হিয়ার_মাঝে ৩১. #মেঘা_সুবাশ্রী

0
680

#হিয়ার_মাঝে ৩১.
#মেঘা_সুবাশ্রী ®️

গাছের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রাখল নুবাহ। নিজমনে রুবিকে বেশ গালমন্দ করল। শাড়ি পরায় নিজের কাছে লজ্জা লাগছে। তার ওপর সবাই কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতেও তাকাচ্ছে তার দিকে। অপেক্ষা করতে করতে হাঁপিয়ে গেছে সে। তাসনিহার আগমন ঘটল বেশ অনেকক্ষণ পরে। ততক্ষণে জিতু মিলনায়তনের ভেতর প্রবেশ করেছে। বন্ধুমহলেরও কেউ বাইরে নেই। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল অবশেষে।

মিলনায়তনের শেষ কর্ণারের সারিতে বসেছে নুবাহ। যাতে তাকে দেখা না যায়। সে আর তাসনিহা বসতেই তাদের পাশে নিরবও বসেছে। নবীন বরণ অনুষ্ঠান শুরু হল টিচারদের বক্তব্য দিয়ে। তারপর সিনিয়র শিক্ষার্থীরাও বক্তব্য রাখলেন নবীনদের উদ্দেশ্য। তাদের বক্তব্য শেষ হতেই দুপুরের খাবারের আয়োজন করা হল। সকল শিক্ষার্থীদের হাতে একটা করে বিরানির প্যাকেট দেয়া হল। নুবাহ তাসনিহা এক সাথে খেতে বসল। তাদের পাশাপাশি নিরবও বসেছে। খাবার পরিচালনা করার দায়িত্ব পড়ল সিনিয়রদের হাতে। গল্প করতে করতে নুবাহ খাবার মুখে দিচ্ছিল মাত্রই। আচমকাই চোখ পড়ল জানালার পাশে দাঁড়ানো এক নীল পুরুষ অবয়বের দিকে। পাশে দাঁড়ানো বাকিরাও নীল পাঞ্জাবী পরিহিত। সবাই একে অপরের সাথে কথা বলে যাচ্ছে। খুঁনশুটিতে মত্ত পুরো বন্ধুমহল। অথচ এই কিম্ভূতকিমাকারের মুখে হাসি নেই। এ লোক কি হাসতেই জানে না না’কি? কখনও হাসতে দেখিনি। ভারী অদ্ভুত তো! সারাক্ষণ গোমড়ামুখো হয়ে থাকে।

খাবার শেষে মিলনায়তনের ভেতর নুবাহ’রা আবার প্রবেশ করল। সকল সিনিয়র’রা মিলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। উপস্থাপক হিসেবে আছে চিন্ময় আর জুঁই। চিন্ময় নীল পাঞ্জাবী পরিহিত আর জুঁই নীল শাড়ি পরেছে। দু’জনকে বেশ সুন্দর লাগছিল। প্রথম সারির প্রথম সিট বন্ধুমহলের দখলে। অনুষ্ঠান ছিল নাটক, অভিনয়, নাচ, গান দ্বারা সজ্জিত। সানি রকি দু’জনই একসাথে নাটকে অভিনয় করেছে। বন্ধুমহলের বাকি’রাও বিভিন্ন কৌতুক, একক অভিনয় কিংবা নাচ পরিবেশন করে গেছেন। সবশেষে একটা চমক দেখে নুবাহ বেশ অবাক হয়েছে। জিতুর হাতে গীটার। সে একক সঙ্গীত পরিবেশন করবে। জিতু গান পরিবেশন করবে। এটা ভাবতেই সে হা’ হয়ে গেল। এই ছেলে গান গাইতে পারে। দেখা যাক কেমন গায়। পেছনের সারি থেকে নিজের মাথা সামান্য উঁচু করল দেখার জন্য।

জিতু নিজের গীটারে হাত রাখল। তার সামনে মাইক্রোফোন উঁচু করা। দু’চোখ কিঞ্চিৎ মুদিত। সেই চোখে ভাসছে এক নীল পরি। এই মেয়েকে আজ কতবার এড়িয়ে গেছে সে। ঠিক ততবারই অজান্তেই হানা দিয়েছে। অথচ কল্পনাতে তার নুহাহকে খুঁজে বেড়ানোর কথা। আজকাল এই মেয়ে বড্ড জ্বালাচ্ছে তাকে। মন তার বিষাদময়। তার নুহাহর স্বরণে নিজের দু’ঠোঁট নাঁড়িয়ে গেয়ে উঠল,

আমি তোমার সাথে আমাকে খুঁজে পাই
এখনো যত্ন করে যাই
যদিও তুমি বহুদূরে,,,
আমি আজও পাগল তোমারই প্রেমে
গেছি হারিয়ে রাতের আকাশে
তবে কি কাহিনী
শেষ আমাদের,,

আমি ভাবি,
যদি ছুঁতে পারতাম তোমাকে
সত্যিই বা স্বপ্নই হোক
এ দূরত্ব শেষ হয়ে যেত যে

ভালোলাগা ভালোবাসা,,
তফাৎ কি যে হয় জানতাম না
তবে কি এই সব দোষটা আমার
দেরি করেছি বুঝতে তবু হয়

ভয় পেও না,
আমি আছি তোমারই পাশে
দূরে যেওনা
রাখবো আমি জড়িয়ে তোমাকে,,,,,

জিতুর গান শুনে বাকরুদ্ধ নুবাহ। এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেছে তার মনে। কেন এমন হচ্ছে জানা নেই। নেত্রকোণায় আপনা আপনি জল জমল। তার অপলক দৃষ্টি তখনও জিতুতে নিবদ্ধ। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ছেলেটাকে দেখে যাচ্ছে। নীল পাঞ্জাবী পরিহিত বলিষ্ঠ গড়নের যুবক। চুলগুলো তার বাতাসে দোল খাচ্ছে, খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে ভর্তি লম্বাটে গৌরবর্ণের মুখশ্রী। কালচে বাঁকানো ভ্রুদ্বয়, ঘন কালো দু’চোখের পাঁপড়ি। সেই চোখজোড়ায় যেন কিছু আছে। আজ অসম্ভব সুন্দর লাগছে এই ছেলেকে। নিজমনে নুবাহ খুঁজে গেল। কি আছে এই ছেলের মাঝে। আচমকাই তার ধ্যান ভঙ্গ হল করতালিতে। গান শেষ হতেই করতালিতে মুখরিত হল চারিপাশ। নুবাহ হাততালি দিতেও ভুলে গেছে। মাথা নিচু করে করে রাখল আবার। তাসনিহাকে বলল, ‘বাসায় যাবি।’

তাসনিহা জবাবে না বলে উঠল। সে আরও কিছু সময় থাকবে। অনুষ্ঠান শেষ হলে তারপর যাবে।
নুবাহ আর দ্বিমত করল না। বাসায় গেলেই তাকে বিয়ের গোসল দেবে এখন। কি অদ্ভুত এক জীবন তার। মনটা বিষিয়ে গেল নীলচে বেদনায়। কিন্তু জিতুর গান তার মস্তিষ্কে এখনও বেজে যাচ্ছে।

‘ভয় পেয়ও না, আমি আছি তোমারই পাশে।’
____

বাসায় পৌঁছাতেই রুকাইয়া চেঁচালো। মুখের কোণে রাগের বহিঃপ্রকাশ। রাতেই এই মেয়ের বিয়ে আর সে বিকেল করে বাসায় ফিরে আসে। আক্কেলজ্ঞান একদমই নেই এই মেয়ের কাছে। নুবাহ দরজার সামনে দন্ডায়মান। সে কিছু বলার জন্য মুখ খোলার আগেই রুবি তার হাত টেনে রুমে নিয়ে গেল। শাড়ি খুলে দিল দ্রুতই। বাথরুমে পাঠিয়ে বলে উঠল,
‘তাড়াতাড়ি গোসল সেরে আয়। ছেলের ভাই-ভাবী আসবে বিয়ের সরঞ্জাম নিয়ে। সন্ধ্যা গড়ালে তোকে নিয়ে কনভেশন হল যেতে বলেছে। দেরি করা যাবে না মা। একটু জলদি কর।’

নুবাহ যেন নির্বাক। চোখদুটো ঝাপসা হয়ে আছে। কোনো ভাবে বাথরুমে ঢুকল। ঝর্ণা ছেড়ে দিতেই দু’চোখ থেকে আপনা আপনি নোনাজল বেরিয়ে এল। কত সময় এভাবে ছিল তার জানা নেই। রুবি বার বার দরজায় করাঘাত করে যাচ্ছে। ছেলের পরিবার এলো বলেই। নুবাহ দীর্ঘ সময় অশ্রু বিসর্জন শেষে বের হল। ঠান্ডায় কাঁপছে তার শরীর। রুকাইয়া কিছু বলতে গেলেই রুবি থামিয়ে দিল। বোনের পরিবর্তে সেই বকাবকি করল। হেয়ার ড্রাই দিয়ে তাড়াতাড়ি করে নিজেই চুল শুকালো।

নীলাভ নিভানের যেনো আজ ঈদের দিন। দু’জনেই হৈ-হল্লোড় করছে। কে কতটা সুন্দর জামা পরতে পারে। হৃদি রিদানও কম কিসের। তারাও মেতেছে নিজেদের সাজসজ্জায়। রুবি সব কাজের মাঝেও নুবাহকে পরিপাটি করতে ব্যস্ত। নতুন আরেকটা শাড়িতে সাজালো নুবাহকে। নতুন বউয়ের মত সুন্দর করে চুপটি করে বসে থাকতে বলল।

কিছু সময় পর এল ছেলের ভাই-ভাবী। সাথে তাদের তিন বছর বয়সী মেয়ে ইনশিয়া। ইনশিয়া এসেই সবার আগে ছুটল তার চাচীআম্মুর কাছেই। বাসার মধ্যেও সবাইকে জ্বালিয়েছে। তাকে কেউ চাচীআম্মুর কাছে কেনো নিয়ে যায় না। সে চাচীআম্মুকে দেখবে না। নুবাহ অবাক হল। তিন বছরের মেয়ে তার কোলে এসে বসে আছে। আবার তার চিবুকে হাত রেখে বার বার বলে উঠল,
‘চাচীআম্মু বাহ! বাহ! তুন্দর।’

ঈশিতা মেয়ের কান্ডে অবাক। মাত্র কয়েক সেকেন্ডে এই মেয়ে পটে গেছে। সে নিজেও নুবাহর পাশে বসল। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নুবাহকে দেখল অনেকক্ষণ। নুবাহ লজ্জায় আড়ষ্ট। এভাবে তাকে দেখার কি আছে। সে কি বন্য প্রাণী। তার মতই তো মেয়ে মানুষ। ঈশিতা দীর্ঘ সময় পর বলে উঠল,
‘আমার দেবর সুন্দর না তুমি সুন্দর। দু’জনকে একসাথে বসিয়ে দেখতে হবে। তারপর বলা যাবে, কে সুন্দর?’

নুবাহ নিজমনে চেঁচিয়ে উঠল, ‘কলার মত গায়ের রঙ নিয়াও কত ডং করে মানুষ? সে আহামরি সুন্দর না, এটা সে জানে? এটা দেখার কি আছে।’

ঈশিতা মিটমিট করে হেসে যাচ্ছে। নুবাহকে তার বেশ মনে ধরেছে। এবার শুধু তার পাগল দেবরকে বশ করতেই পারলেই হল। আসার সময় দু’জন বিউটিশিয়ানকে নিয়ে এসেছে। তারা নুবাহকে সাজাতে ব্যস্ত।
______

জিমান বেশ বিপাকে পড়ল। জিতু কিছুতেই রাজি নয় বিয়ের শেরওয়ানি পড়তে। সে যেনো আজ ক্ষ্যাপা বাঘ। তাকে কিছু বলাও যাচ্ছে না। বলার আগেই হৈ হৈ করে উঠছে। কিছু সময় পর চিন্ময়ের আগমন ঘটল। সাথে পুরো বন্ধুমহল। সানি রকি জিতুর কান্ডে অবাক হল না। কিন্তু চিন্ময়ের মুখে বিস্ময় হলেও মুবিন বেশ বিচলিত। জিমান না পেরে বলে উঠল,

‘দেখ ভায়রা হারামী, তোর এমন নখরা সহ্য হচ্ছে না। বিয়ে করলে কর, নয়তো আমরা গেলাম।’

চিন্ময় নিজের এক হাত চিবুকে রাখল। ভাবুকচিত্তে বলে উঠল, ‘শালা এখন বিয়ে করতে চাইছে না, আর বিয়ের পর বউ ছাড়া আর কিছু চোখেও দেখবে না। তখন বন্ধু নামক প্রানী চিনবেই না।’

সানি দাঁত কেলিয়ে হেসে উঠল। বত্রিশ দন্তপাটি দেখিয়ে বলল, ‘মাগার কি কপাল আমগো, বাড়িতে বিয়ের কথাই বলে না। আর তোরে বিয়ে করাইতাছে, তুই করবি না। তুই যখন বিয়া করবি না, শেরওয়ানি আমারে দিয়া দেই ভাই। আমি কইরা আসি।’
রকি দুই কদম এগিয়ে এসে জিতুর পাশে দাঁড়ালো। ক্ষীণস্বরে বলল, ‘দেখ দরকার হইলে আমারে দিবি, তাও ঐ সানলাইট’রে দিবি না। ঐ হালার মেশিনে সমস্যা আছে।’

বাকি’রা হেসে উঠল।

কিন্তু মুবিন নিজের গাম্ভীর্য বজায় রাখল। সানি রকিকে ধমক দিয়ে উঠল।
‘এসব কোন ধরনের কথা-বার্তা তোদের। সিরিয়াস বিষয় নিয়েও মজা। বিয়ে কি মজার বিষয়, তার উপর অন্যের বউ নিয়ে এসব আজে বাজে কথা-বার্তা। কোথায় ওকে শেরওয়ানি পরাতে সাহায্যে করবি, তা না করে আসছে মজা করতে। বে,য়াদব কতগুলা।’

সানি রকি মুহূর্তে চুপসে গেল। মুবিনের গম্ভীর স্বর তাদের ভীষণ ভয় লাগে। সানি রকি নিজমনে বিড়বিড় করল, ‘হালা বাপের মত ধমকায়। দেখলেই মনেই হয় না বন্ধু লাগে, মুরব্বি মনে হয় হালা’রে।’

মুবিন জিতুর পাশে বসল। নরম গম্ভীর স্বরে বলল, ‘আমি জানি, তোর খুব কষ্ট হচ্ছে। এই কষ্ট হয়তো শেষ হবার নয়। কিন্তু সময় কখনই থেমে থাকে না জিতু। তুই একটা কথা ভাব, তোর দাদু জীবদ্দশায় শেষ ইচ্ছে পোষণ করেছে। বিছানায় তার জরাজীর্ণ দেহ, কখন ওপারের ডাক এসে যাই কেউ জানে না। যখন তিনি থাকবেন না, তখন কি তোর একটুও খারাপ লাগবে না। তোর কাছে একটা আবদার করেছিল, যা তুই তাকে দিতে পারিস নি। অথচো চাইলে তুই দিতে পারতি। তোর অনুরোধে কোন অনুষ্ঠান, অতিথি কিংবা জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন করা হয়নি। এমনকি হলুদের সামান্য আয়োজনটুকুও নেই। তুই যেভাবে বলেছিস সেভাবেই সব হচ্ছে। তুই শুধু কবুল বলবি, আর কাবিননামায় সই করবি। এরপর তুই তোর মতই থাকবি, তোকে কেউ আর জোর করবে না। সব তোর ইচ্ছেই হবে। ঈশি ভাবী, জারিব ভাইয়া আর ছোট্ট ইনশিয়া গেছে কনে বাড়ি। তুই জানিস না, ইনশিয়ার সেই কি আনন্দ। তার চাচীআম্মুকে সে দেখবে না। তাকে কেনো কেউ নিয়ে যাই না। কত অভিযোগ তার।

মুবিন কিঞ্চিৎ মুচকি হাসলো কথার মাঝে। ফের বলে উঠল,

‘বাইরে আঙ্কেল অপেক্ষা করছে তোর জন্য। জানিস, আঙ্কেল কত রাত ঠিক করে ঘুমায়নি তোর জন্য। আমার মাঝে মাঝে তোর উপর বড্ড হিংসে হয়। আমার তো বাবা নেই, তাই বুঝি। বাবার আদর পায়নি গত চার বছর। খুব বেশি মনে পড়ে বাবাকে। কিন্তু কথায় বলে না, সময় কখনও থেমে থাকে না কারো জন্য। আমিও থেমে যায়নি, নিজের কাজে মনোযোগ দিয়েছি। পরিবারকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। তোর পরিবার আছে, মাথার উপর বাবা নামক ছায়া আছে। তাই তো বাচ্চার মত আবদার করিস। আজ বাবা না থাকুক, তাহলে বুঝবি জীবনে কি হারিয়েছিস। যদি পারিস নিজের বাবার জন্য হলেও নিজের কষ্টকে ভুলে যা। আমরা বাইরে আছি। তুই রেডি হয়ে নেয়।’

মুবিন ইশারায় সবাইকে বের হতে বলল। রুমের বাইরে করিডোরের মাঝে সবাই অপেক্ষারত। কারো মুখে কোনো রা’ নেই। নিশ্চুপ ধ্যানমগ্ন সবাই। আচমকাই চিন্ময় দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে উঠল,

‘আমি লিখে দিলাম, শালা এখন যত বিয়ে করব না বলে ফেনা তুলছে না, বিয়ের পর হবে এর উল্টো। তখন সারাদিন খালি বউ বউ করবে। শালাকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি।’

‘তাই যেনো হয়, আমিও তো তাই চাই।’

চিন্ময়ের কথা শেষ হতেই আচমকাই আজমলের শান্তস্বর ভেসে এল। বাকিরা চমকে উঠলেও বেচারা চিন্ময় ভীষণ লজ্জা পেল। সে’তো নিছক রাগের বশিভূত হয়ে বলেছে।
আজমল তাদের আরও কাছে এসে দাঁড়ালেন। ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘জিতু রাজি হয়েছে তো।’

জিমান আজমলের কাঁধে হাত রেখে বলল, ‘আঙ্কেল চিন্তা করবেন না। সব ঠিক হয়ে যাবে।’
মুবিনও সান্ত্বনার বাক্যে আওড়ালো।
‘আমরা আছি, সব ঠিক হয়ে যাবে। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।’

দীর্ঘ ত্রিশ মিনিট অপেক্ষার পর জিতু দরজা খুলল। চৌকাঠে দন্ডায়মান তার বেশভূষা দেখে বন্ধুমহলের চক্ষু ছানাবড়া। এ কোন জিতু বের হয়েছে?
___

পিচ হলুদের মাঝে সোনালি রঙের কারুকাজ করা গায়ের লেহেঙ্গা, তার সাথে ম্যাচিং করা সব জুয়েলারি। সোনার অলংকারের পাশাপাশি পাথরের জুয়েলারি দিয়েও সাজানো হয়েছে নুবাহকে। মাথার চুল বেণী করে তার মাঝে নানা রঙের ছোট ছোট পাথর আর লম্বা বেলী ফুলের গাজরা গেঁথে দিয়েছে। সাজানো শেষ হওয়ার পর লাল রঙের বেনারসির আলাদা করে বড় ওড়না নুবাহর মাথায় পরিয়ে দেয়া হয়েছে। লম্বা ঘোমটার আদলে ঢাকা পড়েছে নুবাহর মুখশ্রী। নুবাহ নিজমনে খুশি হল। তার চোখের জল খুব সহজে লুকানো যাবে। মুখ লুকানো চিন্তা আর নেই।

রুবি রুকাইয়া দু’জনেই হা’ হয়ে আছে। এটা তাদের নুবাহ তো। একদম পরীর মত লাগছে। রুকাইয়া দোয়া পড়ে দিলেন, যাতে কারো বদনজর না লাগে। নুবাহর মামা-মামী, নানুও নুবাহকে দোয়া করে দিল। যাওয়ার সময় নুবাহ সাথে গেলেও ফেরার সময় আর ফিরবে না। সবার আড়ালে চোখ মুছলেন রুবি। নিজমনে দোয়া করলেন। মেয়েটা স্বামী সংসারে গিয়ে সুখী হোক। বাইরে দাঁড়িয়ে মামাতো ভাই-বোন’রা কাড়াকাড়ি করছে। কে আর আগে গাড়িতে উঠবে। সবাই নুবাহর সাথে একই গাড়িতে বসার জন্য প্রস্তুত। ঈশিতা সবার ইচ্ছেতে এক বালতি পানি ঢেলে দিল। সে হেসে বলল,

‘নুবাহর জন্য ফুল দিয়ে সাজানো গাড়ি পাঠানো হয়েছে। তাকে সেই গাড়িতে বসানো হবে। তার সাথে শুধু সে বসবে। বাকিদের জন্যও আলাদা গাড়ি পাঠিয়েছে।

মুহুর্তে সবার মুখ চুপসে গেল। যে যার মত অন্য গাড়িতে উঠল।

চলবে,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here