়ালেন। মাথায় হাত রাখলেন। নরম সুরে ডাকলেন, ‘নুবাহ।’

চটজলদি নুবাহ ঘাড় ঘুরালো। রুবিকে দেখে কিঞ্চিৎ অবাক হল।
‘কি হয়েছে খালামনি, কিছু বলবে?’
রুবির মুখে ঈষৎ হাসি।
‘তুই তো আর কিছু বললি না, ইমদাদের কোনো খবর পেয়েছিস।’

নুবাহ আলতো করে মাথা নাড়ালো।
‘নাহ, খালামনি। তবে হাজিরা খাতায় তিনটা ইমদাদ পেয়েছি। ইমদাদুল হক জাকী, ইমদাদ আহমেদ সৈকত, শেখ ইমদাদ ফারবেজ। এদের মধ্যে কোনটা আসল ইমদাদ কি করে বুঝব? তবু একবার দপ্তরির সাথে কথা বলেছি। তিনি কাল জানাবেন বলেছেন। দেখি কাল কি হয়?’

রুবির মুখে আঁধার নামল। ফের মেয়েটা কষ্ট পাবে। না সে ঐ ছেলের দেখা পাবে, না এই বিয়ে বন্ধ হবে। শুধুমাত্র মেয়েটাকে চিন্তামুক্ত রাখতে মিথ্যের আশ্রয় নিতে হয়েছে। কিন্তু আর কত? এবার তো সব সামনা সামনি হবে। কি যে হবে মেয়েটার। নুবাহর মাথায় আলতো করে হাত বুলালো আবার।

‘খাবি চল।’

নুবাহর হতশ্রী দৃষ্টিজোড়া খালার দিকে নিবদ্ধ। হুট করে বলে উঠল, ‘আচ্ছা খালামনি, আমি ইমদাদকে খুঁজে পেলে, তুমি সত্যি এই বিয়ে ভাঙতে পারবে।’

রুবি শুকনো ঢোক গিলল। আজকের দিন পেরুলেই আর কটা’ দিন আছে মেয়েটার বিয়ের। আর সে ভাঙবে বিয়ে। আদৌ সম্ভব এখন। নিশব্দে নিশ্বাস ছাড়ল। রুবির জবাব না পেয়ে নুবাহ ফের হতাশ হল। নির্বাক দৃষ্টি খালার দিকে,

‘খালামনি কিছু বলছো না কেন? পারবে না ভাঙতে?’

রুবি আবারও কপটার আশ্রয় নিল। মুখে কিঞ্চিৎ হাসি ঝুলালো। ফের বলে উঠল, ‘আগে তোর ইমদাদকে খুঁজে বের কর। তারপর দেখবি, আমি কি করব?’
নুবাহ নিজমনে ভরসা পেল। সে আগামীকাল খুঁজে আনবেই। এটাই তার মূল লক্ষ্যে এখন।’

চটজলদি খাবার খেতে গেল। দ্রুতই খেয়ে আবার নিজের রুমে ফিরে এল। অধর কোণে ঈষৎ হাসি। আকাশ পানে মুখ রেখে বলে উঠল,

জানেন ইমদাদ,
আপনি আসবেন বলে
কাটিয়েছে পুরো দ্বিপ্রহর।
বেলা বয়ে গেছে নিরবে,
আমি টেরই পাইনি।

ব্যাকুল ছিল অন্তঃকরন,
অসহায় চাউনি
চেয়ে ছিল ধূলিমাখা প্রান্তর।

কত রাত ঘুমায়নি,
খুঁজে বেড়ায় আনমনে।
দ্বিপ্রহরের বেলাতে
আজও পুড়ি মর্মদহনে।

দিন শেষে মাস গড়ালো,
বছর এল টপকে।
অপেক্ষা যে হয়নি শেষ
সময় গেল থমকে।

সূচনাতে ছিল সমাপ্তি!
এক বিষাদময় ইতি।
বলা হয়নি কোন কথা,
রচিত হয়নি রূপকথা,

তবু চাই ভালোবাসতে,
আপন করে রাখতে।
~ মেঘা সুবাশ্রী ~
_____

ক্লাস শুরু হওয়ার বেশ সময় আগেই এসেছে নুবাহ। ম্যাথ ডিপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়ানো। দপ্তরি চাচাকে আজকে ফের জিজ্ঞেস করল। কিন্তু তিনি অফিসে যেতে বলল। সে দপ্তরি চাচাকে কচকচে দুইশো টাকার একটা নোট দিল। কিঞ্চিৎ মুখের কোণে হাসি ফুটিয়ে বলল,

‘চাচাজান, তিনজন ইমদাদ নামে ছিল ম্যাথ চতুর্থ বর্ষে। তাই আমার তিনজনেরই কাগজগুলো লাগবে। এনে দিতে পারবেন। আমি বললে তিনজনের কাগজ আমাকে দিবে না। অফিস সহকারী’রা ঝামেলা করবে। নানান প্রশ্ন করবে তখন। প্লিজ, চাচাজান আপনি আমাকে সাহায্যে করুন।’

দপ্তরি বেশ অবাক হল। ভ্রুদ্বয় কুঁচকালো। ব্যগ্রগলায় বলল, ‘তিনজনের ক্যান লাগবো?’

‘আসলে ইমদাদ নামের একজনকে আমার প্রয়োজন। কিন্তু কোনটা আসল ইমদাদ, তা তো আমি জানি না।’

কিন্তু,,বলে দপ্তরি চুপ মেরে গেলেন। পরক্ষণেই বলল, ‘পাঁচশো টাকা লাগবো।’
নুবাহ দাঁত কিড়মিড়িয়ে উঠল। নিজমনে কিছু গালি ছুঁড়লো দপ্ততির দিকে। তবু মুখের কোণে ঈষৎ হাসি ফুটিয়ে রাখল। ব্যাগ থেকে পাঁচশো টাকার একটা কচকচে নোট তার দিকে মেলে দিতেই তিনি দ্রুতই পকেটে ঢুকিয়ে নিলেন। নুবাহ বাকি দুইশো টাকার নোট ফেরত চাইল। সেই টাকা ফেরত দিতে দপ্তরি জোর গলায় অস্বীকার করল। উল্টো বলে উঠল,

‘তোমার জন্য এত ঝুঁকি নিয়া কাজ করতেছি। আবার বাকি টাকাও চাও।’

নুবাহর মেজাজ তিরিক্ষি হল। কিন্তু বিপাকে পড়ায় চুপ করে আছে। নয়ত এই দপ্তরিকে সে দেখে নিত। গজগজ করতে করতে বাইরের বেঞ্চিতে গিয়ে বসল। অপেক্ষারত অনেকক্ষণ, কখন তার অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে। দীর্ঘ সময় পর দপ্তরি কিছু কাগজ আনল। কিন্তু তাতে ইমদাদ নামের ব্যক্তিদের ফোন নাম্বার মিলল শুধু। পূর্বের কোনো কাগজ নেই। কিছুটা মনঃক্ষুণ্ন হলেও নিজের মনোবল দৃঢ় রাখল। নাম্বারগুলো নিয়ে অফিসের সামনে থেকে বের হয়ে এল। যাই হয়ে যাক, ইমদাদকে খুঁজে বের করবেই।

কিছুদূর আসতেই দৃষ্টি গেল এক রূপবতী মেয়ের দিকে। গায়ে লাল রঙা জামার সাথে মেরুন বর্ণের হিজাব পরিহিত। এক কথায় চোখ ধাঁধানো সুন্দরী। খিলখিল করে হাসছে মেয়েটা। অসাধারণ দৃশ্য লাগল তার কাছে। মেয়েটা জিতুর পাশে বসে গল্প করছে। কি বলছে তা বুঝতে পারল না। তবে তারা বিশেষ কিছু নিয়েই কথা বলছে বোধহয়। এটা কি জিতুর গার্লফ্রেন্ড না’কি? হতে পারে। যেভাবে কথা বলছে। দূর থেকে তাই মনে হয়। এর আগে তো তাকে দেখেনি সে। তবে এই ছেলে এখানেও মুঠোফোনের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছে। শুধু মাথা নাড়িয়ে মেয়েটার সাথে কথা বলছে। মেয়ের সাথে কথা বলতে লজ্জা পায় নাকি? উহুম,, মোটেও না। একদমই লজ্জা পায় না। তার সাথে কেমন রুক্ষভাষায় আচরণ করেছে। তখন দেখে তো মনে হয়নি লজ্জা পায়। এই জিতুর ডিম মনে হয় আসলেই এমন। ভেংচি কাটলো নিজমনে। জিতু ভীতু।
_________

নুবাহ যেতেই জিতুর চোখ পড়ল তার যাওয়ার দিকে। সে ভেবে পায় না, এই মেয়ে কেমেস্ট্রি বিভাগের হয়ে ম্যাথ বিভাগে কেন যায়? প্রায় তিনদিন ধরেই দেখে আসছে। এই মেয়ে যখন তখন ম্যাথ বিভাগে চলে যায়। তার যাওয়ার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে সে। অদ্ভুত চিন্তা মাথায় ঘুরছে। জিতুর এমন অন্যমনস্ক ভাব দেখে পাশে বসা মিউমি মুখে হতাশার সুর তুলল,

‘অন্যদিকে তাকিয়ে কি দেখছো জিতু, অথচ তোমার পাশে আমি সেই কখন থেকে বসে আছি। একবারও চোখ তুলে তাকালে না। তুমি এখনও আগের মতই আছো, একটুও বদলাও নি।

বেশ শব্দ করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল মিউমি। ফের বলে উঠল,

আমি মেয়ে’টা কি সত্যি অসুন্দর, নাকি দেখতে অনেক বাজে। তাকে একটা সুযোগ দেওয়ার প্রয়োজনও মনে করলে না। তোমার জন্য আজও বিয়ের পিঁড়িতে বসিনি। কত বিয়ে নাকচ করে দিয়েছি। আজও তোমার আশায় দিন গুণী, কতবার বলেছি ভালোবাসি তোমাকে। তাও একবারও মুখ তুলে চাইলে না। তোমার জন্য সবচেয়ে স্টাইলিশ স্মার্ট মেয়েটা নিজেকে হিজাবে আবৃত করেছে। যে চুল খোলা রেখে, মুখে কৃত্রিম সাজসজ্জায় নিজেকে মাতিয়ে রাখত, সেই মেয়েটা আজ সাজতেই ভুলে গেছে। অথচ তুমি তাকে কোনদিন মনের একটা কোণেও জায়গা দাওনি। ভালোবাসার সংজ্ঞা তো আমার থেকে তুমিই ভালো জানো। তাও একটা সুযোগ দিলে না। বড্ড আফসোস থাকবে আমার জীবনে। তোমার হৃদগহীনে আমার জন্য কখনো ফুল ফুটেনি। এত কাছে থেকেও তোমার ভালোবাসা পায় নি। মাঝে মাঝে বড্ড অবাক হয়। অথচ তুমি এমন একজনকে ভালোবাসলে,,,, যাই হোক। কিন্তু এখন তো তুমি ঠিকই বিয়ের পিঁড়িতে বসছ। যদি অন্য একটা মেয়েকে সুযোগ দিতে পারো, তাহলে সেই সুযোগ আমাকে দিলে দোষ’টা কোথায়, জিতু?’

দীর্ঘ সময় পর জিতু নিজের মাথা তুলল। তীক্ষ্ণদৃষ্টি মিউমির দিকে। মুখের কোণে ঈষৎ হাসি। তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,

‘সৌন্দর্য, এই সৌন্দর্য যদি ভালোবাসার মূখ্য কারণ হত, তাহলে ভার্সিটির সবচেয়ে সুদর্শন ছেলে চিন্ময় কখনই শ্যামবর্ণা মেয়ের প্রেমে পড়ত না। তাও সেই স্কুল জীবন থেকেই নিজের মনগহীনে ঐ একটা মেয়ের ছবি আগলে রাখত না। রাতের পর রাত তাকে নিয়ে কবিতা লিখত না। কিন্তু তার ভাগ্য সহায়হীন নয় বিধায় আজও মুখ ফুটে বলতে পারেনি সে। আর তার থেকেও বড় উদাহরণ তো তুমি মিউমি, যে তোমার রূপের অনলে শত পুরুষের ঘুম হারাম হয়। তাদের কথা না হয় বাদই দিলাম। কিন্তু তোমার কাজিন, ফুফাতো ভাই ছয়’টা বছর ধরে তোমার অপেক্ষায় বসে আছে। অথচ তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করছো। তাহলে তুমি কেন তাকে মেনে নিচ্ছো না, সেও তো একটা সুযোগ পাওয়ার যোগ্য। মিউমি তুমি ভালো করেই জানো, আমি সবসময় সোজাসাপ্টা কথা বলতেই পছন্দ করি।
তাই আবারও বলছি, তুমি সত্যিই রূপসী। কিন্তু বিশ্বাস কর, তোমার রূপে আমি কখনও মুগ্ধ হইনি, না কখনো আমি তোমাকে অনুভব করেছি। এই কথাগুলো চারবছর আগেই বলা হয়েছিল তোমাকে। তারপরও তুমি কীভাবে আমার থেকে সুযোগ আশা কর। আমি আশ্চর্য হই ভাবতেই।’

মুখের কোণে তাচ্ছিল্যের হাসি জিতুর। ফের বলে উঠল,

‘আমাদের বন্ধু মহলে প্রবেশ করার সময় তোমাকে একটা প্রতিজ্ঞাবাক্য বলা হয়েছিল। বন্ধুত্বের খাতিরে তুমি আমাদের বন্ধুমহলে আসবে। তবে এর বাইরে আর কোন কথা হবে না। এই বাক্যে’টা ভুলে গেলে কিভাবে? আমি তো ভাবতেই পারছি না। আর রইল আমার বিয়ের কথা। আমাকে দেখে কি মনে হয়, আমি খুব উল্লাসিত, বিয়ের জন্য মুখিয়ে আছি। নাহ, তার এসবের কিছুই না। শুধু আমার প্রিয় মানুষের শেষ ইচ্ছে পূরণ করছি। এর থেকে বেশি কিছু নয়। আসছি। ভালো থেকো মিউমি।’

মিউমি হুট করে বলে উঠল, ‘তাহলে সেই মেয়ে আমি হলে কি সমস্যা জিতু। আমাকে ভালোবাসতে হবে না, না স্ত্রীর অধিকার দিতে হবে, শুধু তোমার পাশে থাকার অধিকারটুকু দাও। এইটুকু দিলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যাবে তোমার?’

জিতু নিজের ব্যাগ কাঁধে উঠিয়ে নিল। জবাব দেয়ার প্রয়োজনবোধ মনে করল না। তার ভগ্নহৃদয়ের ক্ষত যে আজও শুকায়নি। সেখানে নতুন কেউ আসবে, কখনই না।

মিউমির দু’চোখের নোনাজল গাল বেয়ে চিবুকে ঠেকেছে। বড্ড অসহায়ত্ব দৃষ্টিজোড়া। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। সে পারেনি জিতুর মনে জায়গা করতে, না পেরেছে তার জন্য ভালোবাসার ফুল ফোটাতে। সত্যিই সে ব্যর্থ। কি হবে তার এই রূপ লাবণ্য দিয়ে।
_______

ক্লাসে প্রবেশ করতেই নিরবের খপ্পরে পড়ল নুবাহ। এড়িয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিল মাত্রই। নিরব মিষ্টি হাসি দিল তাকে দেখে। কোমল গলায় বলে উঠল, ‘নিশাত তুমি বিতর্ক ক্লাবে জয়েন করেছো। আগামী সপ্তাহে কিন্তু আমাদের অন্য ডিপার্টমেন্টের সাথে বিতর্ক প্রতিযোগিতা আছে। যদি সিলেক্ট হও তবে সুযোগ পাবে।’

বিতর্কের কথা শুনে নুবাহর চোখের কোণে জল জমল। তার আর তমার কতশত স্মৃতি জড়িয়ে আছে। তমা দলনেতা হত সে হত দ্বিতীয় বক্তা। আর জেবা থাকত তাদের প্রথম বক্তা। নবম শ্রেণিতে দু’ দু’বার তারা বয়েজ স্কুলের ছেলেদের হারিয়েছে। সেবার বরিশালের অনেক জেলায় তাদের সাথে বিভিন্ন স্কুলের বিতর্ক প্রতিযোগিতা হয়েছিল। তারা পৌঁছে গিয়েছিল শিরোপার একান্তই কাছে। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি তাদের, তাই রানার্সআপ হয়ে বাড়ি ফিরেছিল। সেই স্মৃতি রোমন্থন হতেই তমার কথা মনে পড়ল। মেয়েটা এখন কোথায় আছে। কে জানে?

নুবাহ শোনামাত্রই ক্লাস থেকে বেরিয়ে পড়ল। বিতর্ক ক্লাবে যোগদান করতে ছাত্র-ছাত্রী প্রবেশ করছে। যারা যোগদান করবে তারা নাম লিখে চলে যাচ্ছে। সবার নাম লিপিবদ্ধ করছে দু’জন টিচার আর সিনিয়র স্টুডেন্ট’রা। নুবাহ গিয়ে নিজের নাম লিখল। আগেই শ’খানেক ছাত্র-ছাত্রী নিজেদের নাম লিখে গেছে। নিজের নাম লিখে একপাশের বেঞ্চিতে গিয়ে বসল। নিরব হুট করে নুবাহর পাশের বেঞ্চিতে এসে বসলো। নুবাহ প্রথমে খেয়াল করেনি। পরে তার দিকে চোখ পড়তেই বলে উঠল, ‘ধন্যবাদ নিরব, বির্তকের ক্লাবের কথা আমাকে স্বরণ করিয়ে দেয়ার জন্য।’

নিরব যেনো কথা বলার সুবর্ণ সুযোগ পেল। তাই তড়িৎ জবাব দিল।
‘নিশাত তুমি বিতর্কের সময়ও কি মুখ খুলবে না। এভাবে সারাক্ষণ মুখ বেঁধে রাখও তোমার গরম লাগে না।’

নুবাহ কিঞ্চিৎ রাগ হল। এই ছেলের মতলব’টা কি, তার মুখ দেখা। নয়ত এমন বেফাঁস কথা বলবে কেন আচমকাই। নিজমনে ফুঁসে উঠল। জবাব দিল ত্যাড়াভাবেই, ‘সেটা না হয় তখন দেখব, কি করতে হবে। আর হিজাব পরে থাকলে গরম লাগে কে বলেছে?’

নিরব আমতা আমতা করল, ‘আ,,আসলে আমার ধারণা আর কি?’

‘উল্টা পাল্টা ধারণায় আসে তোর মাথায়, ভালো কিছু আসে না।’

নিরব ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। চোখ পিটপিট করে বলল, ‘নিশাত তুমি সোজা আপনি থেকে তুই’তে চলে গেছো।’
নুবাহ ভ্রুদ্বয় কিঞ্চিৎ কুঁচকালো,
‘তখন তো জানতাম না তুই আমার সাথেই পড়িস। শোন, সহপাঠীদের সাথে তুই মানায়, আপনি আর তুমি নয়, বুঝলি।

মুখের কোণে ঈষৎ হাসি ফুটে উঠল নিরবের। যাই হোক, তার সাথে একটু হলেও কথা বলেছে। তার মনের কথা বলে দেবে মেয়েটাকে এখন। না কিছু দিন সময় নিবে, দোটানায় ভুগল বেশ। বিতর্কের বিষয় নিয়ে দু’জনেই আলোচনায় মগ্ন। তাদের কথোপকথন চলছে বেশ জোরালোভাবেই।

অদূরে দাঁড়ানো এক জোড়া চোখের দৃষ্টি এসে পড়ল নুবাহর দিকে। দ্রুতই আবার তা ফিরিয়ে নিল। সেই দৃষ্টিতে কি ছিল তা অজানা তার।

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here