প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল পর্ব- ২৩ নাবিলা ইষ্ক

0
335

প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল
পর্ব- ২৩
নাবিলা ইষ্ক
_____________________

শাহজাহান বাড়ির সামনে গাড়ি থেমেছে ভোর পাঁচটায়। আনোয়ার সাহেব পেছনে তাকালেন। ব্যাক সিটে অরু একইভাবে শুয়ে আছে। পুরোটা রাস্তা জুড়ে এক ভঙ্গিতেই শুয়ে! নড়ছে না কিছু বলছে না। সুমিতা বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে চলেছেন। অরুর মুখশ্রী দেখে ভাবলেন মেয়ে তার ঘুমিয়ে পড়েছে। তাই ফিসফিসিয়ে স্বামীর উদ্দেশ্যে বললেন,
-‘ পা মনে হয় খুব বেশি ব্যথা করছে! সারারাত নিঃশব্দে কেঁদেছে। ‘
আনোয়ার সাহেবের তা মোটেও মনে হচ্ছে না! মেয়েটা তার সম্পুর্ন ভিন্ন আচরণ করছে। মনে হচ্ছে, এটা তার মেয়ে নয়। তার মেয়ে হলে, এই ব্যথাটুকু সইতে পারতো না নিঃশব্দে। আসমান জমিন কেঁদে ভাসিয়ে দিত। এক মুহুর্তের জন্য শান্তি দিত না তাদের। কি এমন হয়েছে? সত্যি কী ব্যথায় এমন নেতিয়ে পড়েছে? মনের কোণে খটকা রয়েই গেল আনোয়ার সাহেবের। তিনি অরুকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকছেন। সিঁড়ির সামনে এসে থেমে গেলেন। অরুকে সোফায় শুইয়ে দিয়ে বললেন,
-‘ নিচের গেস্ট রুম খুলে দাও। এই পা নিয়ে উপরে কিছুদিন না থাকাই শ্রেয়! ‘
এখনের জন্য অরুকে গেস্ট রুমের দিক নিয়ে গেলেন। বিছানায় টানটান ভাবে শুইয়ে দিয়ে, পায়ের নিচে বালিশ গুঁজে দিলেন। তারপর মেয়ের পাশে বসলেন আনোয়ার সাহেব। অরুর লাল, ফোলা চোখজোড়া আধোঘুমে খোলা। মাথায় হাত বুলিয়ে আনোয়ার সাহেব শুধালেন,
-‘ বেশি ব্যথা করছে? ‘
বাবার প্রশ্নে অরু ধ্যান মেরে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। এক ফোঁটা চোখের পানি কোণ বেয়ে গড়িয়ে গেল। অস্পষ্ট দুর্বল স্বরে বলল,
-‘ অনেক ব্যথা করছে বাবা। ‘
আনোয়ার সাহেব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। ডাক্তার ডাকবেন নাকি কী করবেন বুঝতে পারছেন না! অরু ঘুমানোর প্রচেষ্টা করেছে। কিন্তু ঘুম আসছে না। বুকের চিনচিন ব্যথা তাকে ঘুমাতে দিচ্ছে না। এই ব্যথা সেকেন্ডে সেকেন্ডে বেড়ে চলেছে।
-‘ আমি ঘুমাতে পারছিনা। আমাকে একটা ঘুমের টেবলেট দিবে? ‘
আনোয়ার সাহেব অস্বস্তি অনুভব করছেন। অসহায় সুরে বললেন,
-‘ না মা। ঘুমের ওষুধ নেওয়া ভালো না। ‘
-‘ আজকের জন্য। অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। ‘
-‘ এইযে বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে দেই। দেখবে চট করে ঘুম চলে আসবে। ‘
বলতে বলতে অরুর মাথার কাছটায় বসলেন। মেয়ের চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন৷ অরু চোখজোড়া বুঝল। বন্ধ চোখের কোণ ঘেঁষে যাচ্ছে চোখের জল। আনোয়ার সাহেব দু’একবার হাতের তালু দ্বারা জল মুছে দিয়েছেন। তবে ফায়দা হলোনা। পুনরায় সেই একই ভাবে কোণ ঘেঁষে জল নামছে স্বেচ্ছায়। একপর্যায়ে বাবাকে স্বান্তনা দিতে অরু বুকে একরাশ যন্ত্রণা নিয়ে স্মিথ হাসল। ঠোঁটে স্মিথ হাসি ঝুলিয়ে বললো,
-‘ বাবার হাতে জাদু আছে। ‘
-‘ তাই বুঝি? আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে? ‘
-‘ হু। ‘
আনোয়ার সাহেব হাসলেন। সুমিতা বেগম দু’একবার উঁকিঝুঁকি মেরে গিয়েছেন। তিনি এসেই রান্নাবান্না বসিয়েছেন৷ কাজকর্ম করছেন। রেস্ট নেওয়ার সময় নেই।
বলতেই হয় আনোয়ার সাহেবের হাতে জাদু আছে। এইযে ছটফট করতে থাকা অরু কেমন ঘুমের দেশে পাড়ি দিয়ে ফেললো। আজ তার ঘুমের দেশে বৃষ্টি এসেছে। বৃষ্টি রূপ নিয়েছে ঝড়ের। সবকিছু ভিজিয়ে, উড়িয়ে চুরমার করে দিয়ে গিয়েছে। এখন শুধু শুন্যতা রয়েছে চারপাশে।

বিকেল দিকে তড়িৎগতিতে কেউ কলিংবেল বাজাচ্ছে। সুমিতা বেগম আঁচলে হাত মুছতে মুছতে দৌড়ে এসেছেন দরজার সামনে। দরজা মেলে সামনে দেখতেই অবাক হয়ে গেলেন। মোস্তফা সাহেবরা ফিরে এসেছেন। দীপ্ত ছোট পুতুলের কাঁধ ব্যাগ ফেলে ‘ আপু, আপু ‘ বলে ছুটে গেল। বড়দের মাঝে সে ঠিকভাবে অরুকে দেখতেই পারেনি। একটু যে কেঁদে চশমা ভেজাবে সে উপায় টুকু কেউ রাখেনি। শাবিহাও ছুটেছে অরুর রুমের দিক। অরু তখন হেডবেডে হেলান দিয়ে বসে। চোখজোড়া বন্ধ করে আছে। হাতে একটি বই! বইয়ের দিক একটু নজর বুলিয়ে আবার চোখজোড়া বন্ধ করে নিচ্ছে। দীপ্ত ‘ হু হু ‘ স্বরে কান্নার অভিনয় করে অরুর মাথাটা নিজের ছোট বুকে জড়িয়ে নিয়েছে। অরুও দীপ্তকে মনমতো যা ইচ্ছে করতে দিল। দীপ্তর বাহুতে চোখবুঁজে পড়ে রইলো। শাবিহা চিন্তিত সুরে বলল,
-‘ কীভাবে ফেলেছিস বোতল টিমটিম? কিছু কী হয়েছিল? ‘
-‘ আবার ফেলে দেখাব? ‘
-‘ আল্লাহ! খবরদার এসব বাজে কথা মুখেও আনবি না বান্দর মেয়ে। কতটা ভয় পাইয়েছিস জানিস? ‘
-‘ মাত্র জানলাম। ‘
-‘ ভয়ে পেয়েছিস না? ঠিক হয়ে যাবে! এখনো ব্যথা করছে? ‘
-‘ একটু৷ ‘
সে মূহুর্তে আকাশ রুমে ঢুকল। তার সঙ্গে রুবি। রুবি অরুর পাশে এসে বসেছে। ক্রমাগত চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আকাশ ফাজলামো সুরে বলল,
-‘ তুই একটু বলছিস তারমানে একটুও ব্যথা অনুভব করছিস না! আমরা জানি৷ ‘
তার গলার স্বর ফাজলামো শোনালেও চোখমুখে চিন্তার ছাপ৷ অরু স্মিথ হাসার চেষ্টা করেও হাসলো না। নজর ঘুরিয়ে ফেললো। আকাশের পেছন তন্ময় এসেছে। তন্ময়ের পেছনে আশ্চর্যজনক ভাবে কলি দাঁড়িয়ে। এই মেয়েটাও এসেছে। অরু ভাবেনি এই আপদ সঙ্গে আসবে। অবশ্য আসবেই তো। এটা তার হবু শ্বশুরবাড়ি। আসবে, যাবে হয়তো একসময় চিরকাল তার চোখের সামনে থাকবে। ঘুরঘুর করবে তার তন্ময়ের সাথে! আহ, এই কী বিশাল যন্ত্রণা! অরুর শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় বুক চেপে মাথাটা এলিয়ে দিলো। নিজেকে কাঁথায় মুড়িয়ে বলল,
-‘ আমার পায়ে যন্ত্রণা হচ্ছে খুব৷ একটু রেস্ট নেই প্লিজ। ‘
শাবিহা ‘ আচ্ছা ‘ বলে উঠে দাঁড়ালো। সবাইকে একেক করে রুম থেকে বের করে দিল। তবে তন্ময় তখনো দাঁড়িয়ে। যাচ্ছেনা! দাঁড়িয়ে রয়েছে ঠাঁই। শাবিহা ধীর স্বরে বলল,
-‘ চলো ভাইয়া! ও রেস্ট নেক! ‘
তন্ময় বেড়িয়ে গেল। শাবিহা আবছা দরজা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। সকলের পেছনে গেল না৷ তার মনে একটা অদ্ভুত সন্দেহ ঝেঁকে বসেছে কাল থেকে। সন্দেহ পাকাপোক্ত হতে সময় লাগলো না। কারণ পরপর সে অরুর কান্নার শব্দ শুনতে পেল৷ সেই কী এক ভয়াবহ আর্তনাদ তার কান্নার মাঝে। দরজায় রাখা শাবিহার হাতটা কেঁপে উঠলো। কী হয়েছে? কেন এভাবে কাঁদছে মেয়েটা? শাবিহা কি দৌড়ে রুমে ঢুকে অরুকে জড়িয়ে ধরবে? আস্থা দিবে? শাবিহা ঠিক কি করবে বুঝতে পারছেনা! কিছু একটা হয়েছে তবে তা কী? কিন্তু আপাতত অরুকে একা ছাড়া দরকার। কেঁদে নিক প্রাণ ভরে! সে নিজের রুমে চলে এলো। দীপ্ত তার বিছানায় বসে বাদাম খাচ্ছে। তার সামনে গিয়ে শাবিহা পায়চারি করছে। এদিক থেকে সেদিক যাচ্ছে। পায়চারি করতে থাকা শাবিহার দিক তাকিয়ে বিড়বিড় করে দীপ্ত বলল,
-‘ আমার ওই আপুটাকে ভাল লাগেনা! ‘
-‘ কোন আপু? ‘
-‘ কি যেন নাম! ফলি না যেন টলি। ‘
-‘ কলি! ‘
-‘ হ্যাঁ আমার তাকে ভালো লাগেনা। ‘
-‘ কেন? ‘
-‘ এম্নেই। দেখলে ওই ফলিটলি আপু আমাদের সাথে আসার জন্য কি কাহিনি গুলো করলো? ছ্যাচড়া! ‘
-‘ এভাবে বলেনা দীপ্ত৷ সে আমার মামাতো বোন৷ ‘
পুনরায় বিড়বিড় করে দীপ্ত বলল,
-‘ তাইতো কিছু বলছি না৷ ‘
শাবিহা হেসে গাল টেনে ধরলো দীপ্তর। দীপ্ত মন খারাপ করে বলল,
-‘ মন টিকছে না কিছুতেই। অরু আপুর হট্টগোল ছাড়া ভালোই লাগছেনা। শুন্য শুন্য লাগছে সবকিছু! ‘
প্রতিত্তোরে শাবিহা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
___________
সামনে অরুর ইন্টারের ফাইনাল এক্সাম। কলেজ না গেলেও পড়তে তো তাকে হবে? অরু আনোয়ার সাহেবকে বলেছেন, তার হোম টিচারকে আসতে বলতে। সাধারণত সে টিচারের কাছে খুব কম পড়েছে। বেশিরভাগ সময় তন্ময়ের কাছে পড়তে গিয়েছে। তবে এখন থেকে আর যাবেনা। কি দরকার? কোনো দরকার নেই। সন্ধ্যায় তার টিচার আসে। ডাক্তারের স্ট্রিক্ট নির্দেশ পা নড়ানো থেকে বিরত থাকতে কিছুদিন। তাই বিছানায় বসে পায়ের নিচে বালিশ গুঁজে পড়তে বসেছে অরু। পড়াশোনার এক ফাঁকে তন্ময়কে অরুর রুমের দরজার সামনে দেখা গেল। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে গিয়েছে। অরুকে পড়িয়ে শিক্ষক গিয়েছে নয়টায়৷ শিক্ষক যেতেই সুমিতা বেগম খাবার নিয়ে রুমে এসেছেন৷ অরু খেয়েদেয়ে বলল,
-‘ মা লাইট ওফ করে দিয়ে যেও। আমি ঘুমাব৷ ‘
সুমিতা বেগম চিন্তিত সুরে বললেন,
-‘ সারাদিন ঘরে আছিস। একটু বাহিরে আয়। তন্ময় হুইলচেয়ার এনেছে। এটাতে বসেও তো আসতে পারিস। ‘
-‘ ভালো লাগছেনা মা৷ ‘
সুমিতা বেগম উঠে দাঁড়ালেন। লাইট বন্ধ করে দরজা লাগিয়ে চলে গেলেন। অন্ধকার রুমে অরু তাকিয়ে রইলো। ড্রয়িংরুম থেকে হাসিঠাট্টার শব্দ শুনতে পারছেন৷ সবাই হাসিখুশি, ব্যস্ত! অরু হুট করে ঘুরে চোখজোড়া বন্ধ করে ফেললো। সে শব্দ শুনতে পেয়েছে। কেউ তার রুমের দরজা খুলছে! পরপর রুমের লাইট জ্বলে উঠলো। তন্ময়ের শান্ত ডাক শোনা গেল,
-‘ অরু? ‘
অরুর জবাব নেই৷
-‘ ঘুমিয়ে পড়েছিস? ‘
এবারও অরু জবাব দিলো না। তন্ময় ও আর ডাকল না। তবে সে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো। রুম থেকে গেল না। ঘড়ির কাঁটা এগারোটা পঁয়তাল্লিশে। তন্ময় সম্পুর্ন একঘন্টা দাঁড়িয়ে আছে একইভাবে। অরুও বিছানায় একইভাবে শুয়ে। এবার তন্ময় নড়ল। শব্দ করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। যাওয়ার সময় সজোরে দরজা লাগিয়ে গিয়েছে। তার শক্তির জোরে দরজার লকার ভেঙে মেঝেতে শব্দ করে পড়লো।

শুক্রবার ছুটির দিন। এ’দিনে শাহজাহান সাহেবরা বাসায় থাকেন। এই দিনে দুপুরের লাঞ্চ একত্রে করা সকলের জন্য বাধ্যতামূলক। ভাঙা পায়ের ছুতোয় এতদিন অরু নিজের রুমে খেয়েছে সারাদিন রুমেই থেকেছে। আজও ভেবেছে এই ছুতোয় বেরোবে না। তবে তাকে এবার কোনোপ্রকার সুযোগ দেওয়া হলোনা। কারণ অরুর রুমে স্বয়ং মোস্তফা সাহেব হাজির হয়েছেন। হাত বাড়িয়ে বললেন,
-‘ চাচ্চুর সঙ্গে আসো। এভাবে সারাদিন শুয়ে বসে থাকলে পা ভালো হবে কীভাবে? দেখি…’
বলে মোস্তফা সাহেব অরুকে উঠতে সাহায্য করছেন। অরু দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল। সকলের কথা ফেলতে পারলেও সে মোস্তফা সাহেবের কথা ফেলতে পারেনা। মুখের উপর বলতে পারবেনা, ‘ আমি যাবো না। ‘
অরু ধীর পায়ে টেবিলের সামনে এসেছে। সবাই বসে গিয়েছে। শুধু তন্ময় দাঁড়িয়ে। যেমন কারো অপেক্ষা করছে। এদিকে জয়া বেগম, মুফতি বেগম খাবার পরিবেশন করছেন। মোস্তফা সাহেব অরুকে নিজের পাশে বসিয়েছেন। অরু বসতেই তার পাশের খালি চেয়ার টেনে তন্ময় বসল। সে আলগোছে টেবিলের চারপাশ থেকে, তরকারির বাটি গুলো অরুর সামনে ঠেলে দিতে সাহায্য করছিল। দেখা গেল অরু তন্ময়ের পাস করা একটা তরকারির বাটিতে হাত লাগালো না। সে শুধু সাদা ভাত গিলতে লাগলো। নিজের সামনের তরকারি গুলোকে অগ্রাহ্য করে, মোস্তফা সাহেবের পাতের থেকে তরকারি নিয়ে খাচ্ছে। মোস্তফা সাহেব কেশে উঠলেন। আঁড়চোখে ছেলের দিক তাকালেন। তন্ময়কে একদমই ভালো দেখাল না। সে এখনো মুখে এক নালা ভাত তুলেনি। সেভাবেই শব্দ করে চেয়ার সরিয়ে হনহনিয়ে চলে যেতে লাগলো। তন্ময়কে পিছু ডাকল জয়া বেগম। মোস্তফা সাহেব, আনোয়ার সাহেবও ডেকেছেন। কিন্তু তাদের ছেলে ডাক শোনেনি যেমন। অরুও পরপর উঠে গিয়েছে। খুঁড়ে খুঁড়ে নিজের রুমে চলে গেল। ডাইনিং টেবিল জুড়ে নিস্তব্ধতা বিরাজমান।
________
দেখতে দেখতে অরুর পরিক্ষা সামনে চলে এসেছে। পায়ের ব্যান্ডেজও খোলা হয়েছে। ব্যথা কমেছে, সে পা নাড়াতে পারছে। পরিক্ষার দিন হেঁটে গিয়ে পরিক্ষা দিতে পারবে মনে হচ্ছে। মনপ্রাণ দিয়ে পড়াশোনায় ডুবে থাকা অরু সবকিছু ভোলার চেষ্টায়। তবে বুকের ভেতর চিনচিন ব্যথা অগ্রাহ্য করা যাচ্ছেই না। এই ব্যথা ক্রমাগত তাকে আঁকড়ে ধরছে। বিকেলে ছাদে উঠেছে বই হাতে। এতগুলো সিঁড়ি বেয়ে উঠেছে বিদায় পায়ের পাতায় চিনচিন ব্যথা অনুভব করছে। দোলনায় গিয়ে বসবে ভেবেছিল। আগ থেকেই সেখানে কলি বসে। মাস খানেক হয়ে গিয়েছে এই মেয়ে এখানে। অরুর সামনাসামনি তেমন পড়েনি। বেশিরভাগ সময় সে নিজের রুমে। সামনাসামনি হবে কীভাবে? অরুকে দেখে কলি উঠে দাঁড়ালো। এগিয়ে এসে কিছু একটা বলতে চাইল৷ তবে অরু শুনল না৷ আরাম করে দোলনায় বসে বই খুলেছে। কয়েকটি শব্দ পড়ে চোখবুঁজে নিচ্ছে। আবার খুলে কিছুটা পড়ে নিঃশব্দে বিড়বিড় করছে। তার পড়ার ধরন ও পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। কলি দাঁড়িয়ে রইলো। একপর্যায়ে এগিয়ে এসে বলল,
-‘ তোমার সাথে একটু কথা বলা যাবে? ‘
-‘ কাল বাদে পরশু আমার বোর্ড এক্সাম আপু! ‘
কলি চুপসে গেল। চোখমুখ কুঁচকে দাঁড়িয়ে রইলো। অরু পড়ছে। সন্ধ্যার আজান দিবে দিবে ভাব। চারপাশ সোনালী আলোয় আলোকিত। কিছুক্ষণের মধ্যে সূর্য ডুবে যাবে বলে। আজান দিতেই কলি নিচে নেমে গেল। কলি যেতেই অরু বই বন্ধ করে দোলনায় মাথাটা হেলান দিয়ে রাখল। তার দৃষ্টি স্তব্ধ, বিমুঢ়। অরু কতক্ষণ এক ধ্যানে বসেছিল জানেনা তবে একপর্যায়ে তন্ময়ের কন্ঠের স্বর শুনতে পায়।
-‘ কার পারমিশন নিয়ে ছাঁদে উঠেছিস? ‘
অরু জবাব দিলো না। নজর বইয়ে রেখে বসে আছে। তন্ময় তাড়াহুড়ো পায়ে অরুর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। ক্রোধ নিয়ন্ত্রণে রেখে প্রশ্ন করলো,
-‘ এই পা নিয়ে তুই ছাঁদে কেন আসছিস? ‘
অরু উঠে দাঁড়ালো। বই নিয়ে খুঁড়ে খুঁড়ে হেঁটে চলে যাচ্ছে। তন্ময় পেছন থেকে ডাকল। অরু শুনছে না দেখে পিছু ছুটেছে৷ ধরবে বা কিছু বলবে তার পূর্বেই অরু অনুভুতিহীন কন্ঠে বলল,
-‘ আমার থেকে দূরে থাকুন। ‘
মুহুর্তেই তন্ময়কে স্তব্ধ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here