পরবনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤ #লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤ #পর্বঃ ৪১

0
778

#পরবনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤
#পর্বঃ ৪১ ❤

.
—- ছোড আফা… ছোড আফা!
.
রহিমার ডাকে ফিরে তাকালাম। ওকে দেখে বোঝা যাচ্ছে অনেক হাঁপিয়ে গেছে।
.
—- ভেতরে আসো! এতো হাঁপিয়ে আছো কেন? দৌড়েছো? আর বাড়ির সবাই…..
.
আমাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই রহিমা বলল…….
.
—- ভাবীকে হাসপালে নিয়া গেছে সবাই। তোমারে কইছে সাবধানে থাকতে। সূর্য ভাই রিয়া আপামনিরে কল দিয়া আসতে বলছে। আমি নিচে আছি তোমার কিছু লাগলে আমারে বইল।
.
এক নিশ্বাসে পুরোটা কথা বলে থামল রহিমা! ওর কথা শুনে বুঝতে বাকি রইল না ভাবীর কন্ডিশন বেশি ভালো না। সবাই তার সাথে গেছেন। তাহলে আমাকেই বা কেন রেখে গেল?
.
—- ড্রাইভার চাচা আছেন না?
.
—- হ আফা আছে তো! ক্যান? কি করবেন?
.
—- আমাকে একটু গাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারবে? আমি হসপিটাল যাব।
.
—- না না আফা! আমি পারুম না। সূর্য ভাই শুনলে অনেক রাগ করব। ভাই আপনারে বিশ্রাম নিতে কইছে।
.
—- প্লিজ! দেখো সবাই ওখানে আছে।আমি একাই বাড়িতে। তাছাড়া এটাও জানিনা ভাবী কেমন আছে? আমার টেনশন হচ্ছে খুব। তুমি কি চাও চিন্তা করে আমি আরও অসুস্থ হই? চাও না তো তাই না? তাহলে নিয়ে চলো প্লিজ! তোমাকে কেউ কিচ্ছু বলবে না প্রমিজ!
.
আমার কথা শুনে রহিমা কিছুক্ষণ চুপ করে কিছু একটা ভাবছিল। তারপর বলল…..
.
—- আচ্ছা, ঠিক আছে চলো! কিন্তু গায়ে চাদর জড়াইয়া লও। বাহিরে ঠান্ডা অনেক।
.
আমি রহিমার কথায় সম্মতি জানিয়ে বিছানা থেকে ওড়নাটা মাথায় দিয়ে আলমারি থেকে শালটা শরীরে জড়িয়ে নিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দরজার কাছে যেতেই ফোনটা বেজে উঠল।
.
ফোনের স্ক্রিনে সূর্যের নামটা দেখেই ফোরটা রিসিভ করলাম। সাথে সাথে আমাকে কিছু না বলার সুযোগ দিয়ে ওপাশ থেকে বলল……….
.
—- আলোরাণী! তুমি ঠিক আছো তো? কোনো সমস্যা হয়নি তো? রিয়া এসে পৌঁছেছে? আচ্ছা শোনো, তুমি একদম চিন্তা করোনা। শ্রেয়া একদম ঠিক আছে। ও ওটিতে আছে। ডক্টর বের হলেই আমি তোমাকে ফোন করে সবটা জানাবো! তুমি কিন্তু এই শরীর নিয়ে একদম আসবে না কেমন?
.
—- আমি আসব! আমার একদম ভালো লাগছে না একা। খুব টেনশন হচ্ছে। আর শুধু কান্না পাচ্ছে। আমি একা থাকলে আরও টেনশন হবে। আমি ড্রাইভার চাচাকে নিয়ে আসি প্লিজ?
.
—- না আলোরাণী! বোঝার চেষ্টা করো, তুমি তো ভালো মেয়ে সব বোঝো। এসো না। তাছাড়া আবহাওয়া তো খুব ঠান্ডা। তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে। তুমি বরং একটু ঘুমাও!
.
এবার আমি জেদ ধরে বসলাম।
.
—- আমি যাব! আমি একা থাকব না। প্লিজ আসি? প্লিজ!
.
উনি আমার কথা শুনে বেশকিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন! তারপর বললেন……
.
—- ভিডিও কল করি?
.
—- নাহ্! আমি ওখানে আসব মানে আসব। কেউ না নিয়ে গেলেও আমি হেঁটে চলে যাব।
.
উনি এবার আবার বললেন…..
.
—- আলোরাণী! বোঝার চেষ্টা করো, এখানে তোমার আসা ঠিক হবেনা!
.
আমি চট করেই বললাম………..
.
—- ভাবী ঠিক আছে তো? আপনি কি আমাকে এজন্য না করছেন?
.
উনি কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিলেন। এখন আমার টেনশন যেন আরও বেড়ো গেল। কিছুই বুঝতে পারছি না কি হলো? আমার ভাবনার মাঝেই রহিমা বলল….
.
—- কি হইছে ছোড আফা ?
.
—- কিছু না! আমরা যাবনা। তুমি নিচে যাও। পারলে আমাকে এক কাপ কফি দিও!
.
আমার কথার জবাবো রহিমা হ্যাঁ-সূচক মাথা নেড়ে নিচে চলে গেল!
.
রহিমা যাওয়ার পর বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। মেজাজটাই খারাপ লাগছে আমার। এতো টেনশন করা যায়? বেশকিছুক্ষণ বারান্দায় হাঁটাহাঁটি করে বিছানায এসে গা এলিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলাম। রাজ্যের সকল ঘুম যেন এসে নিমিষেই ধরা দিল আমার ক্লান্ত চোখ জোড়ায়! দিন দিন খুব ক্লান্ত লাগছে নিজেকে। কোনো কাজ না করেও ক্লান্ত হয়ে পড়ি। অল্পতেই অনেক টায়ার্ড লাগে! কখনো পড়তে পড়তেই ঘুমিয়ে পড়ি!

_______________________

কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানিনা! কপালে কারোর ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে ঘুম ভেঙে গেল। চোখ খুলে চারপাশে চোখ বুলালাম! কিন্তু কোথাও কাউকে দেখতে পেলাম না! জানালা ভেদ করে বাহিরে তাকিয়ে বুঝতে বাকি রইল না সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। আবছা অন্ধকারে ঢেকে আছে চারপাশটা! কিন্তু কথা হলো, আমার রুমে লাইট দিয়েছে কে? ভাবনার মাঝেই ওয়াশরুমের দরজা খুলে সূর্য বেড়িয়ে এলো! আমি উনাকে দেখে ভেঙচি কেটে মুখ ফিরিয়ে নিতেই উনি বললেন……
.
—- শুভ সকাল ম্যাডাম! ঘুম ভেঙেছে তাহলে!
.
আমি উনার কথা শুনে বিষ্ময় নিয়ে উনার দিকে তাকাতেই আবার বললেন…..
.
—- বাহ্! ম্যাডাম তো বেশ ভালোই একটা ঘুম দিলেন। সেই কাল বিকেল ৫টা ঘুমিয়ে ভোর ৫টা! পুরো ১২ ঘন্টা?
.
আমি উনার কথার কোনো আগা মাথা না বুঝে বেড সাইড থেকে ফোনটা নিয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই চোখ যেন আমার কপালে উঠে গেল। ভোর ৫টা ২২ মিনিট? আশ্চর্য? এটা কিভাবে সম্ভব? পুরো ১২ ঘন্টা ২২ মিনিট? আমার ভাবনার মাঝেই উনি আবার বললেন…….
.
—- আমি কাল বিকেলে বাসায় এসেছিলাম। আপনাকে দেখতে তখন মেই বি ৫টা বেজে কিছুক্ষণ হবে! এসে দেখি ম্যাডাম সে কি আরামের ঘুম! আমি প্রায় ৬:২০ মিনিট পর্যন্ত আপনার ঘুম ভাঙার অপেক্ষা করেছি। কিন্তু আপনার ঘুম ভাঙার নামই ছিল না। তারপর চলে যাওয়ার সময় রহিমাকে রেখে গেছি আপনার কাছে। একটু আগে ফিরে দেখি রিয়া সোফায় বই নিয়ে ঘুমিয়ে আছে। মনে হয় বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেছে। আমি ওকে রুমে পাঠিয়ে দিয়েছি! ওর থেকে জানতে পারলাম আপনি নাকি রাতে খান নি। রিয়া ১১:৩০ মিনিট পর্যন্ত আপনার ঘুম ভাঙার অপেক্ষা করে নিজেই ঘুমিয়ে পড়েছে!
.
কথাগুলো বলে উনি আলমারি থেকে শার্ট বেড় করে গায়ে জড়িয়ে নিয়ে আমার পাশে এসে বসলেন! মুচকি হেসে বললেন…..
.
—- ম্যাডাম কি এখনও রেগে আছে?
.
আমি কিছু না বলে উঠে যেতে নিলে উনি আমার বা হাতটা ধরে ফেলে। আমি রেগে তাকাতেই বলে……
.
—- কথা না বললে কিন্তু একটা গুড নিউজ আছে ওটা দিব না!
.
আমি উনার কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম। উনি কিসের কথা বলছেন!
.
—- লাগবেনা কারো গুড নিউজ! যার গুড নিউজ সে নিজেই রাখুক।
.
—- যাক তাহলে কথা ফুটল মুখে!
.
আমি একটা ভেঙচি কেটে চলে আসতে নিতেই বলল……
.
—- আমার আলোরাণী ফুপি হয়েছে।
.
উনার কথা শুনে আমি চমকে গিয়ে উনার দিকে তাকালাম। উনি আবার বললেন…..
.
—- জ্বী ম্যাডাম! আপনি ঠিক শুনেছেন। আপনি ফুপি হয়েছেন। শ্রেয়ার ছেলে হয়েছে।
.
এইটুকু বলতেই আমি উনাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে দেয়ালের সাথে ঠেকিব ফেললাম। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললাম…..
.
—- একদম কথা বলবেন না আমার সাথে! আপনার সাথে আমার কোনো কথা নেই। আপনার জন্য আমি বাবুকে আগে দেখতে পারিনি। যান আপনার ভাগ্নে আপনি দেখুন। আমি কেন দেখব?
.
কথাটা বলেই মুখ ফুলিয়ে ফেললাম। সাথে সাথে উনি দু’হাতে কোমড় জড়িয়ে ধরলেন!
.
—- ছাড়ুন! আমাকে ধরবেন না আপনি!
.
—- হয়েছে বাবা হয়েছে! আর রাগ দেখাতে হবেনা। কান ধরলাম। আর কখনো এমন করব না!
.
—- লাগবেনা কান ধরা। ছাড়ুন!
.
—- ছাড়তে বললে আরও শক্ত করে ধরব । তখন চলবে তো ম্যাডাম?
.
আমি কিছু বললাম না!
.
—- বাবুকে দেখবে না? এই দেখো তোমার জন্য ছবি তুলে এনেছি! (টেবিল থেকে ফোনটা নিয়ে আমাকে ছবি দেখিয়)
.
—- মাশাল্লাহ্! কত্তো কিউট?
.
—- হুম অনেক কিউট হয়েছে!
.
—- আমি কোলে নিব! ( অসহায় মুখ করে)
.
—- নিবে তো! আগে তুমি সুস্থ হও।
.
—- নাহ্! আমি এখন কোলে নিব।
.
—- এখন তো তুমি নিজেই সুস্থ নও! আচ্ছা আগে খেতে হবে দে দেখা যাবে।
.
—- না আগে কোলে!
.
—- আলো মাইর দিব কিন্তু!
.
—- আমি খাব না!
.
—- আচ্ছা, আগে ফ্রেশ হয়ে খেতে চলো। সকালে নিয়ে যাব।
.
—- সত্যি?
.
—- হুম! প্রমিজ!
.
উনার কথা মতো ফ্রেশ হতে চলে গেলাম!

🍂

সকাল ১১ টা। ভাবীর কেবিনে বাবুর পাশে বসে আছি। মাশাল্লাহ্! অনেক সুন্দরবনের হয়েছে। দেখতে অনেকটা ভাইয়ার মতো এমনকি গায়ের রংও ভাইয়ার মতো। অনেক সুন্দর স্বাস্থ্য! দেখতে একদম গুলুগুলু! গোল গোল হাত, ছোট পা! ইশ! আমি যে কতোটা হ্যাপি! আমার ঠিক সামনে বসে আছে সূর্য! বাবু আমার কোলে। আমি বারবার ওর কপালে গালে চুমু খাচ্ছি! সূর্য আর ভাবী আমার পাগলামি দেখছে! হুট করেই সূর্যকে উদ্দেশ্য করে বললাম……
.
—- আচ্ছা! বাচ্চারা এতো কিউট কেন হয়?
.
আমার কথার জবাবে উনি কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলেন……
.
—- এটা কোনো প্রশ্ন?
.
—- কেন প্রশ্ন নয়?
.
—- কারণ এটার কোনো উত্তর হয়না!
.
—- অবশ্যই উত্তর হয়! আর যেহেতু উত্তর হয় সেহেতু এটা প্রশ্ন! আপনি জানেন না সেটা বলুন।
.
—- তুই জানিস?
.
—- জানলে কি আপনাকে বলতাম?
.
—- তারমানে এটা কোনো প্রশ্ন নয়। প্রশ্ন হলে উত্তর থাকতো। আর তা কেউ না কেউ জানতো! কিন্তু তুই বা আমি কেউই জানিনা! দেট মিনস এটা প্রশ্ন নয়!
.
উনার কথা শুনে মেজাজটাই খারাপ থাকলে গেল। আমি আর রাগ দেখিয়ে কিছুই বললাম না! প্রতিবার কি আমার সাথে ঝগড়া করে আমাকে না হারিয়ে দিলে উনি শান্ত হন না নাকি? খাটাশ একটা!
.
বেশকিছুক্ষণ হসপিটাল থেকে ভাবীর সাথে গল্প করে। বাবুকে নিয়ে দুষ্টুমি করে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। সারা রাস্তায় উনার সাথে একটাও কথা বলিনি। আসলে কথা বলার এনার্জিই লাগেনি!
.
বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। চোখ জোড়া বন্ধ করে পাড়ি জমালাম স্বপ্নের রাজ্যে! আজ অনেকদিন পর আবার একটা স্বপ্ন দেখব খুব সুন্দর একটা স্বপ্ন!
.
.

#চলবে………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here