অলিখিত_অধ্যায় #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ৪০।

0
443

#অলিখিত_অধ্যায়
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৪০।

‘আব্বু, আমি যেকোনো মূল্যে ফারজাদকে বিয়ে করতে চাই।’

রওফিক সাহেব ফাইল বন্ধ করে মেয়ের দিকে চাইলেন। দেখে বোঝা গেল, বিরক্ত তিনি। তার মেয়েকে বিয়ে করার জন্য পাত্রের অভাব নেই। ফারজাদের থেকেও অনেক ভালো ভালো ছেলে লাইনে দাঁড়িয়ে। অথচ মেয়ে তার এক ফারজাদের পেছনে পড়েছো তো আর উঠার নাম’ই নেই। তিনি বললেন,

‘এখন কি জোর করে বিয়ে করবে না-কি?’

জারা ক্ষিপ্ত সুরে বলল,

‘দরকার পড়লে তাই করব। তুমি কিছু লোক ভাড়া করে ফারজাদকে কিডন্যাপ করাও। বাকি ব্যবস্থা সব আমি করে নিব।’

রওফিক সাহেব হকচকিয়ে উঠে বললেন,

‘মাথা কি এবার পুরোপুরি খারাপ হয়েছে তোমার? কী বলছো এসব?’

‘আব্বু, আমি ফারজাদকে ছাড়া অন্যকিছু ভাবতে পারছি। ও আমার মন মস্তিষ্কে মিশে গিয়েছে। আমার ওকে লাগবে, আব্বু।’

‘ও কোনো খেলনা না, জারা। আমার পক্ষে যতটুকু করার করেছি। তোমার জন্য কম অপমান সহ্য করতে হয়নি, আর পারব না। এবার যা খুশি তুমি করে নাও, আমি আর কিছু করতে পারব না।’

বাবার কাছ থেকে এমন অবজ্ঞা পেয়ে ভীষণ ক্ষুব্ধ হলো জারা। জেদ তার তাতে আরো তরান্বিত হলো। কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল হনহন করে। কাকে একটা যেন কল লাগাল। বলল,

‘তোর পরিচিত ঐ লোকের নাম্বারটা দে, আমি আজই উনার কাছে যাব।’

___________

থানায় এক উকিল নিয়ে হাজির আহাম্মেদ তাজওয়ার। মুখে ক্রূর হাসি। অফিসার ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছেন। উকিল একটা কীসের কাগজ অফিসারের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,

‘উনাকে ছেড়ে দিন, উনার জামিন হয়ে গিয়েছে।’

‘কে করল জামিন?’

পেছন থেকে অপরিচিত স্বর পেয়ে পেছন ফিরে চাইল সবাই। উপস্থিত অজ্ঞাত এই উকিলকে মোটামুটি সবাইই চেনে। আহাম্মেদ তাজওয়ারের পক্ষের উকিল চমকালেন তাকে দেখে। সালাম দিয়ে বললেন,

‘স্যার, আপনি?’

ঠকঠক পায়ের জুতার শব্দ তার। হাঁটল গাম্ভীর্য ধরে রেখে। এগিয়ে এসে বলল,

‘তা ওয়াদি তাজওয়ারের হয়ে কেইসটা বুঝি আপনি লড়ছেন?’

সেই উকিল মাথা নুয়ালো। তার বিপক্ষে তারই গুরুকে দেখে ইতস্তত বোধ করল সে। আহাম্মেদ তাজওয়ার ক্ষিপ্ত সুরে বলল,

‘আপনি কে?’

‘আপনার বিপক্ষ দলের উকিল। দেখি জামিনের নোটিশটা।’

অফিসার নোটিশটা তার হাতে দিল। পুরোটা পড়ে দেখল আফসার। বলল,

‘এই জামিন তো গ্রহণযোগ্য না। এমন একটা দাগি আসামীর জামিন হাইকোর্ট দেয় কী করে?’

আহাম্মেদ তাজওয়ার গর্জে উঠে বললেন,

‘না জেনে কথা বলবেন না একদম। আমার ছেলে কোনো দাগী আসামী না।’

আফসার হাসল। শব্দ হলো সেই হাসিতে। তার হাতের ফাইলটা মেলে ধরে বলল,

‘এখানে আপনার ছেলের আদ্যোপান্ত সব ইতিহাস আছে। আপনি জানেনও না আপনার ছেলের বিরুদ্ধে আমি কী মজবুত প্রমাণ জোগাড় করেছি। এমন জঘন্য একটা লোকের শাস্তি ব্যতিত জামিন অসম্ভব, অন্তত আমি হতে দিব না।’

এই বলে সে ফাইলটা পুলিশের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

‘অফিসার, এই প্রমাণ আর সংশ্লিষ্ট বিরবণগুলোর উপর আরো একটা মামলা দায়ের করুন। আমিও দেখি জনাব আহাম্মেদ তাজওয়ার কীভাবে তার ছেলেকে জেল থেকে মুক্ত করেন।’

আহাম্মেদ তাজওয়ার দাঁতে দাঁত পিষছেন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। দাঁতের নিচে হয়তো মনে মনে আফসারকে রেখে দিয়েছেন। তার পক্ষের উকিল নীরব দর্শক হয়ে দেখল সব। বিপক্ষ দল এত শক্ত হাতে নেমেছে যে তার আর কিছু করারও নেই। নতুন মামলা দায়ের হলো। আফসার বলল,

‘কালই ওয়াদি কোর্টে উঠবে, আর কালই আমি কেইস জিতব।’

বেরিয়ে গেল সে। আহাম্মেদ তাজওয়ার ফোঁস ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলছেন। এই মুহূর্তে আফসারকে জানে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে তার।

__________

আফসারের ফোন বাজছে। তার সহকারীর সাথে জরুরি কথা বলাতে ব্যস্ত সে। এই সময় কেউ ফোন করলে সে ক্ষুনাক্ষরেও সেই ফোন রিসিভ করে না। কিন্তু আজ, এই প্রথম, নিয়মের বিপরীত ঘটেছে। ফোন রিসিভ করেছে সে। কারণ ফোনের ওপাশের ব্যক্তিটাকে মোটেও সে অপেক্ষা করিয়ে রাখাতে চায়নি।

প্রিয়তার উচ্ছ্বসিত স্বর। বলল,

‘আপনি না-কি আজ থানায় চমৎকার কাজ করে এসেছেন।’

‘চমৎকার কি-না জানি না। তবে আপনি যখন বলছেন, তখন হতেও পারে চমৎকার কিছু।’

প্রিয়তা হাসল। বলল,

‘আমি খুশি হয়েছি ভীষণ।’

‘আর আপনাকে খুশি করতে পেরে আমি ধন্য হয়েছি।’

প্রিয়তা অবাক হলো খানিক। কালকে যে মানুষটা তার সাথে এত ত্যাড়া ত্যাড়া কথা বলেছে আজ সেই মানুষটার মুখ থেকেই এত মিষ্টি ঝরছে কী করে? ব্যাপার কী? সে বলল,

‘আজ মনে হচ্ছে আমার মন ভীষণ ভালো?’

‘তা তো হতেই হবে। কাল আরো একটা কেইস জিতব আমি, তার খুশিতে আজ থেকেই মন প্রফুল্ল।’

প্রিয়তা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বলল,

‘দেখবেন, ওয়াদি যেন কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি পায়।’

‘ফাঁসির অর্ডার দিলে সহ্য করতে পারবেন?’

প্রিয়তার বুকে মোচড় দিল। ঢোক গিলল সে। বলল,

‘অপরাধী সর্বোচ্চ শাস্তি পাক, আমি সেটাই চাই।’

আফসার আফসোসের সুরে বলল,

‘এই স্বার্থপর দুনিয়ায় কেউ ভালোবাসা পায় না, আর কেউ পেয়েও দাম দেয় না। ওয়াদি বড্ড বোকা, নয়তো এমন একটা কাজ সে কখনোই করতে পারত না।’

প্রিয়তা চোখ বুজে নিজেকে ধাতস্ত করে বলল,

‘থাক সেসব কথা, আমি আর ওর কথা ভাবতে চাই না।’

‘হু, সেটাই ভালো। এখন রাখছি তবে, কাল কোর্টে দেখা হচ্ছে। ভালো ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আসবেন।’

কল কাটল আফসার। প্রিয়তা ফোনটা সাইডে রেখে আনমনে চাইল বাইরের দিকে। জীবনের গতি থমকে আছে যেন এক জায়গায়। সে চেয়েও সেই গতি চলমান করতে পারছে না। ভীষণ বিদঘুটে এক যন্ত্রণা ভেতরটা কুরে খাচ্ছে তার। কাউকে দেখাতে পারছে না, কাউকে বলতে পারছে না। কেবল নিজ মনেই সহ্য করে যাচ্ছে এসব।

_________

মাথায় কাপড় টেনে ভেতরে প্রবেশ করে জারা। ভীত সে নিজেও। আশপাশটা কেমন ধোঁয়াটে যেন। একটা অদ্ভুত ঘ্রাণ নাকে এসে ঠেকছে। ভেতরে প্রবেশ করা মাত্রই ভয়ের মাত্রা বৃদ্ধি পেল। ঢোক গিলল সে। চারপাশের অদ্ভুত কদর্য সব জিনিস দেখে দু পা পিছপা হলো। লোকটা চাইল সরু চোখে। হাতের ইশারায় ডাকল তাকে। পাশে বসতে বলল। জারাও বসল। লোকটা কিছুক্ষণ ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে বলল,

‘ঐ ফারজাদকে চাই?’

জারা ততক্ষণাৎ মাথা নাড়াল। লোকটা কালো বিশ্রী রকমের দাঁত বের করে হাসল কিঞ্চিৎ। গুমোট স্বরে বলল,

‘তার চুল, নখ বা ব্যবহারের কোনো কিছু নিয়ে আয়, কাজ হয়ে যাবে।’

জারা ভীত গলায় জিজ্ঞেস করল,

‘ওর কোনো ক্ষতি হবে না তো?’

লোকটা ঘাড় কাত করে এমন ভাবে চাইল যেন জারাকে এখনই চোখ দিয়ে ভস্ম করে দিবে। ভয় পেয়ে যায় জারা। লোকটি ফোঁস করে নিশ্বাস ছেড়ে বলল,

‘আমার উপর ভরসা নেই তো এখানে এলি কেন?’

জারা আমতা আমতা করে বলল,

‘না না, ভরসা আছে। আমাকে ভুল বুঝবেন না, আমি আসলে ওকে খুব ভালোবাসি তো তাই। আমি কালকের মধ্যেই সব জোগাড় করে এনে দিব।’

‘সাথে ছবিও আনবি একট।’

জারা মাথা হেলিয়ে বলল,

‘আচ্ছা।’

তারপর উঠে গেল সে। এই অন্ধকার, কুৎসিত আস্তানা থেকে বেরিয়ে জোরে নিশ্বাস ফেলল। মনে হচ্ছিল যেন আরেকটু থাকলেই দম খুইয়ে বসত বোধ হয়।

চলবে….

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here