-` এমন একটা বে’হা’য়া নি*র্ল*জ্জ মেয়ে কি-না আমার নিজের মেয়ে, ভাবতেই ঘৃ*ণায় আমার সমস্ত শরীর রি রি করছে। ছিহ্। ওকে জন্ম দেওয়ার আগে ম*রে কেন গেলাম না আমি?
হু’ঙ্কার ছেড়ে উক্ত কথাটি মেয়ের উদ্দেশ্যে বলে ঘৃ’ণায় মুখ ফিরিয়ে নিলেন লাবনী রহমান।
নিজের জন্মদাত্রী মায়ের মুখ থেকে এমন একটা কথা শুনতে হবে এটা কখনো ভাবতে পারেনি মেহরুন। পায়ের তলার মাটি যেন ইতোমধ্যে সরে গিয়েছে তার। একটা বাইরের লোকের কথা শুনে কি-না শেষমেষ অবিশ্বাস করে বসল তার মা সহ তার পরিবারের সবাই!
মেহরুনের করা কী’র্তিকলাপের কথা শুনে বাড়ির উপস্থিত সবার মুখে এখন একটাই শব্দ ছি ছি। আ’গুনে ঘি ঢালার মতো করে লাবনী রহমানকে উ’স্কে দিতে তার সাথে তাল মিলিয়ে নাজিয়া সুলতানা ক’টাক্ষ করে বলে উঠলেন ।
-` দেখলে তো মনে হয় ভাজা মাছটা যেন উলটে খেতে জানেনা। কিন্তু তলে তলে এতোকিছু। আজ না হয় হাতেনাতে ধরা পড়েছে, এর আগে আমাদের দৃষ্টির অগোচরে আরও কত কি করে বেরিয়েছে, তা কে জানে?
ছোট জা এর কথা শুনে আরও বেশি ফুসে ওঠেন লাবনী রহমান। অ’গ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন মেহরুনের দিকে।
মায়ের কাছে দৌড়ে গিয়ে হাটু গেড়ে পায়ের কাছে বসে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে মেহরুন। মায়ের হাত দুখানি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের হাতের মুঠোয়। কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে বলল
-‘ বিশ্বাস করো মা, আমি কিচ্ছুটি করিনি। ঐ লোকটা তোমাদের যা বলছে সব মিথ্যে সব। বিশ্বাস করো আমায়।
এক ঝটকায় নিজের হাতটা সরিয়ে নিলেন লাবনী রহমান। মেহরুন আরও কিছু বলার পূর্বেই ঠা’স করে থা*প্পর পড়ে তার গালে। রা’গে ফুসছেন তিনি। একটা থা’প্পর মেরে ক্ষ্যা’ন্ত হননি। আরও দু-চারটে থা’প্পর বসিয়ে দিলেন মেহরুনের গালে। ফলে মেহরুনের ফর্সা গালে মুহূর্তেই রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ে, সেইসাথে পাঁচ আঙুলের পাঁচটা দাগ দৃঢ়ভাবে বসে যায়।
শক্ত করে মেহরুনের গাল চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে লাবনী রহমান বললেন
-‘ বিশ্বাস করবো কাকে? তোমায়, যে কিনা বিশ্বাসের মর্যাদাই রাখতে জানেনা।
মেহরুন কাদতে কাদতে আবারও লাবনী রহমানের হাত ছুতে গেলেই তিনি হুঙ্কার ছেড়ে বলে উঠলেন
-` খবরদার ঐ পা’পিষ্ঠ হাত দিয়ে ছোয়ার চেষ্টা করবি না আমায়। আজ থেকে আমার মেয়ে মৃত আমার কাছে। নিজের হাতে এতোদিন যত্ন করে বড় করেছি কি ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি করার জন্যে? বে*হায়া, লির্ল*জ্জ, মেয়ে কোথাকার।
মেহরুন হা করে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। যে মা তার গায়ে একটা ফুলের টোকা পর্যন্ত পড়তে দেয়নি, একটু কাদলেই যার মন আনচান করত, সবসময় যে মা আগলে রেখেছে। আজ সেই মা-ই তাকে প্র’হার করেছে। ক’টু কথা শোনাতেও যেন দুদণ্ড ভাবছে না তার মা। আর সেই মা-ই তার চোখে জল দেখে আগলে রাখার বদলে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। মেহরুনের চোখ ছাপিয়ে এখনও মুক্তর দানার মতো অশ্রু গরিয়ে পড়ছে। এসব দেখেও কি নিষ্ঠুর মনে মায়া হয়না!
দূরে দাঁড়িয়ে এতোক্ষণ যাবত সবটাই পর্যবেক্ষণ করছিল মহামান্য সেই মানুষটি,যার জন্য ক*লঙ্কিত হয়েছে, এমন মিথ্যে অ’পবাদ শুনতে হচ্ছে, যার জন্য আপনজনদের কাছ থেকে এতো ক’টাক্ষের বাণী শুনতে হচ্ছে মেহরুনকে। মেহরুনের কান্না দেখে কি আদৌও মানুষটার মধ্যে কোনো ভাবান্তর ঘটলো, তা বোঝা গেল না তার গম্ভীর মুখশ্রী দেখে। কি চলছে তার মনে?
মেহরুন আর মায়ের পায়ের কাছে বসে না থেকে সেই মহামান্য মানুষটার কাছে ছুটে গিয়ে শক্ত হাতে কলার চেপে ধরে দাঁত কিড়মিড় করে ক্রু*দ্ধ গলায় বলে উঠে
-‘ কেন মি’থ্যে অপবাদ দিলেন আমার নামে মিস্টার আব্রিশাম খান আদ্রিশ? কেন আমার থেকে আমার পরিবারকে আলাদা করতে চাইছেন আপনি? আমার চরিত্রে ক*লঙ্কের দাগ দিলেন কেন? আপনি সবাইকে সত্যিটা বলে দিলেই তো সব মিটে যেত, তাহলে মিথ্যের আশ্রয় কেন নিচ্ছেন? কি লাভ হচ্ছে এতে আপনার? কি হলো চুপ করে আছেন কেন আপনি? আমার প্রশ্নের জবাব দিন।
দোতলার করিডোরের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে আদ্রিশ। মেহরুনের দিকে ফিরে মুখটাকে পুনরায় গম্ভীর করে নেয় সে। শক্ত হাতে মেহরুনের হাত চেপে ধরে কলার থেকে ঝা’ড়ি মেরে সরিয়ে দেয় হাতটা। কলার ঝেড়ে মেহরুনের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল
-` তোমার কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য নয় এই আব্রিশাম খান আদ্রিশ। কথাটা মাথায় থাকে যেন মিস মেহরুন ইবনাত। অন্যথায় কি হবে সেটা কিন্তু আমি নিজেও জানিনা। আর হ্যাঁ নেক্সট টাইম আমার কলার ধরার সাহস দেখাতে আসবে না। ফল যে খুব একটা সুখকর হবেনা, সেটা বুঝতেই পারছ।
মেহরুনের চোখে এখনও অশ্রু টলমল করছে। অশ্রু সিক্ত নয়নে একরাশ ঘৃ’ণা নিয়ে আদ্রিশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে
-` আপনার কারনেই আমার পবিত্র আত্মা ক*লুষিত হয়েছে আজ। শুধুমাত্র আপনার কারণে সবাই অ’বিশ্বাস করছে আমায়। আপনার প্রতি এতোদিন যে শ্রদ্ধাবোধটুকু ছিল, তা আজ ঘৃ’ণায় পরিণত হয়েছে। আই জাস্ট হেইট ইউ মিস্টার আব্রিশাম খান আদ্রিশ।
মেহরুনের দিকে তাকিয়ে শুধু স্মিত হাসে আদ্রিশ। তবে আদ্রিশ হতে কোনো উত্তর মেলে না আর।
ওদের দুজনকে আড়ালে কথা বলতে দেখে আবারও মাঝখান দিয়ে ফোড়ন কেটে নাজিয়া সুলতানা অর্থাৎ মেহরুনের চাচি বলে উঠলেন
-` দেখো ভাবি, তোমার মেয়ে আবারও ঐ ছেলেটার সাথে যেন কিসব বলছে। এতো বড় একটা পা*প করার পর, মায়ের হাতে চড় খেয়েও মেয়েটার মনে কোনো ভ’য়, ড’র বা ল*জ্জা বলতে কিছু নেই। ছি, কি বে’হায়া মেয়ে রে বাবা!
নাজিয়া সুলতানার কথায় যেন আরও তে’তে উঠলেন লাবনী রহমান। তিনি নিজেকে কিছুতেই সামলাতে পারছেন না। যতই রা*গ দেখাক, ভেতরে ভেতরে তিনি গু’মড়ে ম*রছেন, নিজের মেয়ে বলে কথা, শত হোক ফেলে তো আর দিতে পারেন না। যে মেয়েকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবেসেছেন, বিশ্বাস করেছেন, সেই মেয়ে-ই তাকে এভাবে ঠ*কাতে পারলো? এটা মানতে ভীষণ ক’ষ্ট হচ্ছে তার। কোনো মা কি আদৌ পারে নিজের মেয়েকে নিয়ে এমন ক’টু বাক্য শুনতে? সেখানে তো তিনি নিজের চোখে দেখেছেন। তিনি নিজেকে এ মুহূর্তে কিভাবে সামলাবেন তা জানা নেই তার।
ক্লান্ত লাগছিল বলে চোখের পাতাটা একটু লেগে এসেছিল, হঠাৎ বাড়িতে এতো হৈ হুল্লোর চিৎকার চেচামেচি শুনে ধরফড়িয়ে উঠে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে আসেন মেহনত আকবর।
সিড়ি বেয়ে মেহনত আকবরকে নামতে দেখেই দৌড়ে গিয়ে জাপটে ধরল মেহরুন। বাবার বুকে মাথা রেখে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে। কাদতে কাদতে ইতোমধ্যে তার নাকের ডগা লাল হয়ে গিয়েছে। নাক টেনে টেনে বলল
-` সবাই অবিশ্বাস করলেও, তুমি অন্ততপক্ষে বিশ্বাস করো আমায়। বিশ্বাস করো, তোমার মেয়ে এমন নি’কৃ’ষ্ট কাজ করতে পারেনা বাবা।
মেহনত আকবর মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। তিনি আসলে বুঝতে পারছেন না, এখানে হচ্ছেটা কি। তবুও শান্ত গলায় বললেন
-` কি হয়েছে মা? তুমি কাদছো কেন এভাবে? আর এতো হৈ হুল্লোড় হচ্ছে কেন বাড়িতে?
মেহরুন কিছু বলার পূর্বেই নাজিয়া সুলতানা পাশ থেকে বলে উঠলেন
-` বড়ভাই, এই মেয়ে যা করেছে তা মুখে আনার মতো না। ছি কি ল*জ্জা কি ল*জ্জা!
ভ্রু কুচকে ফেলেন মেহনত আকবর। হঠাৎ দূরে দাঁড়িয়ে থাকা আগন্তুকের দিকে নজর পড়তেই তিনি বলে উঠলেন
-` আদ্রিশ বাবা তুমি এখানে?
এগিয়ে আসে আদ্রিশ। মুখে তার হাসির রেখা স্পষ্ট। অতলস্পর্শী ডাগর চক্ষুদ্বয়ে কি যেন এক ভাবের খেলা চলছে, তা বোঝার সাধ্য নেই!
কণ্ঠ কিছুটা খাদের নামিয়ে মেহনত আকবরের উদ্দেশ্যে আদ্রিশ বলে উঠল
-‘ আসসালামু আলাইকুম, আঙ্কেল। আপনাকে কিছু বলার আছে আমার।
-‘ ওয়ালাইকুমাস সালাম। তো বলো কি বলবে?
-‘ আপাতত সবার সামনে আপনার সাথে কথা বলতে চাচ্ছি না আমি।
তিনি আর কোনো কথা না বাড়িয়ে আদ্রিশকে নিয়ে বাগানের দিকে চলে যান।
ওদের চলে যাওয়ার পানে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রয় মেহরুন। কারও মুখে এখন যেন রা টিও নেই। রুমের মাঝে এখন পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে। এ যেন বড় কোনো ঝড়ের পূর্বাভাস!
কিছুক্ষণ বাদে দুজনেই এসে হাজির হয়। দুজনের চোখ মুখ দেখে কিছুই বোঝার উপায় নেই। মেহনত আকবর কিছুক্ষণ গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন মেহরুনের দিকে। তিনি এ মুহূর্তে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন।
মেহনত আকবর কি ভাবছে বা সামনে কি করবে তা বোঝা মুশকিল। অন্যদিকে আদ্রিশের অধরের কোণে বাঁকা হাসির রেখা ফুটে উঠেছে।
দোতলার করিডোরে রেলিং এ হাত রেখে এতোক্ষণ যাবত সবকিছুই পর্যবেক্ষণ করছিল। সবটা দেখে যেন আগন্তুকটির প্রাণ জুড়িয়ে যায়। প্রাণ ভরে শ্বাস নিয়ে কুটিল হাসল সে। মেহরুনকে এ বাড়ি থেকে ঘাড় ধা’ক্কা দিয়ে বের করতে পারলে তবেই তার শান্তি মিলবে।
#আমার_বাহুডোরে_আবদ্ধ_তুমি
#নুসাইবা_জান্নাত_আরহা(লেখিকা)
#পর্ব১
#চলবে~
আসসালামু আলাইকুম। প্রায় ছয়-সাত মাস পর লেখালেখিতে পুনরায় মনোনিবেশ করলাম। এতোদিন লেখালেখি থেকে দূরে থাকার কারণে হয়তো লেখায় ভুলত্রুটি হতে পারে, তাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্প কেমন লেগেছে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। আপনাদের রেসপন্স আমার অনুপ্রেরণা। তাই সবাই আগের মতো রেসপন্স করবেন। হ্যাপি রিডিং~