চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা #ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া #পর্ব-৫৬

0
713

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৫৬
১৫১.
স্বাধীন,পুতুলের হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসতেই পুতুল কান্না ভেঙে পড়ে।

আমি যাকে ভালোবেসে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাই।সেই আমায় ফাঁকি দিয়ে কেনো চলে যায়?আর চলে যদি যাবে,তবে এত মায়া কেন বাড়ায়?কেনো একটু সুখের আশায় আমায় নতুন করে বাঁচতে শিখায়?কেনো এতটা পথ চলে আসার পর মাঝ পথে ছেড়ে চলে যায়।একটিবার কি আমার কথা মনে পড়েনি।তাঁকে ছাড়া আমি বাঁচব কি করে?

আম্মা তুমি শান্ত হও।সব ঠিক হয়ে যাবে।আমি বলছি।তুমি আমার কথা শুনো।তুমি অনেক কিছুই জানো না।এই পাঁচ বছরে কি কি ঘটেছে?সবাই জানলেও তোমায় সেসব বলার সাহস কারো ছিল না।অর্পন বারবার সবাইকে নিষেধ করেছে।যেনো তুমি কিছু জানতে না পারো।কিন্তু আজ তোমার থেকে কিছু লুকিয়ে রাখা হবে না।তুমি সব জানতে পারবে।তোমার স্বামীকে মিথ্যে মামলার আসামি করা হয়।তাকে দুই বছর জেলে থাকতে হয়।তাকে শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে।সে ভালো ছিল না।তাকে বাঁচানো জন্য সাফিন সাহেব কম চেষ্টা করেনি।অনেকবার ছাড়িয়ে আনতে চাইলো সে ফিরিয়ে আনতে পারেনি।
কারণ অর্পণ ফিরে আসতেই চায়নি।কারণটা তুমি ছিলে।তোমাকে বাঁচাতে অর্পণ নিজেকে আসামি করেছে।আর এসবের পিছনে কলকাঠি তার মামা করেছে।জেলের মধ্যেও তার ওপরের মানসিক,শারিরীক টর্চার চলতো।বিনা অপরাধের শাস্তি ভোগ করতে হ’য়েছে।তার রাজনীতি ক্যারিয়ারে লাল কালির দাগ পড়েছে।পার্টি লোকেরা তার ওপর থেকে সব দায়িত্ব সরিয়ে নিয়েছে।এমনকি তাদের মধ্যে কিছু লোক জেল হাজতে অর্পণকে একেবারে মেরে ফেলার চেষ্টা করে।কিন্তু অর্পণের নানার জন্য কেউ বেশি সুবিধা করে উঠতে পারিনি।দুই বছর পর জেল থেকে প্রমাণসহ মুক্তি মিলে।যে সরকারি টাকার জন্য মিথ্যে মামলা হয়েছিল তা ভুল প্রমাণিত হয়।তার জন্য দুই বছর পর বের হয়ে আসতে পারে।আর প্রমান যদি না হতো তাহলে আরো বেশি শাস্তি ভোগ করতে হতো।

জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তার মামা তাকে মেরে ফেলতে চায়।সে অর্পণকে গুলি করে দেয়।

পুতুল হতভম্ব হয়ে গেছে।সে আর কিছু শুনতে চায় না।বুকের ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে।নিজেকে সামলাতে পারছেনা।মানুষটা কতটা অসহায় ছিল।কতটা কষ্ট পেয়েছে।তাঁকে দেখার জন্য পুতুল মামার হাতদুটো ধরে কেঁদে ওঠে।পুতুল অতিরিক্ত কান্নার ফলে কথা বলতে পারছে না।স্বাধীন,পুতুলের চোখের পানি মুছে বলল,

অর্পণ ভালো নেই।তুমি যখন এসে গেছো।তখন সবকিছু আবার আগের মতো হয়ে যাবে।

১৫২.

রাবেয়া নিজের চোখের পানি আড়ালে মুছতে মুছতে বলল,

অর্পণ বেঁচে আছে।সেইদিন আমার বাবা
জামশেদ উল্লাহ খান ঠিক সময় হাসপাতালে না নিলে হয়তো তাকে বাঁচানো সম্ভব হতো না।গুলিটা অর্পনের বুকে করা হয়।দ্বিতীয় গুলি অর্পণকে করতে নিলেই পুলিশ অফিসার শাফাকাত খানের হাতে গুলি করে দেয়।কিন্তু শাফাকাত দমে যায় নিই।একের পর এক গুলি ছুঁড়ে।তাকে থামাতে পুলিশ গুলি করেন।এক পর্যায়ে শাফাকাত পালিয়ে যাওয়ার পথেই পুলিশের গুলিতেই প্রাণ হারায়।

রাবেয়া কথা শেষ করে পুতুলের দিকে তাকিয়ে বলল,

হ্যা।আমার ছেলে বেঁচে আছে।কিন্তু আগের অর্পণের সাথে এই অর্পণ সম্পূর্ণ আলাদা।আমার ছেলে আগে সবার মন জয় করে চলেছে।কখনোই গম্ভীর ছিল না।ওর মুখে একটু মুচকি হাসি যেটা সবসময় লেগেই থাকতো।কিন্তু জেলের ঘটনা তার ওপর নিজের সাথে এত বড় বিপদ।চোখের সামনে মামার মৃত্যু।নানুর বিছানায় পড়ে যাওয়া এসব মেনে নেওয়াটা ওর পক্ষে কষ্টের ছিল।সময় চলার সাথে সাথে অর্পণ বদলে গেলো।সে এখন গম্ভীর হয়ে থাকে।বাবার বিজনেস সামলায়।যে রাজনীতির জন্য এতকিছু হলো সে রাজনীতি থেকে বিন্দু মাত্র সরেনি।বরং রাজনীতির মাঠটাকে গরম করে রাখে।তার ভয়ে কেউ ভুল কাজ করতে পারে না।পার্টির লোকের সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা ব’লে না।যতটুকু বলে তা কাজের জন্য।আর যাদের জন্য জেলে গেলো।তাদের পার্টি থেকে বাদ করে।এবং শাস্তির ব্যাবস্থা করে।নতুন করে পার্টি লোকের কাজ শুরু করে।এখন সময়ের সাথে সাথে রগচটা হয়েছে।কোনো কথা মাটিতে পড়তে দেয় না।সঙ্গে সঙ্গে ওটার সমাধান করবে।তার চিতকার চেচামেচি জন্য পার্টির কেন্দ্রীয় লোকেরা বিরক্ত হয়।কিন্তু যার ধারা সমাজ উন্নয়ন হচ্ছে।তাকে কিছু বলার সাহস হয় না।পুতুল আমার ছেলেটাকে আবার আগের রুপে ফিরিয়ে নিয়ে আসো।ওকে এভাবে দেখতে ইচ্ছে করছে না।ছেলেটা আমার বাড়িতে ফিরে না।কাজের মধ্যে পুরো সময় ডুবে থাকে।তার খাওয়ার কথা,বিশ্রামের কথা মনে থাকে না।এভাবে জীবন চলবে না।তাকে বুঝতে চেষ্টা কর আম্মু।তুমি তাকে সময় দেও।দেখো তুমি এতদিন নিজের ক্যারিয়ার করতে চেয়েছো।আমরা কেউ বাঁধা দেয়নি।কিন্তু তুমি এখন আমার ছেলের দিকে একটু মনযোগ দেও।ওর কষ্টগুলো বুঝতে চেষ্টা কর।নিজের স্বপ্নের পাশাপাশি নিজের ঘর,আর বর দুটোর খেয়াল রাখো।মেয়েরা চাইলে সব কিছুই সম্ভব।তুমি পারবেনা অর্পনকে আবার আগের মতো করতে।ওর কষ্টগুলো ভুলিয়ে নতুন করে চলার পথ দেখাও।আমি জানি আমি ছেলের মা হিসেবে একটু রুড হচ্ছি।কিন্তু কি করব বলো,চোখের সামনে আমার ছেলে শেষ হয়ে গেছে। আর আমি সবটা জেনেও চুপ করে ছিলাম।তোমাকে সময় দিয়েছি।আমার সাধ্য মতো তোমাকে গড়ে তুলতে চেয়েছি।কতটুকু পেরেছি জানি না।এখন শুধু আমার সন্তানের কথা মাথায় আসছে।আর কিছু ভাবার মতো সময় নেই।অর্পণ এখন ঢাকায় আছে।তুমি চাইলে আমি তোমাকে নিয়ে যেতে পারি।পুতুল রাবেয়া হাত ধরে বলল,

আমি আমার স্বামীর কাছে যেতে চাই।প্লিজ, আমাকে নিয়ে চলুন।তাঁকে অনেক কিছু বলার আছে।আমি তাঁকে ছাড়া আর একটা মুহূর্ত থাকতে চাই না।পুতুলের কথায় রাবেয়া মত দিল।এবং অর্পণের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য রওনা হলো।

নিজ অফিস রুমে কাগজপত্র পড়ে নিয়ে সাইন করতে করতে বলল,

সামনে রোজা মাস আসছে।কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিজের লাভ খুঁজতে চওড়া দামে বিক্রি করবার চিন্তা ভাবনা করবে।তাই তাদের সাবধান কর।যদি রোজার মাসে জনসাধারণের মুখে খাবার না উঠে।তাহলে তাদের কঠোর শাস্তি পেতে হবে।আমি চাই জনগনের মানুষ ভালো থাকুক।খেয়ে,পড়ে বাঁচুক।

হাতের কাজগুলো শেষ করে শহরের খবর এবং পরিস্থিতি জানতে নিজেই বের হয়।নিজের গাড়িতে চড়ে নয়।মুখে মার্কস লাগিয়ে মাথা ক্যাপ পড়ে রিকশার হুডি টান দিয়ে শহর ঘুরে দেখতে দেখতে রিকশাওয়ালা সাথে কথা বলতে লাগল নিজ পরিচয় গোপন করে।আর রিকশাওয়ালা তার বর্তমান পরিস্থিতি খুলে বলতে লাগল।ইট,পাথরের শহরে অলিগলিতে পা রেখেছে।বাজারের মধ্যে প্রবেশ করে সব খবর নিলো।পরিস্থিতি সব কিছু হাতের মুঠোয় আছে।এটা ভেবেই শান্তি লাগছে।সারাদিন পরিশ্রমে শরীরটা নুইয়ে গেছে।এখন একটু বিশ্বাম প্রয়োজন।বাড়িতে ফিরে নিজ ড্রইংরুমে বসে পড়ে।চোখ দুটো বুঝে ঘাড় ঢলতে লাগলো।গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়েছে।এক গ্লাস ঠান্ডা পানি হলে ভালো লাগতো।কিন্তু দিবে কে?সে তোও কোনো কাজের লোক রাখেনি।নিজেরটা নিজে করে খায়।অর্পণের ভাবনার মাঝেই চুরির টুং টাং শব্দ কানে লাগে।সন্দেহের গন্ধ পেতেই চোখ দুটো হুট করে খুলে ফেলে।চোখের সামনে নিজের রমনীকে দেখে অবাক হয়।নিজের কল্পনা ভাবে।বিগত কয়েকবছর ধরে তার সাথে এগুলো হয়।আর সে তা নিরবে গ্রহণ করে।এতটুকুতে যে তার শান্তি খুজে পায়।তাই প্রতিবারের মতো এবারও বউকে বুকে টেনে নিলো।বউয়ের কপালে ভালোবাসার পরশ একে জড়িয়ে ধরে।

আর কত জ্বালাবে?তোমার যন্ত্রণা আমি একটু সুখ খুঁজে নিই।কবে আসবে তুমি?আমি জানি না।তোমার সাথে খুব কথা বলতে ইচ্ছে করে।অনেক কিছু বলার আছে।কিন্তু তুমি তোও আমার পাশে নেই।এখন তোমার ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবার কথা।আমি চাই না আমার জন্য তোমার ক্যারিয়ারে কোনো বাঁধা হোক।তাই তো ও সব কষ্ট লুকিয়ে তোমার থেকে আড়ালে আছি।প্লিজ তাড়াতাড়ি ফিরে আসো।আমি তুমি হীন কষ্টে আছি।তোমাকে যে আমার বড্ড প্রয়োজন।পুতুল,আমার কষ্টগুলো ভুলিয়ে দেও না।আমার দমটা বন্ধ হয়ে আসে।মাঝে মাঝে মনে হয় তোমাকে আমি আর দেখতে পাব না।তোমার আমার পথচলা মনে হয় অতটুকুই সীমানা ছিল।

জানো পুতুল মা যখন জানতে পারে আমি জেলে তখন খুব কান্না করতো। অসুস্থ হয়ে পড়ে।তাও তোমাকে ব’লে নিই।আমি বারণ করি।তখন তোমার প্রথম সেমিস্টারে পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে।আমার জন্য তোমার পড়ার ক্ষতি হোক তা চাইনি।তুমি তোমার লক্ষ্য থেকে সরে আসো এটা আমি ভাবতেই পারতাম না।তখন তুমি চলে আসলে আমার সবচেয়ে বড় হার হতো।সবাইকে যে গর্ব করে বলেছিলাম,মেয়েরা বিয়ে পরও স্বামী করে পড়তে পারে।তার শ্বশুর বাড়ি লোকেরা এবং স্বামী সার্পোট পেলে।সেটাতো প্রমান হতো না তুমি চলে এলে।তাই বলিনি।আর বলব না।তুমি আসবে যখন তখন না হয় যেনো।ততদিনে তোমার সুন্দর ভবিষ্যৎ হয়ে যাবে।

চলবে….!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here