#হিয়ার_মাঝে ২৯.
#মেঘা_সুবাশ্রী ®️
বাড়িতে অতিথিতে জমজমাট। চট্রগ্রাম থেকে নুবাহর পুরো পরিবার এসেছে। বোনকে দেখে ছয় বছরের নিভান ছুটে এসেছে। তের বছর বয়সী নীলাভও পাশে দাঁড়ানো। দু’ভাইবোনকে দেখে বুকে জড়িয়ে নিল। নিভান বোনের কাছে অভিযোগের ঝুলি নিয়ে বসেছে।
‘আপু তুমি নেই বলে নীলাভ আমাকে নুডলস বানাই দেয় না। সে একা একা খায়। আম্মুও গল্প বলে না। আমার তোমার গল্প না শুনলে ভালো লাগে না। আজকে রাতে আমাকে গল্প বলবে।’
নুবাহ কিঞ্চিৎ হাসল। হ্যাঁ বলে মাথা নাড়ালো। ভাইয়ের মাথায় আদরের পরশ বুলালো। রেগে গিয়ে নীলাভ ভাইয়ের প্রতিত্তোরে জবাব দিল,
‘আপু তুমি জানো না, নিভান একদম কথা শুনে না। সারাদিন শুধু শয়তানী করে। আর আমার বই-খাতায় বসে নিজের কারুশিল্পের কাজ করে। বইয়ের কোণে কোণে তার কলম দিয়ে আঁকা ছবি খুঁজে পাবে।’
নুবাহ ভাইয়ের দিকে তাকালো। ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘সত্যিই নিভান।’
নিভান আমতা আমতা করল, ‘নীলাভ আমার কথা শুনে না, আমাকে খেলতে দেয় না কেন? এজন্য আঁকছি।’
নুবাহ ধমক দিল। ‘তাই বলে তুমি নীলাভের বই খাতায় আঁকাআঁকি করবে। এটা কিন্তু বাজে অভ্যাস। বই খাতায় আর আঁকবে না, মনে থাকবে।’
নিভান হ্যাঁ’ বলে মাথা নাড়ালো। ভাই-বোনের কথার মাঝে রুকাইয়া হাজির হলেন। মেয়েকে কাছে ডাকলেন। নুবাহ শান্ত গলায় নিজের মা’কে সালাম দিল। রুকাইয়াও সালামের উত্তর নিলেন। অনেকদিন পর নিজের মেয়েকে দেখে জড়িয়ে ধরল। কিন্তু নুবাহর নড়চড় নেই। আগের মতই শান্ত স্থবির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শুকনো মুখ তার। রশিদ মেয়েকে দেখে কুশল বিনিময় করল। নুবাহ বাবা মায়ের সাথে কথা বলে নিজের রুমে পা বাড়ালেন। পেছনে রেখে গেল আকুল ভরা দু’জোড়া আঁখি।
নুবাহর সবকিছুতে কেমন হাসফাস লাগছে। মন বিষিয়ে আছে নীলচে বেদনায়। অজস্র প্রশ্ন’রা ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু জবাব খুঁজবে কার কাছে। রুবি আজ ভীষণ ব্যস্ত। সকাল থেকেই কোনো ফুসরত নেই তার। দু’দিন বাদেই নুবাহর বিয়ে। জমজমাট আয়োজন থাকবে না এখন। ঘরোয়া ভাবে বিয়ে হবে। কিছুদিন পরেই জমকালো ভাবে রিসিপশনের আয়োজন করবেন ইয়াফির বাবা। তবে রশিদ যৎসামান্য খাবারের আয়োজন করেছে। নিকটস্থ আত্নীয় স্বজনদের দাওয়াত দিয়েছেন। রাতে বিবাহ হবে, মসজিদে বিয়ে পড়ানো হবে। পরে বিয়ের ভোজন পর্ব চলবে কনভেনশন হলের মধ্যে।
নুবাহর মামার পরিবার আসবে বিয়ের দিন সকালেই। আপাতত তার নানু এসেছে। এদের মাঝে সবচেয়ে উচ্ছ্বসিত নুবাহর খালাতো ভাই-বোন’রা। পনের বছর বয়সী হৃদি হলুদে পরার জন্য আলাদা শাড়ি নিয়েছে। বিয়ের জন্যও আলাদা জামা নিয়েছে। তার ভাই এগারো বছর বয়সী রিদানও কম কিসে? মায়ের থেকে টাকা খসিয়ে নিজের জন্য নতুন জামা-কাপড় কিনেছে। এদের এত হৈ-হুল্লোড় দেখে নুবাহ অজান্তে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। তার ভাবনা জুড়ে শুধু অন্য চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। যা ভাবছে সত্যিই কি তাই হবে!
_____
দু’চোখ মুদিত। বিছানায় আধাশোয়া জিতু নিজ চিন্তায় বিভোর। তন্দ্রাঘোরে সহসাই এক হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রী ভেসে এল তার। মেয়েটা খিলখিল করে হাসছে। সাদা বর্ণের জামা পরিহিত মেয়েটাকে ঠিক যেন অপ্সরী লাগছে। তার পাশে বসে নিজের এক হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সে নিজেও এক হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তার দিকে। দু’জনের মাঝে চলছে প্রগাঢ় দৃষ্টি বিনিময়। তার না বলা অজস্র কথা জমে আছে। বলার জন্য সে মেয়েটার চিবুকে দু’হাত রেখেছে। নিজের জমে থাকা কষ্টগুলো জল হয়ে গড়িয়ে পড়ছে সহসাই। কান্নায় তার কথাগুলো দলা পাকিয়ে আছে। দীর্ঘ সময় পর তার কান্নামিশ্রিত গলায় মুখ ফুটে বের হল,
‘নুহাহ, কেমন আছো বোকা মেয়ে?’
মেয়েটা তার শুকনো দু’ঠোঁট নাড়াচ্ছে। অস্পষ্ট সেই বাক্য। শুধু মেয়েটার ঠোঁট নাড়ালো দেখল। ফের নিজের দু’হাত বাড়িয়ে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরতে নিল। কিন্তু তার আগে তন্দ্রাচ্ছন্ন দু’চোখ আচমকাই খুলে গেল। চোখ খুলে যাওয়ায় জিতু যেন আকাশ থেকে পড়ল। তার দু’চোখে এখনও সেই মেয়ের অবয়ব স্পষ্ট ভেসে বেড়াচ্ছে। নিজের অন্ত:করণ জুড়ে সূক্ষ্ম চিনচিনে ব্যথা অনুভব হল। দু’হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরল। তার সহ্য ক্ষমতার বাইরে সেই ব্যথা। কি করবে সে। আর কত রাত এই যন্ত্রণা বয়ে বেড়াবে। সে ছুটল তার বাবার কাছে।
আজমল আজাদ নিজের রুমে বসে কিছু হিসাব করছিলেন। দু’দিন বাদেই ছেলের বিয়ে। অতিথি অ্যাপায়ন নিয়ে একটা লিষ্ট বানাচ্ছেন। যেটা দ্রুতই মেয়ের বাবাকে দিতে হবে। তিনি নিজের কাজে ধ্যানমগ্ন। দৈবাৎ জিতু ছুটে এল বাবার কাছে। পায়ের কাছে বসে আচমকাই বাবার দু’পা জড়িয়ে ধরল। দু’চোখ থেকে অশ্রুর স্রোতধারা বইছে তার। কান্নাজড়িত গলায় বলে উঠল,
‘আব্বু, আমি তো তোমার সব কথা শুনেছি। তোমার কথায় বিয়েতে রাজি হয়েছি। তোমার কথায় সব করছি, কিন্তু আমার একটা কথা রাখো আব্বু। প্লিজ, আমাকে একবার বরিশাল যেতে দাও। জীবনে শেষবারের জন্য নুহার কবর দেখতে চাই। শুধু শেষ একবার, নুহার কবর জিয়ারত করেই চলে আসব। আব্বু, দাও না আমাকে যেতে।’
আজমল ছেলের এমন আচরণে অবাক হয় নি। ছেলের এমন শত পাগলামির সাক্ষী তিনি। যদি সত্যিই তার সাধ্যে থাকত, তবে ঐ মেয়েকে তিনি ছেলের জন্য নিয়ে আসতেন। কিন্তু বিধিবাম সেই মেয়ে যে বেঁচে নেই। তিনি বুঝেন প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা কি? তার নিজেরও দু’চোখে জল জমল। জিতুকে টেনে বিছানায় বসালেন। দু’চোখের জল মুছে দিলেন। নরম সুরে বলে উঠলেন,
‘ঠিক আছে নিয়ে যাবো। তবে একশর্তে, তুমি সেখানে গিয়ে কোনো পাগলামি করবে না। সোজা কবর জিয়ারত করে চলে আসবে। আগেরবার তোমাকে নিয়ে কত সমস্যা হয়েছে তুমি জানো না। দেখ, পুলিশের ঝামেলা মেটানো যায়। কিন্তু এলাকার মানুষের ঝামেলা করলে সেই ঝামেলা মেটানো অসম্ভব হয়ে যায়। ভাগ্যভালো ছিল, তখন সাথে সাথে বরিশাল থানার পুলিশ তোমাদের সময়মত সুরক্ষা করেছিল। নয়তো এলাকার মানুষ কারো কথা শুনতো না তোমার গায়ে হাত তুলত। কি হত তখন, ভেবেছিলে?’
বিবর্ণ মুখশ্রী জিতুর। দু’চোখ থেকে এখনও জল গড়াচ্ছে। সেই দিনের কথা ভাবলে আজও তার গা কাঁটা দিয়ে উঠে। দমবন্ধ হয়ে যায়, নিজেকে তখন পাগল পাগল লাগে। ভাবতেই কষ্ট হয়, তার নুহাহ নেই। বাবার জবাব দিল দীর্ঘ সময় পর,
‘আব্বু, আমি এবার কোনো পাগলামি করব না। শুধু কবর জিয়ারত করব। আবার ফিরে আসব। কাউকে কিচ্ছু জিজ্ঞেস করব না। কোনো উত্তর জানতে চাইব না। প্লিজ, আব্বু অনুমতি দাও না। একা যেতে দেবে না আমাকে আমি জানি, তাই তো বলতে এসেছি। প্লিজ, দাও না আব্বু।’
আজমল দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। ছেলের কষ্টে নিজেও জর্জরিত। কিন্তু কি করবে, নিরুপায় সে। নরম সুরে বলল,
‘ঠিক আছে, কাল যেতে পারবে। তবে তুমি একা যাবে না। সাথে আমিও যাব।’
জিতু বাবার দিকে হা’ হয়ে আছে। আবারও চোখে জল জমল তার। তার মন উচ্চস্বরে বলতে চাইলো, আব্বু এই বিয়ে না করলে হয় না। কেন আমার উপর অন্য একজনকে চাপিয়ে দিচ্ছো। আমি বড্ড ক্লান্ত। জিতু নিথর শরীর নিয়ে এলোমেলো পা’ ফেলে নিজের রুমে ফিরে এল। দু’চোখে তার ঘুম নেই ক্লান্ত অবসন্ন শরীর নিয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়ল। নরম গদির বিছানায় তার দমবন্ধ হয়ে আসছে। কিছুই ভালো লাগছে না তার।
______
ঘুমানোর জন্য মাত্রই প্রস্তুতি নিচ্ছে নুবাহ। তার মধ্যে নিভান বোনের কাছে ছুটে এল। সে বিছানা ঝাড় দিয়ে পরিষ্কার করে এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে, সবে উঠতে যাবে। পেছন থেকে নিভান এসে শুয়ে পড়ল দ্রুতই। বোনের কাছে আবদার করল,
‘আপু একটা গল্প বলবে আমাকে। তুমি অনেকদিন গল্প শোনাওনি আমাদের। চট্রগ্রাম থেকে আসার পর আমি তোমার গল্প মিস করেছি। নীলাভ কোনদিন আমাকে গল্প বলে না। শুধু ধমক দেয়।’
নীলাভ তখন দরজার চৌকাঠে দন্ডায়মান। ভাইয়ের এমন কথায় কর্কশ গলায় জবাব দিল,
‘তোকে আমি গল্প বলি না, কত্ত বড় বে,য়াদব। সারাক্ষণ আমার বদনাম করিস তুই।’
নিভানও চটজলদি জবাব দিল, ‘নীলাভের গল্প সুন্দর নাই। সে খালি মোবাইলের গল্প বলে। আমার ঐ গল্প ভালো লাগে না।’
নীলাভ তেতে উঠল। ভাইয়ের জবাব দিতে যাবে মাত্রই। নুবাহ তাকে থামিয়ে দিল। সে দু’জনকে দু’পাশে শোয়ার জন্য বলল। ঘরের বাতি নিভালো। বাইরের ঈষৎ আলোয় ঘর কিছুটা আলোময়। তারপর নিভানের মাথায় হাত বুলিয়ে গল্প বলতে শুরু করল সে,
‘অচিনপুরের এক দেশ ছিল। সেখানে বাস করত এক রাজকন্যা। তার রাজ্যে ছিল হাসি খুশিতে ভরপুর। কোন দুঃখ-কষ্ট ছিল না সেই রাজকন্যার। শুধু তার পড়াশোনায় ছিল একটু কমতি। সেই দুঃখে রাজকন্যা কিছুটা ব্যাতিত ছিল। কিন্তু একদিন রাজকন্যার রাজ্যে এক ভিনদেশী রাজকুমারের আগমন ঘটল। রাজকুমার ছিল ভীষণ বিচক্ষণ। পড়াশোনাও ছিল বেশ পটু। সেই রাজকুমার রাজকন্যাকে পড়ানোর দায়িত্ব নিল। কিন্তু রাজকন্যাকে কিভাবে পড়াবেন। তাদের সেই রাজ্যে মেয়েদের বাইরে যাওয়া নিষেধ। সেই জন্য বিশাল এক পর্দার ব্যবস্থা করা হল। পর্দার একপাশে রাজকন্যা আর অন্যপাশে রাজকুমার বসতেন। পর্দার আড়ালে দু’জনের মাঝে এভাবেই পড়াশোনা নিয়ে কথাপকথন চলত। রাজকুমার ছিল বেশ গম্ভীর স্বভাবের। তিনি রাজকন্যার কথায় মুগ্ধ হতেন। কিন্তু তা কখনও মুখে প্রকাশ করতেন না। তবে তার আচরণে রাজকন্যা ঠিক বুঝে নিতেন। এভাবেই কাটছিল তাদের দিনগুলো। রাজকন্যা পরীক্ষা দিলেন। সেখানে সফলও হলেন। পরীক্ষার শেষ মুহুর্তে রাজকুমার প্রস্তাব রাখলেন, আমি যদি আমার পরিবার নিয়ে আসি আপনি রাজি হবেন রাজকুমারী। আপনার অনুমতি পেলেই আমার পরিবার নিয়ে আসব। আর সেদিনই প্রথম আপনার মুখ দর্শন করব। বলুন, আপনি কি আমাকে বিবাহ করবেন? আপনি লজ্জা পেলে আমার জবাব দিতে হবে না। আমিই বুঝে নেব আপনি আমার প্রস্তাবে রাজি আছেন। রাজকুমারী মিষ্টি হাসলো। জবাবে কিছুই বলেনি। রাজকুমার রাজকুমারীর মনের কথা বুঝে গেলেন দ্রুতই। তাই পরেরদিন রওনা দিল রাজকুমারীর রাজ্যের উদ্দেশ্য। এদিকে রাজকুমারী রাজকুমারের পছন্দমত সাজসজ্জা করলেন। রাজকুমারী অপেক্ষায় প্রহর গুণতে লাগলেন। এভাবে সকাল, দুপুর, বিকেল গড়ালো। সময় পেরিয়ে গেল, কিন্তু সেই রাজকুমার আর কোনদিন রাজকন্যার কাছে ফিরলেন না।’
নুবাহ হুট করে গল্প বলা বন্ধ করে দিল। নিভানের সাড়া পাওয়া গেল না, সে ঘুমে আচ্ছন্ন। কিন্তু নীলাভ আচমকাই বলে উঠল,
‘আমি জানি রাজকন্যার কি হয়েছে। রাজকুমার তার কাছ থেকে চিরতরে হারিয়ে গেল। কিন্তু রাজকন্যা অপেক্ষায় ছিল বহুবছর। শেষে রাজকন্যার বাবা অন্য এক রাজকুমারের সাথে তার বিয়ে ঠিক করলেন। রাজকন্যা অনিচ্ছা সত্ত্বেও সেই বিয়েতে মত দিলেন। দু’দিন বাদেই সেই রাজকন্যার বিয়ে।’
নুবাহ আকাশ থেকে পড়ল। নীলাভের দিকে তীক্ষ্ণদৃষ্টি ফেলল। দু’ঠোঁট ফাঁক করল মাত্রই কিছু বলার জন্য। তার আগেই ফের নীলাভ বলে উঠল,
‘তোমার আর খালামনির সব কথা আমি শুনেছি সেদিন। ভয় পেয়ো না, আমি কাউকে বলতে যাব না।’
নুবাহর বক্ষস্থল থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরুলো। বিছানার অন্যপাশ হয়ে মুখ লুকালো। দু’চোখ থেকে বাধাহীন আপনা আপনি জল গড়িয়ে পড়ছে।
______
আজমল ছেলের কথা রেখেছেন। সকালের আলো ফুটতেই নিজের ছেলেকে নিয়ে বরিশাল এসেছেন। সাথে পুলিশ প্রটেকশন নিয়ে, যাতে কোনো ঝামেলায় না পড়তে হয়। জিতুকে তিনি এখন ছেড়ে দিয়েছেন। কয়েক গজ দূরত্বে দাঁড়িয়ে শুধু নজরে রেখেছে ছেলে কি করছে।
জিতু জঙ্গলে ঘেরা গাছ-গাছালিতে ভরা কবরস্থানে প্রবেশ করল। খুঁজে খুঁজে শেষে নুহার কবরের পাশে দাঁড়ালো। কবরের উপর মাটি নেই। গাছ-গাছালিতে পূর্ণ হয়ে আছে। কবরের কোনো সংস্কার নেই। কেমন অনাদরে রেখেছে তার নুহাহকে। সাপ, ঝোঁকের ভয় নেই তার কাছে। হুট করে কবরের পাশে বসে পড়ল। নিজের এক হাত কবরের মাটির উপর রাখল। দু’চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে অনবরত। কান্নার জন্য তার মুখ ফুটে কথা বেরুলো না। শুধু হেঁচকি তুলে যাচ্ছে। নিজের অজান্তে বলে উঠল,
‘আমার বড্ড আফসোস থাকবে, কেনো আমাদের মিল হল না। নুহাহ, তোমাকে বিয়ে দিতে চেয়েছিল, তুমি বিয়ে করে নিতে তখন। অন্তত এই পৃথিবীতে বেঁচে তো থাকতে। না হতো তোমার আমার মিলন, অন্তত তোমার মুখটা তো আমি দেখতে পেতাম। সেই মুখে হাসি না থাকুক, অন্তত কান্নামাখা মুখটা তো দেখতাম। কেনো এভাবে নিজেকে বলিদান করলে? এতটা নিষ্ঠুর কিভাবে হলে নুহাহ। তুমি তো বড্ড বোকা ছিলে, কখন এত সাহসী হয়ে গেলে। জানো নুহাহ, বড্ড কষ্ট হয় আমার। তোমার অস্পষ্ট মুখটা আজকাল দেখি না। সেখানে অন্য কারো মুখ ভেসে আসে। নুহাহ, তুমি আমাকে একদম ক্ষমা করো না। আমি যে তোমাকে তোমার মত ভালোবাসতে পারিনি। সেখানে আজকাল এক অন্য মেয়ে ঘুরে বেড়ায়। যখনই ভাবতে যাই, তার সেই মুখটা ভেসে আসে। আমি কি করব নুহাহ? বলে দাও আমাকে?’
চলবে,,,,,,,