প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল – ১৩
__________________________
অরু কিছুদিন ধরে খুব রোমান্টিক মুভি দেখছে৷ আগে সবসময় অ্যাকশন মুভি দেখেছে৷ বলা যায় সে অ্যাকশন মুভি লাভার৷ কিন্তু হুট করে তার মুড পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে৷ অ্যাকশন মুভি ছেড়ে আকর্ষণ গিয়েছে রোমান্টিক মুভিতে৷ নায়ক-নায়িকাদের রোমান্টিক মুহুর্তগুলো উপভোগ করতে গিয়ে লালনীল, গোলাপি হয়ে উঠছে প্রায়শই৷ বারবার নায়কের যায়গায় তন্ময়কে ভাবছে এবং নায়িকার যায়গায় নিজেকে। ভাবতেই শরীর অদ্ভুত ভাবে কেঁপে উঠছে৷ শিহরণ বয়ে চলেছে মনে৷ কিন্তু পরপরই সব অনুভূতি গুলো হারিয়ে যাচ্ছে মনে পড়তেই, যে তার তন্ময় ফিল্মের নায়কদের মতো মোটেও নয়৷ ফিল্মের নায়ক রোমাঞ্চকর আবহাওয়া সৃষ্টি করে, নায়িকার সাথে রোমান্স করে৷ আর তন্ময় ভয়ের আবহাওয়া সৃষ্টি করে তাকে শুধু ধমকায়৷ অরু ভেবেচিন্তে খুঁজে পেয়েছে দোষ তার মধ্যেই৷ সে ফিল্মের নায়িকাদের মতো মোটেও না৷ তাহলে রোমান্স কীভাবে হবে? ফিল্মের নায়িকারা লাজুক, সরলতম হাবাগোবা এবং ভীষণ মায়াবী, দরদী, কোমলতম প্রেয়সী৷ কিন্তু সে তো চটচটে, চঞ্চল, বাঁচাল, এলোমেলো, উষ্কখুষ্ক এবং বৈরাগী স্বভাবের৷ এমন একটা মানুষের সাথে রোমান্স কীভাবে করবে? তাই অরু বেশকিছু রোমান্টিক মুভি শেষ করার পর, আদর্শ নায়িকা হবার টিপস পেয়েছে৷
প্রথম টিপস – লাজুক হতে হবে। ভীষণ লাজুক৷
দ্বিতীয় টিপস – হাবাগোবা ভঙ্গিমা অনুসরণ করতে হবে৷
তৃতীয় টিপস – মায়াবী নয়নের চাহনি দিয়ে তন্ময়কে ঘায়েল করতে হবে৷
চতুর্থ টিপস – নিজের কোমল হৃদয় তুলে ধরতে হবে তন্ময়ের আঁখিদুটির সামনে৷
এই চারটি টিপস অরু রাত থেকেই ফলো করার চেষ্টায় মাতোয়ারা৷ যেমন প্রতিদিন সকালে সে হন্তদন্ত ভঙ্গিতে নিচে নামে ব্রেকফাস্ট করতে৷ আজও একই কাহিনি করতে নিয়ে নিজেকে কোনোমতে সামলে নিয়েছে৷ চঞ্চলতা ছেড়ে কোমলতা নিয়ে ধীরেধীরে নেমে এসেছে। ডাইনিংয়ে তন্ময় অলরেডি বসে ব্রেকফাস্ট করছে৷ অরু ধীরে তন্ময়ের পাশেই বসলো৷ প্লেট ছুঁয়ে দিলেই ভেঙে যাবে এমন হাবভাব নিয়ে একটা প্লেট সামনে রেখেছে। সামান্য একটা ব্রেড আলগোছে নিয়ে সেটা কাঁটাচামচ দিয়ে ধীরেসুস্থে খাচ্ছে৷ সুমিতা বেগম মেয়ের কান্ডকারখানা সকাল থেকেই দেখছে৷ এবার নিজেকে আর সংযত করতে পারলেন না৷ টেবিলের সামনে এসে চেঁচিয়ে উঠলেন,
– এই হয়েছি কী তোর? এমন করছিস কেন!
মনেমনে অরু বিরক্ত হলো বটে৷ আরে তন্ময়ের সামনেই কেন জিজ্ঞেস করতে হবে তার মায়ের? পরে জিজ্ঞেস করলে কী মহাভারত অশুদ্ধ হতো? পিটপিট করা নাকটাকে সামলে বললো,
– স্কুলে যাচ্ছি মা৷ তাড়াতাড়ি ফিরবো৷ তুমি চিন্তা করো না৷
সুন্দর সাবলীল ভাষায় বলে আঁড়চোখে তন্ময়ের মুখের দিক তাকাল৷ ব্যাটার চোখমুখের কোনো পরিবর্তন নেই৷ আরে কানাটা কী দেখছে না অরুর এই সুন্দর পরিবর্তন? পরপর ভাবলো মাত্রই দু’ঘন্টা ধরে নিজেকে পরিবর্তন করতে নেমেছে৷ একটা দিন যাক, তারপর নাহয় তন্ময়ের চোখে লাগবে৷ তন্ময়ের চোখে না লাগলেও বাড়ির বাকি সদস্যদের চোখে লেগেছে। তারা সবাই অরুকে নিয়ে বেশ চিন্তিত৷ মুফতি বেগম রুটি ভাজতে নিয়ে বললেন,
– মাইয়াডার হঠাৎ হইলো কী? সকাল থেকে কেমন শান্ত হয়ে আছে৷
সুমিতা বেগম থালাবাসন ধুতে ধুতে জবাব দিলেন,
– ঘূর্নিঝড়ের পূর্বের আভাস। ও শান্ত মানে কিছু একটা পাকাচ্ছে৷
জয়া বেগম বললেন,
– এতো বেশি বলিস না সুমিতা! মেয়েটার নিশ্চয়ই খারাপ লাগছে৷ স্কুল থেকে ফিরলে কথা বলবি।
– ভাবী ও তোমাদের কারণেই এমন বিগড়েছে৷
যাকে নিয়ে পরিবার আলাপ-আলোচনায় ব্যস্ত, সে আপাতত স্কুলের বাথরুমে নাক পরিষ্কার করছে৷ সারা রাস্তায় নাক পিটপিট দমন করে রেখেছিল৷ নিজেকে নায়িকাদের মতো পারফেক্ট করা, সহজ বিষয় নয়৷ একদমই নয়৷ চার-পাঁচ ঘন্টায় অরু হয়রান হয়ে গিয়েছে অভিনয় করতে করতে৷ তাই সে নিজের ডিসিশন পরিবর্তন করলো৷ এখন থেকে অরু শুধু তন্ময়ের সামনে টিপস গুলো ফলো করবে৷ তন্ময় সেগুলো দেখে আকর্ষণ অনুভব করবে৷ তারপর অরুর পেছন পেছন ঘুরবে৷ মধুময় গল্পসল্প করবে৷ আদর সোহাগ দিবে! তার প্রেমে হাবুডুবু খাবে৷ ভেবেই অরু খুশিতে গদগদ হয়ে উঠলো৷ সেদিন খুশি মনে স্কুল শেষ করে বাড়ি ফিরেছে৷ লাফিয়ে লাফিয়ে নিজের রুমে গিয়ে, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্রেকটিস করতে আরম্ভ করেছে৷ ঠিক কীভাবে লাজুক অভিনয় করলে ভালো দেখাবে? অভিনয় করার এক ফাঁকে দীপ্ত উঁকি দিল রুমে৷ অরুর এসব কর্মকাণ্ড দেখে ফিক করে হেসে উঠলো৷
– পাগল ছাগলের মতো কীসব করছ?
অরু দৌড়ানি দিতেই দীপ্ত চলে গেল৷ এবার অরু দরজা লাগিয়ে রাখল৷ দুপুরে খেয়ে আবারো রুমে চলে এসেছে৷ ঠিক সন্ধ্যায় দরজা খুলে বেরিয়েছে৷ সুন্দর একটা কামিজ পরেছে৷ পিঠ সমান চুলগুলো ছেড়ে রেখেছে৷ ঠোঁটে হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক দিয়েছে৷ নিজেকে পরিপাটি করে তন্ময়ের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে বইপত্র নিয়ে৷ আজ একদম তাড়াহুড়ো করবে না৷ ধীরেসুস্থে তন্ময় আসলেই রুমে ঢুকবে৷ তন্ময় এসেছে ঘন্টাখানেক পর৷ তাকে দেখে অরু নিজের রুমে ঢুকে গেল৷ তারপর আচমকা বেরিয়ে আসার অভিনয় করল৷ তন্ময়ের দিক লাজুক ভাবে তাকাল৷ পরমুহূর্তেই চোখ নিচে নামিয়ে রাখল৷ অথচ তন্ময় সেখানে নজরই দেয়নি যেমন৷ অফিস ব্যাগ নিয়ে রুমে ঢুকে গেল৷ লোকটা কী কানা? নাহলে অরুর পরিবর্তন দেখে কিছু বলছে না কেন? কিছু বলুক, অরু শুনতে চায়৷ মনের বিষাক্ততা দমিয়ে অরু রুমে ঢুকতেই চুলে টান অনুভব করলো৷ তন্ময় পেছন থেকে তার লম্বা চুলগুলো ডানহাতে পেঁচিয়ে নিয়েছে৷ ব্যথায় অরু আর্তনাদ করে উঠলো,
– এ্যাহ! ছাড়ুন, ছাড়ুন ব্যথা পাই! লাগছে তো!
– আর যদি দেখি আমার আশেপাশে এসব করে বেরিয়েছিস, চড় দিয়ে দাঁত সবকয়টা ফেলে দিব!
অরুর আর বুঝতে বাকি নয় কিসবের কথা বলছে৷ মাথা বেঁকিয়ে বলল,
– করবো না৷ ছাড়ুন!
তন্ময় ছেড়ে দিল৷ অরু চোখের কোণায় জল নিয়ে অভিমানী চোখে তাকাল৷ চলে যাবার জন্য পা বাড়াতেই শুনতে পেল তন্ময়ের গম্ভীর স্বর,
– চুপচাপ পড়তে বোস৷
অন্ধকার চোখমুখ নিয়ে অরু টেবিলে বসেছে৷ তন্ময় তাওয়াল হাতে ওয়াশরুম গিয়েছে৷ বইপত্র মেলে অরু ভাবতে বসলো৷ তার রোমান্টিক ফিল্মের নায়িকা হবার স্বপ্ন বাদ দিতে হবে৷ তাহলে কী অন্যকিছু ট্রায় করবে? তন্ময়কে তার প্রেমের জালে ফাঁসাতে কি করতে হবে? কই নায়িকাদের দেখলেই তো নায়ক পাগল হয়ে নিজেই প্রেমের জালে জড়িয়ে পড়ে৷ তাহলে তন্ময় কেন তার প্রেমের জালে পড়ে না? হুট করে অরুর নজর গেল তন্ময়ের অফিস ব্যাগে৷ ওয়াশরুমের দিক আঁড়চোখে তাকিয়ে দ্রুত ব্যাগটা খুলল৷ ভেতর থেকে তখন টুংটাং শব্দ পেয়েছিল৷ কীসের শব্দ হতে পারে সেটাই দেখবে৷ সম্পুর্ন ব্যাগে উঁকিঝুঁকি দিয়েও কিছু পাচ্ছে না৷ তন্ময়ও বেরিয়ে আসবে যেকোনো সময়৷ ব্যাগের ভেতরে ছোট সাইড পকেটের চেইন খুলতেই অরু, খুব সুন্দর বড়ো একজোড়া পাথরের কানের দুল পেলো। এতটাই সুন্দর দুল জোড়া যে অরু তাকিয়েই রইলো৷ কানের দুল আর টিকলি তার ভীষণ প্রিয়৷ এতো সুন্দর দুল তন্ময় কার জন্য এনেছে? নাকি অন্যকারো সে নিজের কাছে রেখেছে? ওয়াশরুম থেকে শব্দ আসছে৷ তন্ময় বেরোবে মনে হয়৷ অরু দ্রুত ব্যাগ আটকে যেখানকার ব্যাগ যেখানটায় রেখে দিল৷ কিছুক্ষণ পর দীপ্ত এসে কফি দিয়ে গেছে তন্ময়কে৷ সেই কফিতে চুমুক দিতে দিতে তন্ময় অরুকে পড়াচ্ছে৷ কিন্তু পড়াতে অরুর একটুও মন নেই৷ মন আনচান করছে দুল জোড়া দেখার পর থেকে৷ তন্ময় কার জন্য কিনেছে? তন্ময়ের কী প্রেমিকা আছে? সে কি প্রেম করে? আশঙ্কায় অরুর বুক ধুকপুক করছে৷ নিজেকে কোনোমতেই আটকাতে পারলো না৷ হুট করে প্রশ্ন করে বসলো,
– আপনি কি প্রেম করেন তন্ময় ভাইয়া?
– চাচ্চুকে ডাকবো?
– না না৷ এইতো পড়ছি!
অরু আবারো পড়ায় মনোযোগ দেবার চেষ্টা করলো৷ না পারছেনা৷ আঁড়চোখে তন্ময়কে কয়েকবার দেখে নিল৷ মনের ভেতরে থাকা প্রশ্নটার উত্তর না পেলে অরু মরেই যাবে৷ মরার আগে উত্তর জেনে নিবে৷ বই বন্ধ করে অরু তন্ময়ের দিক তাকিয়ে বলল,
– আপনার ব্যাগের কানের দুল জোড়া কার?
– হবে একজনের৷
তন্ময়ের সরলতম জবাবে অরু বাকরুদ্ধ হয়ে গেল৷ চোখজোড়া লাল হয়ে উঠছে তার,
– কার? আপনি কিনেছেন অন্যকারো জন্য?
– তাইতো মনে হচ্ছে৷
অরুর নাক ফুলে উঠছে। কেঁদে দিবে, দিবে ভাব৷
– আপনি..
সম্পুর্ন কথা বলতে পারলো না, পূর্বেই অরু দৌড়ে বেরিয়ে আসলো তন্ময়ের রুম থেকে৷ নিজের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো৷ কাঁদতে কাঁদতে বিছানায় শুয়ে পড়লো৷ একসময় নাকের পানির জ্বালায় উঠে টিস্যু নিয়ে বসলো৷ আমতাআমতা করে বলল,
– কান্না করেও শান্তি নেই৷
—-
আজকের আকাশের চাঁদ খুবই সুন্দর৷ শাবিহা ছাঁদের এককোণে দাঁড়িয়েছে৷ এক ধ্যানে চাঁদের দিক তাকিয়ে আছে। ঘনঘন বাতাস বইছে৷ তার চুলগুলো উড়ছে৷ রাতের আকাশ শাবিহার ভীষণ পছন্দের৷ আকাশের পানে তাকিয়ে থাকতে মায়া লাগে৷ তেমনই ভালোও লাগে৷ অস্পষ্ট আওয়াজ শুনে পাশে তাকাল৷ পাশের ছাঁদে অয়ন এসে দাঁড়িয়েছে। হাতে বোতল৷ কিছু একটা খাচ্ছে৷ শাবিহা চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,
– মাত্র ফিরেছ?
– হু! কাজের চাপে কাঁধ ব্যথা করছে৷ শাবিহা একটু টিপে দিবেন?
শাবিহা কথা উল্টে বলল,
– খেয়েছ?
– মাত্রই ফিরেছি৷ আপনাকে নিচ থেকে ছাঁদে দেখে ডিরেক্ট চলে এসেছি৷ ফ্রেশ হয়নি এখনো৷
– ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নাও৷
– পড়ে৷ আপনি বলুন, কাল তামান্নার হলুদে আসবেন না?
– জানি না!
– আসবেন৷ আমি অপেক্ষায় থাকব আপনার৷
শাবিহা জবাব দিচ্ছে না দেখে অয়ন ছাঁদ টপকে চলে এলো৷ শাবিহা প্রথমে ঘাবড়েছে৷ পরপর নিজেকে সামলে দাঁড়িয়ে রইলো৷ অয়ন তার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে৷ শাবিহা আঁড়চোখে দেখেছে অয়নকে৷ শার্ট-প্যান্ট পরে৷ কপালে বিন্দুবিন্দু ঘাম৷ চুলগুলো সুন্দর ভাবে উল্টে দেওয়া৷ বেশ বড়বড় ভাব৷ কানে সুড়সুড়ি পেয়ে সরে যাবার চেষ্টা করলো৷ অয়ন দুপাশে হাত দিয়ে আটকে ধরলো তাকে৷
– আজ মা বলছিল আমি বড়ো হয়ে গেছি৷ বুঝদার হয়েছি৷ আমাকে বিয়ে দিতে হবে৷ বাড়িতে বউ লাগবে৷ ভাবছি তাদের আপনার কথা বলবো৷
শাবিহা মুহুর্তেই আৎকে উঠলো৷ বিষ্ময়কর নয়নে ফিরে তাকাল৷
– এসব কী বলছ!
– কি বলছি? একদিন না একদিন তো বলতে হবে। আগেই বলে দেওয়া ভালো না?
– কয়েক বছর যাক৷ তুমি ঠিক কী চাও বুঝে নাও আগে!
অয়নের চোখমুখ কুঁচকে এসেছে৷ শাবিহাকে নিজের দিক ফিরিয়ে বলল,
– শাবিহা আপনি কী কোনোভাবে আমাকে ডাউট করছেন? আমার ভালোবাসাকে নিতান্তই মজা ভাবছেন নাকি?
– সেটা নয় কিন্তু অয়ন তুমি এখনো খুব ছোটো৷ তোমার পরিবার বা আমার পরিবার এটা একদম ভালো চোখে দেখবে না৷ বরং তুমি খুব চাপে পড়ে যাবে৷ কতটা ঝামেলা আসবে বুঝতে পারছ না।
– আপনি এখানো হেজিট্যাট করছেন!
শাবিহা নিশ্চুপ৷ অয়ন চলে যাচ্ছে। একটিবার ফিরে তাকাল না৷ শাবিহা ভেজা নয়নে তাকিয়ে রইলো৷ আজকাল সে খুব ভয়ে থাকে৷ পরশুদিনও বাড়িতে তারজন্য বিয়ের প্রস্তাব এসেছে৷ মোস্তফা সাহেব মেয়ের মুখের দিক তাকিয়ে প্রস্তাব একটির পর একটি ফিরিয়ে দিচ্ছেন৷ প্রতিবেশীদের কানাঘুঁষা তো চলছেই, শাবিহার বিয়ে নিয়ে৷ বয়স হয়েছে এখনো বিয়ে করছে না কেন! মাস্টার্স শেষের পথে প্রায়৷ অথচ শাবিহা এখনো কোনো ডিসিশন নিতে পারছেনা৷ মোস্তফা সাহেব জানিয়েছেন, বিয়ে নিয়ে শাবিহাকে চিন্তাভাবনা করতে৷ মেয়ে মানুষ হয়ে জন্ম নিয়েছে, আজ বাদে কাল বিয়ে তো করতেই হবে৷ এতসব সে অয়নকে কীভাবে বোঝাবে? তার বিয়ের বয়স প্রায় পেরিয়ে যাচ্ছে অথচ অয়নের বিয়ের বয়স হয়নি এখনো৷ আজকাল নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে ছেলেরা বিয়ে করে৷ সেদিকে অয়ন মাত্র অনার্সে পড়ছে৷ কীভাবে কি করবে শাবিহা বুঝতে পারছেনা৷ নিজেকে ভীষণ হেল্পল্যাস লাগছে৷ কার সাথে এগুলো শেয়ার করে নিজেকে উদ্ধার করবে? কাকে বলবে এসব কথা? কে তাকে রাস্তা দেখাবে?
– শাবিহা!
তন্ময়ের ডাকে ফিরে তাকাল শাবিহা৷ তন্ময় দুটো কফি হাতে ছাঁদে উঠে এসেছে৷ একটা কফি শাবিহার হাতে দিয়ে অন্যটায় সে চুমুক বসিয়েছে৷ গরম গরম কফি! এখনো ধোঁয়া উড়ছে৷ শাবিহা কিছুক্ষণ ভাইয়ের দিক তাকিয়ে থেকে কফিতে চুমুক বসালো৷ তন্ময় দূরে চাহনি নিবদ্ধ করেই প্রশ্ন করলো,
– কি হয়েছে?
শাবিহা নিশ্চুপ হয়ে আছে৷ তন্ময়ও তাকে তাড়া দিচ্ছে না৷ ধীরেসুস্থে জবাব দেওয়ার সময় দিয়েছে৷ শাবিহা কিছুক্ষণ পর বলল,
– ভাইয়া বয়সের ব্যবধান কী খুব ম্যাটার করে?
আমি যদি বলি, আমার কমবয়সী এক ছেলেকে পছন্দ তুমি কী আমার উপর নিরাশ হবে?
– উঁহু একদম না৷
– তাহলে কী করবো? আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা!
– সময় আছে বুঝে নে৷ এতো প্রেসার নিতে হবেনা৷ তোর যাকে পছন্দ হবে, আমারও তাকেই পছন্দ৷
শাবিহার মাথাটা তন্ময়ের বুকে হেলে গিয়েছে৷ চোখজোড়া বুঝে বলল,
– ও আমার খুব ছোট! আমার সাথে ওর মানায় না৷ তার উপর…
– সবকিছু বাদ! তুই কী চাস? তুই যেটা চাস তাই হবে৷
– সবসময় নিজের চাওয়াকে পূরণ করতে নেই৷
তন্ময় হাসলো৷ শাবিহাকে নিজের সঙ্গে নিতে নিতে বলল,
– সর্বপ্রথম নিজের চাওয়াকেই পূরণ করতে হয়৷ বাই হুক ওর বায় ক্রুক!
চলবে