ভয়_আছে_পথ_হারাবার ফারিশতা রাদওয়াহ্ [ছদ্মনাম] ১২,,

0
475

#ভয়_আছে_পথ_হারাবার
ফারিশতা রাদওয়াহ্ [ছদ্মনাম]

১২,,

তিলো অনিকে অরিকের ফোন নাম্বার টেক্সট করে পাঠায়। আর সাথে অনুরোধ করে অন্তত একবার ফোন করতে। যেভাবে ছেলেরা আননোন নাম্বারে কল করে ডিস্টার্ব করে সেভাবে যেন অনি করে। তিলো নিজের দ্বায়টা এড়িয়ে যায় সম্পূর্ণ।

অনি অনেক ইতস্ততা করে সবশেষে সিদ্ধান্ত নেয় কল করবে। নাম্বারটা ডায়াল করতেও ওর কেমন অস্বস্তি হচ্ছে। এরপরও করলো কেবল সে তিলোকে কথা দিয়েছে বলে৷
প্রথমবার ফোনটা বেজে কেটে গেলো। দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বারও। অনি হতাশ হয়েছে ঠিকই, তবে মনে মনে খুশিও হয়েছে। হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো সে। তিলোকে টেক্সট করলো, ফোন ধরেনি। এতে তিলোর মেজাজটা খারাপ হলো। অরিক ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছে! ছেলেটার বুদ্ধি আছে, যেটুকু তিলোর নেই।
তবে তিলো জানে, অনি একবার জানতে পারলে যে এটা অরিকের নাম্বার। অরিককে বিরক্ত করে করে মাথা খারাপ করে দেবে। অনির আগে দুটো ব্রেকাপ হয়েছে ওর অতিরিক্ত কথার দরুন৷ ভেবেই তিলোর পৈশাচিক আনন্দ অনুভূত হচ্ছে। সে খুশি মনেই ঘুমিয়ে পড়লো।

পরদিন ভার্সিটিতে যাওয়ার আগে অনি আরেকবার ট্রাই করলো। এবার প্রথমেই ফোনটা তুললো অরিক। ছোট করে হ্যালো বলে জিজ্ঞাসা করলো, কে বলছেন। অনি ঘন একটা শ্বাস নিয়ে বুকে ফুঁ দিয়ে নরম কন্ঠে বললো,

-তুমি চিনতে পারছো না আমাকে প্রিয়? এতোটা কেয়ারলেস তুমি?

বলেই ন্যাকা কান্নার সুর তুললো। অরিক ভ্যাবাচেকা খেয়ে গিয়েছে। ও রুক্ষ কন্ঠে বললো,

-স্যরি। রং নাম্বার।

বলেই কল কাটতে যেতেই অনি একপ্রকার চিৎকার করে বলে উঠলো,

-এই এই। তুমি কল কাটছো কেন? একদম কাটবে না। একে তো চিনতে পারলে না এখন আবার ইগনোর করছো। শোনো না সোনা, আম স্যরি। তোমার মনে পড়ে না, আমরা একসাথে কতোদিন কাটিয়েছি? কতোরাত তোমার বাইকের পেছন থেকে তোমাকে জাপ্টে ধরে রাতের ফাঁকা হাইওয়েতে ঘুরেছি। কতো ……।

অনির কথা শেষ হওয়ার আগেই ফোনটা টুট টুট শব্দে কেটে গেলো। অনি নিজের চেহারাটা আয়নায় দেখে বিরক্তি প্রকাশক মুখ করে বললো, ‘ছ্যাচড়া কোথাকার!’ অনি নিজের ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে কাজটা করছিলো নিজের অভিনয়ের ভঙ্গিমার উপর নজর দিতে।
তবে অনির সন্দেহ হলো, ছেলেটাকে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মনে হচ্ছে। তার পক্ষে তিলোর বর্ণনামতে ওই ফালতু কাজটা করা আদৌও কি সম্ভব।
অনি সাত পাঁচ না ভেবে আবারও কল করলো। এবার অরিক ফোন তুলে ওকে কিছু বলতে না দিয়েই ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো,

-দেখুন, আপনি রং নাম্বারে ডায়াল করে যাচ্ছেন। আমি সে নই।

অনি মসৃণ কন্ঠে বললো,

-তাহলে কে তুমি প্রিয়?

-আমি তার উত্তর দিতে বাধ্য নই।

অরিক ফোনটা কাটতে যাবে তখনই ওর মা ওর রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে ওকে বলে,

-খেতে আয় অরিক। ভার্সিটিতে যাবি না? এতো দেরি করছিস কেন? অভ্র আর তোর বাবা বসে আছে।

-আসছি মা।

অরিক শব্দ দুটো উচ্চারণ করে কল কেটে দিলো। এদিকে অনি স্তম্ভিত। ও নামটা শুনেছে। আর ভার্সিটি! ইনি কি প্রফেসর অরিক! অনি নিজের কানে তখনও ফোনটা ধরে আছে। ওর যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। তিলোকে সামনে পেলে যেন জড়িয়ে ধরে চুমু খেতো। তারপরও খটকা লাগছে। তিলো সেধে নাম্বার দিবে কেন?

ভার্সিটিতে গিয়ে অনি তিলোর সাথে কথা না বলেই চুপচাপ ক্লাস করে যাচ্ছে। আজকে আহান আর রিয়াও ক্লাসে এসেছে, যদিও তাদের আসার কথা না। সবাই তাদের নিয়েই মেতে আছে। ওদের লজ্জাও দিচ্ছে। তাই এতো কথা বলা মেয়েটা, অনি, যে একেবারে চুপচাপ আছে, এটা কারো খেয়াল করার ফুরসত হয়নি। তবে রিপা কিছুটা খেয়াল করলেও গুরুত্ব দেয়নি।

লাঞ্চ টাইমে আজকে অনিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সবার চোখের আড়ালেই সে কোথাও চলে গিয়েছে। এটা কেবল তিলোর চোখে পড়েছে। তিলো বুঝতে পারছে অনি কোথায় যেতে পারে। মনে মনে সে হাসতে সক্ষম হলো।

অনি অরিককে খুঁজে বের করেছে। অরিক অন্য একজন প্রফেসরের সাথে কথা বলছে। অনি আড়াল থেকে ওর উপর চোখ রেখে আরেকবার কলটা করলো। অরিকের ফোনটা পকেটে বেজে উঠলো। অরিককে সেটা বের করতে দেখে অনি তাড়াতাড়ি ফোন কেটে দিলো।
অনির তো খুশিতে এখন ডিগবাজি খেতে ইচ্ছা করছে। সত্যিই এটা অরিকের নাম্বার! অনি ওখানে আর দাঁড়ালো না। ছুটে চলে আসলো নিজের বন্ধুমহলে।

ভার্সিটি শেষে অনি তিলোকে নাম্বারটা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে বললো,

-তুই কি ইচ্ছা করে প্রফেসরের নাম্বার আমাকে দিয়েছিস?

তিলো যেন কিছুই জানে না, ুমন ভঙ্গিতে অবাক হয়ে বললো,

-কোন প্রফেসর?

-অরিক স্যার।

-কি বলছিস? আমি কেন দেবো তোকে? তাহলে বোধহয় ওই নাম্বারটা দিতে গিয়ে চলে গিয়েছে।

-ওকে। তুই সেই নাম্বারটা দে।

তিলো এবার আবিষ্কার করলো, সে বিপদে পড়েছে। এক মূহুর্ত ভেবে, তারপর বললো,

-তোকে নাম্বারটা দিয়েই ডিলিট করে দিয়েছি দোস্ত। ভাইয়ার নাম্বার গিয়েছে, সেটা খেয়ালই করিনি।

অনি বেশ ভালো করে বুঝতে পারছে তিলো মিথ্যা বলছে। তাতে কি? ও তিলোর কাছে নাম্বারটা চাইতেই চেয়েছিলো। কিন্তু কিছু জড়তার কারণে পারছিলো না। এখন সে খুব খুশি৷ তবে তা মুখে প্রকাশ না করে হঠাৎই বললো,

-চল তোকে আইসক্রিম খাওয়াই।

তিলো ভ্রু কুঁচকে বললো,

-আইসক্রিম! তুই কিপ্টা, আমাকে আইসক্রিম খাওয়াবি!

অনি আমতাআমতা করে বললো,

-এসব কি তিল? আমার কি মাঝে মাঝে বন্ধুদের খাওয়াতে ইচ্ছা করে না?

-বন্ধুদের!! তাহলে সবাইকে আসতে বলি?

-আজব তো! এতো টাকা এখন নেই। পরে ওদের খাওয়াবো। তুই না খেলে বল, আমার এই টাকাও বেঁচে যাবে।

-রাগিস কেন?

-রাগ করবো না?

-না। চল।

তিলো আর অনি ভার্সিটি থেকে অনেকটা দূরে একটা আইসক্রিম পার্লারে এসে ঢুকলো। দোকানটা নতুন, শপিংমলের পাশে। অনি দুটো চকলেট ফ্লেভারের আইসক্রিম অর্ডার দিয়ে এসে তিলোর সামনে বসলো। অনি ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে স্ক্রোল করে যাচ্ছে। তিলোও একই কাজ করতে করতে আইসক্রিমটা আসলে সামনে তাকালো। চোখ ঘোরাতে গিয়ে এক দৃশ্য চোখে পড়তেই তিলো স্তম্ভিত! ও দোকানের দরজা থেকে তুলিকে বের হতে দেখলো একটা অচেনা ছেলের হাত ধরে। তিলো চরম অবাক! একমুহূর্ত তাকিয়ে মনে হলো ওটা তুলি। পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিজেকেই প্রশ্ন করলো, তুলি ইশানকে ফেলে এখানে আসবে কেন?

তিলো এরপরও নিজের খটকাটা কাটিয়ে উঠতে পারলোনা। চেয়ার ছেড়ে উঠে গেলো। অনি বিষয়টা লক্ষ্য করে অবাক হয়ে ওকে ডাকলো। তিলো ওকে পাত্তা না দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো তুলিকে দেখতে। ওর কাছে স্পষ্ট হলো মেয়েটা আসলে তুলিই। তিলো যতক্ষণে চিন্তা করলো ও ডাকবে, ততক্ষণে তুলি রিকশায় উঠে পড়েছে। ওর পাশে ছেলেটা উঠে বসলো আর রিকশাটা চলতে শুরু করলো।

#চলবে

পর্ব ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here