অলিখিত_অধ্যায় #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ৩৬।

0
441

#অলিখিত_অধ্যায়
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৩৬।

থানায় এল নীহাল আর প্রিয়তা। প্রিয়তার ভাবমূর্তি বোঝা দায়। ভেতরে তার কী চলছে একমাত্র সে’ই জানে। নীহাল বোনের হাত ধরে আছে শক্ত করে। সে নিজেও একবার ঐ অমানুষটার মুখ দর্শন করতে চায়, যার জন্য তার বোনের আজ এত কষ্ট।

ডিউটি অফিসার বললেন,

‘ওয়াদিকে এখনো কারাগারে পাঠানো হয়নি। সে পাশের রুমেই আছে।’

নীহাল জিজ্ঞেস করল,

‘ও ওর কৃতকর্ম সব স্বীকার করেছে?’

‘না, মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। তবে বেশিক্ষণ এভাবে থাকতে পারবে না, রিমান্ডে নিলেই সব বেরিয়ে যাবে।’

প্রিয়তা ম্লান, বিধ্বস্ত সুরে বলল,

‘আমি কি ওর সাথে একবার দেখা করতে পারি?’

অফিসার বললেন,

‘আপনার এই মুহুর্তে ওর সামনে যাওয়াটা রিস্ক, ও আপনার যেকোনো ক্ষতি করে দিতে পারে।’

‘প্লিজ অফিসার, একবার দেখা করতে দিন।’

প্রিয়তার অনুরোধে অফিসার রাজি হলেন। নীহাল আর প্রিয়তাকে নিয়ে গেলেন সেই রুমে, যেখানে ওয়াদিকে রাখা হয়েছে। সেই রুমের বাইরে কনস্টেবল আছেন দুজন। অফিসারকে দেখে সাইড হয়ে দাঁড়ালেন তারা। ভেতরে প্রবেশ করলেন তিনজন। একটা চেয়ারে মাথা ঝুঁকে বসে আছে এক সুঠামদেহী পুরুষ। পরনের শার্টটা এবলো থেবলো অবস্থা। প্রিয়তা এগিয়ে গিয়ে ঠিক তার মুখ বরাবর দাঁড়ায়। মাথা ঝুঁকিয়ে রাখায় মুখ দেখা যাচ্ছে না তার। প্রিয়তা ডাকল মৃদু আওয়াজে,

‘ওয়াদি।’

চমকে তাকাল ওয়াদি। তার সামনে প্রিয়তাকে দেখে কপালে ভাঁজ ফেলল সে। প্রিয়তা ঢোক গিলল। এক সময়ের তার সবথেকে প্রিয় মানুষটাকেই আজ সে প্রচন্ড ঘৃণা করে। যেই মুখটা দেখলে একসময় বক্ষঃস্থলে প্রশান্তির স্রোত বইত, সেই মুখটাই দেখে আজ তার বক্ষঃস্থল অগ্নিদগ্ধ। জ্বলে যাচ্ছে বুকের ভেতরটা। ওয়াদি জিজ্ঞেস করল,

‘কেন এলে এখানে?’

প্রিয়তা প্রত্যুত্তরে বলল,

‘তোমার একটা জিনিস পাওয়া ছিল, সেই পাওনা মেটাতেই এসেছি।’

ওয়াদি কপাল আরো গুটিয়ে নিয়ে বলে,

‘কী জিনিস?’

প্রিয়তা তার গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে ঠাস করে এক চড় বসাল ওয়াদির গালে। কানের ভেতরটা সঙ্গে সঙ্গেই ঝিমঝিম করে উঠল ওয়াদির। গালের এক পাশের হাড় বোধ হয় নড়ে গেল। অবাক হলো ওয়াদি, মেয়েটার গায়ে এত শক্তি!
অফিসার দ্রুত গতিতে এগিয়ে এসে বললেন,

‘ম্যাডাম, আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না; এভাবে আসামীকে আঘাত করার নিয়ম নেই। আপনি চলুন।’

নীহাল বোনকে এক হাতে আগলে ধরল। বলল,

‘চল, প্রিয়। এই জঘন্য মানুষটাকে দেখে আর কষ্ট বাড়িয়ে লাভ নেই।’

প্রিয়তা জোরে নিশ্বাস ফেলল। ওয়াদি এখনো গালে হাত দিয়ে দিব্যি তাকিয়ে আছে তার দিকে। চোয়াল শক্ত করল প্রিয়তা। বলল,

‘এই চড় আমার সাথে হওয়া অন্যায়ের জন্য না, এই চড় হলো, ঐসব অসহায় মেয়েদের সাথে করা জুলুমের জন্য, আর একটা নিষ্পাপ মানুষকে গুলিবিদ্ধ করার জন্য। আমি দোয়া করি, আল্লাহ যেন তোমাকে এই দুনিয়াতেই তোমার পাপের শাস্তি দিয়ে দেন।’

ওয়াদির মাঝে বিন্দুমাত্র ভাবাবেগ দেখা গেল না। সে হাসল বরং, যেন প্রিয়তা বেশ মজার কথা বলেছে। নীহাল প্রিয়তাকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। অফিসার বললেন,

‘আপনার বোনের কষ্টটা আমরা বুঝতে পারছি, তবে উনাকে আর থানায় না আনাই ভালো হবে। ওয়াদিকে যখন কোর্টে নেওয়া হবে, তখন কোর্টে যাবেন, সাক্ষী দিতে। আর উনার পাসপোর্ট ভিসা আমরা খুঁজে বের করব সব। চিন্তা করবেন না, খুব শীঘ্রই আপনারা দেশে ফিরতে পারবেন।’

নীহাল বলল,

‘ধন্যবাদ, আমরা আসছি তাহলে।’

‘জি।’

প্রিয়তা বাকি সময় নির্বাক, নিশ্চুপ রইল। নীহালও আর ঘাটাল না তাকে। বোনের মনের অবস্থা ভালো নেই, এইটুকু সে বুঝতে পারছে। তারা বের হয়ে আসতেই নীহালের ফোনে ফারজাদ কল করে।

‘কী অবস্থা, নীহাল? কোনো অসুবিধা নেই তো?’

‘না, না, সব ঠিক আছে। তবে প্রিয়তা এক কাজ করে বসেছে।’

প্রিয়তার কথা শুনে চিন্তিত হয় ফারজাদ। জিজ্ঞেস করে,

‘কী করেছে?’

‘ওয়াদিকে ঠাটিয়ে এক চড় মেরে এসেছে।’

‘এটা তো হওয়ার’ই ছিল। উনার মনে যে রাগ, ক্ষোভ জমেছে তা কি আর এক চড়ে কমবে?’

নীহাল দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বলল,

‘আমার নিজেরই তো ওকে খু ন করে ফেলতে ইচ্ছে করছিল, আমার বোন তো তাও এক চড় মেরে এসেছে শুধু।’

‘চিন্তা করবেন না, ওয়াদি অবশ্যই কঠিন শাস্তি পাবে।’

‘কালকে কোর্টে তুলবে হয়তো, অফিসার আমাদের আসতে বলেছেন।’

‘হ্যাঁ, প্রিয়তার সাক্ষী লাগবে তো সেখানে।’

‘হু। তা আপনার শরীর এখন কেমন?’

‘আলহামদুলিল্লাহ, বাড়ি ফিরব এখন।’

‘আচ্ছা, আমরা তাহলে বিকেলে এসে দেখা করে যাব।’

‘জি অবশ্যই, চলে আসবেন।’

ফোন রেখে নীহাল প্রিয়তাকে নিয়ে হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।

সারাটাদিন গিয়েছে প্রিয়তার মন খারাপ। হোটেলে শুয়ে বসে কাটিয়েছে পুরোটা সময়। নীহালও বিরক্ত করেনি কোনোপ্রকার। বোনের মনের অবস্থাটা সেও বুঝতে পারছে।

পড়ন্ত বিকেল। সূর্যের তেজ কমে এসেছে। বাইরে এখন মিষ্টি কমলা রোদ। নীহাল প্রিয়তাকে নিয়ে রওনা দিল ফারজাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
মৌমি দরজা খুলে নীহাল আর প্রিয়তাকে দেখে খুশি হলো। প্রিয়তার হাত চেপে ধরে বলল,

‘জানো, আমি এতক্ষণ তোমার কথাই ভাবছিলাম।’

প্রিয়তা হাসল প্রসন্ন। বলল,

‘তাই তো দেখো, চলে এসেছি।’

দিলরুবা বেগম নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বললেন,

‘আহা, ওদেরকে আগে ঘরে তো ঢুকতে দে, মৌমি। দরজার সামনে দাঁড়িয়েই কথা শুরু করে দিয়েছিস।’

মৌমি সরে দাঁড়িয়ে বলল,

‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, এসো।’

ভেতরে প্রবেশ করল দুজন। নীহাল ফারজাদের খোঁজ করলে দিলরুবা বেগম জানালেন, সে নিজের ঘরে বিশ্রাম করছে। নীহাল জিজ্ঞেস করল,

‘আমি কি একবার যাব?’

‘হ্যাঁ বাবা, যাও না। তুমি গেলে তোমার সাথে গল্প করলে ওর একটু ভালো লাগবে।’

নীহাল ফারজাদের রুমের দিকে গেল। দিলরুবা বসলেন প্রিয়তার পাশে। প্রিয়তার মন খারাপ তিনি আঁচ করতে পারছেন। ফারজাদ উনাকে আগেই জানিয়েছে সব। দিলরুবা বেগম প্রিয়তার মাথায় হাত রেখে বললেন,

‘মন খারাপ কেন করছো, মেয়ে? জানো, আল্লাহ যখন কিছু কেড়ে নেন তার থেকে দ্বিগুণ আবার ফিরিয়ে দেন। নিশ্চয় তোমার জন্য চমৎকার কিছু আছে, একটু ধৈর্য্য ধরো।’

দিলরুবা বেগম ভীষণ বুদ্ধিমতি আর জ্ঞানী একজন মহিলা। তা উনার কথা শুনলেই বোঝা যায়। যেকোনো কিছু বেশ সহজেই গুছিয়ে নেন তিনি। প্রিয়তা তাঁকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়, জীবনে বেঁচে থাকার আশা ভরসা ফিরে পায় আবার। সে কিঞ্চিৎ হাসল। বলল,

‘আমার কি মনে হয় জানেন, সেই চমৎকার কিছু হলেন আপনারা। আল্লাহ আমার কাছ থেকে ঐ জঘন্য মানুষটাকে কেড়ে নিয়ে আমার জীবনে আপনাদের মতো মানুষের আগমন ঘটিয়েছেন।’

দিলরুবা বেগম আপ্লুত সুরে বললেন,

‘এভাবে বললে কিন্তু তোমাকে আর দেশে ফিরতেই দিব না।’

প্রিয়তা হাসল। মৌমি চট করে বলল,

‘রেখে দাও না, আম্মি। এমনিতেও তোমার ছেলের তো এবার বিয়ে করার দরকার।’

মৌমির কথা শুনে হকচকিয়ে তাকায় প্রিয়তা। মৌমি কী বোঝাতে চাইছে তা বুঝতে তার খুব একটা খাটতে হলো না। দিলরুবা বেগম চোখের ইশারায় মৌমিকে থামতে বললেন। পরে তিনি কথা ঘুরানোর জন্য হেসে বললেন,

‘আরে ওর কথা এত ধরো না তো, প্রিয়তা। মেয়েটা সবসময় উল্টা পাল্টা কথা বলে।’

মৌমি ঠোঁট চেপে হাসছে। প্রিয়তা চেয়ে আছে বোকার মতো।মৌমি কি আর কোনো উল্টা পাল্টা কথা বলতে পারল না, এটাই বলল কেন?

________

নীহাল আর ফারজাদের গল্পের মাঝেই নীহালের ফোন বেজে উঠে। হাতে নিয়ে দেখে, থানা থেকে অফিসারের কল। সে রিসিভ করে। অফিসার বলেন,

‘আপনাদের জন্য একটা খারাপ খবর আছে, মি. নীহাল।’

নীহাল চিন্তিত সুরে প্রশ্ন করে,

‘কী খবর, অফিসার? ঐদিকে কি কোনো সমস্যা হয়েছে?’

চলবে….

(আসসলামু আলাইকুম, পাঠকমহল। আমার শরীরের অবস্থা ভালো নেই। জ্বর, ঠান্ডা, মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা সব একসাথে ধরেছে। তার উপর আমার আবার সেমিস্টার ফাইনালও চলছে। সব মিলিয়ে একেবারে নাজেহাল অবস্থা যাকে বলে। অসুস্থতার জন্য আমি ঠিক মতো লিখতে পারছি না। আপনারা জানেন, আমি অযথা গল্পে গ্যাপ দেইনা; কিন্তু, শরীরের এখন এমন অবস্থা যে আমি বেশিক্ষণ মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারি না, কষ্ট হয়। দোয়া করবেন, যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারি। ততদিন পর্যন্ত হয়তো একটু গ্যাপ পড়তে পারে। আশা করছি, আপনারা বুঝে নিবেন। ভালোবাসা রইল❤️)

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here