হিয়ার_মাঝে ২৮. #মেঘা_সুবাশ্রী ®️

0
510

#হিয়ার_মাঝে ২৮.
#মেঘা_সুবাশ্রী ®️

অজস্র প্রশ্ন ঘুরপাক খেল। নিজের অযাচিত চিন্তায় ধ্যানমগ্ন নুবাহ। দৃষ্টি এখনো নেমপ্লেটে। জুঁই নুবাহর হাত ধরে টান দিল। কিন্তু নুবাহর নড়চড় নেই। স্থির দৃষ্টি জোড়া। হুট করে বলে উঠল, ‘আপু লেডিস ডিপার্টমেন্টে যাব।’

নুবাহর বাক্যেই জুঁই অবাক হল না। সেও সায় দিল। ‘চল, কিছু কিনতে চাইলে কিনে নাও। ডিসকাউন্ট আছে কিন্তু।’

নুবাহ কিঞ্চিৎ হাসল। ডিসকাউন্ট থাকলেও কি আর না থাকলেই কি? সে যাবে তো ইয়াফি ইমদাদকে দেখতে। কে এই ব্যক্তি জানতে ইচ্ছে করছে ভীষণ। লেডিস ডিপার্টমেন্টে প্রবেশ করেই তার চক্ষু চড়কগাছ। বাপরে, চারদিকে মেয়েদের সব জামায় ভরপুর। হঠাৎই তার নজর কাটলো নতুন কালেকশনে ভর্তি কুর্তির উপর। কিন্তু পাশ কাটিয়ে নেমপ্লেটের পাশে দাঁড়ালো। নিজের হাত বের করল মাত্র ছোঁয়ার জন্য। হাত রাখার আগ মুহূর্তে এক নমনীয় সুর ভেসে এল।

‘কি করছেন ম্যাডাম?’

নুবাহ তড়িৎ নিজের ঘাড় ঘুরালো। কিন্তু যাকে দেখল স্তব্ধ হয়ে গেছে। মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে এই লোক নিজের পোশাক বদল করে ফেলেছে। উপরে উঠার সময় নিচে সুপার মলের সব কর্মচারীদের গায়েও এই পোশাক দেখেছে। সেই একই পোশাক জিতুর গায়েও। কালো রঙা হাফ হাতার গেঞ্জি আর পরনেও কালো জিন্সপ্যান্ট। জিতু এত দ্রুতই পরিবর্তন করল কিভাবে নিজেকে। বেশ অবাক হল সে। কিন্তু মনটা ভীষণ আকুপাকু করছে জানার জন্য। জিতু এখানে কি করে? সে কি ইয়াফি ইমদাদকে চেনে। কিন্তু নাহ, এই লোককে একদমই বলা যাবে না। উল্টো তার মজা উড়াবে শেষে। আর যাই হোক, এর কাছে নিজেকে হাসির পাত্র বানানো যাবে না। নিশ্চুপ ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে সে। ধরা পড়ার ভয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,

‘আসলে আমি দেখছিলাম এই নেমপ্লেট। অনেক সুন্দর হয়েছে কাঠের মধ্যে খোদাই করা নকশার ডিজাইনটা।’

জিতু কিঞ্চিৎ অবাক হল। পুনরায় কিছু জানতে ইচ্ছে করছিল তার। কিন্তু বলা হল না এক অজানা কারণে। নিজেকে সংযত করে দ্রুতই বলল,

‘অহহ। ম্যাডাম মেয়েদের পোশাক ডান দিকে। আপনার বয়সী মেয়েদের সব রকমের জামা পাবেন। পাশে কিন্তু ট্রায়াল রুমও আছে। দেখুন পছন্দ হয় কিনা।’

নুবাহ শুকনো ঢোক গিলল। সে’তো জামা কিনতে আসেনি। এসেছে এই ইয়াফি ইমদাদকে দেখতে। মনটা হুট করে খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু জিতুকে দেখে অবাক হল, লোকটা কি মোলায়েম কণ্ঠে কথা বলছে। কিন্তু তার মনটা খচখচ করছে অন্যকিছু জানার জন্য। আমতা আমতা করে বলল,

‘আচ্ছা, আপনি কি এখানে জব করেন।’

জিতু দ্রুতই জবাব দিল, ‘হুম।’
জবাব দিয়ে আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিল। সে সবকিছু ঠিক আছে কিনা চেক করছে। নুবাহ দাঁড়িয়ে জিতুর কাজ দেখছে। লোকটা কি বহুরূপী। ভার্সিটিতে কেমন রুক্ষভাষায় কথা বলেছে তার সাথে। আর এখন একদম শান্ত গলায়। ফের কৌতুহল জাগল মনে। সে জিতুর থেকে কিঞ্চিৎ দূরত্বে গিয়ে পেছনে দাঁড়াল। আঁড়চোখে দেখল, কি করছে জিতু?

জিতু কাজ করতে করতে পেছনে না তাকিয়েই বলে উঠল, ‘কি দেখছেন ম্যাডাম?’

নুবাহ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। জিতুর ডিম দেখল কি করে তাকে। ফের কথা ঘুরাতে বলে উঠল, ‘আপনি কি দ্রুত কাজ করেন। কিভাবে করেন তাই দেখছিলাম।’

জিতু মুচকি হাসল। কিন্তু সেই হাসি ছিল নুবাহর দৃষ্টির আঁড়ালে। নরম সুরে বলল, ‘কাজ না করলে মালিক বেতন দিবে। আর বেতন না দিলে সংসার চালাবো কি করে? তার উপর বিয়ে করব। বউয়ের কত খরচ? তাই কাজে গাফিলতি একদমই দেয়া যাবে না, বুঝলেন ম্যাডাম।’

সুযোগ বুঝে নুবাহ চটজলদি বলে উঠল, ‘আপনার মালিকের নাম কি ইয়াফি ইমদাদ। লোকটা বুঝি খুব বদ। কাজ না করলে একদমই বেতন দেয় না।’

জিতুর মুখ মুহুর্তে হতাশায় আচ্ছন্ন হল। কিন্তু মুখের কোণে ঈষৎ হাসি ঝুলছে। সেও নুবাহর মত বলে উঠল, ‘জ্বী, আমার মালিকের নাম ইয়াফি ইমদাদ। লোকটা আসলেই বদ। একদিন কাজ না করলে বেতন কেটে নেয়। এমনকি দেরিতে আসলেও বেতন কেটে নেয়। এই যে আমি আপনার সাথে কথা বলছি, এখন সব সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে। একটু পর এসেই বলে উঠবে, কাজ না করে ক্রেতাদের সাথে এত কিসের কথা?’

নুবাহর মুখ কালচে রঙ ধারণ করল। সত্যিই এই ইয়াফি ইমদাদ খুব বদ। কিন্তু তার কেন এই লোকটাকে দেখতে ইচ্ছে করছে। সে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। মন তার একদমই মানছে না। শুধু জানতে ইচ্ছে করছে, কে এই ইয়াফি ইমদাদ। সে যা ভাবছে, তা নয়ত। তার খালামনির সাথে কথা বলা জরুরি। সে মলের এককোণে দাঁড়িয়ে রুবিকে কল দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কল রিসিভ হল না। মনটায় বিষাদে পূর্ণ হল। কেন হয় এমন। এই ইয়াফি কি সেই ইয়াফি? আর ইমদাদ, হয়তো কাকতালীয়ভাবে এই ছেলের নামও ইমদাদ। নাম মিল হলেই কি আর সেই একই ব্যক্তি হবে। সেটা কি আর সম্ভব কখনো।

জিতু আঁড়চোখে দেখল নুবাহ ভীষণ চিন্তিত। হঠাৎই নুবাহকে চিন্তিত দেখে ভীষণ অবাক হল। আজকে মেয়েটাকে তার অন্যরকম মনে হচ্ছে। কেমন যেনো দু’চোখে তার ভীষণ কষ্টের চাপ। এমন কেন লাগছে আজ মেয়েটাকে? তার নিজেরও আজ ভীষণ জানতে ইচ্ছে করছে। মেয়েটা কি সত্যি জাকীকে পছন্দ করে। কিন্তু করলেই বা কি তার। মেয়েটা তো তার আপন কেউ নয়। আজ বাদেই কাল তার বিয়ে। তার জীবনে নুহাহ আসেনি। কিন্তু অন্য একজন অপরিচিত মেয়ে আসতে চলেছে। সে যে তার পরিবারকে কথা দিয়ে ফেলেছে। পেছনে ফিরে আসার কোন পথ নেই। আর এসেই বা কি হবে? তার নুহাহ কি ফিরে আসবে? কিন্তু মন’টা পুড়ছে ভীষণ। কেন এত পুড়ছে, তার জানা নেই।

নুবাহ কয়েকটা জামা দেখেই রেখে দিল। কেনার সামর্থ্য তার নেই। জুঁই নিচে নেমে গিয়েছে আগেই। তার কিছু বাজার করতে হবে। তাই নুবাহকে বলল, তোমার যা পছন্দ কিনে নিচে এসো। পরে ডিসকাউন্ট করে দিবে। কিন্তু নুবাহর সাহস হল না। জামা তার পছন্দ হলেও দেখে রেখে দিল। এমনিতেই মনের কোণে মেঘ জমেছে। বিষাদে নিমজ্জিত সে। বের হবার জন্য উদ্বত হল সে, মাত্রই পায়ের কদম বাড়ালো। আচমকাই এক করুণ সুর ভেসে এল পাশ থেকে,

‘একটা কথা জানতে ইচ্ছে করছে, যদি রাগ না কর, তাহলে বলব। এইটুকু অনুমতি কি পেতে পারি?’

নুবাহ ফের অবাক হল জিতুর দৈবাৎ ভেসে আসা এমন বাক্যেই। নিশ্চুপ দু’জন। কিছু মুহূর্ত এভাবেই কাটলো দুজনের। জিতুর নত মস্তক। নুবাহর দৃষ্টি জোড়াও মেঝেতে নিবদ্ধ। হুট করে বলল, ‘জ্বী, বলুন।’

জিতু ফের নরম সুরে বলল, ‘তুমি কি জাকীকে পছন্দ কর?’

নুবাহর তড়িৎ মেজাজ চটে গেল। এই লোক জাকীকে নিয়েই পড়ে আছে এখনো। অসহ্যকর। এই মাত্র সে জিতুর প্রশংসা করছিল। কিন্তু না এই জিতুর ডিম শোধরাবার নয়। রুষ্ট স্বরেই জবাব দিল, ‘আপনার যদি মনে হয় পছন্দ করি, তাহলে আমিও বলব হ্যাঁ।’
নুবাহ আর দাঁড়ালো না। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার। এই জিতু অযাচিত চিন্তা ভাবনা কেনো করে তাকে নিয়ে।

কিন্তু জিতুর চোখ টলমলে। বক্ষস্থল পুড়ছে ভীষণ। কিন্তু কেনো পুড়ছে তার জানা নেই। নিজ কষ্টে জর্জরিত যখন আচমকাই তার অফিস ফোন বেজে উঠল কর্কশ ধ্বনিতে। জিতু দ্রুতই রিসিভ করল,
‘আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন? জ্বী, ইয়াফি ইমদাদ বলছি।’

নুবাহ কয়েজ গজ দূরত্বে ছিল মাত্র। সহসাই এমন বাক্যে ফের ফিরে এল। কিন্তু দৃষ্টি পড়তেই দেখতে পেল জিতুর হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রী। ফোন হাতে কারো সাথে কথা বলছে। নুবাহ ভীষণভাবে চমকালো। তার হাসফাস লাগছে। জিতুই ইয়াফি ইমদাদ। কিন্তু মিথ্যে বলল কেন তাকে। সে দ্রুতই প্রস্থান করল সেই জায়গা। জুঁইকে আর খোঁজ করল না কোথায় আছে। তড়িঘড়ি বাড়ির পথ ধরল। তার যে অনেক কিছু জানার আছে আজ।

চলবে,,,,,,,

আজকে সবচেয়ে ছোট পার্ট। দুঃখিত তার জন্য। আসলে লেখার সময় পাইনি।

~কাল নুহার কাহিনী আসবে, প্রস্তুতি নিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here