হিয়ার_মাঝে ১. #মেঘা_সুবাশ্রী ®️

0
976

পাত্রপক্ষ আসতে আর কিছু মূহুর্ত বিলম্বিত।রান্নাঘরে তার জন্য সাজানো হয়েছে বিশেষ আয়োজনের পসরা। বাহারী রকমের পিঠাপুলি আর দেশীয় সব খাবার।

রুকাইয়া নিজের হাতে রান্না করছেন। অবশ্য সহযোগী হিসেবে আছে তার একমাত্র বোন রুবি। রান্না শেষ হওয়ার আগে একবার নিজের মেয়ের রুমটায় চোখ বুলালেন। কিন্তু যা দেখল তার চোখ কপালে।

শাড়িখানা অনাদরে পড়ে আছে এককোণে। দু’হাটু গেঁড়ে বিছানায় থম মেরে আছে মেয়েটা। উষ্কখুষ্ক খোলা চুল, হাত-গলা খালি, না করেছে রূপসজ্জা। ফোলা চোখ আর মলিন সিক্ত মুখশ্রী। এসব দেখেই মেজাজটা বেশ তিরিক্ষি হল তার। কর্কশ গলায় হাঁক ছাড়লেন,
‘পাত্রপক্ষ আওনের আগে তৈরি হতে কইছি না। আবার কিন্তু আমি বলতে আসুম না। তোর বাপ যদি আইয়া দেখে, তয় আমি কিছু জানি না। যা কওনের কইয়া গেলাম। বাকি তোর মর্জি ‘নুবাহ।’

চেঁচামেচি করে আবার আগের মতই হনহন করে চলে গেলেন রুকাইয়া। মেয়েটা তার মাথা খেয়ে নিচ্ছে। বিয়ের নাম বললেই কেঁদে কেঁদে বুক ভাসায়। তার হইছে যত জ্বালা। গজগজ করতে করতে রান্নায় আবার নিজের মনোযোগ দেন।

পাশে থাকা রুবিনা সব বুঝেন। নুবাহর কেন বিয়েতে অসম্মতি আর কেন এত সব পাগলামি! কিন্তু তারই বা কি করার আছে? যে নিজ থেকে হারিয়ে যায় তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। কেন ছোট্ট এই বাক্য মেয়েটা বুঝতে চাই না। প্রায় তিনবছর, কম তো আর অপেক্ষা করেনি। কিন্ত যে আর ফিরবে না, তাকে কিভাবে ফিরাবে? কিন্তু আফসোস! মেয়েটা কোন মরীচিকার পিছনে ছুটছে। নিজেও জানে না।

দুপুর গড়াতেই বসার ঘর অতিথিতে পূর্ণ। সবাই অতিথি আপ্যায়ন নিয়েই ব্যস্ত।

কিন্তু ঘরের এককোণে নিথর শরীর নিয়ে বসে আছে নুবাহ। শুষ্ক মলিন মুখ। চোখের কোণে জল নেই। তবে ভিতরে তীব্র হাহাকার। মর্মদহনে যে পুড়ছে বারংবার। চোখদুটো বন্ধ হলে আজও সেই কল্পপুরুষের অস্পষ্ট মুখাবয়ব ভেসে উঠে। কিভাবে ভুলবে? তার ব্যাকুলচিত্ত আজও খুঁজে ফিরে শুধু এক পলক তাকে দেখার জন্য। তার যে বহু আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন সে। নিজমনে বিড়বিড় করল।
‘জানেন, আপনাকে দেখার সাধ আমার কোনদিন মিটবে না। কেন সেদিন আসবেন বলে আর এলেন না? এভাবে কেন হারিয়ে গেলেন?’

বিবশ শরীর নিয়ে কোন রকম এলোমেলো পা ফেলে উঠে দাঁড়ায় নুবাহ। মন অবাধ্য হলেও শরীর যে অবাধ্য নয়। মায়ের কথা শুনতেই হবে। ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানা থেকে শাড়ি’টা হাতে নিল। নিজের মতন করে কোনভাবে শাড়ি পরতে শুরু করল। শাড়ি পরা অবস্থায় রুবি এলেন। নুবাহকে দেখে নিশব্দে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। হলদেটে গায়ের রঙ। অথচ মেয়েটাকে মলিন শ্যামবর্ণের লাগছে। সে এসে নুবাহকে শাড়ি পরাতে সাহায্য করলেন। নুবাহর শীতল দৃষ্টি নিজের খালামণির দিকে। এই দৃষ্টির অর্থ রুবি বোঝেন। শাড়ির কুঁচি ঠিক করতে করতে বললেন,

‘দেখ অনেক হয়েছে। তোকে কিন্তু দুলাভাই সেই দু’বছর আগেই বিয়ে দিতে চেয়েছিল। তুই নিজেও জানিস, তখন থেকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে কোন ভাবে আটকে রেখেছিলাম। কিন্তু আর কত নুবাহ! তোর বিয়ের বয়স হয়েছে। ঊনিশ বছর চলছে। এখন কিভাবে নিষেধ করি বল? তুই আর পাগলামি করিস না নুবাহ। যাকে কখনও তুই চোখেই দেখিসনি, তার জন্য কেন এই মিথ্যে অপেক্ষা। দেখ সে আর আসবে না।’

পূর্বের ন্যায় শীতল দৃষ্টি নুবাহর দু’আঁখিতে। নিস্তব্ধতায় আচ্ছন্ন। রুবির কড়া কথার জবাব দিল না। বিমূর্ত ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। শাড়ি পরা শেষে রুবি সাজিয়ে দিলেন। নুবাহও দ্বিরুক্তি করল না। নিশ্চুপ তৈরি হল।
নুবাহর মাথায় আলতো হাত রাখল রুবি। চোখ ছলছল তারও। সে নুবাহর ডানহাত মুষ্টিবদ্ধ করল।

‘চল, বসার ঘরে সবাই অপেক্ষা করছে।’

এক নিথর মানব শরীর। নুবাহ রুবির কদমে কদম মিলাল। সামনে কি আছে তার জানা নেই। শুধু জানে সে তার কল্পপুরুষকে হারিয়ে ফেলছে চিরদিনের জন্য।

শুকনো মলিন মুখে নিশ্চুপ এককোণে গিয়ে দাঁড়াল। রুবি সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। কিঞ্চিৎ মাথা উপর করল নুবাহ। সালাম দিল। কিন্তু কে কোথায়, সামনে কারা আছেন? তার জানা নেই।

ছেলের খালা কবিতা এগিয়ে এলেন। নুবাহকে নিজের সাথে নিয়ে বসাল। পাশে তার স্বামী আনিস বসা। কবিতা নিজের বোনের জামাইকে ডাকলেন, ‘ভাইজান আপনি কিছু বলার থাকলে বলেন?’

ছেলের বাবা’ কবিতাকে থামাল। তুমি বস। যা বলার আমি এখান থেকে বলতে পারব। তারপর নিজের সূক্ষ্মদৃষ্টি ফেললেন নুবাহর দিকে। গোলগাল মুখটা বেশ শুকনো হয়ে আছে ? শরীরও খুব হালকা পাতলা। মেয়েটা খাবার খায় না না’কি? তবে তার ভীষণ মনে ধরেছে। এমন একটা মেয়ে নিজের ছেলের বউ হবে ভেবে মন পুলকিত হল। ঈষৎ হাসি ফুটে উঠল অধরকোণে। তিনি রশিদের দিকে তাকালেন।

‘রশিদ, মাশ’আল্লাহ মেয়ের কোনো খুঁত নেই। তোমাকে আগেই সব বলেছি। আমার ছেলের পরীক্ষা শেষ হলেই বিয়ের আয়োজন শুরু হবে। এখন আপাতত কাবিন করে রাখব। আমার মা’ অসুস্থ। উনার অনেক শখ নাতীবউ দেখার। মরণের আগে তার একটাই অন্তিম ইচ্ছে নাতীবউ দেখা। তাই এত তাড়াহুড়ো।’

কিছু সময় থেমে আবার বলে উঠল,

‘রশিদ তুমি আমার ছোট ভাই না শুধু সবচেয়ে আপনজন, আমার প্রিয় বন্ধুও। তোমার প্রতি আমি কতটা ঋণী, ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। ছাত্র অবস্থায় মা’ বিয়ে দিয়েছিলেন পারিবারিক ঝামেলায়। বয়স বাইশ। আমি তখন ঢাকা কলেজের স্নাতক(পাস কোর্স) ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র। এর দু’বছর পর আমার প্রথম সন্তানের আগমন। আর সেদিন আমার অসুস্থ বউয়ের চিকিৎসার খরচ বহন করার সামর্থ্যও আমার ছিল না। কিন্তু সেদিন তুমি যেভাবে ফেরেশতার মত উদয় হয়েছিল। আজও সেই দৃশ্য ভুলতে পারিনি। আমার ব্যবসায়ীক জীবনে প্রথম পা’ রেখেছিলাম তোমার সঞ্চিত টাকার বদৌলতে। সেই বিশ হাজার টাকা আমি যতবারই ফেরত দিই না কেন, তার ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারব না। আজকের এই সফল ব্যবসায়ী একদিন টাকার অভাবে নিজের সন্তান হারাতে বসেছিল।

লম্বা দীর্ঘশ্বাস টানলেন। ফের বলে উঠলেন,

‘তোমাকে কত খুঁজেছি ঢাকার অলিগলিতে। কিন্তু দীর্ঘ আটাশ বছর পর, বন্দর নগরীতে আবার খুঁজে পেলাম। বিশ্বাস কর, আমি কত’টা খুশি হয়েছি বুঝাতে পারব না। তোমাকে পাওয়া আমার জীবনের পরম সৌভাগ্য রশিদ। তাই আমি ছেলের বউ নই নিজের মেয়ে নিতে এসেছি তোমার থেকে। কিন্তু তোমার এত আয়োজনের প্রয়োজন ছিল না। মেয়েটাকে সাধারণ ভাবেই নিয়ে আসতে। শাড়ি পরাতে গেলে কেন?’

দু’চোখ ছলছল। রশিদ ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। তার যে কথা বলার বাক্যে ফুরিয়ে গেছে। পাশে থাকা ছেলের বাবাও টিসু নিয়ে নিজের জল মুছলেন। কিন্তু মুখে উচ্ছ্বসিত হাসি। ভেজানো গলায় বললেন,
‘রশিদ তুমি আবার ঢাকা চল। চট্রগ্রামে আর থাকতে হবে না তোমাকে। আমার মেয়েটাও ঢাকা থাকবে আমাদের সাথে।’

নুবাহ দ্বিধান্বিত। কি বলবে বুঝে উঠতে পারল না। সহসাই প্রশ্ন ছুঁড়লো,
‘আঙ্কেল, আপনি আমাকে পড়াবেন।’

আচম্বিত ঘরময় উচ্চশব্দে হাসির শব্দ হল। সবাই একসাথে হেসে উঠলেন। ছেলের বাবা হাসি থামিয়ে বলে উঠল,
‘কি বলে বোকা মেয়ে! তুমি অবশ্য পড়বে। তোমাকে এখান থেকে ট্রান্সপার করে ঢাকা নিয়ে যাব।’

নুবাহ বার কয়েক আওড়ালো, বোকা মেয়ে!
এই শব্দটা তার ভীষণ প্রিয়। তার কল্পপুরুষ তো এই নামেই ডাকত। কতই না অসাধারণ ছিল তখন। ভাবতেই চোখজোড়া ভিজে উঠল। বক্ষস্থল থেকে দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এল। ভাবনায় পড়ল তার মন সেই অতীতে,,,,

অতীত,,

আট-দশ বছরের ছেলের মুখে ভাবী শুনে থমকালো নুবাহ। এসএসসির কোচিং করতে মাত্র স্কুলে পা বাড়িয়েছিল। অবিশ্বাস্য নজর তার। শ্যামবর্ণের হালকা পাতলা গড়ন। উষ্কখুষ্ক মাথার চুল, আধাপুরনো গেঞ্জি আর ত্রি-কোয়ার্টার জিন্সপ্যান্ট পরিহিত। লম্বাটে ছোট্ট একখানা শুকনো মুখ। সে ছেলেটাকে চিনে। প্রায়শই আবুল কাকার দোকানের সামনে দেখেছে। নাম হাসান। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই তার হাতে একখানা কুঁচকানো চিরকুট গুজে দিল। তড়িৎ বলে উঠল,

‘ভাবী, বাবলু ভাই আমনেরে এই চিঠি দিতে কইছে। হেয় আমনেরলাই স্কুল ছুটি হইলে দাঁড়াইবো। তহন চিঠির জবাব দিয়েন। অহন আমি আসি।’
নিজের কথা শেষ করে মূহুর্তে হনহন করে বেরিয়ে গেল। নুবাহ পিছন থেকে বার’কয়েক ডাকল। কিন্তু হাসান পিছন ফিরে তাকাল না।

নুবাহ অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে। এতদিন তাকে দেখলে শুধু হাসত। আজ সরাসরি চিরকুট। অদ্ভুত তো! একবার হাতে গুজে রাখা কুঁচকানো চিরকুটের দিকে তাকাল। কৌতুহল জাগল তার মনে। তাই খুলে দেখার সিদ্ধান্ত নিল। এলোমেলো শব্দগুচ্ছ আর বানানের দফারফা দেখে প্রথমে খুব হাসি পেল। কিন্তু পরক্ষণে একটা লাইন দেখে চোখ কপালে।

“নেষারানি রজ রজ ইসকুল শেসে দুর তেকে তোমারে দেকি কিনতু মন বরে না। আমি তোমারে কাচ তেকে দেকবার চাই। সারা ঝীবনের ঝন্য আমার হয়ে যাই না নেষারানি। আতকে একবার ইসকুল শেষে দারাবে? মণ বরে একতু দেকমু তোমারে। ঈতি তোমার মণ মাণুস।”

আচমকাই ফিক করে হেসে উঠল। চিরকুট ভাজ করে আবার তমাকে দেখানোর জন্য রেখে দিল।

বাড়িতে প্রবেশ করতেই নুবাহর চোখ পড়ল মায়ের দিকে। দৃষ্টিতে অগ্নিবর্ষণ হচ্ছে যেন। সে হেয়ালি সুরে বলল,
‘কি হয়েছে আম্মু’ আজকে রান্না হয় নাই।’
মূহুর্তে রুকাইয়ার বাজখাঁই স্বর ভেসে এল। ‘তোকে যাওয়ার সময় কিছু বলছিলাম।’
‘কি বলছিলেন?’
রুকাইয়া রামধমক দিলেন,
‘তুই যে গাদার বাচ্চা আমি জানি। তাও একটা কাজ দিছিলাম করার জন্য।’
‘কিন্তু আম্মু, আমি যদি গাদার বাচ্চা হই তাইলে তো আপনেই গাদা।’
রুকাইয়া কোপিত কন্ঠে চেঁচালেন,
‘তোরে স্কুলে যাওয়ার সময় টাকা দিছিলাম না রুবির নাম্বারে বিকাশ করে দিতে।’
নুবাহ দৃঢ়তার সাথে জবাব দিল,
‘সকালে বিকাশ করেই স্কুলে গেছি।’
‘রুবি যে বলল টাকা পায় নাই। একটু আগেও তো কল দিল।’

নুবাহ দ্রুতই দোকানের দিকে ছুটল।

দোকানদার থেকে জানতে পারল ভুল নাম্বার দিয়েছে সে। টাকা পেয়ে লোকটা নিজ থেকে কল দিয়ে বলেছে। তবে প্রকৃত মালিক এলে তবেই টাকা ফেরত দিবে।

মধ্যাহ্নের শেষ প্রহর। সেদিন একরাশ হতাশা নিয়ে অচেনা এক লোকের কাছে কল দিল নুবাহ। প্রথম তিনটা কল রিসিভ হল না। কিন্তু চর্তুথ কল রিসিভ হল। অপর পাশ থেকে গম্ভীর এক পুরুষালী মোটা কন্ঠস্বর ভেসে এল।
‘হ্যালো, কে?’

নুবাহর থমথমে ধরা গলা।
‘আসসালামু আলাইকুম ‘আঙ্কেল। আমাকে আপনি চিনবেন না। আমার নাম নুবাহ।আপনার বিকাশে সকালে দশ হাজার টাকা ভুল করে চলে গিয়েছিল। তার আসল মালিক আমি। জানেন আঙ্কেল, টাকা কিন্তু আমার না। আম্মু আমাকে বিকাশ করতে বলেছিল। যদি জানে ভুল জায়গায় চলে গিয়েছে। তাহলে আম্মু আমাকে মেরে’ই দিবে। এমনিতেও ভয়ংকর ক্ষেপে আছে আমার উপর। আসলে হয়েছে কি, সকালে বিকাশ নাম্বার বলার সময় আচমকা আমার হিজাবের মধ্যে একটা কাক টয়লেট করে দেয়। তখন রাগে মেজাজ এত্ত খারাপ হয়ে গেছিল। বুঝতেই পারেনি, কখন চার’টে নাম্বার ভুল দিয়ে ফেলেছি। আঙ্কেল, টাকাগুলো যদি ফেরত দিতেন তাহলে অন্তত আমি বেঁচে যেতাম। নয়ত, আমার সাথে কি হবে আমি নিজেও জানি না। আঙ্কেল, আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকব যদি টাকাগুলো ফেরত দেন।’
অপর পাশ থেকে বলল,
‘তোমার বাড়ি কোথায়?’
‘জ্বী, আমার বাড়ি বরিশাল। কিন্তু কেন আঙ্কেল? আপনি কি আমাকে বিশ্বাস করছেন না?’
এক বিরক্তিকর স্বর ভেসে এল।
‘তুমি তো দেখছি প্রচুর কথা বল। কখন বললাম বিশ্বাস করিনি। চিন্তা কর না, টাকা ফেরত দিয়ে দিচ্ছি। আর হ্যাঁ, নেক্স টাইম দেখে শুনে তারপর বিকাশ করবে। সবাই তো আর আমার মত হবে না। টাকা পেয়ে ফেরত দিয়ে দিবে। সো বি কেয়ারফুল। মনে থাকবে তো?’

“ঠিক আছে আঙ্কেল। মনে থাকবে আপনার কথা। আজীবন মনে রাখব আজকের দিন। ভুলেও আপনার কথা ভুলব না। ‘আল্লাহর কসম’ বলছি।”

‘টাকা পাঠিয়েছি। পুরো টাকাই আছে, দেখ।’

টাকা পেয়ে ফের বলে উঠল,
আপনাকে কি বলে ধন্যবাদ দেব। সে ভাষা আমার জানা নেই। সত্যিই আমি কৃতজ্ঞ আপনার কাছে। আজ যদি টাকা না পেতাম, তাহলে কি হতো জানি না। তবে আপনার মত মানুষ ছিল বলে পেয়েছি। ধন্যবাদ আঙ্কেল।’

লোকটা কিছু না বলেই আচমকাই কল কেটে দিল। নুবাহ কিছুটা অবাক হল।

ঠিক তার একদিন পর সেই লোকটা ফের কল দিল। নুবাহ তড়িৎ কল রিসিভ করল।
‘আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল’। ভালো আছেন। কাল আপনি আমার কত বড় উপকার করেছেন বলে বোঝাতে পারব না। সত্যি আপনার মত মানুষ হয় না।’

অপর পাশ থেকে রুষ্ট এক কন্ঠস্বর ভেসে এল। ‘আমি তোমার উপকার করেছি বলেই কি তুমি আমার সাথে এমন কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছো। সারাজীবন তোলা রাখব তোমার এই কৃতজ্ঞতা।’

নুবাহর চোখ কপালে। বিস্মিত গলার স্বর।
‘কি,,কি বলছেন আঙ্কেল? আমি আপনাকে বাজে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছি। আমার কথায় কি কষ্ট পেয়েছেন আঙ্কেল? যদি অজান্তে ভুল করে থাকি তাহলে ক্ষমা করে দিবেন।’

‘ক্ষমা করব, কিন্তু কিভাবে? সেইদিন থেকে তুমি আমাকে আঙ্কেল, আঙ্কেল ডাকছো। আচ্ছা, আমার গলার স্বর কি পঞ্চাশ বছরের বুড়োদের মত?’

নুবাহ ভাবনায় মগ্ন। সত্যিই তার কোন ধারণাই নেই পুরুষালী স্বর নিয়ে। মুঠোফোনে কথা হইনি কখনো কারো সাথে। কিছু সময় চুপ থাকল। আমতা আমতা করল,
‘না,, না’তো! এমন কিছু না।’

‘তাহলে আঙ্কেল’ আঙ্কেল’ ডাকছো, কেনো?’
নুবাহ কাঁপানো গলায় জবাব দিল।
‘জ্বী, তাহলে কি ডাকব ভা,ভাইয়া?’
মূহুর্তেই কঠিন এক ধমক এল।
‘আমি তোমার মায়ের পেটের ভাই। না তুমি আমার বোন। না আমাদের রক্তের কোন সম্পর্ক আছে। না আমি তোমার এলাকার ভাই। যে তুমি আমাকে ভাইয়া ডাকবে? কিছুই ডাকার দরকার নেই। নাথিং, বুঝেছো বোকা মেয়ে!’

নুবাহ নিস্তব্ধ ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। শুধু নিশ্চুপ শুনল পুরুষালী কন্ঠস্বরের ঝাঁঝালো কিছু উত্তাপ বাক্যে।

চলবে,,,,,,,,,,,,

বি:দ্রঃ সম্পূর্ণ কাল্পনিক চরিত্রের গল্প। তাই বাস্তবতার সাথে মিলাবেন না।

#হিয়ার_মাঝে ১.
#মেঘা_সুবাশ্রী ®️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here