আমার_বাহুডোরে_আবদ্ধ_তুমি #নুসাইবা_জান্নাত_আরহা #পর্ব ১০

0
523

#আমার_বাহুডোরে_আবদ্ধ_তুমি
#নুসাইবা_জান্নাত_আরহা
#পর্ব ১০

আদ্রিশের কথা শুনে হাওমাও করে কেঁদে ওঠার বদলে ক্রুর হাসল জারা। সে এখানে প্ল্যান করেই এসেছে। একবার আদ্রিশ তাকে ধোঁকা দিয়েছে, এবার সে এমন চাল চালবে যে আদ্রিশ তার কথা শুনতে বাধ্য হবে।আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিল জারা। লোকজন তেমন একটা নেই বললেই চলে। এখনই তো সুযোগ! এবার নিজের গায়ের উপর থেকে ওড়নাটা টান দিয়ে সরিয়ে ফেলে সে।

জারা মনে মনে ভাবতে থাকে, ‘পুরুষ মানুষ তো সৌন্দর্যের পুজারী আর দেহের পাগল হয়, সোজা কথায় কাজ না হলে দেহের প্রলোভন দেখিয়ে যদি আটকে রাখা যায়। আদ্রিশ এবার ঠিকই আটকাবে।’ কথাটা ভেবেই হেসে ওঠে জারা। সত্যিই নিজের বুদ্ধির তারিফ করতেই হয়!

আদ্রিশের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে জারা বলে উঠল

-‘ এবার, এবারও কি না করবেন মি. আদ্রিশ খান?

আদ্রিশ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে দেখে জারার কর্মকান্ড। ঘৃণায় গা ঘিনঘিন করছে তার। এই মেয়েটা এতোটা নিকৃষ্ট কিভাবে হতে পারে! এক পলক তাকিয়েই পরক্ষণে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয় আদ্রিশ। চলে যেতে নিলেই আদ্রিশের হাত ধরে আটকে দেয় জারা। ঝাড়ি মেরে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় আদ্রিশ।

জারা মুখটাকে বাঁকিয়ে বলল

-‘ কি হলো, উত্তর দিলেন না যে? আমায় কি ভালো লাগেনি আপনার? আর কি করলে ভালো লাগবে? আপনি চাইলে আপনার জন্য বিলিয়ে দিতে পারি আমার পুরো দেহ…

কথাটা শেষ করার পূর্বেই ঠাস করে থাপ্পড় পড়ে জারার গালে। আদ্রিশের দেওয়া থাপ্পড়টা এতোটাই জোড়ে ছিল যে তাল সামলাতে না পেরে রাস্তার উপর হুমড়ি খেয়ে পরে জারা। পিচ ঢালাই রাস্তার উপরে পরে যাওয়ার কারনে তার হাত আর মুখের বেশ খানিকটা অংশ ছিলে যায়। জারা অশ্রু সিক্ত নয়নে তাকিয়ে থাকে আদ্রিশের দিকে। ‘যার জন্য সে তার মহামুল্যবান সম্ভ্রম পর্যন্তও বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত ছিল সে-ই কিনা তাকে এভাবে আঘাত করে ক্ষত বিক্ষত করতে পারল?’ ভেবেই কেঁদে ওঠে জারা।

আদ্রিশ নিজের হাতটাকে মুষ্টি বদ্ধ করে নেয়। রাগে তার শরীর থরথর করে কাপছে। চিৎকার করে বলে ওঠে

-‘ ‘তোদের মতো মেয়েদের শরীরের প্রতি আকৃষ্ট হয় কাপুরুষেরা, কোনো পুরুষ নয়।’ তুই কি ভেবেছিলি, তোর শরীরের প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করবি আমায়, কখনোই তা সম্ভব নয়। তোর মতো ডাস্টবিনের কিটদের দিকে ফিরেও তাকায় না এই আদ্রিশ।

আদ্রিশের কথা শুনে জারা কাঁদতে কাঁদতে বলল

-‘ কেন আপনি আমায় বুঝলেন না আদ্রিশ? কি দোষ ছিল আমার?

আদ্রিশ তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল

-‘ কি দোষ করিসনি তুই? লজ্জা করল না নিজের চাচাতো বোন যে কিনা তোকে নিজের বোনের মতো ভালোবাসত, তাকে ঠকাতে? তার গায়ে কলঙ্কের দাগটা তো তুই-ই লাগাতে চেয়েছিলি। লোক ভাড়া করে এনে ওকে কলঙ্কিত করতে চেয়েছিলি তুই। আমি যদি সেদিন তোকে না দেখে ফেলতাম তাহলে হয়তো আমার মেহরুন…

থেমে যায় আদ্রিশ। জারা চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলল

-‘ হ্যাঁ, হ্যাঁ সব আমি করেছি। ছোটবেলা থেকেই ওকে সহ্য হয় না আমার। ও আমার দুচোখের শত্রু। আমার বাবা নেই, বাবার আদর পাওয়ার সৌভাগ্য কখনো হয়নি আমার। মেহরুন তো সোনার চামচ নিয়ে জন্মেছিল। মা বাবার আদর, সব পেয়েছে ও। মেহরুনকে যখন দেখতাম খুব আদরে মানুষ হতে, তখন আমার গা জ্বলে উঠত। এসব কিছু তো আমারও পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আফসোস আমি পাইনি। তখন ওর কাছ থেকে সব কেড়ে নিতে মন চাইত আমার। এখন দেখুন আপনাকেও ও নিয়ে নিয়ে নিল।

এতোটুকু বলে থামল জারা। আদ্রিশ তাচ্ছিল্যের সুরে বলল

-‘ অপরের সুখে হিংসে করলে এমনই সারাজীবন জ্বলে পুড়ে ছাঁই হতে হয়। আর উপকারীর ক্ষতি করতে গেলে তো এমন হবেই। তবে তুমি যদি এসব না থামাও তাহলে তোমার কপালে কিন্তু দুঃখ আছে। তুমি আমায় চেনো না, মেয়ে। ভালোভাবে বলছি চুপচাপ সরে যাও, এতে তোমারই ভালো। আমার মেহরুনের গায়ে যদি আর একটা আঁচও লাগে তাহলে কিন্তু ছাড়ব না আমি তোমায়। আদ্রিশ কতটা ভয়ংকর হতে পারে সে বিষয়ে বিন্দু মাত্র ধারণা নেই তোমার। কথাটা যেন মাথায় থাকে।

কথাগুলো এক নাগাড়ে বলেই জারার দিকে এক পলক তাকায়, যে দৃষ্টিতে ছিল শুধুই ঘৃণা। হনহন করে গিয়ে গাড়িতে বসে পড়ে। জারার সাথে কথা বলার বা শোনার কোনোটারই বিন্দু মাত্রও ইচ্ছা নেই আদ্রিশের। পেছন থেকে অনেক বার ডাকে জারা। কিন্তু আদ্রিশ কোনো পাত্তা দেয় না। ফোনটা হাতে নিয়ে কাওকে ফোন করে। ফোনে কথা বলতে বলতে গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে সোজা চলে যায় নিজ গন্তব্যে।

জারা পেছন থেকে চিৎকার করে বলতে থাকে

-‘ আমিও দেখে নিব, কিভাবে সুখে থাকো তোমরা। এর শেষ আমি দেখেই ছাড়ব। আমি যখন সুখে নেই তখন কিছুতেই মেহরুনকেও সুখে থাকতে দিব না।

ধুলোবালি ঝেড়ে উঠে দাঁড়ায় জারা। এবার তাকে নতুনভাবে সাজাতে হবে সবকিছু। সামনে আর একটা পথই খোলা আছে তার জন্য। হনহন করে ছুটতে থাকে সে। পথে একটা সিএনজি পেতেই সেটাতে চট করে উঠে পড়ে জারা।

দূর হতে কেউ এই সবটাই নজরবন্দি করে, সেইসাথে ক্যামেরাবন্দিও করে নেয়। মুখে তার বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে। সময়মতো সে-ই নিজে থেকে সবটা ফাঁস করবে। ভালো মানুষির মুখোশ খোলা অবধি তাকে যে আড়ালেই থাকতে হবে। দ্রুত তাই সরে পড়ে সে।

.

বেলকনি হতে চাঁপা কান্নার আওয়াজ মেলে। অরনীর ঘরের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল মেহরুন, হঠাৎ এ কান্নার করুণ সুর কর্ণকুহরে ঠেকতেই পা থেমে যায় তার। সাত পাঁচ না ভেবে অরনীর রুমের পথে পা বাড়ায় মেহরুন।
বেলকনির রেলিং এর সাথে মাথাটা এলিয়ে দিয়ে বসে আছে অরনী। ফোনটা পড়ে আছে মেঝেতে। মুখে তার উদ্ভ্রান্তের ছাপ। চোখ বেয়ে তার এখনো অশ্রু কণা ঝড়ছে । কিছুক্ষণ পর পর সে ফুপিয়ে উঠছে। অন্তরের বেদানা-ই তাকে এমন করুণ সুরে কাঁদাচ্ছে।

অরনীকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে দৌড়ে অরনীর কাছে যায় মেহরুন। সব সময় হাসি খুশি থাকা মেয়েটাকে এমন করে কাঁদতে দেখে মেহরুন উত্তেজিত হয়ে পড়ে। নানান চিন্তা ধুরপাক খায় তার মস্তিষ্কের করোটিতে। কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলার সাহস পায় না। শেষমেষ আর মুখ বুজে না থেকে ক্রন্দনরত অরনীর গালে দু হাত রেখে উত্তেজিত হয়ে তাই মেহরুন জিজ্ঞেস করেই বসল

-‘ কি হয়েছে আপু, তুমি এভাবে কাঁদছ কেন?

অরনী চকিত তাকায় মেহরুনের দিকে। অসময়ে মেহরুনের আগমনে চমকায় অরনী। তবে কি মেহরুন শুনে ফেলেছে! সত্য গোপন করতে তাই দ্রুত হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুখ মুছে নেয়। মুখে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে বলল

-‘ কই কিছু হয়নি তো। ঐ এমনিই আরকি। তেমন কিছু নয়।

মেহরুন এক দৃষ্টে তাকিয়ে রইল অরনীর দিকে। অরনী মুখে এমন কথা বললেও তার চোখ তো অন্যকিছু বলছে মনে হচ্ছে। অরনী মিথ্যে বলছে তাকে। মেহরুন সন্দিহান চিত্তে বলল

-‘ তোমার চোখ তো অন্যকিছু বলছে। তুমি আমার কাছ থেকে কিছু কি লুকাচ্ছো ,আপু?

অরনী এক পলক তাকায় মেহরুনের দিকে। মুখ অন্যদিক ফিরিয়ে নিয়ে বলল

-‘ মায়ের কথা মনে পড়ছিল ভীষণ।

মেহরুনের বিশ্বাস হয় না অরনীর কথা। অরনী কথা ঘুরাতে মায়ের দোহাই দিচ্ছে না তো? তাই সে আবারও বেশ কিছুটা দ্বিধা দ্বন্দ নিয়ে জিজ্ঞেস করে বসল

-‘ সত্যি কি তাই, আপু, নাকি অন্যকিছু?

অরনী এবার মেহরুনের দিকে ফিরে তাকায়। গম্ভীর কণ্ঠে বলল

-‘ প্রত্যেক মানুষের-ই একটা ব্যক্তিগত জীবন বলতে কিছু আছে, মেহরুন। আমারও নিশ্চয়ই তেমনই ব্যক্তিগত জীবন বলতে কিছু রয়েছে। আমি চাই না নেক্সট টাইম তুমি আর ইন্টার ফেয়ার করো আমার লাইফে।

মেহরুন হোঁচট খায়। অরনীর বলা কথাটায় ভীষণ ভাবে আঘাত পায় মেহরুন। এ কয়দিনে সে অরনীকে নিজের বোনের মতোই ভাবতে শুরু করেছিল। তাই তো অধিকার খাটাতে মেহরুন অরনীকে কাঁদতে দেখে জিজ্ঞেস ফেলে। তাকে হেয় করার জন্য তো বলেনি কিছু। মেহরুন করুন কন্ঠে বলল

-‘ সরি, আপু। আমি আসলে বুঝতে পারিনি। আমি তোমায় হেয় করার জন্য বলিনি। আসলে আমার তো আর কোনো অধিকারই নেই তোমায় জিজ্ঞেস করার তোমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে। এ ভুল আর কখনো হবে না আপু।

কথাটা বলেই অরনীর উত্তর পাওয়ার আশায় আর বসে না থেকে দ্রুত নিজের রুমে চলে যায় মেহরুন। তার চোখে অশ্রুতে টইটম্বুর। অরনীকে আপন ভেবেছিল মেহরুন কিন্তু অরনী পারেনি মেহরুনকে আপন ভাবতে। বিছানায় উবু হয়ে শুয়ে তাই বালিশে মুখ গুঁজে কেঁদে ওঠে সে।

এদিকে মেহরুনের চলে যাওয়া দেখে মলিন হাসে অরনী। কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে গাল বেয়ে। মনে মনে সে বলল, ‘ তুমি আমায় ভুল বোঝাতে যতটা না কষ্ট পেয়েছি, তার চেয়েও বহুগুণে কষ্ট পেয়েছি তো তার দেওয়া কথার আঘাতে।’

অরনীর বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। তার জীবনে আদ্রিশ ছাড়া আপন বলতে আর কেউ রইল না। সে এমন এক হতভাগা, যাকেই সে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে তাকেই সে হারিয়ে ফেলে চিরদিনের মতো। হয় সে মারা যায় নয়তো তার চেয়ে বহু দূরে চলে যায়।

#চলবে ~

গল্পটা কি ভালো লাগছে না? আপনারা তো কেউ আগের মতো রেসপন্স করেননা, এতো অলস হলে কি চলে😒

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here