প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল – ১৯
_________________________
কিছুক্ষণ আগের হৈ-হুল্লোড় আপাতত নিস্তব্ধতায় পরিনত হয়েছে। বৈঠক খানায় মুরব্বিদের সভা বসেছে। মোস্তফা সাহেবের পাশে জবেদা বেগম। দুজন পাশাপাশি বসে আছেন। উল্টো পাশে হুশিয়ার সাহেব। বাম পাশে আনোয়ার সাহেব, ওহী সাহেব ও রয়েছেন। আবু বক্কর সাহেব, মোজাহিদ সাহেব এবং বাকিরাও পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। হুশিয়ার সাহেব এবার হাতের পান মুখে গুঁজে দিলেন। আঙুলের মাথায় থাকা চুন থেকে কিছুটা মুখে দিয়ে, মোস্তফা সাহেবের উদ্দেশ্যে বললেন,
–‘ জয়া তোমারে বলছে নিশ্চয়ই? ‘
মোস্তফা সাহেবের মুখের ভঙ্গিমা জানাচ্ছে, তাকে কিছুই বলা হয়নি। জবেদা বেগম বললেন,
–‘ আমি কিছু বলিনি। ‘
— ‘ আচ্ছা। আমি বলি তাইলে। ‘
–‘ আব্বা.. ‘
হুশিয়ার সাহেব হাতের ইশারায় মেয়েকে চুপ থাকতে বললেন। আয়েস করে বসে ধীরেসুস্থে বললেন,
–‘ কলির জন্য পাত্র খুঁজতাছি। মেয়ে বড়ো হইছে। বিয়া তো দিতে হইবো। ‘
মোস্তফা সাহেব বুঝে ফেললেন নদীর পানি কোথায় গড়াচ্ছে। তিনি এমন কিছুর প্রত্যাশা মোটেও করেননি। উপস্থিত সকলের সামনে নিশ্চুপ রইলেন। হুশিয়ার সাহেব আবারো বলতে লাগলেন,
–‘ মোজাহিদ তন্ময়কে পছন্দ করছে কলির জন্য। শুধু ওয় না সবাই কলির জন্য তন্ময়কে পছন্দ করছে। আমারও মনে হয় তন্ময়ের থেকে ভালো আর কেউ হইতে পারেনা। এখন তোমাদের মতামত আশা করতেছি। পুত্র বঁধু হিসেবে কলিকে কেমন লাগে? তাড়াহুড়ো নাই। ধীরেসুস্থে ভাইবা জবাব দিবা। ‘
মোস্তফা সাহেব মাথা নিচু করে বসে৷ জবেদা বেগমকে ভীষণ ব্যাকুল দেখাচ্ছে। তিনি স্বামীর হাত ধরতে চেয়েও ধরছেন না৷ অস্থির চোখে তাকিয়ে। মোস্তফা সাহেব দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললেন,
–‘ বাবা আমি আপনার সাথে আলাদা কথা বলতে চাই। ‘
মোজাহিদ সাহেবের চোখমুখ কুঁচকে গেল সামান্য। তিনি চেহারায় ভদ্রতা বজায় রেখে বললেন,
–‘ আলাদা কথা বলার কি আছে? সামনাসামনি বলেন। মেয়ে আমার, আমি শুনতে চাই যা বলার আছে আপনার। তন্ময়ের জন্য আমার মেয়ের থেকে ভালো মেয়ে আর পাবেন নাকি? ‘
হুশিয়ার সাহেব চোখ রাঙালেন,
–‘ রক্ত এতো গরম কেন? ঠান্ডা হও। নিজের রুমে যাও। ‘
তিনি উঠে দাঁড়ালেন। মোস্তফা সাহেবও সঙ্গে সঙ্গে উঠলেন। হুশিয়ার সাহেবকে সাহায্য করে এগিয়ে নিচ্ছেন ডান পাশে।
_______
এদিকটায় হুশিয়ার সাহেবের নিজ কক্ষ। কক্ষে উপস্থিত আছেন জয়তুন বেগম। তিনি বিছানায় বসে জিকির করছেন। হুশিয়ার সাহেব চেয়ারে বসলেন। দরজা লাগিয়ে অপর পাশের চেয়ার টেনে মোস্তফা সাহেব বসলেন।
মনেপ্রাণে নিজেকে প্রস্তুত করছেন। মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা কথাগুলো তিনি আজ বলতে যাচ্ছেন। এ’তে কিছুটা নার্ভাস অনুভব করছেন। হুশিয়ার সাহেবের রিয়েকশনের চিন্তা ও মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে! হুশিয়ার সাহেব স্বান্তনা দিয়ে বললেন,
–‘ যা মনে আছে বলে দাও। বেশি চাপ নিও না। ‘
–‘ বাবা তন্ময়কে তো আপনি জানেন। কেমন ধরনের ছেলে ও সেটার সাথে পরিচিত। খুব ইন্ট্রোভার্টেড। অনুভূতি ব্যক্ত করতে জানেনা। ছোট থেকেই একঘেয়ে স্বভাবের। আপনজন ছাড়া কাউকে চিনেনা। ‘
–‘ তুমি যদি এগুলা নিয়া চিন্তা করো, তাইলে এসব চিন্তা বাদ দাও৷ তন্ময় কেমন সবাই জানে। যেমন আছে তেমনই পছন্দ হক্কলের! ‘
বিছানায় বসা জয়তুন বেগম বললেন,
–‘ তুমি বাঁধা না দিয়ে শোনো পোলাডা কী কইবার চায়! পুরো কথা না শুইনা কথা কও কেন! ‘
হুশিয়ার সাহেব চোখ উল্টিয়ে তাকালেন স্ত্রীর অয়ানে। তারপর মোস্তফা সাহেবকে কথা বলতে ইশারা করলেন। মোস্তফা সাহেব পুনরায় বলতে লাগলেন,
–‘ যতই নিজের অনুভূতি লুকিয়ে রাখুক না কেন! বাবা হয়ে আমি ওর আচার-আচরণ, মুখ দেখেই সব বুঝতে পারি। ‘
হুশিয়ার সাহেব হেলদোল ছেড়ে, এবার শক্তপোক্ত হয়ে বসলেন। মন দিলেন কথা শোনায়। তার মনে হচ্ছে কাহিনি গভীরে যেতে চলেছে। মোস্তফা সাহেব একটু থেমে আবারো বলতে লাগলেন,
–‘ দু-তিন বছর আগের কথা। একদিন হুট করে গভীর রাতে তন্ময় আসে আমার রুমে। কোনো দ্বিধাবোধ ছাড়াই বলে ফেলে সে অরুকে বিয়ে করতে চায়! অরুকে চিনেছেন তো? আমার ছোট ভাই আনোয়ারের একমাত্র মেয়ে। তখন অরু মাত্র দশম শ্রেনীতে পড়ছে। ওকে খাওয়াতে, পড়াতে, শোয়াতেও সবাইকে কাঠখড় পোহাতে হতো, এতটাই ছোট ছিলো সে। বাড়ির আদরের রাজকন্যা। সেই মেয়েকে আমার দামড়া ছেলে হুট করে এসে বলছে বিয়ে করবে! আমি তখন কি বলবো বা করবো বুঝতে পারিনি। আমি খুব আগে থেকেই লক্ষ্য করেছি তন্ময়ের বিহেভিয়ার। ও সবসময় বেশ প্রটেক্টিভ ছিলো অরুর ক্ষেত্রে। অরুর সবকিছু নিজেই হ্যান্ডেল করতো। তবে আমি এতটা সিরিয়াস হয়ে ভেবে দেখিনি । অরু আমার নিজের মেয়ের মতো। আমার দ্বিতীয় মেয়ে। আদরের মেয়ে। ওর জন্য খারাপ চাইব না। নিজের ছেলের প্রয়োজনেও না। তন্ময়কে বোঝাই এটা অসম্ভব। অরু খুব ছোট তার জন্য। বা বিয়েটা এখন একদমই সম্ভব না। কিন্তু আমার ছেলের মাথায় তখন জেদ ভর করেছে। সে বিয়ে করবেই করবে। আমি তখন ভীষণ রেগে যাই! মাথা গরম করে চড় দিয়ে বসি। বলি, অরুর আশেপাশে ঘেঁষতে না। ছেলের জেদের সামনে একটা প্রমিজও করে বসি। যদি অরু নিজে এসে আমাকে বলে সে তন্ময়কে বিয়ে করতে চায়, তাহলে আমি সবকিছু পেছনে ফেলে তাদের বিয়ে দিব। এসব বিষয় নিয়ে আমার আর আপনার মেয়ের মধ্যে বড়সড় একটা ঝগড়াবিবাদ হয়। মাথা গরম করে আমি খুব খারাপ ব্যবহার করে বসি। তার চরিত্র নিয়ে কথা তুলি। এই কারণ বসত তখনই আপনার নাতি আর মেয়ে বাড়ি ছাড়ে। সেই থেকে তারা এই পর্যন্ত মানে তিনটা বছর ধরে, অন্য ফ্ল্যাটে ভাড়া ছিলো। মা হুট করে গিয়েছে দেখে ফেরত আসতে বাধ্য হয়। ‘
জয়তুন বেগমের চোখজোড়া বড়ো হয়ে আছে। তিনি বিষ্ময় নিয়ে বললেন,
–‘ এই ব্যাপার। আমারও একটু সন্দেহ সন্দেহ লাগতেছিল বাবা! ‘
হুশিয়ার সাহেব ধমকালেন,
–‘ রাখো তোমার বাবা! তোমার বাবা যে আমার মাইয়ার চরিত্র নিয়া কথা তুলছে শোনো না? এর একটা বিচার হোক আগে, পড়ে সব! ‘
–‘ কী আমার ভালা মানুষটা। তুমিও তো কম গালিগালাজ অপবাদ করো নাই আমারে! সেই ক্ষেত্রে ইহা কিছুই না। ‘
জয়তুন বেগম স্বামীকে চুপ করিয়ে মেয়ে জামাইয়ের দিক দৃষ্টিপাত করলেন,
–‘ আমার নাতি তো লাখে একটা! ওরে অরুর জন্য কেন মানতেছ না? ‘
–‘ মা আমি মানছি না তা নয়। আমার সমস্যা’টা অরুকে নিয়ে। আমি ভেবেছি এটা তন্ময়ের এক তরফ থেকে পছন্দ। ছোট থেকে তারা আপন ভাইবোনের মতো বড়ো হয়েছে। হুট করে সেখানে বিয়েটা তাও আবার বয়সের এতটা গ্যাপ, আমার কাছে মানানসই লাগেনি। তার উপর পরিবার! আমার যত্নশীল পরিবার হয়তো দুভাগ হতে পারে। আমি জানি তন্ময়ের জন্য অরুকে চাইলে, আমার ভাই এক পায়ে রাজি হবে। সে তন্ময়কে খুব পছন্দ করে। কিন্তু তার স্ত্রী সুমিতা রাজি হবেনা বোধহয়। সুমিতার মেজো ভাইয়ের একটা ছেলে আছে। সেই ছেলের জন্য অরুকে চেয়েছে। সেখানে সুমিতা তার মেয়ে দিতে রাজি। আমি বুঝিয়েছি, তবুও মনে হয়না কোনো কাজ হবে। কারণ সুমিতা ছোট থেকে অবহেলায় বড়ো হয়েছে। আমাদের বাড়িতে বউ হয়ে আসার পর, ভাইদের দেখানো ভালোবাসা দেখে, সেটাকে সবকিছু ভেবে বসেছে। যতদিন তার ভুল না ভাঙে বিয়ে অসম্ভব। ‘
হুশিয়ার সাহেব বললেন,
–‘ আনোয়ার জানে? মানে বাড়ির সবাই জানে? ‘
–‘ না! আমি আপনার মেয়ে আর তন্ময় ব্যস! আর কেউ জানেনা। আমি জানতে দেইনি। আমার ভাই গুলো পাগল। বিশেষ করে আনোয়ার। সে যদি এগুলো জানে, এই বিয়ে সম্পন্ন করেই ছাড়বে। তাতে স্ত্রীর সম্মতির অপেক্ষা করবেনা। সংসার ভেঙে যাবে তার বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করবেনা। কিন্তু তার বড়ো ভাই, তার একমাত্র গার্ডিয়ান হিসেবে আমি এমনটা একদম চাই না। ‘
দীর্ঘনিশ্বাস ফেললেন হুশিয়ার সাহেব। কাহিনি খুব জটিল এবং বড়ো। মাথাটা ধরে গিয়েছে তার। তিনি জয়তুন বেগমকে বললেন,
–‘ এক কাপ চা বানাই দিতে বলো ত! ‘
জয়তুন বেগম চলে গেলেন। হুশিয়ার সাহেব শুধালেন,
–‘ কি করতে চাও এখন? ‘
–‘ বুঝতে পারছেনা। ‘
–‘ মোজাহিদ খুব আগ থেকেই তন্ময়কে মেয়ে জামাই করার আশায় ছিলো। গতকাল শুনলাম কলি খুব পছন্দ করে তন্ময়কে! ‘
মোস্তফা সাহেবের মাথাটা বেশ ঝুকে গেল। এই ছেলেকে নিয়ে তিনি আর কতো যন্ত্রনায় ভুগবেন। কিছু না করেও পরিবারের মধ্যে কূটনীতি করে চলছে।
–‘ বাবা আমি জানি মোজাহিদ ভাই রেগে যাবেন। কিন্তু আমার কিছুই করার নেই। খুব অসহায় হয়ে পড়েছি। কলি একটা অসাধারণ মেয়ে। আমার কোনো আপত্তি থাকতো না ওকে ছেলে বউ করে ঘরে আনতে, যদি সবকিছু নর্মাল থাকতো। ‘
–‘ আমার মনে হয় এই বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলা দরকার মুজাহিদের সাথে। কিন্তু এখন নয়। তোমরা ঢাকা ফিরলে কথা বলবো। নাহলে ঝগড়াবিবাদ হতে পারে। ‘
–‘ আপনার যা ভালো মনে হয় বাবা। ‘
–‘ ঠিকাছে। কিন্তু মনে রেখো, তোমারে আমি ছাড়ছি না। হাতপা ধরে মেয়ে নিছো আমার মেয়েকে হেনস্তা করার জন্য নাকি? মিটমাট কইরা নাও নইলে মাইয়া আমার আমি বাড়িতে রাইখা দিম। ‘
–‘ জি বাবা! ‘
মোস্তফা সাহেব উঠে বেরিয়ে পড়লেন। মাথায় জবেদা বেগম চিন্তিত চেহারায় দাঁড়িয়ে। দ্বিধার দেয়াল টপকে কিছু বলতে পারছেন না। আবার চুপও রইতে পারছেন না। স্বামীর পাশে দাঁড়াতে না পেরে তিনি খুব ব্যথিত অনুভব করছেন। এবার মোস্তফা সাহেব এগিয়ে গেলেন। নরম সুরে আবদার করলেন,
–‘ এক কাপ চা হবে? ‘
জবেদা বেগম ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে। কথার।মানে বুঝে মাথা দোলালেন। দ্রুত কন্ঠে বললেন,
–‘ আনছি এক্ষুনি। ‘
–‘ নিয়ে রুমে এসো। আমি অপেক্ষায় তোমার। ‘
__________
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় কাঁঠালতলিতে অবস্থিত একটি ইকোপার্কে। পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে অন্যতম বিখ্যাত ইকোপার্ক। এই স্থানটিতে বর্তমানে রেস্টহাউজ ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এই ইকোপার্কের অন্যতম আকর্ষণ হলো, মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, পরিকুন্ড জলপ্রপাত, শ্রী শ্রী মাধবেশ্বরের তীর্থস্থান এবং চা বাগান। ইকোপার্কে চলে গেলে বেশকিছু সুন্দর সুন্দর জায়গা অনায়াসে ঘুরা যাবে। এই স্বপ্নে বিভোর অরু। সে পারলে সবকয়টি জায়গা ঘুরত। কিন্তু তা কি আদৌও সম্ভব?
মৌলভীবাজার জেলায় ঢুকেছে গাড়ি। আজ ড্রাইভিং করছে আকাশ। তন্ময় কপালে আঙুল চেপে বসে। ভুরু জোড়া কুঁচকে আছে সামান্য। হুট করে তার মাথা ব্যথা শুরু হয়েছে। ভীষণ মাথা ব্যথা। অরু নিজের কাঁধ ব্যাগে দুটো ফ্ল্যাক্স এনেছে। একটা কফি আর একটা চায়ের। এখন সে তন্ময়কে সাধবে নাকি না? পুকুর পাড়ের ঘটে যাওয়া ঘটনার পর থেকে বেশ লজ্জায় পড়েছে সে। মুখ ফুটে কথা বলতেও দ্বিধাবোধ করছে। সে তো শুধু তন্ময়কে পুকুরে ফেলতে চেয়েছিল! অথচ কি থেকে কি হয়ে গেলো তখন! শাবিহার পাশে কলি বসেছে।
পেছনে রুবি, দীপ্ত এবং অয়ন। সামনে তন্ময় এবং আকাশ। কলি চিন্তিত ভাবে সামনের তন্ময়ের দিক তাকাচ্ছে আঁড়চোখে। অবশেষে লাজুক গলায় বলল,
–‘ কপাল মালিশ করে দিব একটু? ‘
গাড়ির মধ্যে নিস্তব্ধতা বয়ে গেল। সকলেই ঘুরেফিরে আঁড়চোখে তন্ময় এবং কলির দিক তাকাল। কলি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলেছে। মুখ তুলে তাকাতে অবদি পারছেনা। তার ঠোঁট জুড়ে লাজুক হাসি।কিন্তু অরুর মোটেও পছন্দ হলোনা বিষয়টা। পড়ে ভাবলো কলি তার মতো তন্ময়ের ও আপনজন। বোন হিসেবে বলতেই পারে, তাতে নেগেটিভ ভাবার কিছু নেই! নিজেকে বুঝিয়েও কেন যেন মন বুঝতে নারাজ। পরপর তন্ময়ের প্রত্যাখ্যান শোনা গেল। তার মালিশ লাগবেনা। এবার শাবিহা অরুর হয়ে বলল,
–‘ অরু কফি এবং চা দুটোই এনেছে। খাবি? গরম গরম কফি খেয়ে দেখ, ভালো লাগবে। ‘
তন্ময় কিছুক্ষণ চুপ রইলো। তবে সময় নিয়ে মাথা দোলালো। একটু কফি খেলে মাথা ব্যথা কমতে পারে। অয়ন হাসি মুখে বলল,
–‘ অরু আমার জন্যও প্লিজ। ‘
অরু হেসে উঠলো,
–‘ ঠিকাছে৷ ‘
আকাশ বলল,
–‘ আমার জন্যে ও! ‘
অরু শব্দ করে হাসলো,
–‘ আচ্ছা। ‘
এবার দীপ্ত, রুবিও খাবে বলছে। শুধু কলি কিছু বলছে না৷ চুপচাপ এক কোণায় বসে। লক্ষি মেয়েদের মতো। অরু তাকে জিজ্ঞেস করলো,
–‘ আপু খাবে? ‘
–‘ না। আমি ঠিকাছি। ‘
শাবিহা বলল,
–‘ কেন? খা কলি। ভালো লাগবে। ‘
–‘ আচ্ছা। ‘
অরু অবাক হলো বটে! সে জিজ্ঞেস করতেই খাবে না বলে দিলো। শাবিহা জিজ্ঞেস করতেই হ্যাঁ বলে দিলো! বিষয়টি কী? তবে অরু গুরুত্ব দিলো না। সবাই পর্যাপ্ত পরিমাণের কফি পেলো। অরু নিজের কফি শেষ করে বাহিরে নজর দিলো। জানালা ভেদ করে দেখতে লাগলো সবুজের সমাহার। মনে হচ্ছে সে সবুজের পৃথিবীতে চলে এসেছে। চারপাশের সবকিছু সবুজ আবডালে সাজানো। বড়বড় সবুজ গাছ গুলোকে লাগছে সবুজ পাহাড়। উঁচু উঁচু পর্বতে সবুজ ঘাষের মেলা। অরুর ইচ্ছে করলো ছুটে যেতে সেই সবুজের দেশে। নগ্ন পায়ে হাঁটতে ইচ্ছে করলো। সবকিছু ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।
উপজেলা বড়লেখার কাঁঠালতলিতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে চারটা বেজে গিয়েছে। আর বেশি দেরি নয়। সামনেই ইকোপার্ক। কিছু মুহুর্তের অপেক্ষা এখন। শাবিহা নিজের ছোট ব্যাগ কাঁধে নিয়েছে। সেটা দেখে অরুও নিজের ব্যাগ কাঁধে নিয়েছে। যেমন এখন থেকেই তৈরি হচ্ছে বেরোনোর জন্য।
চলবে